৬০ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১০ মার্চ, ২০২৩ / ২৫ ফাল্গুন, ১৪২৯
বিপর্যয়ের উপান্তে বাংলার শিক্ষা... আসন শূন্য আজি
সুকুমার পাইন
JETIR August 2018, Volume 5, Issue 8 জার্নালে মৌমিতা দে লিখিত প্রবন্ধে জানা যায়, শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই যেখানে ২০১১ সালে ক্লাস ফাইভ থেকে এইট পর্যন্ত মোট ৬,৭১,২৫৫ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৯০.৪ শতাংশ পড়ুয়া সরকার পোষিত স্কুলে পড়ত, সেখানে ২০১৫ সালে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫,০৫,৭৯২, আর তার মধ্যে সরকার পোষিত স্কুলে পড়ুয়ার ভাগ কমে দাঁড়ায় ৮০.৫৬ শতাংশ। তার অর্থ যেমন কমেছে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা, তেমনই সরকার পোষিত স্কুলে পড়তে আসা পড়ুয়ার ভাগ কমে গিয়েছে।
কারণ একটি নয় নিশ্চয়ই। কিন্তু অন্যতম কারণ হলো জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের অভাব। জাতীয় শিক্ষার রূপরেখা ২০০৫ বা শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯-এ উল্লিখিত শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাত প্রাইমারি স্কুলে ১:৩০ বা হাইস্কুলে ১:৩৫ দূরে থাক, সারা রাজ্যে প্রাইমারি স্কুলে গড়ে ১:৭৩ আর সেকেন্ডারি স্কুলে গড়ে ১:৭২ (সূত্রঃ https://wbxpress.com/school-education-scenario-westbengal)। উদাহরণ দিলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে। বীরভূম জেলার মুরারইয়ের তিয়রপাড়া রাধারানি হাই স্কুল। পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত ছাত্রীর সংখ্যা ৩৪২ জন। স্থায়ী শিক্ষক নেই, একজন মাত্র পার্শ্বশিক্ষক আছেন। জলপাইগুড়ির ক্রান্তি জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়। ছাত্রী ৩৫০-এর আশেপাশে। শিক্ষিকা একজন-মৌতপা বক্সি। এমন অজস্র উদাহরণ আছে। অথচ ২০০৯-১০ সালের ডাইস তথ্য (D-9 টেবিল) অনুসারে ২০০৮-০৯ সালে প্রাইমারি স্কুলে এই অনুপাত ছিল ১:৩৫ আর হাইস্কুলে ১:৫১। আদর্শ না হলেও আজকের নিরিখে অনেক ভালো। ইউনেস্কোর State of the Education Report of India: No Teachers, No Class রিপোর্ট অনুসারে বাংলায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই প্রাইমারি-আপার প্রাইমারি মিলিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার শূন্যপদ ছিল।
স্কুলে দরকার মতো শিক্ষক না থাকার সমস্যা এতদূর পৌঁছেছে যে, হামেশাই বাংলার শিক্ষক ইতিহাস পড়াচ্ছেন, ভূগোলের শিক্ষক করাচ্ছেন অঙ্ক। অনেক স্কুলে ক্লাস হচ্ছে দু-শিফটে সপ্তাহে তিনদিন কয়েকটি ক্লাস আর বাকি তিনদিন অন্য কয়েকটি ক্লাস। বহু স্কুলে ইলেভেন-টুয়েলভে কিছু কিছু বিষয় পড়ানো বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
এই বিপর্যয়ের উৎস কোথায়?
