E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ২৪ ভাদ্র, ১৪২৮

ভাইজাগ স্টিলের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে মানবশৃঙ্খল অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে


মোদী সরকারের বেলাগাম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির তালিকায় বিশাখাপত্তনম স্টিল প্ল্যান্টকে যুক্ত করতে দেবেননা অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষ। ভাইজাগের রাস্তায় নেমে হাজারো মানুষ আরও একবার জানান দিলেন তাঁদের এই প্রতিজ্ঞার কথা। কেন্দ্রের মোদী সরকারের ‘স্ট্র্যাটেজিক সেল’-এর নীতির বিরোধিতায় পথে নেমে মানব শৃঙ্খল গড়লেন তাঁরা। মনে করি য়ে দিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষের অস্মিতার কথা।

২৯ আগস্ট অন্ধ্রপ্রদেশে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর ১০ কিলোমিটারব্যাপী প্রতিবাদী মানব শৃঙ্খল তৈরি করলেন শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত ছাত্র-যুব মহিলা থেকে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। জাতীয় সড়কের আগানামপুডি থেকে বিশাখাপত্তনমের আক্কিরেড্ডিপালেম পর্যন্ত এই মানব শৃঙ্খলের বিস্তৃতি ছিল। এই মানব শৃঙ্খলের মাধ্যমে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছিল বিশাখা উক্কু পরীরক্ষণা পোরাটা কমিটির পক্ষ থেকে।

বিজেপি-আরএসএস সরকারের পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশের কর্পোরেটের কাছে মাথা নত করে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দেবার প্রতিবাদে এদিনের জমা য়েতে স্লোগান ওঠে বিশাখা স্টিল অন্ধ্রের মানুষের অধিকার, ভাইজাগ স্টিল রক্ষা করো।

এভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির বিজেপি’র চেষ্টার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানুষ অংশ নিয়েছেন এই মানব শৃঙ্খলে।

জমায়েতে এদিন রাজ্যের সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে স্মরণ করা হয় এই ইস্পাত সংস্থা স্থাপনের সংগ্রামে নিহত ৩৩ জন শহিদকে। এর পাশাপাশি স্মরণ করা হয় কারখানার জমিদাতা পরিবারগুলির ত্যাগের কথা-যাঁরা ২৬ হাজার ৫০০ একর জমি দিয়েছিলেন এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্থাপন করার জন্য। তাঁরা আশা করেছিলেন তাঁদের সন্তানেরা এই স্টিল প্লান্টে চাকরি পাবেন।

আন্দোলনের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যতদিন না এই প্লান্ট বিক্রি করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত রদ হবে, ততদিন পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। তাঁরা বলেন, কর্পোরেট গ্রুপগুলির প্রতিনিধিরা যদি এই কারখানা দখল করতে আসেন, তাহলে তাদের এই শহরেই ঢুকতে দেওয়া হবে না।

সিআইটিইউ সভাপতি নরসিংহ রাও, এআইটিইউসি রাজ্য নেতা জেভিএসএন মূর্তি, বিশাখাপত্তনমের সাংসদ এমভিভি সত্যনারায়ণ, বিধায়ক টিপপালা নাগি রেড্ডি, প্রতিবাদী সংগঠনের নেতা আদি নারায়ণ, জে অযোধ্যা রাম এবং মন্ত্রী রাজশেখর প্রমুখ এই মানব শৃঙ্খলের বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নেন।

প্রতিবাদী সংগঠন পোরাটা কমিটির পক্ষ থেকে রিলে অনশনের যে কর্মসূচি চলছে তা ২৯ আগস্ট দু’শোতম দিনে পা দিয়েছে। স্টিল প্ল্যান্ট-এর কাছে কুরমাননাপালেমে এই অনশন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ, কালা কানুন সহ শ্রমিকবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশের মানুশের সঙ্গে ফুঁসছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষও। তাঁদের তীব্র ক্ষোভ আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ হয়ে মিশে যাচ্ছে বিশাখাপত্তনমের ইস্পাত কারখানা বাঁচানোর লড়াইয়ে। উচ্চারিত হচ্ছে হুঁশিয়ারি। বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্ট এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ইউনিটগুলি বিক্রি করে দেওয়ার জেরে বিজেপি সরকারের পতন হবে। এ কথা বলছে সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন এবং গণ সংগঠনসমূহের জয়েন্ট আ্যকশন কমিটির পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যেই রাজ্য বিধানসভায় এবং গ্রেটার বিশাখা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে এবং বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদের চাপে বিজেপি সরকার এতটাই নির্লজ্জ যে, বেসরকারিকরণের জন্যে বিশাখাপত্তনমের ইস্পাত সংস্থা বিক্রির সিদ্ধান্তকে স্ট্র্যাটেজিক সেল বলে ঢাকা দিতে চাইছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে বারবার নির্দেশিকা প্রকাশ করে বলছে এই স্টিল প্ল্যান্ট সহ অন্যান্য বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং অধিগৃহীত সংস্থাসমূহকে অবিলম্বে বেসরকারিকরণ করা হবে।

বিশাখাপত্তনম স্টিল প্ল্যান্ট-এর এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ৩০ আগস্ট মশাল মিছিল এবং মোমবাতি মিছিল আয়োজিত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে। এই মিছিলগুলিতে অংশ নিয়েছেন হাজারো মানুষ। বিজেপি ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশের সবকটি রাজনৈতিক দল এবং বিজেপি’র ভারতীয় মজদুর সংঘ ছাড়া সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নগুলি বিশাখাপত্তনমের এই ইস্পাত সংস্থাকে বাঁচানোর লড়াইয়ে একজোট হয়ে প্রতিনিয়ত পথে নেমেছে এবং প্রতিবাদ করছে।