৫৮ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা / ১১ জুন, ২০২১ / ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
ঘূর্ণিঝড়ে বিপন্ন মানুষদের মিলছে না উপযুক্ত সরকারি ত্রাণ ও সাহায্য
বিধ্বস্ত এলাকায় সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পার্টি ও রেড ভলান্টিয়াররা
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের বিধ্বংসী তাণ্ডবের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গর্বিত ঢঙে 'দুয়ারে ত্রাণ'-এর ঘোষণা করেছিলেন। এরপর দু'সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ জায়গায় সেই ত্রাণ পাওয়া তো দূরের কথা, দুর্গত মানুষেরা পঞ্চায়েত-প্রশাসনের দেখা পর্যন্ত পাননি। সর্বত্র ত্রাণের হাহাকার। যেটুকু ত্রাণ মিলছে সেখানেও শাসক দল তৃণমূল দলবাজি করছে। আবার সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দল ও বিভিন্ন গণসংগঠন এবং নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যখন বিপন্ন মানুষদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে, তখন অনেক জায়গাতেই স্থানীয় তৃণমূলের মাতব্বররা নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। আমফানের মতো এবারেও নানা জায়গায় শাসকদলের বিরুদ্ধে ত্রাণ সামগ্রী চুরির অভিযোগ উঠেছে। একেই তো সুন্দরবন সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় ইয়াসের তাণ্ডবে অগণিত মানুষ ঘরবাড়ি, জমিজিরেত খুইয়ে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, তার উপর আগামী ২৬ জুন আরেক ভরা কোটালের ভ্রূকুটিতে সাগরদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, রায়দিঘি, গোসাবা সহ সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সহায় সম্বলহীন মানুষেরা ভয়ঙ্কর আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। তাদের কেবল ত্রাণ নয়, অবিলম্বে প্রয়োজন শক্তপোক্ত বাঁধ। এই দাবিতে তারা সরব হয়েছেন।
ইয়াস ও পূর্ণিমার ভরা কোটালের ধাক্কায় সুন্দরবন এলাকায় বাড়িঘর ধূলিসাৎ হওয়ার পাশাপাশি লোনা জলে প্লাবিত হয়েছে কৃষি জমি। ভেসে গেছে পুকুর, জলাশয়, রাস্তাঘাট সহ গ্রামের পর গ্রাম। সেইসঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়েছে বা ভেঙেছে মাইলের পর মাইলব্যাপী নদীবাঁধ। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ৩১৭ কিলোমিটার জুড়ে বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে গত ৭ জুন মুখ্যমন্ত্রী এক প্রশাসনিক বৈঠক থেকে জানিয়ে দিয়েছেন ২৩ জুনের মধ্যে নাকি ৩১৭ কিলোমিটার বিস্তৃত বাঁধ মেরামতি হয়ে যাবে! গত দশ বছরে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৭১ কিলোমিটারব্যাপী নদীবাঁধ মেরামত না হওয়ায় কেন্দ্রের পাঠানো ৪০০০ কোটি টাকা ফেরত চলে গেছে। এছাড়া গতবছর আমফান ঝড়ের তাণ্ডবে যে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাঁধের ক্ষতি হয়েছিল, তাও ঠিকভাবে মেরামত না করে তার টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছে শাসক দলের স্থানীয় নেতা-মাতব্বররা। তারই জেরে এবারে ব্যাপক অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। এত সময় হাতে পেয়েও বাঁধ মেরামতির কোনো কাজই হয়নি। আসলে স্থানীয় প্রশাসন, পঞ্চায়েত ও শাসক দলের কোনো সদিচ্ছাই ছিল না অগণিত গরিব মানুষের কথা ভেবে সময় থাকতে বাঁধ মেরামতি করার। ইয়াসের তাণ্ডবের পর অবস্থার চাপে এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেছিলেন, 'বাঁধের টাকা কি জলেই গেল?' তাঁর এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো সত্য কিন্তু বেরিয়ে এসেছে। এই বাঁধ মেরামতি সঠিকভাবে হয়নি। টাকা জলে গেছে মানে অপচয় অর্থাৎ দুর্নীতি হয়েছে। আবার তাঁর এই কথার মধ্য দিয়ে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, এই বাঁধ তৈরি না হলে যে অগণিত মানুষ বিপন্ন হবেন, এ নিয়ে কোনো হেলদোল ছিল না প্রশাসনের। এছাড়া এই বাঁধ যে মেরামতি হয়নি এবং এ নিয়ে যে চরম উদাসীনতা ছিল প্রশাসনের তাও প্রকট হয়েছে। যাই হোক, সর্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রী ২৩ জুনের মধ্যে ৩১৭ কিলোমিটার বাঁধ সারানোর কথা বললেও, সেটা বাস্তবে কতটা সম্ভব এবং সেই বাঁধ ২৬ জুন-এর কোটালের পর আদৌ অক্ষত থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
তৃণমূল সরকার ও প্রশাসনের এমন অপদার্থতার প্রমাণ মিলেছে মিনাখাঁয় নদীবাঁধ ভাঙার ঘটনায়। ইয়াসের ধাক্কায় মিনাখাঁ ব্লকের ২৩টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। সেই বাঁধ মেরামতি চলাকালীন সেচ দপ্তরের গাফিলতি, কারচুপি এবং অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাবে ভেঙে পড়ে। ফলে আবারও প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। এর আগে হিঙ্গলগঞ্জে এমন ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রকট হয় স্থানীয় প্রশাসন ও শাসক দল দুর্নীতি-কারচুপিতে কীভাবে জড়িয়ে আছে, যেখানে মানুষের স্বার্থের বিষয় এদের বিবেচনায় লেশমাত্র নেই।
সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, মিনাখাঁ সর্বত্র অস্থায়ী বাঁধ তৈরি হয়েছে। নিম্নমানের জিনিস ব্যবহারের ফলে ইতিমধ্যে হিঙ্গলগঞ্জের সমসেরনগর, মিনাখাঁর ঘুষিঘাটায় বাঁধ ভেঙে পড়েছে। ফের ভরা কোটালে অন্যত্রও বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা প্রবল। ফের প্লাবিত হবার আশঙ্কা বাড়ছে। অথচ নদীবাঁধে সেচ দপ্তরের দেখা নেই। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মুখ্যমন্ত্রীর খামখেয়ালিপনা আর এই প্রশাসনের অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিত ভাবনায় দিঘাকে 'গোয়া' বানাতে গিয়ে যেমন সমুদ্রপাড় বিধ্বস্ত হয়েছে, তেমনি ভেঙেছে দিঘা সহ রামনগর, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, তাজপুর, চাঁদপুর, দেশপ্রাণ ব্লক, খেঁজুরি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়ার সমুদ্রবাঁধ ও নদীবাঁধ। এর ফলে বিপন্ন হয়েছেন অগণিত মানুষ। এই সর্বস্ব খোয়ানো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ২০-২৫ হাজার টাকা দিয়ে দায় সারতে চাইছে সরকার। কিন্তু বছর বছর সমুদ্রপাড়, নদীবাঁধ ভেঙে গরিব মানুষদের বাড়িঘর ধূলিসাৎ হবে - এই সমস্যা সমাধানের কোনো রাস্তা দেখাতে পারছে না সরকার। এদের কাণ্ডজ্ঞানহীন অপরিকল্পিত ভাবনায় লক্ষ লক্ষ ঝাউগাছ বেআইনিভাবে ধ্বংস করে দিঘাকে গোয়া বানাতে গিয়ে গার্ডওয়াল তৈরিসহ যথেচ্ছ নির্মাণ হয়েছে। এভাবে সমুদ্রপাড় তছনছ করে মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুর ও দিঘার জমি নিয়মবর্হিভূতভাবে মোটা টাকার বিনিময়ে হোটেল ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষদের। এছাড়াও তাদের গুরুতর অভিযোগ, সরকারি ৩৭টি প্লট সহ অন্যান্য প্লট হস্তান্তর হয়েছে এবং মন্দারমণি, দিঘা ও তাজপুরে বেআইনিভাবে তৃণমূলের তাবড় নেতাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূলের তরুণ নেতা ও সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি এই সমস্ত দুর্গত এলাকায় এলে তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
