৫৮ বর্ষ ১৭শ সংখ্যা / ১১ ডিসেম্বর ২০২০ / ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৭
চন্দ্রকোণা রোডে লালঝান্ডার সমাবেশে তৃণমূল-বিজেপি’কে পরাস্ত করার আহ্বান
চন্দ্রকোনা রোডের সমাবেশে বলছেন সুশান্ত ঘোষ। রয়েছেন সুজন চক্রবর্তী সহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ তৃণমূল দল ও সরকারের হাজারো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে লালঝান্ডার দৃপ্ত প্রতিরোধের লড়াইয়ের বার্তা মূর্ত হলো ৬ ডিসেম্বর চন্দ্রকোণা রোডের সমাবেশে। এদিন কয়েক হাজার মানুষের মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে আবারও প্রতিভাত হলো শত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, অত্যাচার, খুন করেও রক্তপতাকাকে অবদমিত করা যায় না, যাবে না। কয়েক হাজার মানুষের উত্তাল সমাবেশ এদিন দৃঢ়তার সঙ্গে এই বার্তাই দিয়েছে, শালবনী-গড়বেতা-চন্দ্রকোণা রোড সহ গোটা জঙ্গলমহল এবং সমগ্র জেলায় তৃণমূল-বিজেপি’র গোপন সখ্যের ঘৃণ্য রাজনীতিকে প্রতিহত করতে ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে দৃপ্ত প্রতিরোধ। একইসঙ্গে এই দুই জনবিরোধী দলের বিরুদ্ধে গরিব সাধারণ মানুষের রুটি-রুজির সংগ্রাম, অধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার দুর্বার প্রচেষ্টা জারি থাকার বার্তাও ধ্বনিত হয়েছে। এই লক্ষ্যেই প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের চেতনায় আরও তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবার আবেগে, উচ্ছ্বাসে, লড়াকু যৌবনের উত্তাল ঢেউ সেদিন যেন লাল পতাকার চিরন্তন অগ্রগতির ছবিই স্পষ্ট করে দিয়েছে। এদিনের সভায় নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও প্রতিভাত হয়েছে শত ষড়যন্ত্র, অত্যাচার করেও কমিউনিস্টদের রোখা যায় না, যাবে না।
এদিন সভার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কোনো পোস্টার, ফ্লেক্স, দেওয়াল লিখনেরও প্রয়োজন হয়নি। তবুও কেবল মুখের সংবাদে, নতুন উদ্যমে লড়াইয়ের প্রেরণা পেতে গ্রাম-গ্রামান্তরের শত-সহস্র প্রতিবাদী মানুষ লাল পতাকা নিয়ে হাজির হয়েছেন শালবনীতে। সেখান থেকে হাজারো মানুষ দৃপ্ত পদচারণায় নতুন লড়াইয়ের বার্তা ছড়াতে ছড়াতে এসেছেন চন্দ্রকোণা রোডের সমাবেশে। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কলঙ্কিত দিনটিকে স্মরণ করে সম্প্রীতির মিছিলের সূচনা হয়েছিল চন্দ্রকোণা রোডে অবস্থিত সিপিআই(এম) অফিস থেকে। এই দিনটিতেই সিপিআই(এম) নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ দীর্ঘ নয় বছরেরও বেশি সময় পর শাসকদল ও সরকারের ঘৃণ্য চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আইনি লড়াইয়ে ছিন্ন করে পা দেন জেলার মাটিতে। সেই বার্তা পেয়ে তাঁর সংগ্রামের সাথী এবং লাল পতাকার সেনানীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে দলে জড়ো হয়েছিলেন শালবনীতে। এখানেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আসেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বিধানসভায় বামপরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট আইনজীবী রবিলাল মৈত্র, সিপিআই(এম) বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের নেতা ও চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম প্রমুখ। সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষ, অগণিত পার্টি সমর্থক, দরদিরা শাসকদলের মিথ্যা মামলা থেকে আইনি পথে জামিন পাওয়া পার্টি নেতা সুশান্ত ঘোষকে প্রাণের আবেগে সংবর্ধনা জানান। সেখান থেকে কয়েক শত বাইক ও যানবাহনের সাহায্যে কয়েক হাজার মানুষ পার্টি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে রওনা দেন চন্দ্রকোণা রোডের সমাবেশ অভিমুখে। পথে সাতবাঁকুড়াতে সম্প্রীতি মিছিল মিলে যায় শালবনী থেকে আসা অগণিত মানুষের স্রোতে। তখন আদিবাসী শিল্পীদের ধামসা-মাদলের ছন্দে, ছৌনাচ, রণপা নৃত্যে, স্লোগানে, লালপতাকায় সেই মিছিল বর্ণময় হয়ে ওঠে, চারপাশ মুখরিত হয় আগামী লড়াইয়ের প্রত্যয়ী বার্তায়।
এদিনের সমাবেশে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূল-মাওবাদী যৌথবাহিনীর হাতে খুন হওয়া এমন ৫৫জন শহিদ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে জঙ্গলমহলের ধরমপুরে ওই যৌথবাহিনীর হাতে খুন হওয়া কমরেড শালুক সরেনের মা চিঠামণি সরেনকে মঞ্চে নিয়ে যান সুজন চক্রবর্তী এবং সুশান্ত ঘোষ। তখন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের আবেগ, উচ্ছ্বাস আর দৃপ্ত স্লোগানে আর লাল পতাকার সমারোহে সেখানে যেন নতুন সংগ্রামের সূচনার উত্তাল আবহ। কোনোরকম আগাম প্রস্তুতি, আয়োজন ছাড়াই সেখানে তখন সংগ্রামী মানুষের ঢল। বামপন্থী, কমিউনিস্টদের কর্মসূচি। তাই সহস্র-অযুত মানুষের উচ্ছ্বাস-আবেগ আর সংগ্রামী প্রত্যয়ের মধ্যেও ছিল সুশৃঙ্খল আবরণ। সেই পরিবেশেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে সভা। সভা মঞ্চে সুজন চক্রবর্তী, সুশান্ত ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পাল, রবিলাল মৈত্র, তন্ময় ভট্টাচার্য, ফুয়াদ হালিম প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির জেলা কমিটির সদস্য অরবিন্দ ব্যানার্জি।
সমাবেশে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। যারা নবান্নে বসে আছেন, তারা দেখুন ঘরের ছেলেকে যারা উৎখাত করতে চেয়েছিল তাদের পরাজয় ঘটেছে, তাদের পরাজয় ঘটবে। কেউ তাদের উদ্ধার করতে পারবে না। আজকের সভায় যাঁরা উপস্থিত হয়েছেন, তাঁরা তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো সভা আমরা ডাকিনি, কোনো পোস্টার-লিফলেট দেওয়া হয়নি। তবুও সাধারণ মানুষ, আমাদের সমর্থকেরা এখানে এসেছেন তাঁদের ঘরের ছেলেকে যেভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ জানাতে।
তিনি বলেন, এটা কোনো ‘প্রভাবশালী’র জনসভা নয়। নবান্ন খুঁজে বেড়াচ্ছে কে কত প্রভাবশালী। নবান্ন যেন জেনে রাখে ব্যক্তির প্রভাবের চেয়েও আমাদের কাছে অনেক বেশি শক্তিশালী মানুষের প্রভাব। সেই প্রভাবশালী মানুষেরাই এখানে এসেছেন ক্ষমতা দেখাতে নয়, তাদের সংগ্রামের সাথি সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে যে অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে জানাতে। এখানে সেই মানুষেরা এসেছেন নবান্নে বসে যারা ষড়যন্ত্র করছেন, অন্যায়-অত্যাচার করছেন, সারা জেলায়-রাজ্যে আমাদের অসংখ্য কর্মী-সমর্থককে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে, অজস্র কর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জেলায় জেলায় যে