৬০ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১০ মার্চ, ২০২৩ / ২৫ ফাল্গুন, ১৪২৯
বিজেপি-তৃণমূল আদিবাসীদের উন্নয়ন চায় না - দরকার ওদের ভোট
সুপ্রতীপ রায়
কেন্দ্রের সরকার এবং আমাদের রাজ্যের সরকার পরিচালনা করছে যে দু’টি দল তারা পরিচিতিসত্তার রাজনীতি করছে। ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত, ভাষাগত বিভাজন সৃষ্টি করে চলেছে বিজেপি এবং তৃণমূল। আদিবাসীদের নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করছে।কিন্তু আদিবাসীদের প্রকৃত উন্নয়ন কখনই চায় না কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল।
এটা খুব পরিষ্কার বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রের সরকার করপোরেটরাজ কায়েম করতে আদিবাসীদের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। আদিবাসীদের স্বার্থরক্ষাকারী সিএনটি-এসপিটি আইনের রক্ষাকবচ, পেসা আইন এমনকী সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তুলে দিয়ে আদিবাসীদের উপর কোম্পানিরাজ চাপিয়ে দিতে চাইছে।আসাম, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, গুজরাট সহ বিভিন্ন রাজ্যে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, জল, জমি, অরণ্যের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসীদের অবস্থা গত এক দশকে খারাপ হয়েছে। আদিবাসীদের জমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে।
ভারতে প্রায় ৭০৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস।আফ্রিকার পর এই ভূখণ্ডেই রয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আদিবাসী মানুষ। মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যে জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি আদিবাসী। নয়া উদারবাদী অর্থনীতিতে আদিবাসীরা বিপন্ন। ফলে আদিবাসীদের সংখ্যা কমছে।যেমন অরুণাচল প্রদেশে ১৯৫১-তে মোট জনসংখ্যায় উপজাতিরা ছিল ৯৯ শতাংশ। ১৯৯১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬৪ শতাংশের নিচে। আসামের সমতল বোড়োরা বোড়োল্যান্ড অঞ্চলের অনেক জায়গায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে।
দেশের প্রধানমন্ত্রী আর আমাদের রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী দুজনই মিথ্যাবাদী। আদিবাসীদের নিয়ে নানা চটকদারি কথা মোদি-মমতা বলেন। দারুণ দারুণ ঘোষণা করেন। সংবিধানে আদিবাসীদের সুরক্ষার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা আছে। ওগুলিকে মান্যতা দিলে চটক, চমকের কোনো প্রয়োজন হয় না। সংবিধানে অনেক দুর্বলতা থাকলেও আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির উন্নয়নের জন্য বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা আছে। সংবিধানে আদিবাসীদের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের বিষয়ে স্পষ্ট দিক্ নির্দেশ আছে।
সংবিধানের ৩৬৬(২৫) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘সংবিধানের ৩৪২ ধারার আওতায় থাকা আদিবাসী ও আদিবাসী গোষ্ঠীগুলিই হলো তপশিলি উপজাতি। সংবিধানের ৪৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘রাষ্ট্র বিশেষ যত্নের সঙ্গে সমাজের দুর্বলতর অংশ, বিশেষ করে তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতিদের শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করবে এবং তাদের সামাজিক অবিচার ও সমস্ত রকমের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করবে। ১৫ ও ১৬নং ধারায় তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্রের হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের ওপর অপরাধমূলক ও হিংসার ঘটনা প্রতিরোধে এবং বিভিন্ন অত্যাচারের শিকার মানুষদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে সংসদে প্রণীত হয়েছে, ‘তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি (নির্যাতন প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৯’।
আদিবাসীদের স্বার্থেই গঠন করা হয়েছিল তপশিলি উপজাতিদের জন্য জাতীয় কমিশন বা এনসিএসটি। এই কমিশনের প্রধান কাজ তপশিলি উপজাতিদের স্বার্থ রক্ষা করা। জনজাতিদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করাই এই কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব।এই কমিশন দেওয়ানি আদালতের সমতুল ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
কিন্তু কথাটা হচ্ছে সাংবিধানিক বিধানগুলির মান্যতা কতটা দেওয়া হচ্ছে? কমিশন কতটা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে?
