E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ২৪ ভাদ্র, ১৪২৮

অবিলম্বে মুক্ত হোক শিক্ষাঙ্গন

কৌশিক মুখোপাধ্যায়


অতিসম্প্রতি এক খবরে দেখলাম শিশু চিকিৎসাক্ষেত্রের প্রখ্যাত সংস্থা পার্কসার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে জাইডাস ক্যাডিলার জাইকোভিড ভ্যাকসিনের জন্য নির্বাচিত ১২ থেকে ১৮ বছরের ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক কিশোর-কিশোরীর ৫০ ভাগের মধ্যেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা উক্ত ট্রায়ালে অংশ নিতে পারেনি যেহেতু তাদের শরীর ইতিমধ্যেই সার্স-কোভিড-২ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র কলকাতাই নয়, দেশের নানা প্রান্তেই মূলত এপ্রিল-মে থেকে জুন-জুলাই মাসে সংগঠিত সমস্ত সেরোসার্ভে গবেষণার তথ্যই এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বড়োদের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে কোভিড সংক্রমণ ঘটে গেছে বাড়ির শিশুদেরও। কারণ বড়োদের সাথেই ছোটোরাও বাড়িতে থেকেছে এবং সকলেই বাড়ির মধ্যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছে। ছোটোদের জন্য স্কুলের দরজা একটানা গত দেড় বছর বন্ধ করে দেওয়া হলেও বড়োদের কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই নিশ্ছিদ্র লকডাউনের সময়টুকু বাদ দিলে বাড়ির বাইরে বেরোতে হয়েছে। তাই ভাইরাস সংক্রমণের সাধারণ নিয়ম মেনে ছোটোদের মধ্যেও কোভিড প্রবেশ করেছে। পুনের পিসিএমসি-র সার্ভেতে ৬-১৮ বছর বয়সি ৭০ শতাংশ, মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সমীক্ষায় ৫১.১৮ শতাংশ (১-১৮ বছরের মধ্যে) আরএমএস-র গবেষণায় দেশের পাঁচটি শহরের শিশুদের মধ্যে সেরোপ্রিভিলেন্সের মাত্রা প্রায় ৫৬ শতাংশ। দিল্লিতে এই হার সার্বিকভাবে (বড়ো ও ছোটোদের ধরে) প্রায় ৭৫ শতাংশ। আবার চণ্ডীগড়ের পিজিআই হাসপাতালের সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যে দেখা যাচ্ছে ৬-১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে প্রায় ৬৯ শতাংশের শরীরে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) দ্বারা সংগঠিত এ পর্যন্ত সব থেকে বড়ো সেরো সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে তাৎপর্যপূর্ণ নানা তথ্য। দেশের ২১টি রাজ্যের ৭০টি জেলায় জুন-জুলাই মাসে ৩৬,২২৭ জনের রক্ত পরীক্ষার ফলাফলে ৬ বছরের উপরে ৬৭.৬ শতাংশের মধ্যেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সন্ধান মিলেছে। এই হার সব থেকে বেশি মধ্যপ্রদেশে (৭৯শতাংশ) আর সবথেকে কম কেরালায় (৪৪.৪ শতাংশ) (কেরালায় এখনও সংক্রমণের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে যা সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ)। আমাদের রাজ্যে সেরোপজিটিভিটির এই হার প্রায় ৬১ শতাংশ। আরও লক্ষণীয় যে, সেরোপ্রিভিলেন্সের মাত্রা ৬-৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫৭.২ শতাংশ, ১০-১৭ বছরের মধ্যে তা ৬১.৬ শতাংশ, ১৮-৪৪ বছরের মধ্যে ৬৬.৭ শতাংশ, ৪৫-৬০-এ ৭৭.৬ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্বে তা ৭৬.৭ শতাংশ। আইসিএমআর-এর এই বৃহদায়তনের সমীক্ষাসহ দেশের নানা প্রান্তে বিবিধ প্রতিষ্ঠানের এলাকাভিত্তিক সমীক্ষার মধ্যে দিয়ে উঠে আসা তথ্যের নিরিখে যে প্রবণতা লক্ষণীয় তা নিশ্চিতভাবেই এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করছে যে মূলত কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গের হাত ধরে এদেশের বড়ো অংশের শিশু, কিশোর-কিশোরীদের শরীরে কার্যত তেমন প্রতিক্রিয়া সংগঠিত না করেই নীরবে অতিবাহিত হয়েছে কোভিড সংক্রমণ। অর্থাৎ এরা প্রধানত লক্ষণহীন বা সামান্য জ্বর, সর্দি-কাশির লক্ষণ নিয়েই এই পথ পরিক্রমা করেছে। সংক্রমিত মানেই যে আক্রান্ত হওয়া বোঝায় না এ সত্যকেও যেন চিহ্নিত করে দিচ্ছে সেরো সার্ভে গবেষণার সাম্প্রতিক তথ্যসমূহ। অথচ সংক্রমিত কোভিড রোগীর সংখ্যা প্রদর্শনের মধ্যে দিয়েই প্রতিনিয়ত সচেতনভাবে সামাজিক আতঙ্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোয় কখনো দেখানো হয়নি প্রকৃত ক্রিটিক্যাল রোগীর হার, যা গোটা করোনা মহামারীর পর্বে সার্বিকভাবে ২-৩ শতাংশের মধ্যেই থেকেছে।

