৫৯ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ২৪ ভাদ্র, ১৪২৮
বিজেপি’র হিংস্র হামলা ত্রিপুরা জুড়ে
ফ্যাসিস্ত বিজেপি’র আক্রমণ ত্রিপুরায়। জ্বলছে সিপিআই(এম) দপ্তর।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপি’র বর্বরোচিত হামলা,তাণ্ডবের সাক্ষী রইলো ত্রিপুরা সহ গোটা দেশ। ৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন ধরে আগরতলায় সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর দশরথ দেব স্মৃতি ভবন সহ পশ্চিম জেলা কমিটির দপ্তর ভানু ঘোষ স্মৃতি ভবন, বিশালগড়ের মহকুমা অফিস,উদয়পুর মাতাবাড়ি পার্টি অফিস, আগরতলায় বড়দোয়ালি অঞ্চল অফিস, বক্সনগর অঞ্চল অফিস,উদয়পুর গোমতী জেলা অফিস প্রভৃতিতে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ঘটায় বিজেপি’র উন্মত্ত দুর্বৃত্তরা। এই হিংস্র বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি ত্রিপুরার প্রবাদপ্রতিম জননেতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় কমরেড দশরথ দেবের মূর্তিও। এদিন পুলিশের সামনেই এই ধরনের ধ্বংসাত্মক অভিযান চালিয়েছে বর্বর বিজেপি।
বিজেপি’র বর্বর বাহিনীর হামলায় আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যমও। আগরতলায় সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর সংলগ্ন পার্টির মুখপত্র ‘ডেইলি দেশের কথা’ অফিস সহ ‘প্রতিবাদী কলম’ পত্রিকা, 'কলমের শক্তি’, ‘পিবি-২৪’ চ্যানেলের অফিস,উদয়পুরের ‘দুরন্ত টিভি’ চ্যানেলের অফিসে হামলা চালানো হয়েছে। প্রতিবাদী কলম এবং পিবি-২৪ অফিসে কর্মরত তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। মিডিয়া হাউসগুলির পক্ষে প্রতিবাদী কলম-এর সম্পাদক এবং প্রকাশক অনল রায়চৌধুরী পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। আগরতলা প্রেস ক্লাবও প্রতিবাদ জানিয়েছে।এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সিপিআই(এম) দপ্তরে হামলা চালানোর সময় বেশ কয়েকজন পার্টির নেতা- কর্মীর উপরেও হামলা করা হয়েছে। তাঁদের বাড়িঘরেও হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। পার্টির ডুকলি মহকুমা সম্পাদক নারায়ণ দেবের বাড়ি ভাঙচুর করেছে বিজেপি’র দুষ্কৃতীরা। বিভিন্ন জায়গায় পার্টির বেশকিছু গাড়ি, পার্টিকর্মীদের মোটর সাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে বিজেপি’র হামলাকারীরা।
বিজেপি’র হামলার পর পার্টি অফিসে মানিক সরকার।
সিপিআই(এম) এই হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে বর্ণনা করেছে। এদিন বিজেপি’র দিনভর তাণ্ডবের পর বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার এবং রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক ও পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিজন ধর দৃঢ়তার সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছেন, আক্রমণ করে সিপিআই(এম)-কে আটকানো যাবে না। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই পার্টি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করবে। পার্টির পক্ষ থেকে অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। এই হামলার রাজনৈতিক মোকাবিলা করা হবে। আরও জোরদার কর্মসূচি নেওয়া হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চলবে।
সাংবাদিক বৈঠকে মানিক সরকার বলেছেন, জনগণ থেকে এই সরকারের বিচ্ছিন্নতা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে তা এই বেপরোয়া হামলায় প্রকাশ পেয়েছে। রাজ্যের বিজেপি সরকার কোনো কাজ করেনি, সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তা নিয়ে মানুষের প্রতিবাদ ঢাকতে এই হামলা। তিনি বলেন, এটা শক্তির লক্ষণ নয়। জনগণের মধ্যে ভিত্তি থাকলে এরকম হামলা করতে হয়না। আমরা বলছি রাজনৈতিক মতাদর্শের,কর্মসূচির লড়াই করুন। আমরা সরকারে থাকার সময়ে সমস্ত বিরোধী দল তাদের কর্মসূচি করেছে। এমনকী মধ্যরাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও আক্রমণ হয়েছে। আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নেইনি। সব রাজনৈতিক দলের অধিকার সুরক্ষিত ছিল।