ফিরে দেখাঃ বামফ্রন্ট সরকার - নতুন দিশা, নতুন আশা
১৯৭৭ সালে শুধু নির্বাচনী সংগ্রাম নয়, গণসংগ্রামের বিপুল জোয়ারে তৈরি হয় বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাক্ষেত্রেও জেগে ওঠে নতুন দিগন্ত।
১৯৭৭ সালের আগে সব গ্রামে প্রাইমারি স্কুল, সব ব্লকে সেকেন্ডারি স্কুল ছিলই না, ধনী গরিব সব ঘরের শিশুরা স্কুলে যেত না, বিনামূল্যে ইউনিফর্ম-পড়ার বই-দুপুরের খাবার পাওয়া তো দূরস্থান, স্কুলে পড়তেই হতো বেতন দিয়ে। শিক্ষকদের পেনশন ছিল দিবাস্বপ্ন, মাসের মাইনেও ছিল অনিয়মিত। আর মাইনের নামে যা মিলত তা একেবারেই যথেষ্ট নয়।
আর এই অন্ধকারের অবসান ঘটিয়েই বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে আরম্ভ হয়েছিল শিক্ষার অগ্রগতি। নতুন স্কুল-কলেজ তৈরি করা, শিক্ষার আঙিনায় সব ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আসা, স্কুল শিক্ষার শেষ প্রহর পর্যন্ত তাদের স্কুলেই ধরে রাখা, আধুনিক যুগের উপযোগী করে সিলেবাসের সংস্কার করা, নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া আর তার ফল প্রকাশ করার মতো নানা কাজ হয়। এই সমস্ত কাজ যথাসম্ভব ত্রুটিহীনভাবে করে তোলার জন্য ১৯৬৩ সালের আইনের পরিবর্তন ঘটিয়ে নব কলেবরে গড়ে তোলা হলো মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এর সাথে সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক করা, নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের বেতনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া, যুগোপযোগী হারে বেতন বাড়ানো, আর তাঁদের পেনশন দেওয়া - যা আগের আমলে ছিল অকল্পনীয় সেই কাজ সম্পন্ন করাটাই ছিল বামফ্রন্টের সাফল্য।
১৯৭৬-৭৭ অর্থবর্ষে কংগ্রেসী আমলের শেষলগ্নে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল রাজ্য বাজেটের ১২ শতাংশ, সেখানে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তা বেড়ে হয়েছিল গড়ে ২৫ শতাংশ।
১৯৭৬ সালে রাজ্যে প্রাইমারি স্কুল ছিল ৪০,৫৩৮টি আর তাতে ছাত্র-ছাত্রী ছিল ৫০,৫৭,০৮৮, ১৯৭৮ সালেই তা বেড়ে হয় যথাক্রমে ৪২,৬৫৯ আর ৫৭,০০,০০০। ১৯৭৬ সালে রাজ্যে সেকেন্ডারি স্কুল ছিল ৬৮১৩টি, তাতে পড়ুয়া ছিল ১৬,৫১,৬৭১ জন। ১৯৭৮ সালে সেকেন্ডারি স্কুল বেড়ে হয় ৭৭৩৭টি, তাতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪,৩৪,১৩০ জন (সূত্রঃ Education in India 1975-76, Ministry of Education and Social welfare, GOI; Selected Educational Statistics 1978-79 as on 30.09.1978)। ২০০৮ সালে রাজ্যে প্রাইমারি স্কুল বেড়ে হয় ৬৭,১৩৫টি, তাতে পড়ুয়া ১,০৫,০০,০০০ জন। ওই সময়ে রাজ্যে সেকেন্ডারি স্কুল অগ্রগতিরও একই ধারা। স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ধারাবাহিক উন্নতি ঘটে। ১৯৭৬ সালে যেখানে রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক ছিলেন ১২,৬০০ জন, সেখানে ১৯৭৮ সালে ১,৪৪,৮৪৬ জন আর ২০০৮ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়াল ১,৭৮,০০০ জন। রাজ্যের মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে ১৯৭৬ সালে ছিলেন ৭৪,৯৬৪ জন শিক্ষক, ১৯৭৮ সালে ৮৫,১৩৭ জন আর ২০০৮ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়াল ১,৫১,৮৫৬ জন।
শুধু তাই নয়, ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার মানোন্নয়ন, সম্প্রসারণ, পরিচালনা, আর্থিক সংস্থান, মাদ্রাসা শিক্ষা, সংস্কৃত আর ইংরাজি ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডঃ ভবতোষ দত্ত কমিশন, ডঃ অশোক মিত্র কমিশন, ডঃ পবিত্র সরকার কমিশন, রঞ্জুগোপাল মুখার্জি কমিশন ইত্যাদি আটটি কমিশন হয়েছে, আর তাদের সুপারিশ অনুসারে কাজও হয়েছে। শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবই আর ইউনিফর্ম দেওয়ার কাজ, তফশিলি জাতি ও জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের স্টাইপেন্ড আর ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া, স্কুলে মিড ডে মিল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
শিক্ষার স্বার্থে এইসব পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯৭৬ সালের ২,৩৭,৫১০ জন থেকে ২০০৮ সালে দাঁড়ায় ৭,৩৫,৫৬৭ জন। পাশের হার ৪৮.৫৮ শতাংশ থেকে ৭২.৫৬ শতাংশ। আর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ১৯৭৮ সালের ৫৮,০০০ থেকে বেড়ে ২০০৮ সালে হলো ৪,৪৬,৫৭৬ জন। পাশের হার ৫১.৮ থেকে হলো ৮০.৩৮ শতাংশ।
এই বিপুল কর্মযজ্ঞ যথাযথ সম্পন্ন করার জন্য গণতান্ত্রিক পরিচালন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। নির্বাচিত পরিচালন সমিতির বদলে দীর্ঘকাল স্কুলগুলিতে বসে ছিল মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া কমিটি, নয়তো বা অ্যাডহক কমিটি। বামফ্রন্ট সরকার ওইসব কমিটিগুলিকে বাতিল করে নিয়ম অনুসারে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিচালন সমিতি তৈরি করে।
আসলে আগের আমল আর বামফ্রন্ট সরকারের আমলের মৌলিক তফাতটা ছিল দৃষ্টিভঙ্গির। কংগ্রেস আমলে শিক্ষা ছিল সমাজের সম্পন্ন সুবিধাভোগী শ্রেণির কুক্ষিগত। সর্বসাধারণের প্রবেশ সেখানে অবাধ অবারিত ছিল না। রাধাকৃষ্ণণ-মুদালিয়ার-কোঠারি কমিশনের শতেক সাধুসংকল্প উদ্যোগ সত্ত্বেও বাস্তবে যা ছিল, তা হলো সেই ব্রিটিশ আমলে শোষকশ্রেণির স্বার্থে চলে আসা মেকলে সাহেবের ওপরতলা থেকে নিচের তলায় শিক্ষা ‘চুঁইয়ে পড়ার’ নীতি। বামফ্রন্টের আমলেই প্রথম শতেক বাধা পেরিয়ে আরম্ভ হলো সকল স্তরের সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার কর্মযজ্ঞ।
পালাবদলের উত্তরকালঃ স্বপ্নভঙ্গ, গণতন্ত্রের অন্তর্জলিযাত্রা
২০১১ সাল। বাংলায় সরকার গড়লো তৃণমূল। পালাবদল হলো রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রেও। তৃণমূল হরেক মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় আসে। সেইসব চমকদার প্রতিশ্রুতির মধ্যে জেলায় জেলায় আইআইটি-মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়াও ছিল। ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মাথায় সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত (গভর্নমেন্ট এইডেড) সব স্কুলগুলিকে সরকার-পোষিত (গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড) হবার জন্য একপ্রকার চাপ তৈরি করা হলো - বলা হলো কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়া যাবে, সরকারি স্কুলগুলির প্রাপ্য নানা গ্র্যান্ট পাওয়া যাবে, সরকারি স্কুলের মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, এমনই আরও কত। এই গ্র্যান্ট পাবার জন্য বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা চলছিল এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির ওই গ্র্যান্ট পাবার বিষয়ে মোটামুটি ঐকমত্য তৈরিও হয়েছিল। আসলে উদ্দেশ্য কী ছিল, তা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা জানতে যখন পারলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অবশ্য নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি এবং আরও কিছু শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সংগঠন এই বিষয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিল, বাস্তবে সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বা রাজ্য সরকারি স্কুলের মতো সুযোগ-সুবিধা(?) কিছুই পাওয়া গেল না; উলটে স্কুলের সম্পূর্ণ অস্তিত্বটাই সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড স্কুল হবার অন্যতম শর্তই হলো, স্কুলের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির স্বত্ত্ব যাবে সরকারের হাতে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে তৈরি গণতান্ত্রিক পরিচালন সমিতির বদলে স্কুলে তৈরি হবে প্রধানত মনোনীত কমিটি। এখন অতীতের নিয়ম বদলে দিয়ে পরিচালন সমিতিতে ৩ জন শিক্ষক আর ১ জন শিক্ষাকর্মী ছাড়া বাকি ১২ জন সরকার ও শাসকদল মনোনীত। আগের আমলের স্কুল কমিটির সেক্রেটারির আলাদা পদটাও তুলে দিয়ে স্কুলের প্রধানকেই সেক্রেটারি করা হয়েছে। এবার এই মনোনীত প্রার্থীদের কার ঘাড়ে ক’টা মাথা যে শাসকদলের মর্জির বাইরে গিয়ে কাজ করবেন?
