৬০ বর্ষ ১৩ সংখ্যা / ১১ নভেম্বর, ২০২২ / ২৪ কার্ত্তিক, ১৪২৯
একবিংশ শতাব্দীর সমাজবাদে নভেম্বর বিপ্লব
মৃদুল দে
নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব রাশিয়াতে সংঘটিত হলেও এই বিপ্লব কখনই একমাত্র রাশিয়ার বিষয় হিসেবে গণ্য হয়নি। এই বিপ্লবের আন্তর্জাতিক তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী ও শাশ্বত রূপ নিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন অবসিত। কিন্তু সব মানবজাতির ইতিহাসে এই বিপ্লবের বিজয় যে নতুন যুগ ও অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত বাধার মোকাবিলা করে যে অসাধারণ সমাজতান্ত্রিক সাফল্য অর্জন করেছে, এককথায় তা ঐতিহাসিকভাবেই অনপনেয়। ‘ফ্রান্সে শ্রেণিসংগ্রাম’(১৮৪৮-৫০)-র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই অভ্যুত্থানের অসাফল্য সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা ও তাৎপর্যের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কস মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘বিপ্লব হলো ইতিহাসের ইঞ্জিন’’। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লবের সাফল্যের ক্ষেত্রেও তা সর্বাংশে ও যুগে যুগে সত্য, এ কারণেই এই নভেম্বর বিপ্লব মুক্তিকামী মানবজাতির ক্ষেত্রে চিরকালীন মহান। নভেম্বর বিপ্লবের আন্তর্জাতিক তাৎপর্য এবং বিশ্বের শ্রমিকশ্রেণির প্রতি রাশিয়ার শ্রমিকশ্রেণির বিরাট আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা লেনিন বারবার উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ১৯১৭ সালের জন্মের মুহূর্ত থেকে সোভিয়েত রাষ্ট্র পৃথিবীর সব পুঁজিবাদ-বিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী বিপ্লবী শক্তির আকর্ষক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এ কারণে পৃথিবীর সমস্ত প্রতিক্রিয়ার শক্তি জোট বেঁধে পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গলা টিপে মারতে চায়। এই লক্ষ্যে সদ্যোজাত নতুন সাধারণতন্ত্র তথা যুদ্ধবিধ্বস্ত সোভিয়েতকে অনাহারে নিমজ্জিত করতে সাম্রাজ্যবাদীরা চাপিয়ে দেয় অর্থনৈতিক অবরোধ, নাশকতা, বিপ্লবকে রক্তে ভাসিয়ে সশস্ত্র হস্তক্ষেপ করে। সমাজতন্ত্র ও সোভিয়েতের কুৎসার জন্য সমস্ত গণমাধ্যমকে নিয়োজিত করে এবং নিজেদের দেশের জনগণকেও প্রকৃত সত্য তারা জানতে দেয় না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে বিপ্লব করার মতো কিছু পূর্বশর্ত তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিজয় অর্জন করার মতো অপরিহার্য সাংগঠনিক প্রস্তুতি এবং সংগঠিত সুশৃঙ্খল শক্তি তৈরি হয়নি। ফলে ১৯১৮ সালে জার্মানিতে, ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরিতে প্রতিবিপ্লবী শক্তি বীরত্বপূর্ণ বিপ্লবী বাহিনীকে নৃশংসতায় ভরিয়ে দেয়, অন্যান্য দেশগুলিতেও শ্রমিক আন্দোলনের ওপর হিংস্র প্রতিবিপ্লবীরা তাদের দৌরাত্ম্য প্রতিষ্ঠিত করে।
নতুন রাষ্ট্র, সম্পূর্ণ নতুন সামরিক বাহিনী লালফৌজ, মূলত অজ্ঞ কৃষক ও খেতমজুরদের মধ্য থেকেই জরুরি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের তৈরি করার প্রকাণ্ড কাজ। সোভিয়েত রাশিয়া প্রতিষ্ঠার পর শান্তিপূর্ণ স্বস্তি ছিল অতীব ক্ষণস্থায়ী। পুরনো শোষক, বুর্জোয়া শ্রেণি, বৃহৎ জমির মালিক, আগেকার রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অভিজাত সম্প্রদায়, মেনশেভিক, সোস্যালিস্ট রেভোল্যুশনারিরাসহ সোভিয়েত-বিরোধী সব ধরনের শক্তি তাদের ক্ষমতাচ্যুতি এবং রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। নভেম্বর বিপ্লব সম্পন্ন হবার কয়েক মাসের মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা, জাপান এবং অন্যান্য ছোটো-বড়ো পুঁজিবাদী দেশগুলির শাসকশ্রেণি রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই পরাস্ত শাসককুল ও প্রতিবিপ্লবী শক্তির সহায়তায় প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ লক্ষ সৈন্য ও অস্ত্রাদি দিয়ে নেমে পড়ে। সোভিয়েত ক্ষমতা রক্ষার জন্য যুদ্ধজনিত দুরবস্থায় জর্জরিত সমগ্র শ্রমিকশ্রেণি, কৃষক ও শ্রমজীবীদের এই কঠিন অবস্থার মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা সবচেয়ে জরুরি কাজ।
জয়ের উৎস আন্তর্জাতিক সংহতি
মস্কোতে সর্ববৃহৎ মেসিন নির্মাণ শিল্পের কারখানায় শ্রমিকদের সামনে বক্তৃতায় (১৮ আগস্ট, ১৯১৮) লেনিন উল্লেখ করেছিলেন, ‘‘শত শত হাজার হাজার শ্রমিক ও কৃষকদের গুলি করে হত্যা করা আড়াল করতে স্বাধীনতা ও সমতাকে ধূম্রজাল হিসেবে ব্যবহার করছে আগ্রাসকরা, সেই গোটা চক্রকে ধ্বংস করতে আমাদের যা কিছু আছে সবটা... ফ্রন্টে নিয়োজিত করতে হবে। আমাদের একটিমাত্র বিকল্পই আছে; বিজয় অথবা মৃত্যু।’’ (সংগৃহীত রচনাবলি, খণ্ড-২৮)। সভার পর লেনিন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, সে সময় কয়েকটি গুলির শব্দ। লেনিন আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন, শ্রমিকরা তাঁকে ধরে রাখেন। লেনিনের জীবন সংকটে। গুলি করেছিল প্রতিবিপ্লবী শক্তির এজেন্ট একজন সোস্যালিস্ট রেভোল্যুশনারি মহিলা ফ্যানি কাপলান। ডাক্তারদের সহায়তায় দ্রুত তাঁর ক্ষত সেরে উঠলে, ডাক্তাররা সবরকমের কাজ থেকে বিরত থাকতে বললে লেনিন উত্তর দেন, এরকম সময়ে একবারেই সেটা সম্ভব নয়। একই সময়ে কয়েকটি জায়গায় নেতৃবৃন্দের প্রাণনাশের চেষ্টা হয়। শত্রুরা ভেবেছিল, প্রথম ধাক্কাতেই দ্রুত সোভিয়েত ক্ষমতা ভেঙে পড়বে। তারা মনে করেছিল, অতীতের আগ্রাসী যুদ্ধের মতোই এটা একটা যুদ্ধ, বরং ১৪টি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি একজোট হয়েই এবার যখন নেমেছে, অতীতে যা হয়নি, সোভিয়েত ক্ষমতার ওপর এই আক্রমণ হবে ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু সোভিয়েত ক্ষমতার অন্তর্নিহিত শক্তি তাদের হিসেবের মধ্যে ছিল না। কমিউনিস্ট পার্টির অক্লান্ত প্রচেষ্টা, লালফৌজের অতুলনীয় বীরত্ব, বিপ্লব রক্ষা করতে জনগণের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণির সোভিয়েতের পক্ষে রুখে দাঁড়ানোর অসীম ক্ষমতা তাদের হিসেবের মধ্যেই ছিল না। এই আন্তর্জাতিক সংহতি নভেম্বর বিপ্লবের সাফল্য ও এই সাফল্যকে রক্ষার জন্য কী অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করেছে, সে সম্পর্কে লেনিন বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রতি সমগ্র দুনিয়ার, এমনকি যে সব দেশ আমাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, সেসব দেশের শ্রমজীবী জনসাধারণ এবং শিল্প ও কৃষিতে কর্মরত শ্রমিক-কৃষকদেরও ঠিক এই সমর্থন ও সহানুভূতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কেন আমাদের বিরুদ্ধে সমস্ত আগ্রাসনের শেষ পরিণতি হয়েছে তাদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে, তার চূড়ান্ত কারণ এই সমর্থন-সহানুভূতিই।’’
বিদেশি সৈন্যরাও এসেছে শ্রমিক-কৃষক পরিবার থেকে। সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও লড়াইয়ের পরিবর্তে তাদের মধ্যে হাজারে হাজারে লাল ফৌজকে সহায়তা করে। ‘‘সোভিয়েত রাশিয়া থেকে হাত ওঠাও’’ এই পতাকার নিচে শত সহস্র কমিটির স্লোগানে আগ্রাসক দেশগুলিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ, ফরাসি, জার্মান, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের শ্রমিক, কৃষক পরিবারের যুবকরা এই যুদ্ধে সামরিক বাহিনীর হয়ে যোগ দিতে অস্বীকার করে। অনেক যুদ্ধাস্ত্র শিল্পে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে, যুদ্ধাস্ত্র পাঠাতে অস্বীকার করে। এই উপাদানগুলিও সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির হস্তক্ষেপের পরাজয় ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের প্রায় সর্বত্র সোভিয়েত ক্ষমতা শ্বেতরক্ষীবাহিনীগুলিকে চূর্ণ করে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। অবস্থা বিপর্যয়কর বুঝে ১৯২০ সালে শুরুতে ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি যুদ্ধ ও অবরোধ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তিন বছরের গৃহযুদ্ধে ১৯২০ সালের শেষে দেশের বেশিরভাগ অংশে প্রতিবিপ্লব ধ্বংস হলেও তাদের চক্রান্ত ও নাশকতা বন্ধ হয়নি। তার মধ্যেই চলতে থাকে নতুন রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্রের নির্মাণকাজ, যার কোনো নজির বা রূপরেখা ইতিহাসে নেই, সম্পূর্ণ নতুন পথে রাষ্ট্রনির্মাণ। ১৯২২ সালের অক্টোবরে সোভিয়েত দূর প্রাচ্য থেকে সর্বশেষ আগ্রাসকদের বিতাড়িত করা হয়। শান্তিপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক নির্মাণ কাজে তখনই হাত দেবার সুযোগ হয়।
কেন রাশিয়াতে প্রথম এই বিপ্লব
অনেকসময় অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন যে, নভেম্বর বিপ্লব মার্কসবাদের সংজ্ঞা অনুসারে হয়নি, এই সমালোচকরা বলে থাকেন যে, মার্কস বলেছিলেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী দেশে একসঙ্গে প্রথমে জয়যুক্ত হবে, কারণ এসব দেশে আধুনিক শ্রমিক শক্তিশালী, অথচ নভেম্বর বিপ্লব একটি দেশেই হয়েছে, যে-দেশ শিল্পোন্নত নয় এবং ইয়োরোপের মধ্যে সবচেয়ে পশ্চাৎপদ দেশ। মার্কস-এঙ্গেলসের মূল্যায়ন ছিল শ্রমিকশ্রেণির বিপ্লব শুধুমাত্র জাতীয়ভিত্তিক হবে না, কমপক্ষে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স ও জার্মানিতে আগে হবে যদি বিপ্লবী প্রস্তুতি থাকে। যেহেতু পুঁজিবাদ যে বিশ্ববাজার তৈরি করেছে, তার সঙ্গে অনেক দেশকে একটার সঙ্গে অন্যটা জড়িত হয়ে পড়েছে, এসব প্রত্যেক দেশের মানুষ অন্য দেশের ঘটনাবলির ওপর নির্ভরশীল। পুঁজিবাদের বিকাশের সূত্র অনুযায়ী যখন যে স্তরে এই বিশ্লেষণ, তখনও পুঁজিবাদ তার সর্বোচ্চ স্তর সাম্রাজ্যবাদে উন্নীত হয়নি, এবং বিপ্লব বিচ্ছিন্ন কোনো জাতীয় বিষয় থাকবে না, বিপ্লব আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ারই অংশ, তা-ও স্পষ্ট। সমাজবিকাশের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আরও মূল্যায়ন যুক্ত হয়। কারণ বিপ্লব সংঘটিত করতে কেবল বাস্তব পরিস্থিতিই যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়, বিষয়ীগত বা সাবজেক্টিভ পূর্বশর্তও পূরণ হতে হবে - বিপ্লবের প্রস্তুতি, শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের সাংগঠনিক সামর্থ্য ও দক্ষতা, নেতৃত্ব। উভয় পূর্বশর্তের সমন্বয় অপরিহার্য। কিন্তু একইসঙ্গে এই সমন্বিত পরিস্থিতি দেখা যায়নি।
যেমন, ইংল্যান্ডে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্বশর্তের পরিপক্কতা থাকলেও শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলন চরম সুবিধাবাদে বিপথগামী, এই বিচ্ছিন্নতার কারণে বিশ্ববাজারের অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ ইংল্যান্ডের হাতে, যে বুর্জোয়াদের প্রভাব শ্রমিকশ্রেণির ওপর বিরাট এবং অনেক শ্রমিকনেতাকে চাপ ও ঘুষ দিয়ে তারা সংগ্রামবিমুখ করে রেখেছে। মানুষের মধ্যে মোহ তৈরি করেছে। সবদিকে বিশ্লেষণ করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, বিপ্লবী আন্দোলনের কেন্দ্র ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্স, এরপরে জার্মানির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখানেই থেমে যাননি তাঁরা, তাঁদের শেষ বছরগুলিতে রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলন তাদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেখানে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে শোচনীয় হার এবং দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনের মধ্যে মার্কস ১৮৫৮ সালে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘রাশিয়ার নিজের পায়ের তলায় সহজদাহ্য পদার্থ সঞ্চিত হয়েছে।’’ মার্কসের মৃত্যুর পর শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধি এবং রাশিয়ার ঘটনাবলি পর্যালোচনা করে ১৮৮০-র শেষে এঙ্গেলস লক্ষ করেন ইয়োরোপে সম্ভাব্য সফল বিপ্লবে রাশিয়ার তাৎপর্য সামনের দিকে চলে আসছে। ১৮৮৪ সালে অগাস্ট বেবেলের কাছে এক চিঠিতে তার উল্লেখও করেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন যা অবস্থা তাতে বাইরে থেকে একটা ধাক্কা আসতে পারে বড়জোর রাশিয়া থেকে, অন্য কোথাও থেকে নয়।’’ পরিস্থিতির তখন দ্রুত পরিবর্তন ঘটছিল, ১৮৮৫ সালে ভেরা জাসুলিচকে এক চিঠিতে এঙ্গেলস তাঁর মত জানানঃ ‘‘রাশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আমি যা জানি বা জানি বলে বিশ্বাস করি তা হলো রাশিয়ানরা তাদের ১৭৮৯-র দিকে এগুচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেখানে বিপ্লব ঘটবে; যে-কোনো দিন ঘটতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দেশটি তাজা মাইনের মতো যার কেবল দরকার এর ওপর প্রয়োগ করার জন্য একটি দেশলাই কাঠি।’’ এঙ্গেলস জার্মান, ফরাসি, স্পেনিশ ছাড়াও অনেকগুলি ভাষায় দক্ষ ছিলেন, যেমন রাশিয়ান ভাষায়ও। মার্কসও জীবনের শেষ অধ্যায়ে রাশিয়ান ভাষা আয়ত্ত করার দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এঙ্গেলস এরপর থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন এবং রাশিয়ার বিপ্লবী পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা সম্পর্কে বেশকিছু মূল্যায়ন করেছিলেন, লেনিনের ভাষায় যা অসাধারণ বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী।
