E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ২৪ ভাদ্র, ১৪২৮

কয়লা পাচারকাণ্ড

ইডি’র জেরার মুখে ভাইপো অভিষেক


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কয়লা পাচার কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি দীর্ঘ জেরা করল অভিষেক ব্যানার্জিকে। নয়াদিল্লির জামনগরে ইডি’র অফিসে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা অভিষেক ব্যানার্জিকে জেরা করা হয়, যা সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন। ৬ সেপ্টেম্বর কয়লা পাচার কাণ্ডে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের হদিস পেতে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জিকে এই প্রথমবার জেরা করা হলো। প্রশ্নোত্তর পর্বে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েন এই ভাইপো সাংসদ। তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে জেরার মুখে প্রথমদিকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিলেও পরেরদিকে একের পর এক প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে হয়েছে তৃণমূলের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে।

ইডি অফিসে ঢোকার সময় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সবরকম সাহায্য করবেন। তবে বিধ্বস্ত অবস্থায় জেরা শেষে বেরিয়ে আসার পর বলেছেন, ‘...বিজেপি তৃণমূলকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।...’। রাজ্যে ‘অনুপ্রেরনায়’ ভরপুর একাধিক সংবাদ মাধ্যমও অবশ্য এই জেরাকে ‘প্রথম’ জেরা হিসেবে চিহ্নিত করছে, পরবর্তী জেরার স্পষ্ট ইঙ্গিতকে অনুচ্চারিত রেখেই।

শুধু অভিষেক ব্যানার্জি ও তার স্ত্রী রুজিরা নারুলা ব্যানার্জিই নন, এই দফায় ইডি’র তলবের মুখে পড়েছেন দুই আইপিএস আধিকারিক সহ বেশ কয়েকজন। কয়লা পাচার কাণ্ডেই তাঁদের তলব করা হয়েছে। তলব করা হয়েছে আইপিএস শ্যাম সিং এবং আইপিএস জ্ঞানবন্ত সিং-কেও। আর পিনকন কেলেঙ্কারির তদন্তে জেরা করার জন্য অভিষেক ব্যানার্জির আইনজীবী সঞ্জয় বসুকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ইতিমধ্যেই মহামারীর জন্য শিশু সন্তানদের ছেড়ে এখন দিল্লিতে ইডির দপ্তরে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জেরা এড়িয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জির স্ত্রী।

আবার ভাইপোকে তলবের ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কয়লা চুরির ক্ষেত্রে শুধু তৃণমূলকে ধরলে হবে? তৃণমূলের দায়িত্বে কয়লা নেই। কয়লা তোমার সিআইএসএফ-এর দায়িত্বে, কেন্দ্রের মন্ত্রকের হাতে। তোমার মন্ত্রক কি করছিল?...।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৩ মার্চ হরিশ মুখার্জি রোডে বিলাসবহুল শান্তিনিকেতন ভবনে সিবিআই যায়। কয়লা পাচারকারী বিদেশের অ্যাকাউন্টে টাকা পাচারের অভিযোগে সিবিআই জেরার মুখে পড়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা ব্যানার্জি। সেদিন জেরার আগে মুখ্যমন্ত্রী অভিষেকের বাড়িতে যান।

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি সুত্রে জানা গেছে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড এবং লিপস অ্যান্ড বাউন্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এলএলপি এই সংস্থায় কয়লা পাচারের বিপুল টাকা ঘুরপথে ঢুকেছে একটি নির্মাণকারী সংস্থার মাধ্যমে, যে সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার। অভিষেক ব্যানার্জি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার আগে কর্ণধার ছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে অভিষেক ব্যানার্জি ওই সংস্থা থেকে পদত্যাগ করেন। সুত্রের খবর, জেরায় এই সংস্থা প্রসঙ্গেই এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই তথা অভিষেক ব্যানার্জির বাবা অমিত ব্যানার্জির প্রসঙ্গও। অমিত ব্যানার্জি একাধিক সংস্থার বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এর সদস্য। সেই তালিকায় রয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসও।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আরও একটি সংস্থার হদিশ মিলেছে, যে সংস্থায় অভিষেক ব্যানার্জির পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। কয়লা পাচারের বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন পথ ঘুরে দফায় দফায় সেই সংস্থার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। নজিরবিহীনভাবে ওই সংস্থা একবছরে রেকর্ড পরিমাণ ৮০ শতাংশ মুনাফা করেছে। এর আগে কয়লা পাচারকারী যোগের অভিযোগে ধৃত বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্রকে গত এপ্রিল মাসে দিল্লিতে বিশেষ আদালতে তোলা হয়েছে। এই অশোক মিশ্র আবার অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ তৃণমূল যুব নেতা ফেরার বিনয় মিশ্রের আত্মীয়। সেই মামলায় আদালতে ইডির দেওয়া বিস্তারিত তথ্য অনুযায়ী সামনে আসে আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ১০৯ দিনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ১৬৮ কোটি টাকা ভাউচাের সই করে মিলেছিল। ইডি’র সূত্র বলছে তার সিংহভাগ টাকা যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বিনয় মিশ্রর নির্দেশে হাওলার মাধ্যমে যায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির স্ত্রী এবং শ্যালিকার অ্যাকাউন্টে। এই বিপুল আর্থিক লেনদেন হয়েছে গত বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এককথায়, বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ঘুরে কয়লা পাচারের কোটি কোটি টাকা গিয়েছে রাজ্যের শাসক দলের অন্যতম ক্ষমতাবান সাংসদের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে, অভিযোগ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র। সূত্রের খবর অনুযায়ী এর আগে বিভিন্ন নথি থেকে জানা গেছে শুধুমাত্র অভিষেক ব্যানার্জির স্ত্রী নন, তার শ্যালিকা মেনকা গম্ভীর এবং তাঁর স্বামী ও শ্বশুরের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে পাচারের টাকা। মনে করা হচ্ছে কার্যত কয়লা পাচারের টাকা প্রোটেকশন মানি হিসেবেই এই সমস্ত অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।

সুত্র মারফত আরও জানা গিয়েছে, ঘটনায় অভিযুক্ত এবং ইডি’র হাতে ধৃত বাঁকুড়া থানার পুলিশ আধিকারিক অশোক মিশ্রের এই পাচার এবং টাকা লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। প্রসঙ্গত, এই পুলিশ আধিকারিক একসময় ভাইপো সাংসদের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের অন্তর্গত বিষ্ণুপুর থানায় পোস্টিং ছিলেন।

ইডি দপ্তরের একটি সূত্রের দাবি আরও একটি সংস্থার খোঁজ মিলেছে যেখানে অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে।