৬০ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১০ মার্চ, ২০২৩ / ২৫ ফাল্গুন, ১৪২৯
লড়াইয়ের পথ থেকে সরব নাঃ জামিনে মুক্তির পর আইএসএফ বিধায়ক নৌসাদ সিদ্দিকি
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর নৌসাদ সিদ্দিকিকে অভিনন্দন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ৪২ দিন আটক থাকার পর অবশেষে ২ মার্চ জামিন পেয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ বিধায়কের জামিন মঞ্জুর করে। শুধু বিধায়ক নন, আইএসএফ রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মাইতি সহ ২১ জনের জামিন হয় এদিন। ৪ মার্চ প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ছাড়া পান তাঁরা। মিথ্যা মামলায় ৪২ দিন জেলে বন্দি ছিলেন বিধায়ক সহ আইএসএফ কর্মীরা। মুক্তির পর জেলের সামনে তাঁকে অভিনন্দন জানান সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি মুক্তির পর বলেন, আইএসএফ যে লড়াইয়ের মধ্যে ছিল সেই লড়াই থেকে সরবে না। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের একাধিক দুর্নীতির বিষয়ে তিনি সরব থাকবেন বলে জানিয়েছেন। আইনজীবী এবং কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীর গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে, কৌস্তভের পাশে রয়েছেন।
গত ২১ জানুয়ারি ধর্মতলা থেকে নওসাদ সহ ৮৮ জন আইএসএফ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে বহু মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ৪২ দিন জেলে আটক থাকার পর আইএসএফ বিধায়ক ছাড়া পান। কোর্টে পুলিশের কোনো যুক্তিই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেঁকে নি। শুনানিতে হাইকোর্ট পুলিশের আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে।
বিচারপতিদের ডিভিশন বেঞ্চ এর আগে মন্তব্য করে, সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই পুলিশ এত মানুষকে গ্রেপ্তার করে জেলে রেখে দিয়েছে। এটা কী করে হয়! ধৃতদের মধ্যে কোনো পথচারীও থাকতে পারেন। তাছাড়া পুলিশকে মারার নির্দেশের কোনো প্রমাণও দিতে পারেনি পুলিশ। বিচারপতিরা জানতে চান, পুলিশকে মারার প্রমাণ কোথায়? অবরোধের জন্য দীর্ঘসময় কেন ৮৮ জনকে আটকে রাখা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। মমতা ব্যানার্জির পুলিশ বিধায়কের হোয়াটসঅ্যাপ বার্তালাপ উল্লেখ করা সহ নানা অভিযোগ তুললেও তার মধ্যে অপরাধ কোথায় তা জানাতে পারেনি। এরপর এক প্রস্ত শুনানির পর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারপতিদের ডিভিশন বেঞ্চ। জামিনের আবেদনকারীদের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আইনজীবী সামিম আহমেদ।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই নওসাদ সিদ্দিকি সহ মিথ্যা মামলায় যতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সমস্ত মামলা খারিজ হোক এবং যে পুলিশ অফিসাররা এই মিথ্যা মামলা করেছেন তাঁদের বেতন কেটে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হোক। আদালতের কাছে আমরা এই আবেদন করব।
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি ভাঙড়ে আইএসএফ কর্মীদের ওপর আক্রমণ হানে তৃণমূলের আরাবুল বাহিনী। কলকাতায় আইএসএফ ওইদিন একটি দলীয় কর্মসূচি শুরু করলে সে সময়ে তাঁদের ওপর হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে নওসাদ সিদ্দিকি সহ বহু কর্মীকে। এরপর বিভিন্নভাবে নানা অজুহাতে বিধায়ক সহ আইএসএফ কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ সাজায় পুলিশ। হেয়ার স্ট্রিট থানা, নিউমার্কেট থানা, লেদার কমপ্লেক্স থানায় মামলা দায়ের হয়।
ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট জামিন প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেছে, ...নিঃশর্ত জামিন আরও একবার প্রমাণ করল যে, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না, সত্যের জয় অবধারিত। স্বৈরাচারী তৃণমূল কংগ্রেস দুর্নীতি ও দুর্বৃত্ত দ্বারা পরিচালিত। এদেরকে আরও জনবিচ্ছিন্ন করতে হবে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হবে ও দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে হবে। ...গণতন্ত্রকে পদদলিত করে, সাংবিধানিক অধিকারকে ভূলুন্ঠিত করে রাজ্য সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতিতে লিপ্ত। হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায় নিঃসন্দেহে সরকারকে জোর থাপ্পড় কষিয়েছে। আমরা বারবারই বলে এসেছি, বিচারব্যবস্থার ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। ...সমাজ বদলের লড়াই আইএসএফ বুক চিতিয়ে লড়বে।
এর আগে এই গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে এবং ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সকলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং আরাবুল ইসলাম সহ অন্যান্য তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারির দাবিতে রামলীলা ময়দান থেকে রানী রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিল আয়োজিত হয়। মিছিলে সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি সহ আইএসএফ, ওয়েলফেয়ার পার্টি এবং আরও বহু সংগঠন তাদের পতাকা নিয়ে শামিল হয়। প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম ছাড়াও মিছিলে ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা শমীক লাহিড়ী, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য প্রমুখ।