৫৯ বর্ষ ১৭ সংখ্যা / ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ / ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮
কমরেড নিশা রায়ের জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিআইটিইউ নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ ওয়ার্কসমেন ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কমরেড নিশা রায় ৪ ডিসেম্বর, শনিবার বিকেলে দমদমে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি ও সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু কমরেড নিশা রায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
কমরেড নিশা রায়ের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রবীণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা দীপক দাশগুপ্ত, বিদ্যুৎকর্মী আন্দোলনের সর্বভারতীয় নেতা প্রশান্ত নন্দীচৌধুরী, সিআইটিইউ নেতা সোমনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
তাঁর মরদেহ পিস ওয়ার্ল্ডে শায়িত ছিল। ৬ডিসেম্বর, সোমবার সকালে প্রয়াত কমরেডের মরদেহ বিধাননগর সেক্টর ফাইভে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ ওয়ার্কসমেন ইউনিয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ শিল্প সহায়ক কর্মী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় দপ্তর মোহিত মৈত্র ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিআইটিইউ রাজ্য দপ্তর শ্রমিক ভবনে। সেখানে কমরেড নিশা রায়ের মরদেহে মালা দিয়ে স্মৃতিচারণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও বিদ্যুৎকর্মী আন্দোলনের সর্বভারতীয় নেতা প্রশান্ত নন্দী চৌধুরী। কমরেড নিশা রায়ের জীবনাবসানে গভীর শোক জানিয়েছেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। তিনি এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘‘এক জন দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত নেত্রীকে আমরা হারালাম।’’
শ্রমিক ভবনে প্রয়াত নেত্রীর মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি ও সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সিআইটিইউ নেতা সোমনাথ ভট্টাচার্য, দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ কর্মী ইউনিয়নের পক্ষে জিতেন নন্দী, বিদ্যুৎ সহায়িকা কর্মী ইউনিয়নের পক্ষে বেলা পাত্র, কৃষক নেতা পরেশ পাল। মোহিত মৈত্র ভবনে প্রয়াত কমরেডকে শ্রদ্ধা জানান প্রশান্ত নন্দী চৌধুরী, দীপক রায়চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
প্রয়াত কমরেডের ইচ্ছানুসারে তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে এদিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অ্যানাটমি বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর পূর্ব অঙ্গীকার মতো ৪ ডিসেম্বর প্রয়াণের পর চোখ দু’টি আরজিকর হাসপাতালের আই ব্যাঙ্কে দান করা হয়েছিল।
কমরেড নিশা রায়ের জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের যশোহর জেলায়। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের সাথে নদীয়া জেলায় কৃষ্ণনগরে চলে এসে বসবাস শুরু করেন। স্কুল শিক্ষা শেষ করে কৃষ্ণনগর কলেজে ভরতি হলে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। পড়াশোনা শেষ করে মাত্র ২১ বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে অস্থায়ীকর্মী হিসাবে কাজে যোগদান করেন। নদীয়া জেলার কমিউনিস্ট নেতা প্রয়াত কমরেড সুরেশ রায়ের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। কর্মজীবনের শুরুর দিন থেকে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন কমরেড নিশা রায়। ট্রেড ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট পাটির সংস্পর্শে এসে ১৯৭১ সালে তিনি পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি পাটির রাজ্য কমিটির অধীন টিইউ-১ প্রত্যক্ষ শাখার সদস্য ছিলেন।
কমরেড নিশা রায় মৃত্যুর দিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ ওয়ার্কসমেন ইউনিয়নের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি সিআইটিইউ হাওড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ ওয়ার্কসমেন ইউনিয়নের হাওড়া জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি পার্টির হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে অস্থায়ী ঠিকাকর্মীদের সংগঠিত করে গড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ শিল্প সহায়ক কর্মী ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি সংগঠনের সহসভাপতি ছিলেন। রাজ্যের শ্রমজীবী মহিলাদের সংগঠিত করে তাঁদেরকে একত্রিত করে সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন কমরেড নিশা রায়।