অরণ্যের অধিকার আইন কতটা কার্যকর? তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের হাতে বনাঞ্চল তথা সেখানে বাস করার অধিকারের স্বীকৃতি দিতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘তপশিলি উপজাতি ও অন্যান্য প্রথাগত অরণ্যবাসী সম্প্রদায় (অরণ্যের অধিকারের স্বীকৃতিদান) আইন, ২০০৬।’ অরণ্যের অধিকার বিলটি যখন ২০০৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংসদে পেশ করা হয় তখন এর নাম ছিল ‘‘শিডিউল্ড ট্রাইবস্ বিল - ২০০৫’’। এক বছর ধরে নানা আলোচনার পর নতুন নামে ‘The Scheduled Tribes and Other Traditional Forest Dwellers Act, 2006’। লোকসভায়, পরে রাজ্যসভা এবং সবশেষে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৬ এটি বলবৎ হয়।
এই আইনে বলা আছে, যে সমস্ত অরণ্যবাসীকে আইন বলবৎ হওয়ার আগে বা পরে বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের পুনর্বাসন শুধু নয়, বিকল্প জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নানা কাজে সরকার নির্মাণ ইত্যাদি কাজে অনেক সময়ে অরণ্য ও অরণ্যসংলগ্ন জমি ব্যবহার করেছে। আইনানুযায়ী সরকারকে এইসব জমির পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এই আইনের সুবাদে চার ধরনের অধিকার অর্জন বা ‘অধিকার রক্ষা’র কথা বলা আছে - নাম-সত্ত্ব অধিকার, উপযোগিতা ব্যবহারের অধিকার, খয়রাতি ও উন্নয়নের অধিকার, বনভূমি তদারকির অধিকার।
কিন্তু বাস্তবে অরণ্যের অধিকার আইনকে ফাঁকি দিয়ে আদিবাসী ও অন্যান্য অরণ্য নির্ভর জনগোষ্ঠিকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। অক্সফ্যাম সহ বিভিন্ন সমীক্ষা রিপোর্টে আমাদের রাজ্যেই এই আইনানুযায়ী ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ হেক্টর জমি ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে আদিবাসীদের হাতে তুলে দেওয়া প্রয়োজন। যদিও তা তুলে দেওয়া হচ্ছে না। আদিবাসী, অরণ্যচারী ও বনে কর্মরত শ্রমিকদের অরণ্যের অধিকার আইনের আওতায় জমির ওপর সমষ্টিগত মালিকানার দাবি অনুমোদনের ব্যবস্থাপনা সহজসাধ্য করা হচ্ছে না।
করপোরেট সেবায় নিয়োজিত বিজেপি সরকার আদিবাসীদের সংবিধান স্বীকৃত ও বহু লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলা অধিকারগুলি হরণ করে চলেছে। ‘বন সংরক্ষণ আইন ২০২২’ আসলে ‘বনাধিকার আইন ২০০৬’কে নাকচ করে দেওয়ার নামান্তর। অরণ্যভূমি ও সম্পদের ওপর আদিবাসী সমাজের স্বাভাবিক অধিকারের স্বীকৃতিগুলি বাতিলের চেষ্টা চলছে। অরণ্যকেন্দ্রীক আদিবাসী গ্রামের গ্রামসভাকে যে সর্বোচ্চ স্বায়ত্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল তাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। করপোরেট হাউসগুলো অবাধে আদিবাসী গ্রামগুলি উচ্ছেদ করে চলেছে। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হলেও হিন্দু ও বিভিন্ন সংগঠিত ধর্ম থেকে আদিবাসীদের ধর্ম সংস্কৃতি আলাদা হলেও রাষ্ট্রের কাছে তার স্বীকৃতি নেই।
আদিবাসীরা স্বাস্থ্য পরিষেবা কেমন পান? বিপুল পরিমাণ আদিবাসী এখনও বংশপরম্পরায় চাষ করে আসা জমির ওপর আইনি মালিকানা পাননি,তারা খাদ্য এবং জীবিকা নিয়ে প্রবল নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এর প্রভাব স্বাস্থ্য, শিক্ষার ওপর পড়ছে। আমাদের দেশে অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার পরিমাপের প্রচলিত ব্যবস্থাগুলিতে আদিবাসীদের কঠোর জীবনযাপনের সমস্যা খুবই কম প্রতিফলিত হয়। আদিবাসীদের বড়ো অংশ স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রসব-পূর্ব, প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর পরিষেবাগুলিতে গুরুতর ঘাটতি আছে। গোটা দেশে পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি একই হওয়ায় বিশেষভাবে দুর্বল উপজাতীয় গোষ্ঠী (PVTG) এবং অন্যান্য উপজাতীয় সম্প্রদায়ের প্রয়োজনমাফিক পদক্ষেপ নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সাধারণ শিশুদের তুলনায় আদিবাসী শিশুরা চিকিৎসা ও পরিচর্যার সুযোগ সুবিধা অনেকটাই কম পায়। এই কারণে বেশিরভাগ রাজ্যের উপজাতীয় শিশুদের মধ্যে শিশুমৃত্যু এবং পাঁচ বছরের কমবয়সিদের মৃত্যুহার বেশি।
