৫৯ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৩ জুন, ২০২২ / ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
“...সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র...”
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কুয়েতের শপিং মলে ভারতীয় পণ্য বয়কট।
বাবা দুলছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চোখে পড়ল বিষয়টা। আমি যতটুকু আমার বাবাকে চিনি তাতে কখনই তাঁকে দোদুল্যমান বলে মনে হয়নি। প্রশ্নহীন আনুগত্যকে প্রশ্রয় না দিয়েও তাঁকে কখনও কোনো বিষয়েই দুলতে দেখিনি। কিন্তু আজ দেখলাম বাবা দুলছেন। আর মিটি মিটি হাসছেন। ঘোর লেগে গেল কিছুটা। এখনও কি ঘুমোচ্ছি আমি? তিনিও কি সময়ের চক্করে পড়ে গেলেন? যেখানে চারিদিকেই ‘অদ্ভুত আঁধার এক...’। যেখানে ‘যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;’? যেখানে বদলে যাবার আগে, পালটি খাবার আগে, শিবির বদলানোর আগে ভাবার কোনো প্রশ্নই নেই। নীতিহীন, মূল্যবোধহীন পালটিই যেখানে শেষ কথা? তবে কি? এও কি তবে সময়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ? যেখানে মানুষ অবলীলায় বলে দিতে পারে - আমি পালটে গেছি। আমি পালটে গেলাম। এটাই কি সেই পৃথিবী যেটায় ‘যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই’ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া অচল? এসব বরং থাক।
শঙ্খ লিখেছেনঃ ঘিরে ফেলছো তুমি আমায় সমস্ত দিক থেকে। আবার অন্য এক জায়গায় লিখেছেনঃ ‘বুঝতে একটু দেরি হয়, কোনটা পথ, কোথায় বা যাব/আসলে যাওয়াই কথা, হোক-না সে যাওয়া জাহান্নামে।’ যাচ্ছি কোথায় বুঝে ওঠার আগেই যেহেতু সময় অনেকটা চলে যায়, ‘বুঝতে একটু দেরি হয়’, তাই কোনো কিছুকে সঠিক গন্তব্য ভেবে নিয়ে পৌঁছে যাবার পর অনেক ক্ষেত্রেই আঙুল কামড়াতে হয়। এটাই কি আমি, আমরা চেয়েছিলাম? যদিও তখন হা-হুতাশ ছাড়া বিশেষ কোনো সম্বল বেঁচে থাকে না বোধহয়!
নূপুর শর্মা বা নবীন জিন্দালদের নাম আমরা এই কয়েকদিন আগেও জানতাম না। এঁরা কারা, কোন দলের, কোথায় যান, কী বলেন - এত মাথা ব্যথা কারুরই ছিল না। আমরা ক’জনই বা পূজা শকুন শর্মা, প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, অনুরাগ ঠাকুর, ইয়াতি নরসিংহ, সাগর সিন্ধু মহারাজ, ধরমরাজ মহারাজ, উদিতা ত্যাগী, রাজা সিং, সম্বিত পাত্র প্রমুখদের নাম জানি। আমার দেশের, রাজ্যের, অঞ্চলের শতকরা ৯৯ জন কখনও এঁদের নাম শোনেননি। যদিও এঁরা বলেন। বলে থাকেন। প্রকাশ্য সভায় বলেন, টিভি বিতর্কে বলেন, ধর্ম সংসদে বলেন। এঁদের না চিনলেও এঁদের বক্তব্যের নির্যাস ছড়িয়ে যায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তৃণ থেকে তৃণমূল স্তরে। যে মানুষটা কখনও বিষ গাছ দেখেননি তাঁর মনে, তাঁদের মনে বিষবৃক্ষ স্থাপনের অনুঘটক হিসেবে এঁরা নিরন্তর কাজ করে যান। মাঝে মধ্যে কখনও এফআইআর দায়ের হলে অথবা বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হলে এঁরা মিডিয়া হাইপে আসেন। একটু চর্চা হয়। তারপরেই রোদ্দুর রায়, বা রূপঙ্কর বাগচীরা এসে আমাদের উলটো স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে চলে যান সুপরিকল্পিতভাবেই। যদিও সবকিছু বুঝতে আমাদের সত্যিই একটু দেরি হয়ে যায়। গাছবোমার সলতেতে তখন আগুন ধরে গেছে। চড়চড় করে পুড়তে পুড়তে আগুন তখন বোমার মশলায় কড়া নাড়ছে। ‘নিজের হাতেই খাল কেটে পথ দিলাম কুমিরটাকে। এখন ওরা সেই আমাকেই কামড়ে খেতে চায়।’ খেতে তো তাদের দিতেই হবে...
