E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা / ১০ জুন, ২০২২ / ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে প্রচার চালাচ্ছে বামফ্রন্ট


নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বামফ্রন্ট প্রার্থীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার।
ছবিঃ রাজু ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে বামফ্রন্টের জয়ের ধারা এবারের নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। ৭ জুন শিলিগুড়িতে অনিল বিশ্বাস ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেছেন, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে ত্রিস্তরে বোর্ড গঠনের লক্ষ্যেই বামফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তৃণমূল এবং বিজেপি-কে পরাস্ত করে জনমুখী স্বচ্ছ পঞ্চায়েত গঠন করতে আমাদের প্রচেষ্টা জারি থাকবে। এদিন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, আরএসপি নেতা তাপস গোস্বামী, সিপিআই নেতা অনিমেষ গোস্বামী সহ মহকুমা পরিষদের বিভিন্ন আসনে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীরা।

জীবেশ সরকার বলেছেন, মহকুমা পরিষদের ৯টি আসনের মধ্যে ৮টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বামফ্রন্ট। একটি আসনে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থীকে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে সমর্থন করা হয়েছে। অন্যদিকে মহকুমা পরিষদে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দুটি আসনে সমর্থন করা হয়েছে।আলোচনা চলছে।

তিনি তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন সংখ্যা ৬৬। সেখানে বামফ্রন্টগতভাবে ৫৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে। ফাঁসিদেওয়ার দিকে ৩টি আসনে কংগ্রেসকে আমরা সমর্থন করছি। ৮টি আসন এখনও আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। সেইসব জায়গায় বামফ্রন্টের বাইরেও জাতীয় কংগ্রস, নির্দল বা অন্য কাউকে সমর্থন করা যেতে পারে।

এছাড়াও তিনি জানান, গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৬২টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্টগতভাবে ৪০১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে। ৬৫টি আসনে জাতীয় কংগ্রেসকে সমর্থন করা হয়েছে। সেই সমস্ত জায়গায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস একত্রিতভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাবে। ৩০টি আসনে নির্দল, আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, সিপিআই(এমএল)-র দুটি গ্রুপ ও নেপানিয়া এলাকার মোর্চার একজন সমর্থককে সমর্থন দেওয়া হবে।

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের গত নির্বাচনে বিপুল জয়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে অনেক বাধা সত্ত্বেও বামফ্রন্ট জয়ী হয়েছিল। চারটি পঞ্চায়েত সমিতিতে বামফ্রন্ট বোর্ড গঠন করেছিল। গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২টি’র মধ্যে ১৪টিতে সহযোগীদের নিয়ে বামফ্রন্ট প্রধান নির্বাচন করেছিল।

জীবেশ সরকার অভিযোগ করেন, নকশালবাড়ি বাজার গ্রাম পঞ্চায়েত কেন্দ্রের আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করায় এবিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।

জিটিএ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ৪৫টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে বামফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ১২টি কেন্দ্রে সিপিআই(এম) এবং ৩টি কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জিটিএ সফল হয়নি। এর তুলনায় দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল অনেক শক্তিশালী ছিল।

এদিকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সমর্থনে বিভিন্ন জায়গায় সভা, কর্মীসভা, মিছিল ইত্যাদি চলছে। এই প্রচার কর্মসূচিগুলিকে ঘিরে মানুষের ভালো সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে সবস্তরে জয়লাভ সুনিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন বামফ্রন্ট কর্মীরা। তাঁরা গ্রামীণ এলাকার মানুষের সামনে বিভিন্ন স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতির কথা তুলে ধরছেন। একই সঙ্গে স্বচ্ছ, দক্ষ, যোগ্য গ্রাম পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে বামফ্রন্ট ও বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়ী করার আবেদন জানাচ্ছেন বামফ্রন্ট কর্মীরা।

সম্প্রতি মাটিগাড়া, চম্পাসারি প্রভৃতি বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলিতে বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) নেতা অশোক ভট্টাচার্য, পার্টির জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, পার্টি নেতা জয় চক্রবর্তী, পার্থ মৈত্র, মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তাপস সরকার, মহকুমা পরিষদের প্রার্থী মণি থাপা প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ সভাগুলিতে বিগত মহকুমা পরিষদের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রামীণ উন্নয়নের সুফল হিসেবে মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া ব্লকগুলিতে শহুরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামীণ এলাকায় ৭৪ হাজার পরিবারের জন্য শৌচালয় তৈরি করা হয়েছিল। বিভিন্ন রাস্তা, গলি পাকা হয়েছে। গরিব মানুষকে ভাতা দেবার ব্যবস্থা হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে জোর দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়নে তখন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ প্রকৃত কাজ করেছে। যা আজও মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। অন্যদিকে তৃণমূল সরকারের সময়ে গ্রামাঞ্চলে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জমি মাফিয়া ও দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। ১০০ দিনের কাজে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি করছে তৃণমূল। পাশাপাশি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জায়গায় নানভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস।

সিপিআই(এম) নেতা ও মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে বামফ্রন্ট প্রার্থী গৌতম ঘোষ জানিয়েছেন, বাড়ি বাড়ি নিবিড় প্রচার চলছে। সাধারণ মানুষের সমর্থন রয়েছে বামপন্থীদের দিকেই। তিনি বামফ্রন্টের জয়ের ব্যাপারে প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, বিগত বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের সময়ে উন্নয়নের সাক্ষী আছেন মানুষ। তখন এই মহকুমা পরিষদ বিভিন্ন উন্নয়নে ইউনিসেফ সহ জাতীয় স্তরের পুরস্কার অর্জন করেছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে সেই বোর্ড ভেঙে দিয়ে উন্নয়নকে বানচাল করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির বাসা তৈরি করেছে। তিনি জানান, এতদিন ঠিকাদার, জমির দালাল, নব্য ধনীদের অংশ যারা পঞ্চায়েতে লুটের সাথে যুক্ত ছিল, তাদের অনেককেই এবারে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। অন্যদিকে বিজেপি'র বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও বহু জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি। যে সমস্ত মানুষ তাদের সমর্থন করেছিল, তাদের মোহভঙ্গ হচ্ছে এবং তাদের বেশিরভাগই বামফ্রন্টকে সমর্থন করবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এই অবস্থায় বামফ্রন্ট দুর্নীতি, অপশাসনের বিরুদ্ধে উন্নয়ন ও স্বচ্ছ প্রশাসন পরিচালনার কথাই সর্বাগ্রে তুলে ধরে প্রচারে শামিল হয়েছে।