৫৭ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ১০ জুলাই ২০২০ / ২৫ আষাঢ় ১৪২৭
রেলের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো’র
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভারতীয় রেলের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানালো সিপিআই(এম)। ২ জুলাই এক বিবৃতিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, বিশ্বে রেলের বেসরকারিকরণের ফলাফল কোথাও ভালো হয়নি। মুনাফার দৌড়ে ব্যস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা তুলে দেওয়ার নিদারুণ পরিণতির উল্লেখ করেছে সিপিআই(এম)।
‘আত্মনির্ভরতার’ স্লোগান দিয়ে চলা প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সহযোগীদের উদ্দেশ্যে সিপিআই(এম) বলেছে, এই পদক্ষেপে স্বনির্ভরতার ভিত আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। রেলের বেসরকারিকরণ পরাধীনতার দিকে ঠেলে দেবে।
ভারতীয় রেলের বাছাই করা রুটে বেসরকারি ট্রেন চালানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রায় এক বছর আগেই নিয়েছিল রেল। দেড়শোটি রুটে এমন ট্রেন চলবে, জানা গিয়েছিল রেলবোর্ডের মাধ্যমে। এবার রেলবোর্ড দরপত্রের আহ্বান জানালো। করোনা মহামারীর মধ্যেই বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া হাতে-কলমে শুরু করে দিল রেল।
ভারতীয় রেলের বেসরকারিকরণ, বিশেষ করে, যাত্রীবাহী ট্রেন বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে পলিট ব্যুরো। সিপিআই(এম) বলেছে, স্বাধীন ভারতে এই প্রথম বেসরকারি ট্রেন নামানো হচ্ছে। শতাব্দী পার করে গড়ে তোলা বিপুল পরিকাঠামো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে, যাত্রীবাহী ট্রেন চালিয়ে বিপুল মুনাফার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকারের দাবি, বেসরকারি হাতে ট্রেন চলাচলের দায়িত্ব তুলে দিয়ে বিনিয়োগ বাড়বে, বাড়বে চাকরি। সিপিআই(এম) পালটা বলেছে, অতীতের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে বেসরকারিকরণে বিপুল সংখ্যায় চাকরি উধাও হয়ে যায়। কাজ খোয়ানোর আশঙ্কা রয়েছে রেলের কয়েক কোটি কর্মীর। ভারতীয় রেল দেশে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কোটি কোটি মানুষকে সরকারি পরিবহণ পরিষেবা দেয় রেল। রেলের ওপর দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করে আছে। বেসরকারিকরণে দেশের স্বনির্ভরতার ভিত্তি দুর্বল হবে। পলিট ব্যুরো বলেছে, আন্তর্জাতিক স্তরে অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রাখছে না কেন্দ্র। যেখানে বেসরকারিকরণ হয়েছে সেখানেই বোঝা চেপেছে জনতার ওপর। বেনজির সঙ্কটে পড়েছেন মানুষ। মনে রাখা দরকার ভারতীয় রেল গণপরিষেবার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। মুনাফা অর্জনই এর লক্ষ্য নয়। রেলের এই বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা যাবে না। উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ব্রিটেনে রেলের বেসরকারিকরণের পর থেকে চড়া হারে বেড়ে গিয়েছে যাত্রীভাড়া। ব্রিটিশ সংসদের একটি রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে অন্তত ১৮৪ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে বেসরকারিকরণের পর থেকে। বহু সাধারণ মানুষের যাতায়াতের খরচ বেড়েছে লাফিয়ে।
লকডাউনের মধ্যেই দেশের সম্পদ, সরকারি শিল্প, পরিকাঠামো বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে কেন্দ্রের সরকার। পলিট ব্যুরো বলেছে, জনতা মহামারীর সঙ্গে কঠিন লড়াই করছে। সেই সময়ই বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত। বিশ্বে মহামারী দেখিয়েছে নির্বিচার বেসরকারিকরণের ফল কত মারাত্মক হতে পারে। স্বাস্থ্য পরিষেবা বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় একের পর এক দেশে ভাইরাসের প্রভাব রোখার লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সরকারি পরিবহণ এবং সরকারি পরিষেবা শক্তিশালী করা দরকার, বেসরকারিকরণের মাধ্যমে এগুলিকে দুর্বল করে দেওয়া যায় না।