সাংবাদিক বৈঠকে বিজন ধর বলেছেন, এটা পরিকল্পিত আক্রমণ। রাজনৈতিক হিংস্রতার মধ্যে যে ত্রিপুরা চলছে এদিনের ঘটনা তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল। প্রথমে কাঁঠালিয়া পার্টি অফিসে ভাঙচুর,আগুন লাগায় বিজেপি দুষ্কৃতীরা। সেখানে পার্টি নেতা ননী পালের বাড়িতে হামলা করে।বিশালগড়ে আমাদের মিটিং ছিল। সেখানে আমিও গিয়েছিলাম। মিটিং থেকে ফেরার মিনিট পনেরো পর বুলডোজার দিয়ে পার্টি অফিসের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে পার্টি নেতা পার্থপ্রতিম মজুমদারের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এরপর সদরে জেলা কমিটির দপ্তরে হামলা হয়। গাড়ি, বাইক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এরপর রাজ্য দপ্তরে এসে হামলা করে।
পার্টি অফিসের ভেতরে ঢুকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরায় বিজেপি শাসনে মানুষের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেছেন, খাবার নেই,কাজ নেই। কোভিড সহ অন্যান্য চিকিৎসা নেই। শোষণ, লুঠ,সরকারি অর্থ নয়ছয় চলছে। এই অবস্থায় মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। সেই ক্ষোভকে সংগঠিত করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্ট। সেই কারণে জনগণকে ভয় দেখাতে এই আক্রমণ। আরএসএস’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গুণ্ডারা এই হামলা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
মানিক সরকার বলেছেন, এই অপদার্থ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ, বিক্ষোভে অংশগ্রহণ ঠেকাতেই এই হামলা। কিন্তু এই ঘটনার পরেও শত শত মানুষ ছুটে এসেছেন। মানুষই শক্তির উৎস। এইসব ঘটনায় মানুষের ঘৃণা জমছে। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করব।
সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বিজেপি’র এই তাণ্ডবকে ফ্যাসিবাদী হামলা বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ত্রিপুরা জুড়ে শাসক বিজেপি হামলা চালিয়েছে সিপিআই(এম)’র অফিসে। হাজার হাজার পার্টি কর্মী জখম হয়েছেন।পার্টি নেতাদের বাড়ি সহ পার্টির প্রচুর সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে।এই হামলাকে প্রতিহত করা হবে এবং পরাস্তও করা হবে।
এদিন ত্রিপুরায় সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর সহ বিভিন্ন পার্টি অফিসে বিজেপি'র বর্বরোচিত হামলার সংবাদ এরাজ্যে পৌঁছানোর পরই কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করেছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। ত্রিপুরায় আক্রান্ত মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন এ রাজ্যের বামপন্থী কর্মীরা।
রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিমান বসু ত্রিপুরায় বিজেপি'র বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ত্রিপুরায় বিজেপি'র নেতৃত্বে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা ত্রিপুরার আক্রান্ত মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। ত্রিপুরায় বিজেপি'র হামলার প্রতিবাদে এ রাজ্যেও সমস্ত জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হবার আহ্বান জানান তিনি।
বিজেপি’র তাণ্ডবের পর সিপিআই(এম)’র পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা দপ্তরে আগুন।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র ত্রিপুরায় বিজেপি'র হামলার বিরুদ্ধে এ রাজ্যের মানুষকেও সোচ্চার হবার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে ত্রিপুরায় বিজেপি’র হিংস্র সন্ত্রাস ও হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ-ধিক্কার জানিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার মানুষ আগরতলায় দৃপ্ত মিছিলে শামিল হন। মিছিল থেকে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে স্লোগান ওঠে। সাম্প্রদায়িক বিজেপি’র বর্বরতা রুখতে প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়। রাজ্যের অন্যান্য জায়গায়ও প্রতিবাদী মিছিল সংগঠিত হয়েছে।