রাষ্ট্র বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রমের (আরবিএসকে) অন্যতম জাতীয় উপদেষ্টা প্রখ্যাত শিশু চিকিৎসক ডাঃ অরুণ সিং, আইপিজিএমইআর-এর হেপাটোলজির প্রধান ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী সহ বহু বিশিষ্ট চিকিৎসক ও গবেষক বারে বারে দাবি করেছেন যে, শিশুদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ ঘটলেও তা ভয়াবহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নিতান্তই অতি কম। এমন ভাইরাস সংক্রমণে বড়োদের শরীরে যে ধরনের জৈব রাসায়নিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা (সাইটোকাইন) গড়ে উঠে ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে চায় অনেক সময়েই তা শরীরের নানা অঙ্গে প্রদাহজনিত জটিলতা (বিশেষত যাদের আগে থেকেই কিছু মৌলিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে) বাড়িয়ে গোটা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে, যাকে বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘সাইটোকাইন ঝড়’ বলে চিহ্নিত করেছেন। আক্রান্ত সামান্য কিছু অংশের মধ্যে কোভিড ভাইরাস প্রতিরোধে সৃষ্টি হওয়া এই সাইটোকাইন ঝড়ই মূলত শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধি করে এমনকী মৃত্যুর কারণও হয়ে ওঠে। তবে যেহেতু শিশুদের শরীরের ইমিউনসিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বড়োদের মতো পরিণত নয় তাই তাদের ক্ষেত্রে এমন ‘সাইটোকাইন ঝড়ের’ সম্ভাবনা তেমন নেই বলেই শারীরিক ক্ষতির সুযোগ তুলনামূলকভাবে বহুলাংশে কম। আর বিজ্ঞানসম্মতভাবে এমন যুক্তির ভিত্তিতেই তথাকথিত তৃতীয় তরঙ্গে শিশুদের যে তেমন ভয়ানক ক্ষতিসাধনের কোনো সম্ভাবনাই নেই তাও বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছেন। শিশুদের শরীরের জৈব গঠনের কারণেই কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গে তারা যেমন সুরক্ষিত ছিল আগামীদিনেও তারা তাই থাকবে। এখনও পর্যন্ত গবেষণার তথ্যও বলছে করোনা সংক্রমণে শিশুদের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রতি ১০ লাখে মাত্র দুজন (০.০০০২শতাংশ )।