অগণিত মানুষ মিথ্যা মামলা, ষড়যন্ত্র, অত্যাচার ইত্যাদি সহ্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জাগাতে। যে নবান্ন ভেবেছিল আক্রমণ-অত্যাচার করে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, চোখের ওপরে টর্চলাইট জ্বেলে পুলিশি ঘেরাটোপে ব্রিটিশ আমলের মতো অত্যাচার করে সুশান্ত ঘোষের মাথাটাকে নিচু করিয়ে দেওয়া যাবে, তারা জেনে রাখুন, নবান্নের মাথা নিচু হবে, কিন্তু সুশান্ত ঘোষদের মতো কমিউনিস্ট কর্মীরা মাথা নিচু করবেন না। আত্মসমর্পণ করবেন না। তাই সুশান্ত ঘোষকে সেলাম জানাতে-কুর্নিশ জানাতে এখানে এত মানুষ এসেছেন।
সুজন চক্রবর্তী তৃণমূলের অত্যাচার-সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্রের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ২০১১ সালে এরাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর প্রথম শহিদ হন এই এলাকার কমরেড জীতেন নন্দী। এখানে কঙ্কাল খোঁজার নাম করে ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সে সব ধরা পড়ে গেছে। ষড়যন্ত্র হয়েছে পার্টি অফিসে বোমা-বন্ধুক রাখা আছে তা খোঁজার নাম করে। ওরা সারা রাজ্যে এসব করেছে আমাদের পার্টিকে দুর্বল করে দিতে। কিন্তু লালঝান্ডা প্রমাণ করেছে, ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও লালঝান্ডাকে দুর্বল করে দেওয়া যায় না। ওরা বিরোধী শূন্য পশ্চিমবঙ্গ করতে চেয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে লুঠের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছে। এখন পি সি-ভাইপোর দলই উঠে যেতে বসেছে।
তিনি শাসকদল তৃণমূলের সাম্প্রতিক এক কদর্য চক্রান্তের উল্লেখ করে বলেন, ওরা একটা কাঁচা কাজ করেছে। সাত বছর যে চিটিংবাজ, প্রতারক রাজ্যসরকারের কারা দপ্তরের অধীনে রয়েছে, সাত বছরে বহুবার সি বি আই-র কাছে গেছে, কোর্টে গেছে, তখন তার মনে পড়েনি। সাত বছর পর ষড়যন্ত্র করে জালিয়াতি করে তাকে দিয়ে লেখানো হয়েছে তার কাছ থেকে শাসক দলের বিরোধী কোন্ কোন্ নেতা টাকা নিয়েছেন। এমনকি বিমান বসুর মতো শ্রদ্ধেয় নেতার নামও ষড়যন্ত্রে যুক্ত করা হয়েছে। কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আগেও অনেক হয়েছে, পরাধীন ভারতে পেশোয়ার, কানপুর, মীরাট ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কমিউনিস্টদের মাথা নিচু করানো যায়নি। স্বাধীনতা আন্দোলন পর্বে পূর্ণ স্বরাজের দাবি জানিয়েছেন কমিউনিস্টরাই। আন্দামানের সেলুলার জেলে কঠিন জেলজীবন কাটিয়েছেন কমিউনিস্টরা। কিন্তু বি জে পি’র পূর্বসূরিদের মতো ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দেননি তাঁরা। তাই শত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, অত্যাচার করেও কমিউনিস্টদের রোখা যাবে না। আজকের এই বিশাল সমাবেশ আবারও তারই প্রমাণ দিচ্ছে।
সুশান্ত ঘোষ তাঁর ভাষণে উপস্থিত হাজারো মানুষকে রক্তিম অভিবাদন জানিয়ে বলেন, যেদিন লালঝান্ডার রাজনীতির সাথে নিজেকে যুক্ত করেছি, যেদিন কমিউনিস্ট মতাদর্শের পথে চলব বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি, সেদিন থেকেই জানি আমাদের পথ মসৃণ নয়, আমাদের পথ কাঁটা বিছানো। বামপন্থার আদর্শে বিশ্বাস করব, সে পথে চলব অথচ জেলে যাব না, মিথ্যা মামলার মুখে পড়ব না এটা বিশ্বের কোন্ ইতিহাসে লেখা আছে?
