E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১১ মার্চ, ২০২২ / ২৬ ফাল্গুন, ১৪২৮

তারুণ্যের স্পর্ধিত বিক্রম যাত্রা করে সম্মুখের টানে

যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ কারামুক্ত আন্দোলনকারী ছাত্র-যুব নেতৃবন্দ


আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর মীনাক্ষী মুখার্জির সঙ্গে ছাত্র-যুব নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আগে তিনবার জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য করার পর ৭ মার্চ ধৃত যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ ১৫ জন আন্দোলনকারীকে জামিনে মুক্তি দিলেন হাওড়া সিজিএম এজলাসের বিচারক। আমতার বাসিন্দা ছাত্রনেতা আনিস খান হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত দোষীরা এখনও কেন গারদের বাইরে তার কৈফিয়ত চেয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার গ্রামীণ পুলিশ দপ্তরের বাইরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সাহস দেখানোয় ডিওয়াইএফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ ছাত্র-যুবদের গ্রেপ্তার করেছিল মমতা ব্যানার্জির নির্লজ্জ পুলিশ। কিন্তু ৮ মার্চ কারাবাস থেকে মুক্ত সহযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিতে আসা ছাত্র-যুবদের কলকাতার রাসবিহারী মোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আবারও বর্বরতার পরিচয় দেয় মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ বাহিনী। প্রতিবাদে ‘পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো, তৃণমূলের ঝান্ডা ধরো’ স্লোগানে তোলপাড় হয়ে ওঠে এলাকা। অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গেই গ্রেফতার হন এসএফআই সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। পরে রাতে তাদের নিঃশর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জামিন মঞ্জুর হওয়ার পরে ৮ মার্চ মীনাক্ষী মুখার্জি আলিপুর সংশোধনাগার থেকে এবং ভগবত চক্রবর্তী, শৈলেন্দ্র রাই, মানস মেটে, সুজয় চক্রবর্তী, শাহরুখ লস্কর, জয়দেব ধাড়া, মিনহাজুল মল্লিক, দিবাকর কুণ্ডু, রামপ্রসাদ দাস, শেখ আনারুল, বাবলু ঘোড়ুই, দিব্যেন্দু দাস, শেখ আসাদুল, শেখ মাফুজ খান, শেখ মইদুল রহমান সহ ১৬ জন আন্দোলনকারী হাওড়া সংশোধনাগারের বাইরে আসেন। সংবাদমাধ্যমকে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই। আনিসকে যারা হত্যা করল তাদের শাস্তি চাই। এতদিন ধরে মানুষ দেখলেন যে, আমাদের সঙ্গে কী ঘটল। পুলিশ কীভাবে ছাত্র-যুবদের ওপর আক্রমণ করল বলার ভাষা নেই। পুলিশের সামনেই স্পষ্ট করে বলছি, আমরা ছেড়ে দেব না, এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব’।

এদিন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদিকা মীনাক্ষী মুখার্জিকে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আগে থেকেই আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের সামনে প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নিয়ে জমায়েত ছিল ছাত্র-যুবদের। ছিলেন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব সহ হাইকোর্ট এবং আলিপুর কোর্টের আইনজীবীরাও। ধীরে ধীরে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল গোটা চত্বর। এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ছাত্র-যুবদের স্লোগান ছিল সংযত। এদিকে ১৫ দিনের মধ্যে আনিস খুনের তদন্ত শেষ করার কথা মুখ্যমন্ত্রী বললেও তা না হওয়ায় ৮ মার্চ কলেজ স্ট্রিট থেকে মৌলালি অবধি বিক্ষোভ মিছিলে শামিল হলেন বাম ছাত্র-যুবরা।

ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক গাড়িতে ওঠার পরেই সবাই রাসবিহারীমুখী হন। পুলিশ চেতলার দিকে ঘুরিয়ে দেয় তাঁর গাড়ি ও ছাত্র-যুবদের বাইকগুলি। ওদিকে রাসবিহারী মোড়ে তখন যথেষ্ট সংখ্যায় জমায়েত করছেন ছাত্র-যুবরা। উদ্দেশ্য, তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে সেখানে সংবর্ধনা জানানো। সেখানে হঠাৎই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে পুলিশ। একের পর এক ছাত্র-যুব নেতৃত্ব ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করে ধাক্কা দিয়ে ভ্যানে তুলে দিতে থাকে। সে সময়ে সাংবাদিক ও মহিলা সাংবাদিকদেরও হেনস্তার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। মুহূর্তে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এসএফআই রাজ্য কমিটির সদস্য রৌদ্রশেখর মজুমদারকে নির্মমভাবে মেরে আটক করে পুলিশ। সে সময়ে দীধিতি বসু নামে এক ছাত্রীকে আক্রমণ করে তাঁর পা ভেঙে দেয় পুলিশ। তারপরেই একের পর এক গ্রেপ্তার হন ময়ূখ বিশ্বাস, সৃজন ভট্টাচার্য, বিকাশ ঝা, পৌলবী মজুমদার সহ অনেকে। দুপুর ২টো নাগাদ পুলিশ ভ্যানগুলি রওনা দেয় লালবাজারের দিকে। এদিন বিকালেই লালবাজারে পৌঁছান মীনাক্ষী মুখার্জি।

স্লোগানে মুখরিত হাওড়া জেল চত্বর থেকে জামিনে মুক্ত ১৫ জন আন্দোলনকারীকে সংবর্ধনা দিয়ে শুরু হয় মিছিল। জি টি রোড হয়ে হাওড়া ময়দান, পঞ্চাননতলা রোড হয়ে মিছিল শেষ হয় ছাত্র-যুব সংগঠনের জেলা অফিসের সামনে। মিছিল যত এগিয়েছে মিছিলে যোগদানকারীর সংখ্যা তত বেড়েছে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পথচলতি মানুষকেও আনিস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যেই সহমর্মিতা জানাতে দেখা গেছে।

হাওড়ায় জেল থেকে ছাড়া পাওয়া ১৫ জনই একই সুরে একসঙ্গেই জানিয়েছেন - জেল, হামলা, পুলিশি নিগ্রহ এসব বামপন্থী কর্মীদের কাছে নতুন নয়। অনেকদিন কেটে যাওয়ার পরেও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আমাদের একমাত্র দাবি আনিস খান কাণ্ডে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে।

জামিনের পরে মধ্য হাওড়ার কদমতলার বাসিন্দা ডিওয়াইএফআই’র স্থানীয় সংগঠক সুজয় চক্রবর্তী তুলে ধরেন পুলিশি বর্বরতার চূড়ান্ত নজির। বলেন, ‘হাওড়া গ্রামীণ এসপি অফিসের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করার পরে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে গাড়িতে মারধর করা হয়। গ্রেফতারির পর আমি এবং গ্রেপ্তার হওয়া বাকিদের জামাকাপড় খুলিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরিয়ে বসিয়ে রাখে পুলিশ। তারপর শুরু হয় শারীরিক অত্যাচার। ঘটনার প্রতিবাদ করতেই আরও বেশি উগ্র হয়ে ওঠে পুলিশ। এলোপাতাড়ি বুট দিয়ে বুক, পেটে মারা শুরু হয়। এই কাজে নেতৃত্ব দেয় সিভিক পুলিশরা।

পুলিশের এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করলেই বলা হতো বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, আবার কি আনিস হতে চাস। ২৬ ফেব্রুয়ারি থানায় আইনজীবীরা দেখা করতে আসার আগেই আমাদের জোর করে জামাকাপড় পরানো হয়। তার আগে জাঙ্গিয়া পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পরের দিন রাতে আবার শুরু হয় অত্যাচার। তার সাথে চলে মানসিক অত্যাচারও। চেষ্টা করা হয় ভুয়ো স্বীকারোক্তি আদায়ের।’