E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা / ১০ জুন, ২০২২ / ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ১৫ জুন থেকে একমাসব্যাপী কয়লা শিল্পে আন্দোলনের ডাক


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কয়লা শিল্প বিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পিত হামলার বিরুদ্ধে একমাসব্যাপী লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সিআইটিইউ অনুমোদিত অল ইন্ডিয়া কোল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (এআইসিডব্লিউএফ)। ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত কোল ইন্ডিয়ার সর্বত্র এই আন্দোলন চলবে। এবিষয়ে কয়লা অঞ্চলের মানুষকে যুক্ত করার জন্য জনজাগরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্প বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে। গত ৩ ও ৪ জুন রাঁচিতে অনুষ্ঠিত কোল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের বৈঠক থেকে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এই বৈঠক উদ্বোধন করেছেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। ফেডারেশনের সভাপতি প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্প বিরোধী লাগাতার পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কয়লা শিল্পে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়লা সমৃদ্ধ নতুন অঞ্চল বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কমার্শিয়াল মাইনিং-এর আইনের পর এবার সিআইএল’র সাবসিডিয়ারি ভারত কোকিং কোল লিমিটেড (বিসিসিএল) এবং কোল মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন ইনস্টিটিউট লিমিটেড (সিএমপিডিআইএল)-কে সিআইএল থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। এই দুটি সংস্থাকে সিআইএল থেকে বিচ্ছিন্ন করে সাবসিডিয়ারিগুলির বিলগ্নিকরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুটি সংস্থার ২৫ শতাংশ শেয়ার বিলগ্নিকরণের জন্য সেবি’র কাছে লিস্টিং করা হয়েছে। পরে একইভাবে ইসিএল-কে বিচ্ছিন্ন করে বিক্রি করা হবে।

তপন সেন এবং বাসুদেব আচারিয়া জানিয়েছেন, ইসিএল এবং বিসিসিএল-এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। সিআইএল এবং তার সাবসিডিয়ারি বিসিসিএল, সিএমপিডিআইএল এবং ইসিএল-সহ রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্পের সর্বত্র একমাসব্যাপী তীব্র লড়াই গড়ে তোলা হবে। গত ৫ মে মুম্বাইয়ে কয়লা অধ্যুষিত ২০টি চালু খনি বেসরকারি মালিকদের জন্য নিলাম করে দেওয়া হয়েছে। এই খনিগুলির উৎপাদন নানা কারণ দেখিয়ে বন্ধ রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। এখন বলছে, খনিগুলিতে প্রচুর মজুত ভাণ্ডার আছে। ২০ বছর ধরে বেসরকারি মালিকরা উৎপাদন করতে পারবে। নিলাম প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রফিট শেয়ারিং’ পদ্ধতি। বেসরকারি মালিকের লাভ হলে (মালিকরা যদি লাভ দেখায়) মাত্র ৪ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে সরকারকে। এমন আরও ১৬০টি খনি বেসরকারি মালিকদের জন্য নিলাম করা হবে। নেতৃবৃন্দ জানান, বিনামূল্যে এই খনিগুলি তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি মালিকদের হাতে। এ পর্যন্ত সিআইএল-এর ৩৫ শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে।

কয়লা শ্রমিকদের সংগ্রামী ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাসুদেব আচারিয়া বলেন, কয়লা শ্রমিকদের এফডিআই বিরোধী আন্দোলন, কমার্শিয়াল মাইনিং বিরোধী আন্দোলন সারা দেশের শ্রমিক শ্রেণিকে প্রেরণা দিয়েছে। কমার্শিয়াল মাইনিং আইন করে কেন্দ্রীয় সরকার বেসরকারি মালিকদের হাতে ৭৩টা কোল ব্লক তুলে দিতে চেয়েছিল। মাত্র ২১টা ব্লকের নিলাম হয়েছে। আন্দোলনের ফলে কেন্দ্রের মনোবাসনা পূরণ হয়নি। যে কোল ব্লকগুলি বেসরকারি মালিকদের দেওয়া হয়েছে, সেখানে তিন বছর ধরে কোনো উৎপাদন হয়নি। তিনি বলেন, কমার্শিয়াল মাইনিং বিরোধী সফল ধর্মঘট করেছেন কয়লা শ্রমিকরা।

কোল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভায় উঠে এসেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্পে স্থায়ী শ্রমিক কমছে। বাড়ছে ঠিকা শ্রমিক ও আউটসোর্সিং। কেন্দ্রীয় নির্দেশে বেপরোয়া আউটসোর্সিং চলছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্পে। কর্তৃপক্ষ চাইছে, উৎপাদনের ৮৬ শতাংশ আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে করতে এবং ১৪ শতাংশ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকুক স্থায়ী শ্রমিকরা। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই আগামী ১৫ জুন একমাসব্যাপী লাগাতার আন্দোলনের পথে অগ্রসর হচ্ছেন কয়লা শিল্পের শ্রমিকরা।