নূপুর শর্মা বা নবীন জিন্দাল টিভি বিতর্কে কী বলেছেন বা কী ট্যুইট করেছেন সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। শুনিনি বা দেখিনি। তবে সবাই এতদিনে জেনে গেছি ‘হেট স্পিচ’ বা অন্য ধর্মের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করার জন্য এঁরা বিজেপি থেকে ‘সাসপেন্ড’ হয়েছেন। আবার সাসপেন্ড হবার পর এঁরা পুলিশি নিরাপত্তাও পেয়েছেন। তড়িঘড়ি এক প্রেস বিবৃতিতে, বিজেপি জানিয়েছে, ‘‘ভারতের হাজার বছরের ইতিহাসে সব ধর্মই প্রস্ফুটিত এবং বিকাশ লাভ করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি সব ধর্মকে সম্মান করে। বিজেপি যে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অবমাননার তীব্র নিন্দা করে। ভারতীয় জনতা পার্টিও এমন কোনো মতাদর্শের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে অবস্থান গ্রহণ করে। যে মতাদর্শ কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মকে অপমান করে বা অবমাননা করে। বিজেপি এই ধরনের ব্যক্তি বা দর্শনকে প্রচার করে না।’’ কোনো কোনো মেইনস্ট্রিম মিডিয়া আগ বাড়িয়ে এঁদের ‘বহিষ্কার’ করা হয়েছে বলে বাজার গরম করলেও এরকম কোনো তথ্য এখনও হাতে আসেনি। যাক সে কথা। কোন দল কাকে সাসপেন্ড করবে বা কাকে বহিষ্কার - সেটা তো তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যদিও এঁদের সাসপেনশনের পর ট্যুইটারে ট্রেন্ড করেছে ভাড়াটে বাহিনী। কেউ কেউ নূপুর শর্মাকে ‘আজ কা দুর্গা’ কিংবা ‘ভারত কী রানি’ বলে পোস্ট দিয়েছেন। বিধর্মীদের মুণ্ডপাত করেছেন। এ সবই পার্ট অফ দ্য গেম। বুঝতে একটু দেরি হয়ে যায় - এই যা।
যদিও বিষয়টা এখানেই থেমে থাকেনি। বরং দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। কাতার, কুয়েত, বাহরিন, সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে প্রতিবাদ ধেয়ে এসেছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে কাতার এবং কুয়েতের পক্ষ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই দুটি দেশ মোদি সরকারকে এই ঘটনার জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। ইরান এই ঘটনাকে ‘ইসলামোফোবিক’ আখ্যা দিয়েছে। অন্যান্য আরব দেশও ভারতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কুয়েতে নাকি বেশ কিছু দোকান থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবস্থা সামাল দিতে কাতারে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, ‘এটা কোনভাবেই ভারত সরকারের মনোভাবের প্রতিফলন নয়। ভারত সরকার বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সাংস্কৃতিক পরম্পরা অনুযায়ী, সমস্ত ধর্মকেই সর্বোচ্চ সম্মান দেয়। এ সব কিছু উটকো লোকের কাজ। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবার এক হয়ে কাজ করতে হবে।’ কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে 'অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন' (ওআইসি) থেকে। এক বিবৃতিতে ওআইসি জানিয়েছে, ‘ভারতে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব, মুসলমানদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও তাঁদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলনের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা সামনে এসেছে।’ যদিও এই ওআইসি কারা এবং কীভাবে তাদের সৃষ্টি সেও এক যথেষ্ট বিতর্কিত বিষয়। সেটা আপাতত উহ্য থাক। মূল বিষয় হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে প্রতিবাদ ধেয়ে আসার পর দুই চুনোপুঁটি বিজেপি মুখপাত্রর সাসপেনশন। যা যতটা না আন্তর্জাতিক চাপে তার চেয়ে বেশি বোধহয় ২০২২-২৩-এর বেশ কয়েকটা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচনকে লক্ষ রেখে।