তিনি বলেন, কমরেড শালকু সরেনের মৃতদেহ জঙ্গলমহলের মাটিতে দিনের পর দিন পড়ে ছিল। আমরা তখন সরকারে থাকলেও সেই মৃতদেহ উদ্ধার করে তাঁর মা-র হাতে তুলে দিতে পারিনি। সেই অপরাধবোধ এখনো আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। কিন্তু অপরাধী আমরা নই। সেদিন যারা এই জঘন্য অপরাধ করেছিল, সেই সময়ে যারা এই সমস্ত ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারাই আজ শাসকদলের রাজ্যস্তরের নেতায় পরিণত হয়েছে। গোটা জঙ্গলমহলের মানুষ আজ ঘৃণার চোখে তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তৈরি হচ্ছেন। গত ২৬ নভেম্বর সাধারণ ধর্মঘটের দিন জঙ্গলমহল জানিয়ে দিয়েছে একটাই মাত্র শক্তি রয়েছে, তা হচ্ছে লালঝান্ডা। যারা রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে তাদের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। একটা সময় এই বার্তাই কৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তৃণমূলের অত্যাচার থেকে একমাত্র বি জে পি-ই পারে বাঁচাতে। এতে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। এখনো অনেকেই বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে রাজ্যের সর্বনাশ করছে। আর বি জে পি এদের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
শাসকদল নানা চক্রান্ত করে সুশান্ত ঘোষকে যেভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুলিশি জেরার সময়ে যে অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে, তাঁকে কারান্তরালে রাখতে যেভাবে সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে তার কিছু বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, কীভাবে তাঁর বিরুদ্ধে টাকা তছরূপ থেকে শুরু করে বেড়াচাপড়া কঙ্কালকাণ্ডের মতো কুৎসিত ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এমনকি একেবারে শেষ পর্যায়ে তিনি যাতে জেলায় প্রবেশ করে বাড়ির বাইরে বেরোতে না পারেন, তারজন্য প্রভাবশালী তত্ত্ব খাঁড়া করা হয়েছে। তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, আদালতের অন্তিম রায়ে নিশ্চিতভাবেই এই সমস্ত মিথ্যা ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন হবে।
তিনি বর্তমানে কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের দুর্বার আন্দোলনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, আজ গোটা দেশে কৃষকেরা আন্দোলনের পথে। যাঁরা দেশের অন্নদাতা তাদের পেটে লাথি মেরেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আজ যখন লক্ষ লক্ষ কৃষক দিল্লি ঘেরাও করেছেন, তাদের আন্দোলনের চাপে রাজধানী দিল্লি স্তব্ধ হবার মুখে, বাংলাতেও যখন লালঝান্ডার নেতৃত্বে মানুষ জেগে উঠেছেন, তখন তৃণমূল নেত্রী বলছেন, তারাও নাকি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে! তা হলে এতদিন মুখে কুলুপ এটেঁ বসে ছিলেন কেন? তিনি বলেন, ২৬ নভেম্বরের সাধারণ ধর্মঘট প্রমাণ করে দিয়েছে লালঝান্ডা ছিল, আছে, থাকবে। কারও ক্ষমতা নেই লালঝান্ডার অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেবার।
পরিশেষে তিনি বলেন, আপনারা লালঝান্ডাকে ভালোবাসেন বলেই আমাদেরও ভালোবাসেন। সেই টানেই আপনারা এখানে এসেছেন। আপনাদের এই আবেগ-ভালোবাসার উপস্থিতিকে বিঘ্ন ঘটাতে গত কয়েকদিন ধরে নানা চক্রান্ত হয়েছে। আপনারা সেই সমস্ত চক্রান্তকে প্রতিহত করেই এখানে এসেছেন। আগামীদিনে লালঝান্ডার নেতৃত্বে যে বৃহত্তর লড়াই হবে, সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি ও শপথ আমাদের দৃঢ়তার সঙ্গে নিতে হবে।
বিজয় পাল তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, দেশে বিভিন্ন সময়ে অনেক সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটা সরকার পরিবর্তনের পর শুধুমাত্র ভোট দেবার অপরাধে এরাজ্যে যেভাবে জরিমানা, মিথ্যা মামলা, অত্যাচার, নিপীড়ন করা হয়েছে - তার নজির খুব একটা মিলবে না। এরাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর যাঁরা নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন পার্টিনেতা সুশান্ত ঘোষ তাঁদেরই একজন প্রতিনিধি। তাই জেলা ও রাজ্যের মানুষের পক্ষ থেকে আক্রান্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে সুশান্ত ঘোষকে স্বাগত জানাতে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, একজন কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সুশান্ত ঘোষের কাজের মধ্যদিয়ে জেলার পার্টি যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি আপনাদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী চেতনার মধ্যদিয়ে লালঝান্ডার লড়াইয়েরও অগ্রগতি হবে।
এছাড়াও এদিনের সভায় বক্তব্য রেখেছেন রবিলাল মৈত্র এবং তন্ময় ভট্টাচার্য। এদিনের সভায় উপস্থিত শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাতে শালচাদর তুলে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে চন্দ্রকোণা রোডের এই সভায় তৃণমূল-বি জে পি’র বিরুদ্ধে লালঝান্ডার নেতৃত্বে তীব্র গণআন্দোলনের বার্তাই এদিন বাঙ্ময় হয়েছে।