৬০ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ২৬ মাঘ, ১৪২৯
যে ঘটনার উপসংহারে আটকে মানুষের খিদে...
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কিবোর্ডে আঙুল দিয়ে বসে খোঁজপাতি চালাতে চালাতে কখন যে বারোটা বেজে গেছে খেয়াল হয়নি। রাত অবশ্যই। তারিখও আট পেরিয়ে নয়। রবি ঠাকুরের ‘রাতের বেলা দুপুর যদি হয়, দুপুর বেলা রাত হবে না কেন’ সূত্র অনুসারে রাত হোক বা দুপুর - বারোটা মানে বারোটাই। বাজলেই খেল খতম। ওই ‘এএম’ আর ‘পিএম’ দিয়ে দু’বার নিয়ম করে খিদে পাওয়া ছাড়া আম পাবলিকের বিশেষ কিছু যায় আসে না। ঠিক যেমন ‘অ-এ অজগর’, ‘আ-এ আম’-এর বদলে অ-এ অনুব্রত আসছে তেড়ে, আ-এ আদানি খাবে ঝেড়ে বললেও শিশুদের বর্ণ শেখা আটকায় না। আটকাবে না। ‘এপাং ওপাং’ গোছের কিছু লিখে ‘ঝপাং’ করে যদি ডি-লিট আঁচলে বেঁধে ফেলা যায় তবে আদ্যিকালের যোগীন্দ্রনাথ সরকারকে ডিলিট করে দিয়ে অ-এ অনু, আ-এ আদানি, ই-তে ইলেক্টোরাল বন্ড, ক-এ কয়লা, গ-এ গোরু লিখে দিলেও কারোর কিছু বলার মুরোদ হবে না। আর বইমেলাতে ঘণ্টা পেটানোও কেউ আটকাতে পারবেনা। যতই অক্ষর, শব্দদের সম্মিলিত বিদ্রোহে হাতুড়ির মাথা ছিটকে বেরিয়ে যাক না কেন!
ইদানীং কিছুটা সচেতন হয়েছি। কারণ সুকুমারে আপত্তি থাকতে পারে, রবীন্দ্রনাথে আপত্তি থাকতে পারে, যোগীন্দ্রনাথে আপত্তি থাকতে পারে। এমনকী দিনেশ দাশ বা সুকান্তেও থাকতে পারে। তাই ওসব পুরনো লোকদের নিয়ে টানাহেঁচড়া না করে এক্কেবারে সরাসরি এখন বিষয়ে ঢুকে পড়ি। ভূমিকা টুমিকা গত কয়েক বছরে তো কম হয়নি। উপসংহার লেখার সময় ক্রমশ এগিয়ে আসছে বলেই মনে হচ্ছে। তাই এখনই যদি বিষয়বস্তুটুকু না লিখে ফেলা যায় তবে আর পরে সময় পাওয়া যাবে না। অতএব, মেরে পেয়ারে ভাইয়ো অউর বহেনো - এবার মন কী বাত হয়ে যাক।
ছোটোবেলায় হাওড়াতে থাকাকালীন আমাদের এক বন্ধু ছিল। যাকে ‘বোফর্স কী’ জিজ্ঞেস করলেই বলতো ‘বোফর্স একটা ইংরেজি শব্দ, যার মানে কেলেঙ্কারি’। এখনও বোফর্স শব্দটা কখনো সখনো কানে এলে বাকি সব ভুলে গিয়ে বন্ধুর বলা ওই কেলেঙ্কারির কথাই মনে আসে। ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্ট বেরনোর পরের দিন বিষয়টা যখন প্রথম শুনি তখনই মনে পড়ে জার্মানির প্রেসিডেন্ট পল ভন হিন্ডেনবার্গ-এর কথা। যিনি কিছুটা বাধ্য হয়েই ৯০ বছর আগে, ১৯৩৩-এ জার্মানির চ্যান্সেলর পদে বসিয়েছিলেন অ্যাডলফ হিটলারকে। পরেরটা ইতিহাস। আবার ৬ মে, ১৯৩৭-এ জার্মান যাত্রী বিমান এলজেড ১২৯ হিন্ডেনবার্গ বিমান দুর্ঘটনার কথা। যে দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট বেরনোর পরের দুর্ঘটনার কাছে আগের ঘটনা, দুর্ঘটনা সবই মোটামুটি ম্লান হয়ে গেছে। ১২৯ পাতার অভিযোগের জবাবে ৪১৩ পাতার উত্তর। উত্তরে আর মাত্র ৭টা পাতা যোগ করলেই ব্যাপারটা পুরো জমে যেত।
‘আদানি গ্রুপঃ হাউ দ্য ওয়ার্ল্ড’স থার্ড রিচেস্ট ম্যান ইস পুলিং দ্য লারজেস্ট কন ইন করপোরেট হিস্ট্রি’ শীর্ষক রিপোর্টের প্রথমেই পরপর ৪৫টি অভিযোগের এক ভূমিকা করা আছে। যেখানে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘আজ আমরা প্রমাণ সহ আমাদের ২ বছরের তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করছি, যেখানে দেখানো হয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ কীভাবে কয়েক দশক ধরে ১৭.৮ ট্রিলিয়ন টাকার (US$ ২১৮ বিলিয়ন) একটি নির্লজ্জ স্টক ম্যানুপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতি প্রকল্পে জড়িত।’ ওই রিপোর্টেই এর ঠিক পরেই বলা আছে, ‘আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গৌতম আদানি, প্রায় $১২০ বিলিয়ন নিট সম্পদ সংগ্রহ করেছেন। যা গত ৩ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি যোগ করেছে মূলত গ্রুপের ৭টি মূল তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে। যেগুলি এই সময় গড়ে ৮১৯ শতাংশ বেড়েছে।’
