৬১ বর্ষ ১ সংখ্যা / ১১ আগস্ট, ২০২৩ / ২৫ শ্রাবণ, ১৪৩০
গণতন্ত্রকে নিয়ে এই ছেলেখেলা আর কতদিন?
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সদ্য সদ্য যেহেতু বাইশে শ্রাবণ পেরিয়েছি তাই মনটা এখনও ঠাকুর ঠাকুর করেই যাচ্ছে। রেশ কাটেনি তাঁর প্রতি ভালোলাগার। ঘুরে ফিরে উলটে পালটে কেন যে তিনি বারবার ফিরে ফিরে এসে ধাক্কা দিয়ে যান তিনিই জানেন। তবু তিনি আসেন। এসেই যান, এসেই যান। পলে, দণ্ডে, ক্ষণে ক্ষণে। সে বেগ, সে ঝঞ্ঝা, সে ধাক্কার প্রাবল্য সামলিয়ে ক্ষত বিক্ষত হতে হতে একসময় অনুভব হয় তিনিই আমার ‘প্রাণের আরাম’, ‘মনের আনন্দ’...। যদিও দ্রুত, অতি দ্রুত আমাদের শান্তির ছাতিমতলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। গতবছরের আগস্টে দুটো শালগাছ পড়ে সেই ছাতিমতলার বেদি ভেঙে যাওয়াকে শুধুই প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে মেনে নিতে মন চায় না। হয়তো বা এই ভাঙন আরও আরও আরও গভীরের...
“ঈশ্বর যদি থাকেন তবে আমার বুদ্ধি তাঁরই দেওয়া; সেই বুদ্ধি বলিতেছে যে, ঈশ্বর নাই; অতএব ঈশ্বর বলিতেছেন যে, ঈশ্বর নাই; অথচ, তোমরা তাঁর মুখের উপর জবাব দিয়া বলিতেছ যে, ঈশ্বর আছেন। এই পাপের শাস্তিস্বরূপে তেত্রিশ কোটি দেবতা তোমাদের দুই কান ধরিয়া জরিমানা আদায় করিতেছে।”আজকের লেখার বিষয়ের সঙ্গে ওপরের উদ্ধৃতি হয়তো ততটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবেনা। তবু আশে পাশে দিবারাত্রের রঙ্গ দেখতে দেখতে ক্লান্ত, ধ্বস্ত, ধর্ষিত, অভ্যস্ত, চোখে ও মস্তিস্কে ‘চতুরঙ্গ’-তে শচীশের জ্যাঠা জগমোহনের এই উক্তিটাও বেশ চোখ টানলো। তাই শব্দের খিচুড়ি রাঁধতে বসে প্রথমেই নাহয় একটু গরমমশলা। চাল, ডাল, তেজপাতা, ঘি আসবে নিয়ম মেনেই। সবশেষে একটু নুন ছড়িয়ে দেওয়া যাবে...
সকাল সকাল যখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়েছি তখন নাহয় আরও কিছুটা ঠাকুরচর্চা করে নেওয়া যাক। “ফ্যাসিবাদের কর্মপদ্ধতি ও নীতি সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের বিষয়। যে আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করে, বিবেক-বিরোধী কাজ করতে মানুষকে বাধ্য করে এবং হিংস্র রক্তাক্ত পথে চলে বা গোপনে অপরাধ সংঘটিত করে - সে আন্দোলনকে আমি সমর্থন করতে পারি এমন উদ্ভট চিন্তা আসার কোনো কারণ নেই। আমি বারবারই বলেছি পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলি সযত্নে উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব লালন-পালন করে সারা পৃথিবীর সামনে ভয়াবহ বিপদের সৃষ্টি করেছে।” সেইসময় এ বিপদ অবশ্য ছিল নেহাতই পশ্চিমা। কারণ রবীন্দ্রনাথ ভারতের বুকে এই দাপাদাপি হানাদারি দেখে যাননি। যদিও তখনও ওই মত ও পথের সমর্থক এই দেশে বড়ো কম ছিলোনা। এখন যা ধারে এবং ভারে অনেকটাই বেড়েছে। বহু দিনের চেষ্টায় অবশেষে বিষবৃক্ষে সত্যিকারেই ফল ধরিয়ে দেওয়া গেছে। ১৯৪৭ থেকে ৬৭ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েও যে দৈত্য দেশের বুকে সেভাবে মাথা তুলতে পারেনি তা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৯ বছরে। অতএব স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এখন ‘অমৃতকাল’। এখন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালনের সময়।
স্বৈরতন্ত্র, গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র - তন্ত্রময় এ পরিমণ্ডলে হাজারো তান্ত্রিকের ভিড়। তাদের কেউ অতীতে চা বেচেছেন তো কেউ আবার এনকাউন্টারের আসামি। এদেরই কেউ কেউ আবার কোনোসময় দুর্নীতির পাঁকে ডুবে থেকেও ‘সততার প্রতীক’ ছিলেন। আপাতত তাদেরই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে, আঁতাতে চলছে পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, রাজ্য থেকে দেশকে বিরোধীশূন্য করার খেলা। সেখানে তৃণমূল কিংবা বিজেপি-কে আলাদা করে ভাবার, দেখার মতো কোনো কারণ ঘটেনি। আজ যে মুখ্যমন্ত্রী, যে প্রধানমন্ত্রীকে কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানোর হুঙ্কার ছাড়েন, কাল তিনিই আবার নতুন কুর্তা, পাজামা পাঠিয়ে দেন সেই প্রধানমন্ত্রীকে। ঘটনা পরম্পরায় ক্রমশ ক্রমশ উলঙ্গ হয়ে পড়া রাজাকে কাপড় ছুঁড়ে দেবার মহান দায়িত্ব তো সেই কবে থেকেই তিনি নিয়ে রেখেছেন। সেই কবেই তো তিনি ঘোষণা করেছিলেন - বিজেপি আমাদের স্বাভাবিক মিত্র। কাজেই কোন মঞ্চে গিয়ে তিনি কী বললেন তা নিয়ে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক মহলের খুব একটা কিছু বোধহয় যায় আসে না। কারণ সবকিছুর সারমর্ম সকলেই জানে। নিশিকান্ত দুবে তো গত কয়েকদিন আগে লোকসভাতে বলেই দিয়েছেন সবকিছু। কে কাকে বাম হটাতে মদত দিয়ে সরকারে এনেছে তা নিয়ে নতুন করে গবেষণা করার কিছু নেই। অতএব...
২০১৪ সালে দেশের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে এখনও পর্যন্ত গণতন্ত্রের গলা টিপে রাজ্যে রাজ্যে ঘুরপথে, অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা যে দল চালিয়ে যাচ্ছে তার নাম সবারই জানা। ঠিক একইভাবে আমাদের রাজ্যেও যে দল ২০১১-র পর থেকে ছলে বলে কৌশলে গণতন্ত্রকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছে আমাদের জানা সে দলের নামও। হালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ননের নামে, ভোটের নামে, গণনার নামে এমনকী বোর্ড গঠনের নামে যে প্রহসন তৃণমূল শাসিত বাঙলা দেখেছে সেই একই প্রহসন এর আগে মানুষ দেখেছে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচনে। অঘোষিত জোটসঙ্গী ‘ন্যাচারাল অ্যালাই’দের এই খেলা দেখতে দেখতে চোখ এখন অনেকটাই সয়ে গেছে মানুষের।
পন্ডিচেরি থেকে মণিপুর, কর্ণাটক থেকে মধ্যপ্রদেশ, গোয়া থেকে মহারাষ্ট্র - কেনাবেচা করে নির্বাচিত সরকার ফেলে দিতে জুড়ি নেই বিজেপি’র। যে ক’টা রাজ্যের নাম এখানে বলা হয়েছে সবকটাতেই আচমকা কিছু বিধায়কের মনে হয়েছে তাঁরা তাঁদের দলে থেকে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। অতএব সরাসরি দলবদল করে বিজেপি-তে চলে গেছেন। আবার সিকিমে একটা গোটা বিরোধী দলের সমস্ত বিধায়কের হঠাৎ মনে হওয়ায় তাঁরা সকলেই একসঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনে সিকিমে একটিও আসনে জয়ী হয়নি বিজেপি। যদিও রাতারাতি বিরোধী সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রধান পবন কুমার চামলিং ছাড়া বাকি ১২ জন বিধায়ক বিজেপি-তে যোগ দেন। এই ধরনের ঘটনা দেশের সব প্রান্তে বিগত ৯ বছর ধরে বার বার মঞ্চস্থ হচ্ছে। আমাদের রাজ্যও ব্যতিক্রম নয়।
এবার আসা যাক মহারাষ্ট্রে। ২০১৯-এর অক্টোবরে মহারাষ্ট্রের শেষ বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দল। ২৮৮ জন সদস্যের মধ্যে বিধানসভায় বিজেপি জিতেছিল ১০৫, শিবসেনা ৫৬, এনসিপি ৫৪ এবং কংগ্রেস ৪৪টি আসন জিতেছিল। যদিও একক বৃহত্তম দল হওয়ার সুবাদে জোটসঙ্গী শিবসেনাকে বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি এনসিপি-র অজিত পাওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির সহায়তায় প্রায় মাঝরাতে তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। যদিও বিজেপি বিরোধিতায় জোট বাঁধে কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এনসিপি। ফলে ২৩ নভেম্বর শপথ নেওয়া মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশ আস্থাভোটের আগেই ২৬ নভেম্বর ইস্তফা দিতে বাধ্য হন এবং পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হন মহাবিকাশ আঘাদি জোটের উদ্ধব ঠাকরে।
