৫৮ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা / ১১ জুন, ২০২১ / ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
এসএফআইয়ের আন্দোলনের কাছে মোদী সরকার মাথা নোয়াতে বাধ্য হলো
২১ জুন থেকে বিনামুল্যে ভ্যাকসিন দিতে সায় কেন্দ্রের
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এসএফআইয়ের আন্দোলনের জেরে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে দেশে বিনামুল্যে কোভিড ভ্যাকসিন চালু করতে বাধ্য হলো কেন্দ্রীয় সরকার। ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাত্রদের এই দাবির কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছেন। উল্লেখ্য এসএফআই এ বছরের ১০ মে এ প্রসঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপের জন্য আবেদন করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২১ জুন থেকে কেন্দ্র দেশের বিভিন্ন সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে এই উদ্যোগ চালু করবে। ওই দিন থেকে ১৮ বছরের উর্ধে দেশের সকল নাগরিককে কেন্দ্র বিনামুল্যে টিকা দেবার ব্যবস্থা করবে। সুপ্রিম কোর্ট টিকা নীতি নিয়ে হলফনামা পেশ করতে বলায় এবং ৩ জুন টিকা সংগ্রহে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের হাল নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কেন্দ্র চাপে পড়ে যায় বলে মত অভিজ্ঞ মহলের। এদিকে কোভিডের নমুনা পরীক্ষা পর্যাপ্ত হারে না বাড়ায় এবং সার্ভে না হওয়ায় দেশের সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। উদ্বেগ বাড়িয়েছে আরও একটি বিষয়। বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে আসছে, অর্ধেক দেশবাসীর শরীরে ইতিমধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তারা কোন না কোন সময় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অসুস্থতা ধরা পড়েনি কারণ অনেকেই হয়তো সে সময় উপসর্গহীন ছিলেন। ১০ জুন পাওয়া হিসেব মোতাবেক অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে দেশে দৈনিক মৃতের সংখ্যা।
১০ জুন দেশে করোনা দৈনিক সংক্রমণ এক লাখের কম হলেও এক লাফে মৃতের সংখ্যাটা ছয় হাজারের বেশি হয়ে গেছে। আগে দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যু সাড়ে চার হাজার পর্যন্ত উঠেছিল। এদিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ হাজার ৫২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৪৮ জনের।
এ পর্যন্ত দেশে মোট মৃতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬৭৬ জন। দেশে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ২ কোটি ৯১ লক্ষ ৮৩ হাজার ১২১ জন। বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৫২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৬৭ জন। দেশে এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪৯৩ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২০ লক্ষ ৪ হাজার ৬৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর টিকা সংক্রান্ত ঘোষণার প্রেক্ষিতে ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি বিনামূল্যে সার্বজনীন ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার লড়াইয়ে অংশগ্রহণের জন্য দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, এসএফআই ২০২১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিনামূল্যে সার্বজনীন টিকা দেওয়ার নির্দেশ দিতে আইনি হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়ে ছিল।ওই আবেদনের কথা বিবেচনা করে আদালত সরকারকে ভ্যাকসিন নীতি পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়।
তবে সরকার এখনও ২৫% ভ্যাকসিন বেসরকারি সংস্থার হাতে ছেড়ে রাখার অনুমতি দিয়েছে। এর জেরে সম্ভাব্য দু’টো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে -
১. মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে টিকা প্রদানের ঘনত্ব বাড়বে, কারণ এটি বড়ো হাসপাতাল এবং বড়ো বড়ো বিতরণ সংস্থার আঁতুরঘর, ফলে সারা দেশে ভ্যাকসিন বিতরণে সমতা থাকবে না।
২. কেন্দ্রীয় সরকার যদি ভ্যাকসিন বিতরণের সময় রাজ্যের বেসরকারি বিতরণকারীদের দ্বারা সংগ্রহ করা ভ্যাকসিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, তবে শ্রমজীবী ও দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের ঘাটতি হতে পারে।
সরকার জনগণের চাপ ও আদালতের পরামর্শে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছে। সরকার থেকে জানানো হয়েছে, দ্বৈত মূল্য নির্ধারণ এবং সরকারিভাবে ভ্যাকসিন ক্রয়ের যে ভ্রান্ত নীতিগুলির জন্য রাজ্যগুলিকে যে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো, তা নির্মূল করা হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ৭৫% ভ্যাকসিন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা (যা রাজ্যগুলির সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যবস্থা করা হবে) এবং ২৫% খোলা বাজার থেকে বেসরকারি স্বাস্থ্যপরিষেবা মারফত গ্রহণ করা যাবে। অর্থাৎ বেসরকারি মুনাফার পথ খোলা রেখে দেওয়া হলো।
এদিকে টিকা নিয়ে এখনও টালবাহানা করে যাচ্ছে কেন্দ্র। ১০ জুন এমনই অভিযোগ করেছেন তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্য মন্ত্রী এম এ সুব্রমণ্যম। টিকা প্রায় নিঃশেষিত তামিলনাড়ুতে। অথচ কেন্দ্রকে জানিয়েও কোনো দ্রুত সুরাহা হচ্ছে না। উলটে কেন্দ্র জানিয়েছে এই বিষয়ে কাউকে যেন কিছু না বলা হয়। রাজের হাতে আর মাত্র ১,০৬০টি টিকা অবশিষ্ট আছে, যার সবটাই আবার চেন্নাইতে। বাকি ৩৬টি জেলায় কোনো টিকা নেই।
অন্যদিকে কোভিদ অতিমারীকালে কোল ইন্ডিয়ার চারশোরও বেশি শ্রমিকের প্রাণ গিয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা সেখানে। অধিকাংশরই মৃত্যু হয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কায়। এত জন কর্মীর মৃত্যুর পর কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে তাদের সংস্থায় শ্রমিক কর্মীদের টিকাকরণের কাজ দ্রুত সারার জন্য। কেন্দ্রের কাছে তাদের দাবি ১০ লক্ষ ভ্যাকসিন এর ব্যবস্থা করে দিতে হবে তাদের।
বিশ্বের দরিদ্রতম অংশের জনসাধারণের টিকাকরণের ভার নিক জি-৭ গোষ্ঠী। এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন বিশ্বের দুই শতাধিক প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতা। গার্ডিয়ান পত্রিকা জানিয়েছে বিশ্বের প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাদের সই করা এই চিঠির খবর। ওই চিঠিতেই তাঁদের আবেদন, সবচেয়ে গরিব অংশের টিকাকরণের দায়িত্ব নিক সাত ধনী দেশের এই গোষ্ঠী। চিঠিতে সাক্ষরকারী ২৩০ জনের মধ্যে রয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিরা। রয়েছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রাক্তন প্রধানও। আর্থিক বিচারে অনুন্নত দেশগুলির দরিদ্রতম অংশের টিকাকরণের জন্য প্রয়োজন আনুমানিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই অর্থমূল্যের দুই-তৃতীয়াংশের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য জি-৭ গোষ্ঠীকে প্রস্তাব করেছেন তাঁরা।