ইয়াসের তাণ্ডবের পর এক পক্ষকালেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। আবারও একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভ্রুকুটি সামনে এসেছে। এখনও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়ে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে নন্দীগ্রামের ১ ও ২ ব্লকের সোনাচূড়া, তেরপেখিয়া, মঙ্গলচক, গোপালচক প্রভৃতি গ্রাম হলদি নদীর জলে প্লাবিত হওয়ায় বহু মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙেছে। সবজি, ধান ও মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখানে আজও সরকারি ত্রাণ মেলেনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের। নন্দীগ্রামের মানুষ মমতা ব্যানার্জিকে নির্বাচিত করেননি বলে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ পরিবার সরকারি ত্রাণ থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ উঠেছে। এখনও বেশ কিছু গ্রামে নদীর জল জমে আছে। মাছ, গোরু, ছাগল পচে দূষণ ছড়াচ্ছে এলাকায়। সেই কারণেই নন্দীগ্রামের অনেক বাড়িতে ডায়েরিয়া সহ বিভিন্ন জলবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় বহু স্বেছাসবী সংস্থাসহ সিপিআই(এম)কর্মী ও রেড ভলান্টিয়াররা সাধ্যমতো পানীয় জল, খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। চলছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা। কিন্তু কোনো সরকারি সাহায্য, ত্রাণ মিলছে না। তাই ১০ জুন সিপিআই(এম)'র উদ্যোগে সোনাচূড়া, ভেকুটিয়া, কেন্দেমারি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনকে নিয়ে নন্দীগ্রামের বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং বিডিও-কে উপযুক্ত ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ, এলাকাগুলিকে দূষণমুক্ত করা ইত্যাদি বিভিন্ন দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এদিকে একেইতো বিপন্ন মানুষেরা প্রয়োজনীয় সরকারি ত্রাণ পাচ্ছেন না, অথচ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান যখন ত্রাণ দিতে যাচ্ছে তখন শাসক দলের নেতা-মাতব্বররা হয় তাদের বাধা দিচ্ছে, দলবাজি করছে, নয়তো ত্রাণ সামগ্রী চুরি করছে। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যেমন উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের কুমিরমারি অঞ্চলের হলদায়বিরাটি থেকে আসা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ত্রাণ বিলিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ব্যাপক হামলা, বোমাবাজি, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়ে গ্রামকে পুরুষ শূন্য করে দেয়। সিপিআই(এম) কর্মীরাই মূলত হামলার শিকার হন। শুধু হামলাই নয়, শাসক দলের দুর্বৃত্তরা ফতোয়া দেয়, দুর্গত মানুষদের কেউ ত্রাণ দিতে পারবে না। ইয়াসের তাণ্ডবে ও ভরা কোটালে ডাঁসা নদীর জলোচ্ছ্বাসে বাড়িঘর খোয়ানো অসহায় মানুষদের মারধর করে তৃণমূলীরা। এদের 'অপরাধ' এরা সিপিআই(এম)'র সমর্থক। শাসক দলের ফতোয়া ও হুমকিকে নস্যাৎ করেই হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ অঞ্চলের দুর্গত মানুষদের সিপিআই(এম)'র পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এই হিঙ্গলগঞ্জেই অসহায় মানুষদের ত্রাণ সামগ্রী চুরি করে শাসক দলের দুর্বৃত্তরা। কলকাতার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ত্রাণ বিলিতে শাসক দলের বাধা দেওয়া ও জিনিসপত্র নিজেদের হেপাজতে রাখতে চাওয়ায় বিপন্ন মানুষেরা ত্রাণের জিনিসপত্র স্থানীয় একটি ক্লাব রাখার ব্যবস্থা করেছিল। গত ৭ জুন রাতে সেখান থেকেই তালা ভেঙে তৃণমূলীরা ত্রাণ সামগ্রী চুরি করে। এই ঘটনায় ওই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। বানভাসি বিক্ষুব্ধ মানুষ হিঙ্গলগঞ্জ-নেবুখালি রোডে বোলতলার কাছে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলাও ত্রাণ নিয়ে দলবাজি ও চুরির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই জেলাতেও সরকারি ত্রাণের অপ্রতুলতা সর্বত্র। কাঁথি মহকুমার শৌলার নিকটবর্তী কানাইচট্টা, আমতলিয়া অঞ্চলের দুর্গাপুর, কসাফলিয়া, ফুলবাড়ি, কালুয়া প্রভৃতি গ্রাম ভেসে গিয়েছিল সমুদ্রের জলে। গত বছর আমফানেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল এই সমস্ত গ্রাম। আবারও এই সমস্ত গ্রামের মানুষ ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্মুখীন। তাঁরা হারিয়েছেন সহায়সম্বল সবকিছুই। এখন তাঁরা ত্রিপল টাঙিয়ে কোনোরকমে বাস করছেন। এদিকে সোনাচূড়া অঞ্চলের মানুষের অভিযোগ, শাসক দল এখানে ফতোয়া জারি করেছে, বিধানসভায় যারা ওদের ভোট দেয়নি তাদের কোনো ত্রাণ দেওয়া যাবে না। তাই এখানকার অনেক মানুষের ত্রাণ জোটেনি। বাড়ি ভেঙে গেলেও একটা ত্রিপলও মেলেনি। এদিকে নন্দকুমার ব্লকে ত্রাণের ত্রিপল ও জামাকাপড় চুরির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলী প্রধানের বিরুদ্ধে। এই ব্লকের কুমারচক পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১৪০টি ত্রিপল ও ১৪০ সেট জামাকাপড় নন্দকুমার ব্লক থেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্ত জিনিসপত্র পঞ্চায়েত প্রধান পঞ্চায়েত অফিসে না রেখে নিকাশি বাজারের একটি দোকানে রেখে দেন। কিছুদিন পর ঘটনাটি জানাজানি হয়। ত্রাণের জিনিসপত্র বিক্রির উদ্দেশ্যেই ওখানে রাখা হয়েছিল বলে স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ। তারা এ নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি গ্রামবাসীদের হুমকি দেন। এরপর স্থানীয় মানুষ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান।
মানুষের এই চরম দুর্ভোগের মধ্যেও অন্যান্যদের সাথে নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন রেড ভলান্টিয়াররা। করোনা আক্রান্তদের সেবায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে রাজ্যজুড়ে তারা অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করছেন, তেমনি ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে বিপন্ন মানুষদের সাহায্যেও তারা কাজ করে চলেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিভিন্ন গণসংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি রেড ভলান্টিয়াররাও খাদ্য, পানীয়, ওষুধপত্র ও নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের বিপদ থেকে দুর্গত মানুষের রক্ষা করতে সুরক্ষা সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছেন, তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এই উদ্যোগ শুধু সুন্দরবন অঞ্চলেই নয়, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেঁজুরি, নন্দীগ্রাম সহ সমস্ত দুর্গত এলাকাতেই রেড ভলান্টিয়াররা উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে চলেছেন। খেঁজুরি, নন্দীগ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকার পানীয় জলের সমস্যার সমাধানে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। দেশপ্রাণ ব্লকে সব হারানো মানুষদের পাশে থেকে সাহায্য করছেন। শৌলাতে অসহায় মানুষদের রান্না করা খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিলি করছেন। নন্দীগ্রামের দু'টি ব্লকই ইয়াসের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়েছে। এখানে কিছু পার্টি দরদি ও শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তির সাহায্যে একেবারে সঙ্গতিহীন মানুষদের জন্য কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করছেন সিপিআই(এম) কর্মীদের পাশাপাশি রেড ভলান্টিয়াররা। প্রকৃতির ভয়াবহ তাণ্ডবে বিপর্যয়ের মধ্যেও রেড ভলান্টিয়ারদের এই মানবিক উদ্যোগ সর্বত্র বিশেষ উৎসাহ ও আশার সঞ্চার করছে।