মহাবিকাশ আঘাদির সরকার চললেও সেই সরকার ফেলতে তৎপর ছিল বিজেপি তথা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টায় অবশেষে ফল পাওয়া যায় ২০২২ সালের জুন মাসে। ২০ জুন হঠাৎই সন্ধ্যার পর ২৫জন বিধায়ক নিয়ে উধাও হয়ে যান রাজ্যের মন্ত্রী তথা শিবসেনা বিধায়ক একনাথ শিন্ধে। প্রায় চিরুনি তল্লাশির পর তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়। জানা যায়, তাঁরা গুজরাটের সুরাটের একটি পাঁচতারা হোটেলে উঠেছেন। গুজরাট বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে দেখা করেছেন তিনি। এরপর তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য আসামে।
মহারাষ্ট্রে যে সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে সেই বিষয়ে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউথ। রাজ্যসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুকে চিঠি লিখে তিনি পুরো বিষয়টি জানান। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ইডি এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা “তাদের রাজনৈতিক প্রভুর হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে।” তাঁর আরও দাবি ছিল, আধিকারিকরা স্বীকার করেছেন তাঁকে ‘ফাঁসানোর’ নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের ‘বস’রা’। শিবসেনা সাংসদ ওই সময় জানিয়েছিলেন, “প্রায় একমাস আগে কিছু লোক আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং মহারাষ্ট্র সরকারকে ফেলতে তাঁদের সাহায্য করতে বলে। তাঁরা চেয়েছিলেন, আমি এমন কিছু একটা করি যাতে রাজ্য মাঝপথে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। আমি তৎক্ষণাৎ এই প্রস্তাব অস্বীকার করলে আমাকে হুমকি দেওয়া হয় এবং বলা হয় এর ভারী মূল্য চোকাতে হবে আমাকে। আমাকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাজ্যের দুই সিনিয়র মন্ত্রী সহ বহু নেতাকে আর্থিক তছরুপ মামলায় জেলে ঢোকানোর হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয় নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যাতে রাজ্যে মাঝপথে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়।”
এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু তথ্যের উল্লেখ করা যেতেই পারে। ২০১৯-এ মহাবিকাশ আঘাদি সরকার শপথ নেওয়ার সময় থেকেই শিবসেনার একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ইডি সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থার কার্যকলাপ শুরু হয়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ধে ছাড়াও এই তালিকায় ছিলেন প্রতাপ সরনায়েক (এর বিরুদ্ধে ১৭৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আছে - যিনি ২০২১ সালে উদ্ধব ঠাকরেকে চিঠি লিখে বিজেপি শিবিরে ফিরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন), ভাবানা গাউলি (৭ কোটির দুর্নীতি), রবীন্দ্র ওয়েইকার, সূরজ চৌহান, অনিল পরব, সঞ্জয় রাউথ, যামিনী এবং যশবন্ত যাদব প্রমুখ। এঁরা সকলেই জুন ২০২২-এ শিবির বদলেছেন।
