E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ / ২৮ মাঘ, ১৪২৮

পুর নির্বাচন - উত্তর ২৪ পরগণা

বসিরহাট পুরসভা দখলের লড়াইয়ে শুরু থেকেই এগিয়ে বামফ্রন্ট


মনোনয়ন জমা দিতে চলেছেন বামফ্রন্ট মনোনীত পথে সিপিআই(এম) প্রার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শুধু জীবন জীবিকার অনিশ্চয়তা নয়, সরকারি পরিষেবা নিয়ে স্বজনপোষণ, ত্রাণ লুঠ, পুকুর চুরির মতো দুর্নীতি সংক্রান্ত সব প্রশ্নের ফয়সালা করে দেয়নি বিধানসভা নির্বাচন। উল্টে রাজ্য সরকারের গত এক বছরের ভূমিকা আরও বহু গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজ্যের মানুষের মধ্যে। সেই সব প্রশ্ন পৌর নির্বাচনের মুখে তাড়া করছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় যা নিয়ে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে মমতা ব্যানার্জির দলবল। কৃষি প্রধান এলাকা ঘেঁষা বসিরহাট থেকে কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ দমদম - প্রতিটি পুরসভায় সমর্থনের প্রশ্নে মানুষের নিস্পৃহতায় আতঙ্কিত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ তৃণমূলের বড়ো, মেজো, সেজো সব মাপের দাদা-দিদিরাই। তারা বুঝতে পারছেন প্রশাসনকে ব্যবহার করে এবার পার পাওয়া যাবেনা। অন্যদিকে সবার আগে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ, বাড়িবাড়ি প্রচার থেকে প্রার্থীর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, গ্রহণ যোগ্যতা সবেতেই এগিয়ে বামফ্রন্ট।

বসিরহাট পুরসভার কথাই ধরা যাক। এখানে প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৫ সালে পুর নির্বাচনে বুথ দখল করে হয়েছিল অবাধ ছাপ্পা। সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিল আরাবুল বাহিনী। মা-বোনেদের গায়ে হাত পড়েছিল সেবার। তার জবাব দিতে এবার তৈরি বসিরহাটের মানুষ। ২০১৫ সালের চূড়ান্ত বর্বরতার কথা উঠলেই বসিরহাটের মানুষ জোট বেঁধে বলছেন ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে দেওয়া যাবে না।

ব্যাপক স্বজনপোষণ এবং সীমাহীন দুর্নীতি তৃণমূলের সময় বসিরহাট পুরসভার ট্রেডমার্ক। পৌরসভা এবং শাসকদলের দুর্নীতির দিকে কেউ যাতে আঙুল তুলতে না পারে তাই সন্ত্রাসের আবহাওয়া কায়েম রাখার জন্য দুষ্কৃতীদের সামনে রেখে এবারও লড়ছে তৃণমূল।

পুর ভোটের মুখে তড়িঘড়ি প্রসাধনী সংস্কার রবীন্দ্র ভবনের বাইরের দিকে।

এখন এখানে চলছে প্রমোটার রাজের রমরমা। ইছামতী নদী যা প্রবাহিত হচ্ছে বসিরহাট শহর ঘেঁষে তা প্রকৃতির নিয়মে সরতে সরতে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে চলে গেছে শহর থেকে। প্রায় হাজার বিঘার মতো স্থলভাগ নদী থেকে উঠেছে যা আইন অনুযায়ী সেচ দপ্তরের সম্পত্তি। তা নিয়ে এখন নয়-ছয় চলছে। সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌরসভা এই জমির ব্যবহার করতে পারত। নিকাশির সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতো। আরও তিন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ হতে পারত। যেমন পিকনিক স্পট বা পর্যটন কেন্দ্র খোলা যেতে পারত। খেলার বড়ো মাঠ হতে পারত। ঘিঞ্জি শহরের যানজটপূর্ণ রাস্তার বিকল্প রাস্তা তৈরি করা যেত। শহরের উত্তর পাশজুড়ে এই জমিকে ব্যবহার করে বিকল্প কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রসারিত করা যেত শহরকে। এমনিতেই এই বসিরহাট অপরিকল্পিত শহর। খুলনা জেলার উল্টো পারে শহর বসিরহাট। এখানে রয়েছে উদ্বাস্তু সমস্যা। শহরটাকে ঠেলে একটু ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা না করে উল্টে এটাকে প্রোমোটারদের মৃগয়া ক্ষেত্র করে তোলা হয়েছে। জমি দখল করে বেহাত করার চেষ্টা করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। জলকর আদায় করে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বেআইনি কার্যকলাপকে। প্রকাশ্যে চলছে নদীর বুক থেকে বালি তোলা। বালির টাকার বখরা নিয়ে চলছে মারপিট। পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে উদাসীন তৃণমূলের পুরবোর্ড। লুট হয়েছে আমফানের টাকা। আমফানের ত্রাণের টাকাকে কেন্দ্র করে চলেছে চূড়ান্ত স্বজন পোষণ। প্রকৃত বিপন্ন মানুষের জন্য টাকা বরাদ্দ না করে তা দেওয়া হচ্ছে অবস্থাপন্ন তৃণমূল সমর্থকদের। এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে মানুষ ফুঁসছেন।