লুঠের আয়োজন
স্কুলগুলিতে আগামীদিনের অরাজকতা আর লুঠের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে গেলে প্রথমে দরকার ছিল তদারকি বন্ধ করা; নির্বাচিত গণতান্ত্রিক কমিটি বাতিল করে মনোনীত স্পনসর্ড কমিটি তৈরি ছিল সেই প্রথম ধাপ। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে পরেই ২০১২ সালে নির্বাচিত পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কল্যাণময় গাঙ্গুলিকে বোর্ডের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিযুক্ত করা হয়। অজুহাত, বোর্ডের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বোর্ডের নির্বাচন আর তৃণমূল সরকার করেইনি। ২০১৬ সালে নিতান্ত আকস্মিকভাবেই প্রশাসনিক আদেশবলে সেই আইন সংশোধন করে ‘প্রয়োজনে পর্ষদের কমিটি ভেঙে দিয়ে মনোনীত পর্ষদ তৈরি করার’ ধারা তৈরি করা হয়। এবং প্রায় অব্যবহিত পরেই সম্পূর্ণ মনোনয়নের ভিত্তিতে বোর্ড ‘পুনর্গঠন’ করা হয়, ওই কল্যাণময় গাঙ্গুলিকেই পুনর্নিয়োগ করা হয় মনোনীত বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
বশংবদদের প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসা এই লুঠের রাজনীতিরই অংশ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, এমনকী প্রশাসনিক নিয়মরীতি ভেঙেও প্রশাসনের বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছে শাসকদলের সদস্য, ঘনিষ্ঠ বা অনুগত ব্যক্তিদের। জেলাগুলির প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রশাসনিক আদেশবলে সকল চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ - কলকাতার মতো দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে, যাঁরা কিনা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত, অথবা অনেক যোগ্যতর ব্যক্তিকে ডিঙিয়েই সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে সুবীরেশ চক্রবর্তীর নিয়োগ, নয়তো বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়োগ এই আয়োজনেরই উপচার।
নিলামে শিক্ষা
ভরতিতে রাজনীতি এক নতুন ‘উচ্চতায়’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই রাজত্বে। তৃণমূলী ছাত্র পরিষদের দাপটে কলেজগুলিতে ভরতি কতটা মেধার ভিত্তিতে, আর কতটা ঘুষের ভিত্তিতে হয়েছে, তার হিসেব করা মুশকিল। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বারংবার বলা সত্ত্বেও অনলাইন ভরতির ব্যবস্থা করা আর কেন্দ্রীয় মেধা তালিকা তৈরির কোনো উদ্যোগই তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়ে উঠতে পারেননি। কলেজে বিভিন্ন বিভাগে অনুমোদিত আসন সংখ্যার বেশি ভরতি করানো হয়েছে। জেনারেল স্ট্রিমের একটি সিটের ‘ব্যবস্থাপনা-মূল্য’ ৮-১০ হাজার, অনার্স স্ট্রিমে ২০-২২ হাজার আকছার শোনা গেছে।
লুম্পেনের মুখে লুঠের স্বাদ বাঘের মুখে রক্তের মতোই। শুধু কলেজে ছাত্র ভরতির সময়েই লুঠ কেন, আরও তো কত জায়গা আছে...
আর তাই তো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ঐতিহাসিক ঘোটালা, তাই তো শিক্ষক ট্র্যান্সফারে এতো বেনিয়মের উদাহরণ!
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)