৬০ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ২৬ মাঘ, ১৪২৯
হাওড়ায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের দশম সর্বভারতীয় সম্মেলন
নিরাপদ সরদার
১৯৮২ সালে সর্বভারতীয় খেতমজুর ইউনিয়ন গড়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গে কিষান সভার সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকেই। সংগঠন গড়ে ওঠার পর পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম সর্বভারতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে দেশের ১৪টি রাজ্যে খেতমজুর ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে। সম্মেলনে ১৩টি রাজ্যের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া আরও ৭টি রাজ্যের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন, যে রাজ্যগুলোতে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ত্রিপুরায় খেতমজুর সংগঠন থাকলেও, ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন থাকায় প্রতিনিধিরা আসতে পারবেন না। মোট ৬৭১ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে আসবেন।সব মিলিয়ে দেশের মোট ২০টি রাজ্যের প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য এই সর্বভারতীয় সম্মেলন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের অন্যান্য রাজ্যের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে, ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি-কে তাড়ানো যাবে না। পশ্চিমবঙ্গ দেশের মানুষের কাছে ভরসার মুখ।
দেশের মানুষের কাছে বড়ো বিপদ এখন বিজেপি। যে দল পরিচালনা করছে আরএসএস। এদের ধর্মীয় রাজনীতি মানুষকে বিভাজন করছে। বিভাজনের মধ্যে দিয়ে আরএসএস সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি-কে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চায়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হয়েছে সংসদে। সেখানে সবচেয়ে বেশি আঘাত নেমে এসেছে কৃষক, খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের উপর। ১০০ দিনের কাজে ৩৩ শতাংশ বরাদ্দ কমিয়ে ৮৯,৪০০ কোটি থেকে ৬০,০০০ কোটিতে নামানো হয়েছে। ৬০:৪০ রেশিওতে কাজ করার নিয়ম। প্রশাসনিক খরচ ৫ শতাংশ বাদ দিলে, জব কার্ড হোল্ডারদের ভাঁড়ে থাকে মাত্র ২১,০০০ কোটি টাকা। দেশে ১৫ কোটির বেশি সক্রিয় জব কার্ড হোল্ডার আছে। অর্ধেক লোক কাজ চাইলে ১২-১৪ দিনের বেশি কাজ পাবে না। খেটে খাওয়া মানুষের উপর এভাবেই আক্রমণ নামিয়ে এনেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। গ্রামীণ সর্বহারা, আধা সর্বহারা অংশের মানুষ খুব বিপদে আছে। এদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। কাজ ও মজুরি নিয়ে দিল্লির সরকার উদাসীন। কোটিপতি ও করপোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদির সরকার। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যার মাত্র ২.৫ শতাংশ বাজেটে বরাদ্দ জুটেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, গরিবের পেনশন, সবক্ষেত্রে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এমন গরিব-মারা বাজেট এর আগে কখনো হয়নি।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অর্থসংগ্রহ কর্মসূচিতে হাওড়ায় বিমান বসু।
এই প্রেক্ষাপটে সর্বভারতীয় খেতমজুর সম্মেলন দেশের শ্রমজীবী মানুষের কাছে অবশ্যই লড়াইয়ের নতুন রাস্তার দিক্ নির্দেশ করবে।
আমাদের রাজ্যে দেরিতে গড়ে উঠেছে খেতমজুর ইউনিয়ন ২০১৫ সালে প্রস্তুতি কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে। উপর থেকে সংগঠন গড়ে উঠলেও নিচের দিকে কোনো পরিকাঠামো ছিল না। এই সময়ে ১৮টি জেলায় সংগঠন গড়ে উঠেছে। ৩২২টি ব্লক ও ১,৯৯৯টি অঞ্চল সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠন গড়ে উঠেছে। ৭ হাজারের বেশি গ্রাম কমিটি গড়ে উঠেছে। ৩ হাজার মহিলা কর্মী উঠে এসেছেন। আদিবাসী, তপশিলি জাতি এবং ওবিসি অংশের অনেক কর্মীও উঠে এসেছেন এই সংগঠনে। রাজ্যে যখন খেতমজুর ইউনিয়ন গড়ে উঠছে তখন রাজ্যের পরিস্থিতি খুব খারাপ। অতি প্রতিক্রিয়াশীল তৃণমূল সরকারের রাজ্যের জনগণের উপর আক্রমণ, অত্যাচার, লুঠ, সন্ত্রাস চরম আকার ধারণ করতে থাকে। মানুষের বাক্ স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের শিক্ষিত বেকারদের চাকরি বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে তৃণমূল। ১০০ দিনের কাজের টাকা চুরি, আবাস যোজনার টাকা চুরি, পঞ্চায়েতের উন্নয়নের টাকা লুট - এই সমস্ত বিষয় মানুষ প্রত্যক্ষ করছেন। ফলে ধীরে ধীরে তাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা এখন দুর্নীতি ও চুরির দায়ে জেল খাটছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সংগঠন গড়ে উঠছে আমাদের রাজ্যে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গ্রামীণ শ্রমজীবী, খেতমজুররা জোট বাঁধছেন। জেলায় জেলায় খেতমজুরদের সমাবেশ অগ্রগতির ইঙ্গিত বহন করছে। ‘গ্রাম জাগাও চোর তাড়াও’ কর্মসূচিতে অসংখ্য গরিব মানুষের অংশগ্রহণ, লাল ঝান্ডার উদ্দীপ্ত মিছিল, গরিবের এক সাথে চলা বিজেপি এবং তৃণমূলের বুকে যন্ত্রণা বাড়িয়েছে। পঞ্চায়েত পুনরুদ্ধার করতে ধীরে ধীরে মানুষ লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছেন। খেতমজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সম্মেলন পশ্চিমবঙ্গের শ্রমজীবী ও গ্রামীণ সর্বহারা মানুষের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিশ্চিতভাবেই সাহায্য করবে।