হিন্ডেনবার্গ-এর অভিযোগ, মৌলিকভাবে এই ৭টি মূল সংস্থা ৮৫ শতাংশ নিচের দিকে থাকলেও এইসব সংস্থার শেয়ারের দাম বেশি দেখিয়ে আদানি গোষ্ঠী এইসব শেয়ারের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছে। সমীক্ষা থেকে ওই সংস্থার দাবি, আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় ২২টি উচ্চপদের মধ্যে ৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন আদানি পরিবারের সদস্যরা। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দিতে মরিশাস, সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরশাহি এবং বিভিন্ন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ভুয়ো কোম্পানি চালানোর অভিযোগও করা হয়েছে। যেসব কোম্পানির মাধ্যমে ভুয়ো আমদানি রপ্তানি নথি তৈরি করে লেনদেন ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়। আদানির পরিবারের সদস্যদের তালিকায় নাম নেওয়া হয়েছে আদানির শ্যালক সমীর ভোরা, আদানির দাদা বিনোদ আদানি, ভাই রাজেশ আদানি সহ একাধিক ব্যক্তির। নাম আছে কুখ্যাত কেতন পারেখেরও। ২০০৭-এ সেবির করা এক তদন্ত থেকে জানা যায়, আদানি গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত ১৪টি সংস্থার শেয়ার এমন কিছু সংস্থায় হস্তান্তর করা হয়েছিল যেসব সংস্থার নিয়ন্ত্রক ছিলেন কেতন পারেখ। হিন্ডেনবার্গ-এর রিপোর্ট অনুসারে গৌতম আদানির দাদা বিনোদ আদানি মরিশাসে ৩৮টি ভুয়ো সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন অথবা সেগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
সমীক্ষা সংস্থার দাবি, বিনোদ আদানি-সম্পর্কিত সংস্থাগুলির জন্য ১৩টি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল; যার অনেকগুলি একই দিনে সন্দেহজনকভাবে তৈরি করা হয়। যেখানে শুধুমাত্র কিছু পূর্ব ব্যবহৃত ছবি ব্যবহার করা হয়। কোনো প্রকৃত কর্মচারীর নাম সেখানে দেওয়া হয়নি। যে সমস্ত সংস্থার নাম এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে তার মধ্যে আছে ইলারা, মন্টেরোসা ইনভেস্টমেন্ট, নিউ লিয়াইনা ইনভেস্টমেন্ট প্রভৃতি সংস্থার নাম। এছাড়াও ওই রিপোর্ট জানিয়েছে, ‘মন্টেরোসার চেয়ারম্যান এবং সিইও একজন পলাতক হীরা ব্যবসায়ীর সাথে ৩টি কোম্পানিতে ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেছিলেন। যে ব্যবসায়ী ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করেছিলেন এবং যে পলাতক হীরা ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বিনোদ আদানির মেয়ের।
ব্লুমবার্গ-এর সূত্র উদ্ধৃত করে আদানি গোষ্ঠীর ৭টি মূল শেয়ারের গত তিন বছরের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির হিসেব দিয়েছে হিন্ডেনবার্গ। যে তথ্য অনুসারে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের মূল্য শেষ তিন বছরে বেড়েছে ১৩৯৮ শতাংশ, আদানি ট্রান্সমিশনের ৭২৯ শতাংশ, আদানি টোটাল গ্যাসের ২,১২১ শতাংশ, আদানি গ্রিন এনার্জির ৯০৮ শতাংশ, আদানি পাওয়ারের ৩৩২ শতাংশ, আদানি উইলমারের ১৪৯ শতাংশ এবং আদানি পোর্টস-এর ৯৮ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে, কমপক্ষে পাঁচটি সন্দেহজনক সংস্থার নাম এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যে পাঁচটি সংস্থাই মরিশাসের এবং যাদের নাম এপিএমএস ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, ক্রেস্টা ফান্ড, এলটিএস ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, এলারা ইন্ডিয়া অপরচুনিটিস ফান্ড এবং ওপাল ইনভেস্টমেন্ট। এই পাঁচ সংস্থার মোট সম্পদের যথাক্রমে ৯৯.৪ শতাংশ, ৮৯.৫ শতাংশ, ৯৭.৯ শতাংশ, ৯৮.৮ শতাংশ এবং ১০০ শতাংশ আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যার মোট পরিমাণ ৬১৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
