৫৯ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ২৪ ভাদ্র, ১৪২৮
কৃষক হত্যার প্রতিবাদে কার্নালে ব্যারিকেড ভেঙেই ক্ষুব্ধ কৃষক মিছিল
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ২৮ আগস্ট হরিয়ানার কার্নালে কৃষক বিক্ষোভের উপর পুলিশের বেপরোয়া হামলার প্রতিবাদে ৭ সেপ্টেম্বর কার্নালে মিনি সচিবালয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদী কৃষকরা। পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক হুমকি-হুঁশিয়ারি, ১৪৪ ধারা জারি, ইন্টারনেট বন্ধ করা, বিপুল পুলিস বাহিনী মোতায়েন করা সহ জলকামান ও টিয়ারগ্যাস প্রয়োগ, কৃষক নেতাদের আটকানোর চেষ্টা সত্ত্বেও এদিনের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে দমানো যায়নি। নিজেদের দাবি আদায়ে অনড় কৃষকরা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লাগাতার ঘিরে রেখেছেন সচিবালয়।
প্রসঙ্গত, ২৮ আগস্ট কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কার্নালের অদূরে বাস্তারা টোল প্লাজায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরত কৃষকদের ওপর রাজ্যের বিজেপি সরকারের পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালায়। পুলিশের এই নির্মম লাঠির আঘাতে অন্তত দশ জন কৃষক আহত হন। পরে আহত কৃষক সুশীল কাহলের (৫৫) হাসপাতালে মৃত্যু হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ঘটনার সময় উপস্থিত কার্নালের এসডিএম আয়ুষ সিনহাকে সেখানে থাকা পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশে কৃষকদের ‘মাথা গুঁড়িয়ে দাও’ বলতে দেখা যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদ হরিয়ানা, পাঞ্জাব প্রভৃতি রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছড়ায়।
এই ঘটনায় কৃষকদের ক্ষোভ আরও ব্যাপক আকার নেয়। সংযুক্ত কিষান মোর্চার পক্ষ থেকে রাজ্যের বিজেপি সরকারের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে দাবি জানিয়ে বলা হয়, শহিদ সুশীল কাজলের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং পুলিশের লাঠির আঘাতে জখম প্রত্যেক কৃষককে ২ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। পাশাপাশি এসডিএম আয়ুষ সিনহার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার দাবি সহ অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানানো হয়েছিল। এই দাবি মানার জন্য ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল সংযুক্ত কিষান মোর্চা। দাবি মানা না হলে ৭ সেপ্টেম্বর কার্নালের নতুন সবজি মান্ডিতে মহাপঞ্চায়েত এবং তারপর মিনি সচিবালয় ঘেরাও করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল সংযুক্ত কিষান মোর্চা।
কিন্তু বিজেপি সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবি মানার পরিবর্তে সংঘাতের পথে যায়। কার্নালে ১৪৪ ধারা জারি করে পাঁচজনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ চাপানো হয়। পাশাপাশি কৃষকদের হুমকি-হুঁশিয়ারিও দেয় রাজ্যের বিজেপি সরকার। এই সমস্ত কিছু বিধি নিষেধকে উড়িয়ে দিয়ে সকাল ১০টার মধ্যে সবজি মান্ডিতে পূর্ব ঘোষণা মতো লাখো কৃষক জড়ো হয়ে যান। কৃষক বিক্ষোভ ঠেকাতে কার্নালে ৪০ কোম্পানি পুলিশ বাহিনী নামায় বিজেপি সরকার। এছাড়া ৪০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আসা হয়। হাজার হাজার কৃষক জমায়েত দেখে দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকে সরকার। পরিবর্তে ১১ জন কৃষক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসে কার্নাল প্রশাসন। পাশাপাশি চলতে থাকে মিনি সচিবালয় ঘেরাও। কার্নাল প্রশাসনের সঙ্গে কৃষকদের তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনার পরও কোনো সমাধান সূত্র বের হয়নি। কারণ, সরকার কৃষকদের দাবি মানেনি। এরপরই বিশাল কৃষক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন মিনি সচিবালয়ের দিকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে যাওয়া হবে। সবজি মান্ডি থেকে সচিবালয়ের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। সংযুক্ত কিষান মোর্চা নেতা রাকেশ টিকায়েত, দর্শন পাল, যোগেন্দ্র যাদব, বলবীর সিং রাজেওয়াল, যোগীন্দর সিং উগ্রাহান, সারা ভারত কৃষক সভার কোষাধ্যক্ষ পি কৃষ্ণপ্রসাদ, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বি ভেঙ্কট, হরিয়ানার কৃষক নেতা ইন্দ্রজিৎ সিন, গুরনাম সিং চারুনি প্রমুখের নেতৃত্বে বিশাল কৃষক মিছিল অগ্রসর হয় সচিবালয় অভিমুখে।
সচিবালয়ের মুখে পুলিশের তৈরি অসংখ্য ব্যারিকেড হটিয়েই এগোতে থাকে কৃষকদের মিছিল। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা অবরোধ করার পাশাপাশি জলকামানও ব্যবহার করে। এরপর মিছিলের নেতৃত্বে থাকা কৃষক নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে কৃষক আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে নেতৃবৃন্দকে উদ্ধার করেন প্রতিবাদী কৃষকরা। সচিবালয়ের বাইরে চলতে থাকে কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভ। এআইকেএস’র সভাপতি অশোক ধাওয়ালে সংগ্রামী কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাত, ধর্ম, ভাষার বেড়াজাল ভেঙে কৃষক আন্দোলন চলছে। জনবিরোধী নীতির জন্য বিজেপি পরাজিত হবে।