এরপর মহারাষ্ট্রে মহাবিকাশ আঘাদি জোটে দ্বিতীয়বার ভাঙন হয় এই বছর। যখন এনসিপি-তে ভাঙন ধরিয়ে অজিত পাওয়ার রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। উল্লেখযোগ্যভাবে এবারে এনসিপি-তে ভাঙন ধরানো বিধায়কদের মধ্যে কমপক্ষে ৯ জনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। যে তালিকায় আছেন অদিতি সুনীল ততকারে, হাসান মুশরিফ, ছগন ভুজবল, প্রফুল্ল প্যাটেল, ধনঞ্জয় মুন্ডে, অজিত পাওয়ার প্রমুখ। অজিত পাওয়ার রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং অর্থ দপ্তরের দায়িত্ব পাওয়ার পর মহারাষ্ট্রের কৃষক এবং আন্দোলনকারীরা ভয় পাচ্ছেন যে এবার হয়তো অজিত পাওয়ার এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে চলা ৭০ হাজার কোটি টাকার সেচ দপ্তরের দুর্নীতির মামলাও চেপে দেওয়া হবে। খুব তাড়াতাড়ি এঁরা সকলেই ‘ক্লিন চিট’ পেয়ে যাবেন। ২০১৪ এবং ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি এই অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধেই ৭০ হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতি নিয়ে সবথেকে বেশি সরব ছিল।
এবার একটু বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের কথায় আসা যেতে পারে। কংগ্রেসের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে ২০২০ সালের মার্চে এখানে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। যে মধ্যপ্রদেশ খ্যাত ব্যাপম কেলেঙ্কারিতে। যে কেলেঙ্কারিতে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, জেলে গিয়েছেন ২০০০ জনের অধিক মানুষ। এই কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। মধ্যপ্রদেশের এই ‘পেশাদার পরীক্ষা বোর্ড’ বা ব্যাপম কেলেঙ্কারির তদন্তকে কেন্দ্র করে আবারও রাজনৈতিক উত্তেজনা ছাড়ানোর আশংকা দেখা দিয়েছে। কারণ, এই তদন্তে বিজেপি’র অনেক নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রীদের নাম জড়িয়েছে। এছাড়াও এবার হঠাৎ করেই সামনে এসেছে ব্যাপম ২। গত ২০ জুলাই নিউজ লন্ড্রি অনলাইন ওয়েব পোর্টালের এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে কমপক্ষে ৩০ জনের ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে এবং কমপক্ষে ২১৭ জন বয়সের ভুয়ো নথি জমা দিয়েছেন। এই পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে ভিন্দ-এর বিধায়ক সঞ্জীব কুমার কুশহাওয়ার পরীক্ষা কেন্দ্রে। গত মার্চ এবং এপ্রিল মাসে ৭০০০ পদের জন্য মধ্যপ্রদেশ এমপ্লয়িজ সিলেকশন বোর্ডের এই পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ১০ লক্ষ প্রার্থী। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক দুর্নীতির কাছে এই দুর্নীতি নিতান্তই শিশু। কারণ এই রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতিতে যে ঠিক কত কোটি টাকার হাতবদল হয়েছে আর কত টাকা ৭৫ শতাংশ আর ২৫ শতাংশে ভাগাভাগি হয়েছে এখনও পর্যন্ত তার স্পষ্ট কোনো হিসেব নেই।
লেখাটা আর বাড়িয়ে লাভ নেই। কারণ গণতন্ত্রকে নিয়ে এই ছেলেখেলা চলছেই। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। এবার বোধহয় প্রতিবাদ প্রতিরোধের দামামা বাজানোর সময় এসে গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ব্যতিক্রম নয় এই রাজ্যও। যে লেখা শুরু করেছিলাম রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শেষটাও নাহয় তাঁকে দিয়েই করি। কারণ ইতিহাসের শেষ পাতাটা পড়া হয়তো এখনও অনেকেরই বাকি। মৃত্যুর এক বছরের কিছু কম সময় আগে ১৯৪০ সালে এক চিঠিতে কবি লিখেছিলেন, “ডারুয়িন বলেছেন, বানরের অভিব্যক্তি মানুষ, কিন্তু মানুষের অভিব্যক্তি কোন জানোয়ারে। প্রাণীজগতের আদি যুগে বর্মেচর্মে ভারাক্রান্ত, বিকট জন্তুরা আস্ফালন করে পৃথিবীকে দলিত করেছিল তাঁরা তো প্রাণলোকের অসহ্য হয়ে উঠল, টিকতে পারলো না।...”