৫৯ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ / ২৮ মাঘ, ১৪২৮
কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকারের ওপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির
দেশব্যাপী প্রতিবাদ ছাত্রসমাজের
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কর্ণাটক রাজ্য সরকার মুসলিম ছাত্রীদের অধিকার রক্ষায় যে চরম ব্যর্থতা দেখিয়েছে, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি তার তীব্র নিন্দা করেছে। ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বিবৃতিতে সমিতি বলেছে, হিজাব পরিধান করায় ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার থেকে যেভাবে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে তা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় রাজ্য সরকার যেভাবে নিষ্পৃহ হয়ে থেকেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক এবং দুঃখের। মুসলিম ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার সুরক্ষিত রাখার যে সাংবিধানিক কর্তব্য এবং দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়, তা তারা পালন করেনি। বরং ঘটনাকে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে। সরকার কোনো হস্তক্ষেপই করেনি। ছাত্রীদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে রাজ্য সরকার এক নির্দেশ জারি করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করেছে।
কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীরা বরাবরই হিজাব পরে তাদের ক্লাসে আসে। মহিলা সমিতি মনে করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে এবং তাদের ভীতসন্ত্রস্ত করতে এখন এই বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। যেভাবে তরুণ বয়সের বালকরা গেরুয়া ওড়না পরে এবং জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে ছাত্রীদের হেনস্তা করছে, তার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির নিহিত কর্মসূচি প্রকাশ হয়ে পড়ছে। ছাত্রীরা হিজাব পরেছে বলে নয়, বরং এই গেরুয়া বাহিনীর দুবৃর্ত্তরাই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিষিয়ে তুলেছে। মহিলা সমিতি মনে করে সংবিধানে ধর্ম পালনের যে স্বাধীন অধিকার স্বীকৃত আছে, গেরুয়া বাহিনীর কার্যকলাপ তাকেই নস্যাৎ করছে। জন্মস্থান, ধর্ম, লিঙ্গ, জাত ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য করার কোনো অধিকার, কোনো সংস্থান আমাদের সংবিধানে নেই। সকলের ব্যবহার্য যে কোনো স্থানে প্রবেশ করার অধিকার সকলেরই আছে। সংবিধানে ২৯(২) ধারা অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে সরকার-পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করা যায় না। শিক্ষার অধিকার সকলের মৌলিক অধিকার। আপসহীনভাবেই এই অধিকার রক্ষা করতে হবে।
কর্ণাটকের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে মুসলিম ছাত্রীদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। উদিপী ইউনিভার্সিটি কলেজের পাঁচ ছাত্রী তাঁদের হিজাব পরিধান করে কলেজে প্রবেশে বাধাদানের বিরুদ্ধে কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা করেছে। সেই মামলার শুনানি চলছে। মহিলা সমিতি তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, আরএসএস পরিচালিত বিজেপি এবং গেরুয়াবাহিনী সবসময়ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে তাদের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে সাম্প্রদায়িক সমাবেশ ঘটায় এবং ঘৃণার রাজনীতি সংগঠিত করে।
সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির দাবি - কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীদের হেনস্তা করা এখনই বন্ধ করতে হবে এবং মুসলিম ছাত্রীরা যাতে সমস্তরকম সুরক্ষা পায়, রাজ্য সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। হিজাব পরেই হোক, বা না পরেই হোক সমস্ত ছাত্রী সমাজের শিক্ষার অধিকার বজায় রাখতে হবে। সব ধরনের সাম্প্রদায়িক এবং মৌলবাদী শক্তি যাতে কখনই ছাত্রসমাজকে বিভাজিত করতে না পারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থা বজায় থাকে, সেই পরিস্থিতি বজায় রাখতে হবে।
বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা যে প্ররোচনামূলক বিবৃতি দিচ্ছেন এবং সাম্প্রদায়িক শান্তি বিনষ্ট করছেন, মহিলা সমিতি তার নিন্দা করেছে।
ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই) কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীদের শিক্ষার অধিকারের উপর গেরুয়া বাহিনী ও রাজ্য সরকারের আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালনের ডাক দিয়েছে।
সিপিআই(এম) সাংসদ এলারাম করিম কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীদের অধিকারের উপর আক্রমণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং শিক্ষামন্ত্রীর কার্যকরী হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।