৬০ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১০ মার্চ, ২০২৩ / ২৫ ফাল্গুন, ১৪২৯
কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীকে নির্লজ্জ স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় গ্রেপ্তারের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ধিক্কার
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয়ে বিচলিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হার মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৩ মার্চ। ওইদিন গভীর রাতে কংগ্রেস নেতা এবং আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে গ্রেপ্তার করে বটতলা থানার পুলিশ। তবে ওই আইনজীবীকে আটকে রাখতে পারেনি মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। অগণতান্ত্রিক গ্রেপ্তারির প্রায় ৮ ঘণ্টা পরে জামিন পেলেন তিনি ব্যাঙ্কশাল কোর্ট থেকে। মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ও দলের সহ-সভাপতি দীপক ঘোষের একটি বই থেকে তিনি কিছু উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে। তার জেরেই তৃণমূল সরকারের রোষে পড়েন তিনি। আদালতে কৌস্তভ বাগচীর হয়ে সওয়াল করেন সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য সহ শতাধিক আইনজীবী।
ঘটনার সুত্রপাত মুখ্যমন্ত্রীর একটি স্বৈরাচারী মন্তব্য থেকে। সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে পরাজয়ের পরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কন্যার মৃত্যু নিয়ে অযাচিতভাবে অশোভন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা ব্যানার্জির ওই মন্তব্যের জেরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই ন্যক্কারজনক মন্তব্যের বিরুদ্ধেই মুখ খুলে রাজ্য সরকারের বিরাগভাজন হন আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী। আশ্চর্যজনক হলো এর আগে বিজেপি’র কাছে লোকসভায় বহু আসন তাঁর হাতছাড়া হলেও এমন প্রতিক্রিয়া দেননি এবং বিজেপি নেতাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তুলে আনেননি তিনি।
কৌস্তভ বাগচীর মা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ৩মার্চ রাত তিনটের সময় বারাকপুরের ওল্ড কলকাতা রোডের ব্যাংক পার্ক এলাকায় আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর বাড়িতে পৌঁছে যায় বটতলা থানার পুলিশ। দরজা খুলতেই পুলিশ ভেতরে ঢুকে জোর করে তাঁকে গ্রেফতার করে। রাত সাড়ে দশটার সময় ওই থানায় তৃণমূলের এক কর্মী অভিযোগ জানিয়েছিল। মাঝ রাতে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই কৌস্তভকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে কৌস্তভের আট দিনের হেপাজত চাওয়া হলেও পুলিশের যুক্তি উপেক্ষা করে ব্যাঙ্কশাল আদালতের পক্ষ থেকে জামিন দেওয়া হয়েছে কৌস্তভকে।
সরকার এবং পুলিশের এই ভূমিকার কড়া নিন্দা করেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘কৌস্তভকে গ্রেপ্তার করায় রাজ্যের বিরোধী আন্দোলনের ক্ষতি হয়নি। বরং রাজনৈতিক মোকাবিলার বদলে পুলিশ দিয়ে বিরোধীদের দমানোর প্রবণতা ফের ধরা পড়েছে। তিনি যে দিল্লির নরেন্দ্র মোদির মতোই, বারবার দেখিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।... এর আগে যুবনেত্রী মীনাক্ষি মুখার্জিকে গ্রেপ্তার করে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেছিল পুলিশ। বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকিকে জেলে পাঠিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বিরোধীদের সহ্য করতে রাজি নয়। তবে রাজ্যকে জেলখানা বানানোর চেষ্টা হলে কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।’’ সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘মোদি এবং মমতার মধ্যে কোনো ফারাক নেই। কেন্দ্রে ফ্যাসিস্ত সরকার চলছে। রাজ্যে স্বৈরাচারী সরকার চলছে।’’
এর আগে কার্টুন কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং সুব্রত সেনগুপ্ত। জনসভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় মুখ্যমন্ত্রীর রোষের শিকার হয়েছিলেন মেদিনীপুরের শিলাদিত্য। তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
কংগ্রেস নেতা এবং আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপি’কে একযোগে আক্রমণ করেছেন আইনজীবী সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘মোদি মমতা একই বাগানের ফুল। কেন্দ্রীয় সরকার বা মোদির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কংগ্রেস নেতা পবন খেরাকে যেমন গ্রেপ্তার করা হয়েছে দিল্লি বিমান বন্দর থেকে, ঠিক সেইভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে কৌস্তভকে।’’