এই সমীক্ষায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, তা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভর জন্য কিছুটা ভয়ংকর অবশ্যই। কারণ সম্প্রতি এনডিটিভি-র দখল নিতে আদানির যে আগ্রাসী ভূমিকা দেখা গেছে তার সঙ্গে এই বক্তব্য যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেই মনে হয়। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট জানাচ্ছে, ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘গৌতম আদানি দাবি করেন তিনি যে কোনো সমালোচনা খুব খোলা মনে নেন... কারণ তিনি মনে করেন প্রতিটি সমালোচনাই তাঁকে উন্নত করার সুযোগ দেয়। যদিও এই দাবি সত্ত্বেও, আদানি বারবার সরকার এবং নিয়ন্ত্রকদের চাপ দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা সমালোচনামূলক সাংবাদিক বা ভাষ্যকারদের মামলার মাধ্যমে অথবা জেলে পাঠিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন।’
শুধু নিন্দুক বা তথাকথিত ‘দেশদ্রোহী’রাই নন, তথ্য পরিসংখ্যানও বলছে বিগত ৭ বছরে, আরও স্পষ্ট করে বললে বিজেপি'র জমানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জমানায় আদানি গোষ্ঠীর উত্থান ঈর্ষণীয়। যেমন ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ছিল ৭২.৪১ টাকা। ২০১৪ সালের জুন মাসে সেই শেয়ারের দাম হয় ৩০০.২৩ টাকা। ২০ ডিসেম্বর ২০২২-এ সেই শেয়ারের দাম হয় ৪,১৬৪.২৫ টাকা এবং হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫৬৪.৭০ টাকা ঘুরে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সেই শেয়ারের দাম হয়েছে ২,১৫৮.৬৫ টাকা। একইভাবে ২০১৪ সালে ৩৯ টাকার আদানি পাওয়ারের শেয়ারের দাম এখন ১৮২ টাকা। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের দাম ছিল ৭৩.৭০ টাকা। যে শেয়ারের দাম ২০ জানুয়ারি ২০২৩-এ ৩,৯১৮.২৫ টাকা ঘুরে ৮ ফেব্রুয়ারি দাম দাঁড়িয়েছে ১,৩৯৪.১৫ টাকাতে। ২০১৪-তে যে আদানি গোষ্ঠীর মোট সম্পদ ছিল ৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার তা ২০২২-এ এসে দাঁড়ায় ১৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বিশ্বের ৬০৯ নম্বর ধনী মাত্র ৭ বছরে একেবারে ২ নম্বরে। যে প্রসঙ্গে পিপলস ডেমোক্র্যাসি-র সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নরেন্দ্র মোদির পৃষ্ঠপোষকতা এবং সুরক্ষার ফলাফল হিসাবে ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির উত্থান না দেখলে, আদানির গল্পটি অসম্পূর্ণ। ২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদির সঙ্গে আদানির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর থেকে আদানির ভাগ্য নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক যাত্রাপথের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জুড়ে যায়।’
হিন্ডেনবার্গ-এর রিপোর্ট প্রসঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসা খুবই স্বাভাবিক। সেই নিয়ম মেনেই আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ৪১৩ পাতার বিবৃতিতে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয় এবং জানানো হয় হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট ভারতের ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ। ‘এটি নিছক কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির উপর একটি অযৌক্তিক আক্রমণ নয়। বরং ভারত, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা এবং গুণমান এবং ভারতের বৃদ্ধির গল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।’ যার উত্তরে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জানায়, জাতীয়তাবাদের নাম করে প্রতারণা আড়াল করা যায় না। ...আদানি গোষ্ঠী ভারতের পতাকা সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে দেশকে লুঠ করছে।
যদিও বিষয়টা এখানেই থেমে নেই। গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদানিকে বাঁচাতে মাঠে নেমে পড়ে আরএসএস-এর মুখপত্র অর্গানাইজার। আদানির সুরে সুর মিলিয়ে যে প্রতিবেদনের প্রথম দু’লাইনেই বলা হয়েছে, ‘আদানি গ্রুপের উপর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের আক্রমণ একটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং সংগঠিত। কিন্তু, আপনি কি জানেন এর পিছনে কারা?’ এরপর আদানির স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেওয়া থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন বিদেশি এবং আজিম প্রেমজি, সীতারাম ইয়েচুরি, সীমা চিস্তি, প্রবীর পুরকায়স্থ, ধন্যা রাজেন্দ্রন সহ বেশ কয়েকটি ব্যতিক্রমী নিউজ পোর্টালকে এর জন্য দায়ী করা হয়। এমনকী যেখানে তুলে আনা হয়েছে ডিজিপাব নিউজ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের কথাও। যদিও অর্গানাইজার-এর পুরো নিবন্ধে কোথাও হিন্ডেনবার্গ-এর তোলা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে তাদের তোলা ৮৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৬২টি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছে আদানি গোষ্ঠী।
এই জগাখিচুড়িটার শেষে পৌঁছাতে আর সামান্য কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ তা না হলে আদানিকে বাঁচানোর তাগিদ ঠিক কাদের তা স্পষ্ট হবেনা। ৭ ফেব্রুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রসঙ্গে আদানি-মোদির সম্পর্কের ছবি সহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে লোকসভায় বিজেপি-কে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। সেদিন কোনো উত্তর না দিলেও ৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে বক্তব্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদিও ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের ভাষণে একবারের জন্যও আদানি প্রসঙ্গ আনেননি অথবা রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী মোদি। মূল বিতর্ক এড়িয়ে গিয়ে কথা বলেন সম্পূর্ণ অন্য বিষয়ে।
হিন্ডেনবার্গ-আদানি বিতর্কে মূল প্রশ্ন কিন্তু এখানেই। যে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ, যার বিরুদ্ধে তথ্যসহ অভিযোগ করা হয়েছে, যাকে বাঁচাতে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি-র আইটি সেল, আরএসএস-এর মুখপত্র, সেই বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে তিনি নিজে নীরব কেন? তবে কি সব অভিযোগ সত্যি? আমরা ঘরপোড়া গোরু, সিঁদুরে মেঘে ডরাই। শেষ সাত বছরে ‘মেহুল ভাই’, ‘নীরব ভাই’ দেখে বেড়ে ওঠা ছাপোষা মানুষের মন কু-ডাকা স্বাভাবিক। এরপর আবার কোনো গৌতম ভাই আমাদের মনে ব্যথা দিয়ে চলে যাবে না তো?