২০২২ সালে অক্সফ্যাম ইন্ডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র দেখিয়েছে ভারতের আদিবাসীরা নিম্নমানের জীবনযাপনের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবার বেসরকারি পরিকাঠামোই এর জন্য দায়ী, যা ভারতের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর প্রায় ৬২ শতাংশ। মাত্র ৪ শতাংশ আদিবাসী স্বাস্থ্য সেবার সুবিধাগুলি ব্যবহার করতে পারেন। ৪৫.৯ শতাংশ আদিবাসী সর্বনিম্ন সম্পদের মধ্যে রয়েছেন। ফলে ব্যয় বহুল চিকিৎসা পরিষেবা এদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
দলিত ও আদিবাসী মিলে ভারতের মোট জনসংখ্যার ২৫.২ শতাংশ। অক্সফ্যাম রিপোর্ট বলছে, ‘‘উভয় সম্প্রদায়ই পদ্ধতিগত বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে এবং মৌলিক পরিষেবাগুলি গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দলিত এবং আদিবাসীদের মধ্যে স্থায়ী কাঠামোগত এবং গভীর দারিদ্র্য এবং বঞ্চনা তাদের জীবনের সমস্ত দিককে প্রভাবিত করে।’’ প্রায় ৬৫ শতাংশ আদিবাসী মহিলা ৪৭.৬ শতাংশ সাধারণ মহিলাদের তুলনায় রক্তাল্পতায় ভোগেন। মাত্র ৬১ শতাংশ আদিবাসী মায়েদের টিটেনাস টিকা দেওয়া হয় ৮১ শতাংশ সাধারণ মহিলাদের তুলনায়। ওষুধ বিতরণে ৯১ এবং প্যাথোলজিকাল পরীক্ষার সময় ৮৭ শতাংশ আদিবাসী শিশু বৈষম্যের সম্মুখীন হয়। রাজস্থান, বিহার, এমনকী দিল্লির মতো শহরেও বড়ো অংশের আদিবাসীরা অসুস্থতার সময় অযোগ্য অনুশীলনকারীদের সাহায্য নেন।
আদিবাসীদের বিপুল অংশ পর্যাপ্ত প্রোটিন ক্যালোরি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পান না। বিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রদের তুলনায় আদিবাসী পড়ুয়াদের মধ্যে অপুষ্টির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়।রক্তাপ্লতা এবং অন্যান্য অপুষ্টিজনিত ব্যাধিগুলি আদিবাসী মহিলা ও শিশুদের মধ্যে বেশি, যার জেরে গর্ভাবস্থায় প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়, শিশুরা দুর্বল হয়। অধিকাংশ আদিবাসী এলাকা এখনো খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় আসেনি, যেখানে এসেছে সেখানেও খাদ্যশস্যের গুণমান ভাল নয়। উপজাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিতে অর্থের জোগান খুবই কম।
এনআরসি-সিএএ অভিযানে আদিবাসী জনজীবনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। আসামে এনআরসি তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গেছে বাদ পড়া মানুষদের মধ্যে এক লক্ষের কিছু বেশি আদিবাসী মানুষ। সারা দেশে এনআরসি লাগু হলে আদিবাসীদের বড়ো অংশই বাদ পড়বে। অন্যদিকে নাগরিকত্ব আইনের নয়া সংশোধনীতে আদিবাসীদের জমি, সাংবিধানিক রক্ষাকবচ, জনবিন্যাস ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিচিতি বিপন্ন হবে।
গোটা দেশে এনআরসি হলে বে-নাগরিক হয়ে যাওয়া আদিবাসী মানুষের সংখ্যা এককোটি অতিক্রম করবে। সরকারি কাগজপত্র নেই এরকম আদিবাসীর সংখ্যা অনেক। বনাঞ্চলে বসবাসকারি বনাধিকার আইনে আবেদন করেও জমির পাট্টা পাননি এরকম আদিবাসী মানুষের সংখ্যা অনেক।
নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীতে (সিএএ ২০১৯) পরিষ্কার বলা আছে, ষষ্ঠ তপশিলভুক্ত এলাকায় এই আইন কার্যকর হবে না। এর মানে হলো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির আদিবাসীদের জমি ষষ্ঠ তপশিল দ্বারা যেমন ছিল তেমনই সুরক্ষিত থাকবে, সিএএ-র মাধ্যমে ঘোষিত হওয়া শরণার্থীদের ষষ্ঠ তপশিলভুক্ত এলাকায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে না। তাহলে কোথায় দেওয়া হবে? পঞ্চম তপশিল দ্বারা সংরক্ষিত থাকার কথা সেই আঞ্চলগুলিতে নতুন করে সেটেলমেন্ট হবে। হাজার হাজার একর জমি বেআইনিভাবে আদিবাসীদের হাত থেকে প্রতি বছর হস্তান্তরিত হচ্ছে।বনাধিকার আইন প্রায় অকার্যকর অবস্থায়। সিএএ, ২০১৯ পঞ্চম তপশিলের অধিকারে অনুপ্রবেশ করে আদিবাসীদের জমি গ্রাস করবে।
ব্রাহ্মণ্যবাদী আরএসএস-র রাজনৈতিক দল বিজেপি।আরএসএস আদিবাসীদের মন পাওয়ার চেষ্টা অনেকদিন থেকেই করছে।এটা ভনিতা ছাড়া কিছুই নয়। আরএসএস আদিবাসীদের মানুষ বলেই মনে করে না। কিন্তু ভোটে জিততে গেলে আদিবাসীদের ভোট প্রাপ্তি জরুরি। তাই আদিবাসীদের হিন্দুত্বকরণের প্রোজেক্ট আরএসএস অনেক আগেই নিয়েছে। অন্যদিকে আদিবাসী সমাজের মধ্যেও বিভাজনের নীতিও ওরা গ্রহণ করেছে। যেমন বীরভূমের দেউচা-পাঁচামির কাছে মল্লারপুর। এখানে অনেকদিনকার পুরনো ‘‘আদিবাসী কল্যাণ আশ্রম’’। এটি আদিবাসীদের মধ্যে হিন্দুত্বকরণের লক্ষ্যে আরএসএস-র একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহার করে বিজেপি দেউচা-পাঁচামি আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন ঘটাবার চেষ্টা করেছে।
এটা আজ পরিষ্কার হিন্দুত্ববাদী দলগুলি আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয় না। তাই ওরা ‘বনবাসী’ কথাটি ব্যবহার করে। ‘বনবাসী’ শব্দটি ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে আদিবাসীরা যে ভারতের আদি বাসিন্দা এই সত্যটি অস্বীকার করে। ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ রাঁচিতে একল বিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত বলেছিলেন, ‘‘বনবাসীদের জাগ্রত না করে ভারত বিশ্বগুরু হতে পারে না।... হিন্দুত্ব জাগ্রত করুন, ভারতকে বিশ্ব-গুরু করুন।’’
একল বিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে আরএসএস ‘হিন্দুত্বের ছাতার নিচে আদিবাসী সমাজের হিন্দুত্বকরণ’ অভিযানে নেমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা সৃষ্ট ‘একল বিদ্যালয় ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে এই বিদ্যালয়গুলিতে অর্থপ্রদান করা হয়। এই প্রতিষ্ঠিনটি আরএসএস-র সঙ্গে যুক্ত। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারগুলি একল বিদ্যালয়গুলিকে সহায়তা করেছে। এই বিদ্যালয়গুলি হিন্দু-জাতীয়তাবাদী কার্যক্রম অনুসরণ করে এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা জাগিয়ে তোলে।
আরএসএস ‘হিন্দুত্বের’ আবরণে আদিবাসী সমাজের স্বকীয়তা নষ্ট করতে চায়। একল বিদ্যালয়ের ইংরেজি সিলেবাসের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কীভাবে হিন্দুত্বের অভিযানে নেমেছে।
একল বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের ইংরেজি বর্ণমালা শেখানোর জন্য কেবল হিন্দু দেবতাদের নাম ব্যবহৃত হয়। যেমন এ তে অর্জুন, বি-তে ব্রহ্ম, সি-তে কাউ, ডি-তে ধ্রুব, জি-তে গণেশ, এইচ-এ হনুমান, জে-জাম্ববান, এম-এ মহাদেব, ও-এ ওহম, আর-এ রাম, টি-তে টেম্পল, ইউ-তে উমা। কিন্তু ‘ই’,‘এ’, ‘কিউ’, ‘ডব্লিউ’, ‘এক্স’ ‘জেড’ এই শব্দগুলির অস্তিত্ব নেই। কী কারণ? কারণ এই বর্ণগুলি দিয়ে শুরু কোনো প্রচলিত হিন্দু দেবতার নাম পাওয়া যায় না। আরএসএস’র সঙ্গে তৃণমূলের কোনো বিরোধ নেই।আরএসএস বাধাহীনভাবে বাংলার আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে তাদের মতাদর্শ প্রচার করে চলেছে।
বিজেপি বা তৃণমূলের আদিবাসী প্রেম মেকি। এই কারণেই আদিবাসীরা গত একদশকে জমি জঙ্গল থেকে উৎখাত হচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন।