৬০ বর্ষ ১৩ সংখ্যা / ১১ নভেম্বর, ২০২২ / ২৪ কার্ত্তিক, ১৪২৯
সামাজিক দ্বন্দ্বসমূহ - নভেম্বর বিপ্লবের আগে ও পরে
সূর্য মিশ্র
নভেম্বর বিপ্লবের ৫০তম বার্ষিকীতে ১৯৬৭ সালে দেশহিতৈষী সাপ্তাহিকীতে প্রকাশিত। শিল্পীঃ বিজন চৌধুরী
কমিউনিস্ট ইস্তাহারে মার্কস-এঙ্গেলস লিখেছিলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত বিদ্যমান সকল সমাজের ইতিহাস হচ্ছে শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস।’’ এঙ্গেলস মার্কসের মৃত্যুর পর ১৮৮৮ সালের ইস্তাহারের ইংরেজি সংস্করণে একটি টীকা যুক্ত করে উল্লেখ করেন, ইতিহাস বলতে ‘সমগ্র লিখিত ইতিহাস’ বোঝানো হয়েছিল। যার ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘১৮৪৭ সমাজের প্রাক্-ইতিহাস লিখিত ইতিহাসের পূর্ববর্তীকালের সামাজিক সংগঠনের বিবরণ প্রায় অজ্ঞাত ছিল।’ ওই টীকায় এঙ্গেলস মানব সমাজ পরস্পর-বিরোধী শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ার আগে অবস্থাটা ঠিক কী ছিল, তা ‘পরিবার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’ গ্রন্থটিতে ব্যাখ্যা করেন। এখন বিজ্ঞান প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশ আদিম সাম্যবাদী সমাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে আরও নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছে। এটা দ্বন্দ্বতত্ত্বের নিয়মে বিকাশের ধারা ও নিয়মগুলির অস্তিত্ব প্রমাণ করে। কেন একটি আদিম শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থায় শ্রেণি বিভাজন ছিলনা এবং কীভাবে তা শ্রেণি সমাজে জন্ম দিল তারও একটা ব্যাখ্যা মার্কসবাদী বিশ্লেষণে পাওয়া যায়। তার মূল কথা হলো আদিম শ্রেণিহীন সমাজে বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন উৎপাদন করতে হয় তা যদি তখনকার বিচারে প্রয়োজনের তুলনায় উদ্বৃত্ত হয়, তখনই এই উদ্বৃত্ত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও মালিকানা থেকেই শ্রেণি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, পরিবার ও পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। সেই সময় থেকে শ্রেণিবিভাজন ও শ্রেণি দ্বন্দ্বগুলির উদ্ভব, যেমন দাস মালিক ও ক্রীতদাস, মধ্যযুগের সামন্তপ্রভু ও ভূমিদাস এবং পুঁজিবাদী সমাজের পুঁজিপতি ও শ্রমিক (শ্রমদাস) ইত্যাদি শ্রেণি বিভাজনের উদ্ভব হয়েছে। অবশ্য এখন সাধারণভাবে পুঁজিবাদী ও প্রাক্ পুঁজিবাদী এই দুই ধরনের শ্রেণি সমাজের কথাই বলা হয়ে থাকে।
সমাজ সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো শ্রেণি সংগ্রাম। যা একটি বা অপরটির, শাসক ও শাসিতের, শোষক ও শোষিতের চূড়ান্ত পরাজয় ও অবলুপ্তির মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হয়। এখনকার যুগে মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরা এই দ্বন্দ্বগুলিকে প্রধান ও অপ্রধান - এই দুইভাবে ভাগ করে দেন। পুঁজিবাদী বা প্রাক্ পুঁজিবাদী সমাজে মুখ্যত দুটো শ্রেণির মধ্যেই দ্বন্দ্ব প্রধান বা বৈরিতামূলক হলেও এই দুয়ের মধ্যবর্তী আরও অনেকগুলি সামাজিক গোষ্ঠী অবস্থান করে। এবং এই মধ্যবর্তী শ্রেণিগুলির শাসক বা শোষকের সম্পর্ক বৈরিতামূলক বা প্রধান নাও হতে পারে। এগুলিকে অপ্রধান দ্বন্দ্ব বলা হয়। শোষক-শাসক বনাম শোষিত ও শাসিতের সংঘাতে এদের অবস্থান বদলায়। কিন্তু তাতে দ্বন্দ্বের চরিত্রের পরিবর্তন হয় না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলিতে পুঁজিপতি ও শ্রমিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব, উপনিবেশগুলিতে ঔপনিবেশিক শাসক ও শাসিত জনগণের দ্বন্দ্ব, যে সমস্ত দেশে প্রাক্ পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কই প্রধান সেখানে জমিদার ও সামন্তপ্রভুর সঙ্গে কৃষকদের দ্বন্দ্ব - এগুলিই প্রধান দ্বন্দ্ব। বিংশশতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদের যুগে ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লবের পর যে চারটি প্রধান দ্বন্দ্ব এখনো বর্তমান বিশ্বে রয়ে গেছে সেগুলি হলো - সাম্রাজ্যবাদ বনাম সমাজতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব, সাম্রাজ্যবাদ বনাম তৃতীয় দুনিয়ার দেশগুলির দ্বন্দ্ব এবং পুঁজিবাদী দেশগুলিতে পুঁজিবাদ ও শ্রমিকশ্রেণির দ্বন্দ্ব।
এই চারটি দ্বন্দ্বের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্বটিকে কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্ব বলা হয়। কারণ, এই দ্বন্দ্বটির নিষ্পত্তি হলে, অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হলে অন্য বাকি তিনটি প্রধান দ্বন্দ্ব স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল ও কালক্রমে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যতক্ষণ তা না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই চারটি দ্বন্দ্বের মধ্যে যে কোনো একটি দ্বন্দ্ব অপর দ্বন্দ্বগুলির থেকে এত তীব্র হয়ে পড়ে যা তাৎক্ষণিক সমাধান দাবি করে। তখন তাকে দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ নভেম্বর বিপ্লবের পূর্বে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বটি দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েছিল। দুনিয়াটা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। লেনিন সঠিকভাবেই এই পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেছিলেন এবং দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণির পার্টিগুলির কাছে নিজ নিজ দেশের সাম্রাজ্যবাদী শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে না দাঁড়িয়ে তাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণি ও তার মিত্রদের বন্দুকের নল ঘুরিয়ে ধরতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে শ্রমিকদের স্বার্থ জড়িত ছিল না। বরং এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অর্থ হতো ট্রেঞ্চের ওপাশে শ্রমিক, কৃষক ইত্যাদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। তাতে কমিউনিস্ট ইস্তাহারের শেষ বাক্য - ‘‘সকল দেশের শ্রমজীবী মানুষেরা, এক হও’’ - এককথায় সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাই আক্রান্ত হতো। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের পার্টিগুলি লেনিনের এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল। এরফলে ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের লজ্জাকর পতন হয়েছিল। কেবল রুশ দেশেই লেনিনের আহ্বান কার্যকরী হয়েছিল। নভেম্বর বিপ্লবের সাফল্যের মূল ভিত্তি ছিল, শান্তি, রুটি ও জমির স্লোগান - যার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় থেকেই সাম্রাজ্যবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্বটির উদ্ভব। শুরু হলো এক ‘নতুন যুগ’। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেকার সময়টা ছিল সাম্রাজ্যবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্বের তীব্রতা বৃদ্ধির যুগ। সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি একযোগে নবজাতক সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই সেই সময়টা সাম্রাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্ব নয়, দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ফ্যাসিবাদের উত্থান ও আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের তীব্রতা বৃদ্ধিতে ও তা দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাস্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি ‘ভার্সাই চুক্তি’র অপমানজনক শর্তগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার নামে আরেকটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। স্পেনে জেনারেল ফ্র্যাঙ্কোর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ার শান্তিকামী, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির প্রতিরোধকে নৃশংস হত্যালীলা দিয়েই মহড়া শুরু হয়েছিল। এখন থেকে ঠিক একশো বছর আগে বেনিতো মুসোলিনির রোম অভিযান দিয়ে ইতালিতে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি দলের ক্ষমতা দখলের পর জার্মানি, ইতালি ও জাপানকে নিয়ে ‘অক্ষশক্তি’র জন্ম। শুরু হলো দুনিয়া দখলের জন্য প্রস্তুতি। স্তালিন এই প্রেক্ষাপটে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ইত্যাদি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির প্রয়োজনে একটা চুক্তির জন্য আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এই বিষয়ে কোনো চুক্তি করতে অস্বীকার করে। অথচ এসবের কিছু পরে হিটলার মাত্র সাতদিনের মধ্যে তথাকথিত ‘ম্যাজিনো লাইন’ ভেঙে চুরমার করে ফ্রান্সের দখল নিয়েছিল। চার্চিল তথা সাম্রাজ্যবাদীরা ফ্যাসিবাদের চাইতে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রধান শত্রু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এরা ভেবেছিলেন হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করলে ওদের রাস্তা পরিষ্কার হবে। সেই প্রেক্ষিতেই ‘মলোটভ-রিবেনট্রপ’ পারস্পরিক অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অবশ্যই সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল। স্তালিনের আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। হিটলার এই চুক্তি রক্ষা করেনি। ফ্রান্স দখলের পর হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল এবং প্রায় মস্কো পর্যন্ত অগ্রসর হলে লেনিনগ্রাড ও তারপর স্তালিনগ্রাডের প্রতিরোধে পরাস্ত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রায় দু’কোটির বেশি মানুষের জীবনের বিনিময়ে লাল ফৌজ বার্লিনের রাইখস্ট্যাগে লাল ঝান্ডা তুলে দিয়েছিল। হিটলার আত্মহত্যা করেছিল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাদের পার্লহারবার ঘাঁটি জাপান আক্রমণ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এই দুই মহাযুদ্ধের অংশীদার না হয়েও বিশাল মুনাফা কুড়িয়েছিল। লেনিনগ্রাড-স্তালিনগ্রাডে লালফৌজের প্রতিরোধ ও অগ্রগতির পাশাপাশি চীনের মাঞ্চুরিয়াকে জাপানের হাত থেকে দখলমুক্ত করার লড়াইতে চীনের লালফৌজের অগ্রগতি ও কুয়োমিনটাং কমিউনিস্ট পার্টির যুক্ত প্রতিরোধ থেকে চার্চিলরাও বুঝতে পারছিলেন লালফৌজ অপরাজেয়। তখন অনেক গড়িমসি করার পর এই ‘মিত্রশক্তি’ স্তালিনের কথামতো একটা দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলতে বাধ্য হলো। সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রান্ত হবার পরই বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শান্তিকামী শক্তিগুলি জনযুদ্ধের ডাক দিয়েছিল।
ফ্যাসিবাদের পরাজয় পূর্ব ইয়োরোপ, চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া ও পরে কিউবায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বিশ্বের ভারসাম্যকে সমাজতন্ত্রের অনুকূলে নিয়ে এসেছিল। আবার আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের ভিয়েতনাম আক্রমণ ও তার দীর্ঘকাল পরে পরাস্ত হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে সাম্রাজ্যবাদ বনাম তৃতীয় বিশ্বের দ্বন্দ্ব কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। সমসাময়িক বিশ্বের প্রধান চারটি দ্বন্দ্বের মধ্যে কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্ব এক থাকলেও দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুগুলো কীভাবে পরিবর্তন হয় তা নিয়ে আমাদের পার্টির বোঝাপড়া ব্যাখ্যার জন্যই উপরোক্ত ঘটনাবলির অবতারণা।
১৯৭০ দশকের প্রথমার্ধে লগ্নিপুঁজির বিশ্বায়নের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির উদ্ভব আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বকে স্তিমিত করে দিলেও এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। কখনো কখনো তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইয়োরোপের দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রের অবসানের পরও সাম্রাজ্যবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্বটি কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্ব হিসেবেই অপরিবর্তিত রয়েছে। সমাজতান্ত্রিক কিউবা, চীন ইত্যাদির বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক যুদ্ধ, অবরোধ ও সামরিকভাবে ঘিরে ফেলার রণকৌশল এর সাক্ষ্য বহন করছে।
ভারতের ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান দ্বন্দ্ব হলো - এক, সাম্রাজ্যবাদ বনাম ভারতীয় জনগণের দ্বন্দ্ব - যা স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হয়নি, কারণ এই স্বাধীনতা আপস ও দেশভাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছিল এবং বৃহৎ বুর্জোয়ার নেতৃত্বে বুর্জোয়া-জমিদার রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির সঙ্গে গাঁটছড়া দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করে চলেছে। দুই, সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে কৃষকের দ্বন্দ্ব যা দ্বন্দ্বগুলোর কেন্দ্রবিন্দু। যে কারণে কৃষি বিপ্লবকে ভারতে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের অক্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়। তিন, পুঁজির সঙ্গে শ্রমের দ্বন্দ্ব। বলা বাহুল্য, বৃহৎ বুর্জোয়া শাসন ও সামন্ততন্ত্রের অবসানের পরও জাতীয় বুর্জোয়া ও শ্রমিক শ্রেণির দ্বন্দ্বটি থেকে যাবে - যা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর অতিক্রম করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকবে।
সিপিআই(এম) আন্তর্জাতিক ও জাতীয়স্তরে প্রধান দ্বন্দ্বগুলি, কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্ব ও দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুগুলি সম্পর্কে তার এই অবস্থানের ভিত্তিতেই পার্টি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, অবশ্যই নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষায় আলোকিত হয়ে।