এ প্রসঙ্গে অন্য একটা কথা টুক করে বলে নেওয়া যাক। ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই নিয়ে টানা চতুর্থবার। গত ২ জুন, মার্কিন কংগ্রেসে 'আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা, ২০২১’ নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তাতেই উঠে এসেছে উদ্বেগের কাহিনি। জানা গেছে, মার্কিন বিদেশমন্ত্রীর পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সারা বছর ধরে ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। হত্যা, মারধর করা, হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো, হেনস্থা করা ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে গোমাংস নিয়ে অহিন্দুদের উপর স্বঘোষিত গোরক্ষকদের হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই রিপোর্টেরও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। বিষয়ে ফেরা যাক।
একাধিক পশ্চিম এশীয় দেশ থেকে প্রতিবাদ ধেয়ে আসার পর দেশের মাটিও আপাতত এই বিতর্কে সরগরম। বিজেপি ধর্মান্ধদের ঘৃণ্য মন্তব্যের জন্য দেশ হিসেবে ভারত কেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইবে? নূপুর শর্মা বিতর্কে পশ্চিম এশীয় দেশগুলিতে ওঠা নিন্দার ঝড় প্রসঙ্গে এভাবেই কেন্দ্র এবং বিজেপি-কে আক্রমণ করেছেন একাধিক বিরোধী দল ও তাদের নেতৃত্ব। তাদের দাবি, দেশ নয়, বিজেপি ক্ষমা চাক রাজনৈতিক দল হিসেবে। তবে সবার প্রথমে দেশবাসীর কাছে বিজেপি’র ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও তাদের দাবি। যেমন তেলেঙ্গানার শাসকদলের মন্ত্রী কেটিআর এক ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদিজি, বিজেপি’র ধর্মান্ধদের ঘৃণ্য মন্তব্যের জন্য কেন দেশ হিসেবে ভারতকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে? এখানে বিজেপি-রই ক্ষমা চাওয়া উচিত, দেশ হিসেবে ভারতের নয়। তারও আগে দিনের পর দিন ঘৃণা ছড়ানোর জন্য আপনার দলের উচিত প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’
এরপরের একটি ট্যুইটে বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের কয়েকটি বিতর্কিত মন্তব্যের খবরের স্ক্রিনশট পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘মোদিজি, আপনার নীরবতা আমাদের হতবাক করে দিয়েছিল যখন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিং মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার প্রশংসা করেছিলেন। আপনাকে মনে করিয়ে দিই স্যার, আপনি যা প্রচার করতে চান, আপনি তাই অনুমোদন করেন। এই যে ধর্মান্ধতা এবং ঘৃণাকে উপরমহল থেকে নিরঙ্কুশ সমর্থন করা হচ্ছে, এটি ভারতের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।’’
কংগ্রেস নেতা পবন খের এক ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, ‘‘ভারত কোনো ভুল করেনি যে ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে। ভুল করেছে বিজেপি। দেশ কেন ক্ষমা চাইবে? প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর রাজধানীর কথা কাতার কুয়েত মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশের কাছে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?’’
সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা এক ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন, “তথাকথিত ‘পরগাছা উপাদান’-ই ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সরকারি মুখপাত্র ছিল। তারা যা বলেছে তা সংখ্যালঘুদের দানব হিসেবে প্রচার করার আরএসএস বর্ণনা থেকে আলাদা নয়, যা তারা ১৯২৫ সাল থেকে করে আসছে। সরকার কী আরএসএস-কে একটি প্রান্তিক সংগঠন ঘোষণা করছে?”
সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে এক ট্যুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, “তাঁকে সমর্থনের জন্য নূপুর শর্মা প্রকাশ্যে দলীয় নেতা অমিত শাহ, পিএমও এবং অন্যান্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এখন অন্যান্য দেশের চাপে বিজেপি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং তাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছে। এরা বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের পৃষ্ঠপোষক। এদের নিন্দা করুন, বিচ্ছিন্ন করুন, পরাজিত করুন। ভারতকে বাঁচান।”
৮ জুন এক প্রেস বিবৃতিতে এডিটরস গিল্ড জানিয়েছে, ‘কিছু সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে উদ্বিগ্ন এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেখানে একটি দুর্বল সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে তাদের প্রতি এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং সর্বোপরি জনগণের স্বার্থে গঠনমূলক আলোচনার বিস্তার ঘটানোর দায়িত্ব পালন করতে হয় সংবাদমাধ্যমকে। এমনকী, দাঙ্গা বা গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলাকালে সংবাদ পরিবেশন বা বিতর্ক, আলোচনার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা নিতে হয়।’
এই পারস্পরিক চাপানউতোর হয়তো আরও কিছুদিন চলবে। পরবর্তী বাজার গরম করা ইস্যু না আসা পর্যন্ত চলতেই থাকবে। দেশের মাথা হেঁট, বিজেপি’র দুই মুখপাত্রের বহিষ্কারের তরজার মধ্যেই কিন্তু ঘটে যাচ্ছে, গেছে আরও বেশ কিছু ঘটনা। যদিও গত কয়েকদিনে মিডিয়া নূপুর শর্মা আর নবীন জিন্দাল নিয়ে যত সময় আর নিউজ প্রিন্ট খরচ করেছে ততটা করেনি এলআইসি-র মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কমে যাওয়া বা শেয়ারের দামে পতন নিয়ে। আলোচনা হয়নি পিএফ-এর সুদ কমিয়ে দেওয়া নিয়ে অথবা রেপো রেট বাড়িয়ে দেওয়া নিয়ে। আলোচনা হয়নি স্কুলছুট নিয়ে কিংবা রেগার মজুরি না পেয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের একাধিক আন্দোলন নিয়ে। এই রাজ্যের ক্ষেত্রেও অনেকটা পিছনে ঠেলে দেওয়া গেছে এসএসসি নিয়োগের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতিকে। আর অন্যদিকে একটু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নূপুর শর্মা ইস্যুতে হুইসপারিং ক্যাম্পেন। যে প্রচার ঘুণ পোকার মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে সমাজের নিচ থেকে আরও নিচে। যার ফল ফলতে সময় লাগবে আরও কিছুটা। এক ঘৃণার কথা তুলে এনে নীরবে চলছে আরও ঘৃণা ছড়ানোর কাজ। নিঃশব্দে।
আজ ঘুম ভেঙে প্রথম বাবাকে দুলতে দেখেছিলাম। একটু ঘোর কাটতে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম ছবি হয়ে যাওয়া বাবার ফ্রেমের পেছনের দড়িটা কিছুটা আলগা হয়ে গেছে। আলতো করে ছবিটা নামিয়ে দড়িটা আবার টেনে বেঁধে দিলাম। এখন বাবা আর দুলছেন না। মেরুদণ্ড সোজা রাখলে দুলুনি আসে না। শুধু একটু বোধহয় বুঝদার হতে হয়। না হলে দুলুনির গ্রাসে গ্রস্ত হতে কতটুকু আর সময় লাগে? আজ শেষ করি শঙ্খ কবিকে দিয়ে। ‘বোঝা’ কবিতায় যিনি লিখেছেন - ‘হঠাৎ কখনো যদি বোকা হয়ে যায় কেউ, সে তো নিজে আর/ বুঝতেও পারে না সেটা। যদি বুঝতই তাহলে তো বুঝদারই/ বলা যেত তাকে।’