বসিরহাট পৌরসভা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে শ্মশান ঘাট সংলগ্ন জামরুলতলা এলাকায় ইছামতীর বালি তোলা হচ্ছে।

এখানেই শাসকদলের বেআইনি কাজ থেমে নেই। এখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে উঠেছে সামাজিক অপরাধের আঙুলও। ২০১৬ সালে তৃণমূল এই সম্প্রীতির শহরে দাঙ্গায় মদত দিয়েছে। চক্রান্ত করে মৌলবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে মানুষে মানুষে বিভাজনে মদত দিয়ে কার্যত বিজেপি’র সুবিধা করে দিয়েছে এরা। তবে সজাগ রয়েছেন মানুষ। চক্রান্ত রুখে দিতে বদ্ধপরিকর তাঁরা।

নাব্যতা হারিয়েছে ইছামতী। বাড়ছে নিকাশির সমস্যা।

এই শহরের নিকাশি বেহাল। বাম আমলে যা একেবারেই ছিল না বলছেন স্থানীয় মানুষই। বাম আমলে রবীন্দ্র ভবন তৈরি হয়েছিল যা এখন ব্যবহারের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল রাখার গুদাম ঘর হিসেবে যা গত সাত বছর ধরে ব্যবহার করা হয়েছে, যা একসময় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য নিয়মিত ব্যবহার করা হতো। এলাকার সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আবর্তিত হতো এই হল এবং শতাব্দী প্রাচীন টাউন হলকে ঘিরে। কিন্তু এখন পরিত্যক্ত গুদাম ঘরের দশা এখানে। সিট অ্যারেঞ্জমেন্ট বলতে অবশিষ্ট নেই কিছু। চেয়ার ভাড়া করে কাজ চালাতে হয়। সাউন্ড সিস্টেম বলেও কিছু নেই। বাড়তি ভাড়া গুনে বাইরে থেকে সব বন্দোবস্ত করতে হয় এখন। তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ এখানে। এবং টাউন হল। একই দশা সেখানেও। এখন নির্বাচনের মুখে এই ভোল বদলে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টার নিন্দা শোনা যাচ্ছে কান পাতলেই। বাম আমলে এই পরিস্থিতি একেবারেই ছিল না তা একান্তে স্বীকার করছেন এমনকি তৃণমূল সমর্থকদের অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ বামফ্রন্ট পুরসভা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে। এখানে বেশ কিছু আসনে রেড ভলেন্টিয়ারদের দাঁড় করানো হয়েছে। বামেদের প্রার্থী তালিকায় নবীন প্রবীণের সমাহার এবং তাঁদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সামনে কাজে আসছে না তৃণমূল-দুষ্কৃতীদের হামলা হুমকি। মনোনয়ন দাখিল পর্ব পেরিয়ে এখন চলছে বাড়ি বাড়ি প্রচার। প্রচারে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে ভালই। সাধারণ মানুষের শরীরী ভাষা বলছে অবাধ ভোট হলে বোর্ড দখল করবে বামফ্রন্ট-ই।