কিন্তু বাজারি মিডিয়া থেকেস একশ্রেণির চিকিৎসককুল এবং পৃথিবীজুড়ে প্রসারিত ফার্মা কোম্পানির ভ্যাকসিন বাজার ও তাকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সার্বিক চক্র কোভিড আতঙ্কে সন্ত্রস্ত অভিভাবককুলের মস্তিষ্কে ক্রমান্বয়ে তথাকথিত তৃতীয় ঢেউয়ের হাত ধরে শিশুদের আক্রান্ত হবার ছবিকে এতটুকুও ঝাপসা করতে রাজি নয়। আসলে এই আতঙ্ককে স্থায়িত্ব দিতে না পারলে ১৮ বছরের নিচের ভ্যাকসিন বাজারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের সম্ভাবনা যে কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়ে পড়তে পারে সে বাস্তবতা সম্পর্কে তারা বিশেষরূপে ওয়াকিবহাল। ফলত, আমাদের দেশ-রাজ্যের প্রশাসকগণও এমন পরিস্থিতিতে সব দায় এড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকার খেলায় মেতেছেন। যুক্তি, বুদ্ধি, বিজ্ঞানভিত্তিক বিবেচনাবোধ এবং সর্বোপরি দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-যুব সমাজের ভবিষ্যৎ স্বার্থকে সার্বিক জলাঞ্জলি দিয়ে কোভিডের নামে শিক্ষাক্ষেত্রকে স্তব্ধ করে রাখার যে সিদ্ধান্তে তারা অনড় তা এখনও মেনে নেওয়া বা মানিয়ে নেওয়াও কার্যত অপরাধের শামিল। বিগত দেড় বছরে যে অপূরণীয় ক্ষতি এদেশের ছাত্র-যুব সমাজকে সহ্য করতে হয়েছে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিশ্চিতভাবেই আগামীদিনে সমাজ জীবনে এক গভীর ক্ষতচিহ্ন রেখে যেতে চলেছে। ইতিমধ্যেই নানা সমীক্ষায় স্কুল ড্রপ-আউট হতে ছোটো ছোটো ছেলেদের কায়িকশ্রমে যুক্ত হবার ঘটনা, মেয়েদের মধ্যে বাল্যবিবাহ বা নারী পাচারের মতো ঘটনা বৃদ্ধির ভয়ানক প্রবণতার ছবি উঠে আসছে। এ সময়কালে মাঠে-ঘাটে কৃষিকাজে, পথে, বাজারে নানা অসংগঠিত ক্ষেত্রে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের নানা কাজে যুক্ত হয়ে পড়ার উদাহরণ আজ আমাদের সামনেও প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান। সর্বশিক্ষা অভিযানের মৌলিক উদ্দেশ্যই আজ চূড়ান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে চলেছে। আর্থ সামাজিক সঙ্কটে বিধ্বস্ত পরিবারগুলোর কাছে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা কার্যত বিলাসিতায় পরিণত। ‘ডিজিটাল ডিভাইডের’ ভয়ানক প্রতিচ্ছবি প্রতিমুহূর্তে প্রলম্বিত হচ্ছে। এমনিতেই এদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষা মূলত আর্থিকভাবে সচ্ছল শ্রেণির হাতে ন্যস্ত, কোভিডের হাত ধরে রাষ্ট্রীয় বদান্যতায় স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রেও এদেশের বুকে অর্থ ও শিক্ষার সমানুপাতিক সম্পর্ক নিশ্চিতভাবেই আরও সুদৃ‌ঢ় হয়ে উঠল। রাজ্য ও কেন্দ্রের উভয় সরকারই বিগত এ সময়কালে শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের সবদায়কে অস্বীকার করে নিশ্চিন্তে হাত গুটিয়ে বসে রইল। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার কোনো আভাস পাওয়া না গেলেও গোটা করোনাকালে কেবলমাত্র এ পরীক্ষা দুটি’র মূল্যায়নের প্রশ্নেই সরকারি হস্তক্ষেপ বা ন্যূনতমতম সচলতা লক্ষ করা গেছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অন্তত মূল্যায়ন নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বাধ্যতামূলক এমন প্রসঙ্গ উত্থাপিত হবার অবকাশ তৈরি হলেও তার নিচের শ্রেণিগুলোর বিষয়ে, প্রাথমিক বা প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের সর্বজনীন শিক্ষার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত এমন নীরব নির্লিপ্ততা কী কোনভাবেই মান্যতা পেতে পারে?

ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো প্রকাশিত জুলাই, ২০২১-এর রিপোর্টে কোভিডের অজুহাতে বিদ্যালয় বন্ধ করে রাখার এমন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এই রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিডের কারণে বন্ধ করে দেওয়া কোনো সামাজিক ক্ষেত্র যদি প্রথম খুলতে হয় তা হলো স্কুল এবং একইসাথে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সামাজিক ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ বন্ধ করা উচিত তা হলো বিদ্যালয়ই। প্রাক্-প্রাথমিক এবং প্রাথমিকস্তরেই কোভিডজনিত আক্রান্ত হবার ভয় যে সবচেয়ে কম তাও নির্দিষ্ট প্রামাণিক তথ্যে এই রিপোর্টেই উল্লেখিত হয়েছে। স্কুল খোলার ক্ষেত্রে প্রথম প্রাক্-প্রাথমিক স্তর হতেই ধাপে ধাপে উপরের দিকে শ্রেণিগুলো খোলা এবং একইভাবে বন্ধ করার পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও সম বিবেচনায় সম্পূর্ণ বিপরীতদিক হতে তা পরিচালিত হওয়া উচিত। সবথেকে বড়ো কথা স্কুল খোলার সাথে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার যে কোনো সম্পর্কই নেই তাও বৈজ্ঞানিক তথ্যের নিরিখে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। বর্তমানে পৃথিবীর ১৭০টি দেশে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে স্কুল খুলে গেছে। ইংল্যান্ড, রাশিয়া, স্পেন এমনকী ইথিওপিয়ার মতো রাষ্ট্রেও বিদ্যালয় সম্পূর্ণ খোলা এবং যথারীতি সব ছাত্র-ছাত্রী সরাসরি বিদ্যালয়ের আঙিনায় ফিরে এসেছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ফ্রান্স এবং সুইডেনের মতো দেশে মহামারীর সময়কালে একদিনের জন্যও বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়নি।

আমাদের রাজ্য বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করার বিষয়ে কিছুটা হলেও একটা পরোক্ষ চাপ তৈরি হয়েছে। বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠন, দু-একটি শিক্ষক সংগঠন এবং এক শ্রেণির মানুষ এ বিষয়ে সঙ্গত দাবি উত্থাপন করছেন। রাজ্যের কয়েক জায়গায় ‘বিকল্প ক্লাসরুমের’ ব্যানারে ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতৃত্বে সীমিতভাবে হলেও বিদ্যালয় শুরুর বার্তা প্রশাসনের কানে পৌঁছে দেবার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য, যে সরলতায় শিক্ষাঙ্গনকে খোলার আওয়াজ উচ্চারিত হওয়া কাম্য ছিল তা এখনও পর্যন্ত সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। তবে এবিষয়ে জনমত যে কিছুটা হলেও প্রভাবিত তা অনুধাবন করেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুজোর পরে বিদ্যালয় খোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে প্রসঙ্গ অনুচ্চারিত থেকে গেল - পুজোর পর অর্থাৎ এ ঘোষণার সময়কাল হতে প্রায় তিনমাস পরে স্কুল খোলার এমন সিদ্ধান্ত কোন্ বৈজ্ঞানিকভিত্তিকে সামনে রেখে ঘোষিত হলো? সেরো সমীক্ষার নিরিখে উঠে আসা সাম্প্রতিককালের তথ্য, বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা এবং মূল্যায়নের নিরিখে কেন অবিলম্বে একটাদিনও সময় নষ্ট না করে শিক্ষাব্যবস্থাকে চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় রূপরেখা তৈরি করা হবে না? শুধুমাত্র ছাত্র-যুব, শিক্ষক সংগঠনগুলোই নয় সর্বস্তরের ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকবৃন্দদের উপরও দায়বর্তায় অবিলম্বে সরকারকে এ বিষয়ে নীতি প্রণয়নে বাধ্য করার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। আর এরপরেও যদি আমরা এ দায়িত্ব পালনে অগ্রসর না হই তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে এ অন্যায়, এ অপরাধ সংগঠনে আমাদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য হবেনা। শিক্ষাক্ষেত্রকে স্তব্ধ করে রাখার এমন অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক এবং সর্বতোভাবে দেশ-কাল-সমাজের সাপেক্ষে বৃহত্তর স্বার্থবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে যোগ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার নৈতিক দায় এ সমাজকেই গ্রহণ করতে হবে।