৫৯ বর্ষ ১৭ সংখ্যা / ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ / ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮
প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক বিনোদ দুয়া
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক বিনোদ দুয়া। ৪ ডিসেম্বর ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। সাহসী কণ্ঠস্বর হিসাবে সংবাদ জগতে পরিচিত ছিলেন বিনোদ দুয়া। চেঁচামেচি না করেও, স্পষ্ট সাহসী কথাটা যে মুখের উপর বলা যায়, সুস্থ রাজনৈতিক বিতর্ক করা সম্ভব সেটা প্রমাণ করেছিলেন বিনোদ দুয়া। তাঁর প্রয়াণে শুধুমাত্র একজন বলিষ্ঠ সাংবাদিকই নয়, হারিয়ে গেল টিভি সাংবাদিকতার একটি ব্যতিক্রমী ঘরানা। শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলা সেই মানুষটি চলে গেলেন চিরতরে। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সাংবাদিক মহল।
এ বছরের প্রথম দিকে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন। এরপর অসুস্থতার জন্য সম্প্রতি তাঁকে ফের হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। তাঁর কন্যা অভিনেত্রী, কমেডিয়ান মল্লিকা দুয়া বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সকলকে অবহিত করতেন। তিনিই ৪ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা নাগাদ তিনি বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জন সমক্ষে আনেন। পেশায় চিকিৎসক স্ত্রী চিন্না দুয়াকে কোভিডে অাগেই হারিয়েছিলেন বিনোদ। এরপর থেকে কিছুটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।
সংবাদজগতে দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন বিনোদ দুয়া। দূরদর্শন এবং এনডি়টিভি-তে দীর্ঘ দিন চাকরি করেছেন তিনি। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওয়েবসাইট 'দ্য ওয়্যার'-এর এডিটর ছিলেন। সেখানে তাঁর জনপ্রিয় নিউজ শো জন গণ মন কি বাত নজর কেড়েছিল অনেকের। ২০১৯ সালে তিনি 'স্বরাজ টিভি' এবং 'এইচ ডবলিউ নিউজ'-এ কর্মরত ছিলেন। ইউটিউবে তাঁর ভিন্ন ধারার পরিবেশনা সচেতন মানুষের নজর কেড়েছিল।
ভারতীয় জনতা পার্টি শাসিত একাধিক রাজ্যের বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলতেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে ২০২০ সাল তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্র ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করায় বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছিলেন হিমাচল প্রদেশের বিজেপি'র মহাস্তু শাখার সভাপতি অজয় শ্যাম। দর্শক, শ্রোতা, পাঠকদের কাছে অবশ্য জনপ্রিয় হয়েছিল তাঁর ওই রিপোর্ট। তাঁর নামে এফআইআর দায়ের হওয়ার পরই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিনোদ দুয়া। হেনস্তার অভিযোগ এনে তিনি দৃষ্টান্তমূলক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। একইসঙ্গে তিনি আবেদন জানান যে, ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকদের নামে মামলা দায়েরের আগে তা হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত প্যানেলের কাছে মঞ্জুর হতে হবে। তবে সাংবাদিকের এই আবেদন আইন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণ দেখিয়ে খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের সেই মামলা খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, “প্রত্যেক সাংবাদিকেরই রাষ্ট্রদ্রোহ থেকে সুরক্ষার অধিকার রয়েছে। “...আইনানুযায়ী সরকারের কোনও পদক্ষেপের সঙ্গে অসম্মতি নিয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনা করা দেশদ্রোহীতা হতে পারে না’’।