৫৮ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা / ১১ জুন, ২০২১ / ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
সরকারের নজরদারির অভাবে ও প্রশাসনিক অব্যবস্থায় রাজ্যে করোনা ঘিরে আতঙ্ক কমছে না
টিকা চুরি ঘিরে তদন্তের নামে প্রহসনের আশঙ্কা
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ করোনা মহামারীর প্রেক্ষিতে তৃণমূল সরকারের প্রশাসনিক উদাসীনতা আর নজরদারির অভাবকে কেন্দ্র করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ। হাসপাতালের বেড না পাওয়া থেকে ওষুধ অক্সিজেনের চূড়ান্ত অভাব সমানভাবেই রয়েছে। বহু মানুষ শারীরিক অবস্থার অবনতির সঙ্গে সঙ্গে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন টিকার অভাব সহ চুরি-দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের বিভিন্ন ঘটনাকে ঘিরে। ঘাটালে কোভিড আক্রান্ত রোগীকে ঝুলন্ত অবস্থায় হাসপাতালে পাওয়া গেছে-প্রকাশ্যে এসেছে এমন তথ্য। আবার সরকারি স্তরে অপেক্ষমান মানুষকে এড়িয়ে তৃণমূল নেতাদের পরিচিত তালিকা বহির্ভূত ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে রাজ্যজুড়ে। লকডাউন পরিস্থিতিতে কোভিড নিয়ন্ত্রণ বিধি প্রশাসন কড়া ভাবে প্রয়োগ করছে না। সকালে বাজার হাটে একসঙ্গে বহু মানুষ ভিড় করছেন সরকারের নজরদারির অভাবে। রাস্তার আশেপাশে বসে অনেকেই গল্পগুজব করছেন যাদের সব সময় মুখে মাস্ক যে থাকছে না তাঁর নজরদারিও থাকছে না।
এ রাজ্যে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব মিলিয়ে সাড়ে ১৪ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে। এ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১৬ হাজার জন। উত্তর ২৪ পরগনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা (৯ জুন পর্যন্ত হিসেব)। হিসেব অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ৫,৩৮৪ জন এরাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। গত তিনদিন ধরে পাঁচ হাজারের ঘরেই রয়েছে সংক্রমণের সংখ্যা। প্রশ্ন উঠেছে লকডাউনেও সংক্রমণ কমার হার না বাড়ায়।
এদিকে গত ২৪ এপ্রিল মেডিকেল কলেজ থেকে টসিলিজুমাব ইনজেকশন গায়েবের ঘটনায় চালু সরকারি বিধি এড়িয়ে তদন্ত কমিটি গড়ার মধ্য দিয়ে পাশ কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন। সামাজিক মাধ্যমে ওই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে কয়েকদিন আগে। যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রেসক্রিপশন দিয়ে ওই ইঞ্জেকশন গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া এবং প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেনশন সহ শোকজ নোটিশ ধরানোর মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে এখনো জানা যায়নি। কার্যত প্রহসন চলছে বলে অভিমত অনেকেরই। এক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদে কোন প্রভাবশালীর নাম উঠে এলে তা নিয়ে উচ্চতর কমিটি গড়ার মতো পদক্ষেপ করা যায় পরবর্তীতে। সরকারের বিধি অনুযায়ী শোকজ সাসপেন্ড এনকোয়ারি চার্জশিটের পথে না হেঁটে তদন্তের রহস্য উন্মোচনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আধিকারিকরা। প্রসঙ্গত হাসপাতালে ইঞ্জেকশন কেলেঙ্কারিতে নাম উঠেছে তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাঝির। তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
৪ জুন ইনজেকশন চুরির ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও ওই তদন্ত কমিটির দায়িত্বে তৃণমূল নেতা নির্মল মাঝি রয়েছেন সেই কারণেই মামলাকারীদের তরফে জনস্বার্থ মামলায় আবেদনে বলা হয়েছে, এই তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ হবে তাই নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। জনস্বার্থ মামলার আইনজীবী শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার যে কমিটি গঠন করেছে সেই কমিটির সদস্যদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে, চুরির তথ্য-প্রমাণ সামনে না এলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপ যার সত্যতা এখনো যাচাই করা হয়নি সেটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ টাকার এই ইঞ্জেকশন চুরির প্রেক্ষাপটে। ১৪ জুন হাইকোর্টে পরবর্তী শুনানি।
আবার ভ্যাকসিন নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতি-অব্যবস্থা চলছেই। ৩ এবং ৪ জুন ৪৫ ঊর্ধ্বদের ধুপগুড়ি হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানানো হলেও বেলা বারোটা পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি কখন ভ্যাকসিন আসবে। এই পরিস্থিতিতে লাইন দিয়ে অপেক্ষারত বহু মানুষ হাসপাতাল চত্বরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকই পরে ভ্যাকসিন আসায় বঞ্চিত হন ভ্যাকসিনের সুরক্ষা থেকে। ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে একই অভিযোগ উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে প্রশাসন এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি হাসপাতলে অব্যবস্থার অভিযোগ ঘিরে জেলাশাসককে সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। অভিযোগ- ওই হাসপাতালে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। হাসপাতালে অসুস্থ রোগীর পাশে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পড়ে থাকছে কোভিড আক্রান্তের মৃতদেহ। আবার লকডাউন চললেও আলিপুরদুয়ারের সংক্রমণ কমার কোন লক্ষণ নেই, গত সপ্তাহে ওই জেলায় ১,১১৮ জন করোনা সংক্রামিত হয়েছেন।
এদিকে ছত্রাক বাহিত রোগ মিউকর মাইটোসিস রোগে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। রাজ্যে এই রোগে কনফার্মড এবং সাসপেক্ট মিলিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটা এখনো পর্যন্ত ১৩০।