৬০ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ২৬ মাঘ, ১৪২৯
১৪ ফেব্রুয়ারি নওসাদ সিদ্দিকির মুক্তির দাবিতে কলকাতায় যৌথ প্রতিবাদ মিছিলের আহ্বান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা জুড়ে বিরোধী দলগুলির যৌথ মিছিল থেকে আওয়াজ উঠবে অগণতান্ত্রিকভাবে গ্রেফতারির জেরে কারারুদ্ধ নির্দোষ ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও ভাঙরের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি সহ সমস্ত আইএসএফ কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। গ্রেপ্তার করতে হবে আরাবুল সহ দুষ্কৃতীদের। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতার রামলীলা ময়দান থেকে রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত এই দাবিতে সংগঠিত হবে মিছিল। মিছিলে আইএসএফ কর্মী-সদস্যদের পাশাপাশি শামিল হবে সিপিআই(এম)সহ রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দল ও সংগঠন। ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা ঘোষণা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা শমীক লাহিড়ি, কল্লোল মজুমদার, আইএসএফ নেতা সামসুর আলি মল্লিক, জুবি সাহা, সিপিআই নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ভাঙর অভিযান সহ পরবর্তী কর্মসুচি ঘোষিত হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। বৈঠক থেকে ভাঙরের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম সহ সমস্ত দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি আগেই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গে চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙরে শাসকদলকে ভরাডুবি থেকে বাঁচাতেই এই গ্রেপ্তারি এবং নানা ভুয়ো অভিযোগ।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বিরোধী নেতৃবৃন্দ বলেন, বিধায়ক সহ অন্যদের গ্রেপ্তারি গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার শামিল। গণতন্ত্রকে এইভাবে হত্যার চেষ্টা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। ক্ষমতার অপব্যবহারকারী শাসকদলের নির্লজ্জ দুর্নীতি মানুষ আর মেনে নিচ্ছেন না। তাই গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে ধরা হচ্ছে। বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন অথচ বিরোধীদলের একজন বিধায়ককে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ হাজতে থাকতে হচ্ছে। তিনি বিধায়ক শুধু তাই নয়, এলাকার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যানও। কিন্তু তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে যোগদান করতে পারছেন না।
এদিকে ২১ তারিখের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রমূলক গ্রেপ্তারির বিষয়টি সামনে এসেছে। আইএসএফ কর্মীদের ওপর ওইদিন তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা চড়াও হলেও কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ নওসাদ সিদ্দিকি সহ আইএসএফ কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বারুইপুর আদালতে তোলে। আদালত ওই মামলায় ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। এরই মধ্যে নিউ মার্কেট থানার পুলিশ নওসাদ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদন জানিয়েছে। অর্থাৎ উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার - ভাঙরের বিধায়ককে আবার পুলিশ হেপাজতে নেওয়া। যদিও আইএসএফ এবং সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সন্ত্রাস ও মিথ্যা মামলা চলছে। পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতাকে কাজে লাগিয়ে ভাঙরকে বিরোধীশূন্য করাই এখন উদ্দেশ্য।
প্রসঙ্গত, আইএসএফ’র প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচির জমায়েত থেকে গত ২১ জানুয়ারি ধর্মতলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকিকে। সেদিন রাজ্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগে নওসাদের নেতৃত্বে শান্তিপুর্ণ অবস্থান-বিক্ষোভ চলাকালীন তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের উপর হামলা এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ একাধিক অভিযোগে ২১ তারিখ থেকে জেল হেফাজতে রয়েছেন নওসাদ। ব্যাঙ্কশাল আদালতের নির্দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলে থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। আবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জমায়েতে ধর্মতলায় যাওয়ার পথে ভাঙড়ের হাতিশালায় নওসাদ সিদ্দিকি এবং আইএসএফ কর্মীদের ওপরে হামলা করে তৃণমূলের আরাবুল ইসলামের বাহিনী। প্রতিবাদ চলাকালীন কলকাতা পুলিশ লাঠি চালিয়ে নওসাদ সিদ্দিকি সহ ১৯জনকে গ্রেপ্তার করে। প্রথম দফায় ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়। আইএসএফ’এর অভিযোগ, দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি আবদুল খালেক মোল্লাকে বেআইনিভাবে শুনানিতে উপস্থিত থাকার সময়ে আদালত থেকে ১ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করেছে।
এই স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সারা রাজ্যেই প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে। তৃণমূল সরকারের স্বৈরাচারী শাসনে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে এই গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিমান বসু এবং সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বিরোধীদের কণ্ঠরোধ ও অধিকার কেড়ে নেওয়ায় তৃণমূল ও সরকারকে ধিক্কার জানিয়েছেন।
আইএসএফ’এর কার্যকরী সভাপতি সামসুল মল্লিক জানিয়েছেন, ভাঙড়ের কর্মীরা সন্ত্রাসের মধ্যে রয়েছেন। অত্যাচারিতদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিধায়ককে এভাবে আটক করা হলে মানুষের অধিকার কোথায়! পুলিশ শাসকদলের কথায় চলছে।