৫৯ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ২৪ ভাদ্র, ১৪২৮
পশ্চিমবঙ্গের তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন
তিন কেন্দ্রেই বামফ্রন্টের প্রার্থী ঘোষিত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ৪ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচন ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ওই তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই কেন্দ্র তিনটি হলো কলকাতার ভবানীপুর, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ও শামসেরগঞ্জ। তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে জঙ্গিপুর এবং শামসেরগঞ্জ কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। ভবানীপুর কেন্দ্রে নির্বাচিত বিধায়ক পদত্যাগ করায় এই উপনির্বাচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে ৪ অক্টোবর। ভবানীপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দিতা করছে না। ভবানীপুরে বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন তরুণ আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাস। শ্রীজীব বিশ্বাস ২০১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হাজরা ল’ কলেজ থেকে আইনের স্নাতক হন। বর্তমানে আলিপুর আদালতে প্রাকটিস করেন। তিনিই নন্দীগ্রামে পরাজিত প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে লড়বেন। জঙ্গিপুর কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে আরএসপি’র হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন জানে আলম মিঞা। অন্যদিকে শামসেরগঞ্জে সিপিআই(এম)’র মোদাসসার হোসেন সংযুক্ত মোর্চার জোটের প্রার্থী।
এর আগে ওই শামসেরগঞ্জ কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রতীকে মনোনয়ন জমা করেছিলেন জইদুর রহমান। কিন্তু জইদুর রহমান জানিয়েছেন তিনি নির্বাচনে লড়বেন না। তাই ওই কেন্দ্রে সিপিআই(এম)’র প্রার্থী সংযুক্ত মোর্চার জোটের হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ কংগ্রেস সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষ সবাইকে সিপিআই(এম) এবং আরএসপি-কে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন পার্টির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আজকের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সমস্ত কংগ্রেসের ভোটার এবং কর্মীরা সংযুক্ত মোর্চার সিপিআই(এম)’র প্রার্থীকে এবং আরএসপি প্রার্থীকে জয়ী করুন বিধানসভায় সাধারণ মানুষের স্বার্থে কথা বলার জন্য। সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের কাছে এই আবেদন জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’কে পরাজিত করে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস কোনও প্রচার করবে না, তবে শামসেরগঞ্জে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের কংগ্রেসের সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘোষণার বক্তব্যকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে সর্বস্তরে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ' সংবিধানের ১৬৪ (৪) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব লেখেন যদি কোনো মন্ত্রী টানা ছয় মাস বিধানসভার সদস্য না থাকেন এবং অবিলম্বে নির্বাচন না হয় তাহলে ছয় মাসের শেষে তিনি আর মন্ত্রী থাকতে পারেন না। সাংবিধানিক সঙ্কট ও শীর্ষ প্রশাসনিক পদে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। কমিশনকে মুখ্যসচিব এও জানিয়েছেন যে প্রশাসনিক জরুরী প্রয়োজন ও জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে এবং রাজ্যে শীর্ষ পদে যাতে শূন্যতা তৈরি না হয় তার জন্য ভবানীপুর কেন্দ্রে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়তে চাইছেন সেখানে নির্বাচন করানো হোক।... সাংবিধানিক জরুরি প্রয়োজন ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিশেষ অনুরোধ এর ভিত্তিতে ভবানীপুরে নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
৭ সেপ্টেম্বর বামফ্রন্টের বৈঠকে ভবানীপুরের উপনির্বাচন প্রসঙ্গে ভারতের নির্বাচন কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিবের বক্তব্য সম্পর্কে বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বামফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের মতে নির্দিষ্ট একজন বিধায়ক নির্বাচিত না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে। মুখ্যসচিব কোন সংবিধান পড়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন? যদি ধরে নেয়া যায় একটি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী নেই তাহলে কি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়? আসলে সঙ্কটটা এক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিয়ে। মুখ্যসচিব ঘটনাটিতে নিজের পদমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে ওই ব্যক্তির মনের কথাটি বলে ফেলেছেন। নির্বাচন কমিশন ও যথাযথ সাংবিধানিক প্রাজ্ঞতার প্রমাণ দিতে পারেনি। নির্বাচন হবে বিধিসম্মতভাবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সিদ্ধান্তের ওপর। ২১৩ জন নির্বাচিত বিধায়ক যদি একজনকেও নেতা হিসেবে নির্বাচিত না করতে পারেন তাহলে সেটা তাদের ব্যর্থতা। তাতে সাংবিধানিক সংকট হয় না। ভবানীপুর কেন্দ্রের নির্বাচিত বিধায়ক কৃষিমন্ত্রীকে বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে বিধায়ক নির্বাচিত করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য বর্তমান কৃষিমন্ত্রীও যে এখন বিধায়ক নন, মুখ্যসচিব বিস্ময়ের সঙ্গে তা একেবারে এড়িয়ে গেছেন। তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন হবে ৭ টি কেন্দ্রে নয় কেন? কিসের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয়েছে?
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন শামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের স্থগিত নির্বাচন ঘোষণা করেছে। কিন্তু দিনহাটা, শান্তিপু্র, খড়দহ, গোসাবা এবং ভবানীপুর এই পাঁচটি কেন্দ্রের মধ্যে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের সময়সূচি প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশনের দৈন্যতাই প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন বাকি চারটি কেন্দ্রে ভোটারদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। মোদী শাসনে সমস্ত সাংবিধানিক সংস্থাকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও তেমনই একটি পঙ্গু সিদ্ধান্তের অংশীদার।
বামফ্রন্টের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকার পৌরনির্বাচন সংগঠিত না করে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে, সেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের সাংবিধানিক সঙ্কটের আরজি হাস্যকর। বামফ্রন্টের দাবি, বাকি চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হোক এবং কোভিড বিধি মেনে রাজ্য সরকার মেয়াদ উত্তীর্ণ ৬টি পৌরনিগম সহ ১১২টি পৌরসভা ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনী সূচি অনতিবিলম্বে ঘোষণা করুক।