বিংশ শতাব্দীর সূচনায় পুঁজিবাদের বিকাশের সর্বোচ্চ ধাপ সাম্রাজ্যবাদে উত্তরণ, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের সম্ভাবনা সবই প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। মার্কস-এঙ্গেলসের তত্ত্ব ও পরিস্থিতির মূল্যায়নের ধারা বেয়ে লেনিন সিদ্ধান্তে আসেন, পুঁজিবাদের অমোঘ সূত্র হলো অসম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ, সাম্রাজ্যবাদী যুগে যা আরও চূড়ান্ত, এই অবস্থায় একটি দেশে বা বড়জোর কয়েকটি দেশে যেখানে পুঁজিবাদী শৃঙ্খল দুর্বলতর, সেখানে বিপ্লব সম্ভব; সবচেয়ে দুর্বলতম স্থান রাশিয়া, এর ভিত্তিতে পশ্চাদপদ হওয়া সত্ত্বেও একটা দেশে বিপ্লব সম্ভব। ঘটেছেও তাই। বুর্জোয়া তাত্ত্বিকরা এই বিপ্লব ‘রাশিয়ার ব্যাপার’ এবং একটা ‘দুর্ঘটনা’ বলে দেখানোর চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে সমস্ত কুৎসা ও শত্রুতাকে কেন্দ্রীভূত করে। বলশেভিক পার্টি এবং তার অবিসংবাদিত নেতা লেনিন বিপ্লবের পরবর্তী পাঁচ বছরের অসংখ্য তাত্ত্বিক বক্তব্য ও মূল্যায়নে নভেম্বর বিপ্লবের আন্তর্জাতিক তাৎপর্য তুলে ধরেছেন, যে বিপ্লব গোটা দুনিয়ায় একটা অভূতপূর্ব কম্পন তৈরি করেছে যার প্রতিক্রিয়া শতাধিক বছর পরেও বিশ্বের সমস্ত প্রান্তে অনুভূত। জারের রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সব পশ্চাৎপদ শতাধিক জাতি ও জাতিগোষ্ঠীগুলির মধ্যেও বিপ্লবী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে।
নভেম্বর বিপ্লবের সময় ১৯১৭-১৮ সালে ইয়োরোপে কোনো বিপ্লবী পার্টি ছিল না। যে পার্টিগুলি ছিল সেগুলি সুবিধাবাদী ও বিশ্বাসঘাতকদের পার্টি। যুদ্ধবিধ্বস্ত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির দুর্বল অবস্থানের সময়ে শ্রমিকশ্রেণির গুরুতর ঘাটতি শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ও বিপ্লবী পার্টির অনুপস্থিতিতে, যার ফলে বিপ্লবী প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন করে যে কমিউনিস্ট পার্টি ও গ্রুপ গড়ে উঠছিল, তাদের অনেক ত্রুটি, পদে পদে ভুল করে ক্ষতিস্বীকার করতে হচ্ছে। যেমন হাঙ্গেরিতে, জার্মানির বার্লিনে এবং অন্যত্র। ইয়োরোপের প্রায় সমস্ত দেশে শ্রমিকরা তাঁদের দাবিতে অসংখ্য ধর্মঘট আন্দোলন করেন নভেম্বর বিপ্লবের প্রভাবেই। পরাধীন ও পশ্চাৎপদ এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলিতেও জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন প্রবলমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে এই আন্দোলনের নতুন দিগন্ত খুলে যায়, যদিও ভারত, চীনসহ এসব দেশে শ্রমিকশ্রেণি সংখ্যায় ছিল দুর্বল। এশিয়ার ঘুম ভাঙানো নভেম্বর বিপ্লবের পর চীনে ২০১৯ সালে ৪ঠা মে’ বিরাট সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ও রাজনৈতিক আন্দোলন উল্লেখ্য। আবার, ভারতে ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আন্দোলন থেকে ১৯২১-২২’র অসহযোগ আন্দোলনে দেশব্যাপী বিরাট উদ্দীপনা স্বাধীনতার আন্দোলনে এই প্রথম। নভেম্বর বিপ্লবের পর শ্রমজীবী জনগণ স্বাধীনতাকামী জনগণের বিরাট উৎসাহ উদ্দীপনা ও লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে ৩৯টি দেশে কমিউনিস্ট পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। অনেক দেশে কমিউনিস্ট গ্রুপ ও সংগঠন কাজ করে।
যুদ্ধের পরিস্থিতিতে নিত্যনতুন শিক্ষা
বলশেভিক পার্টিকে দু’দু’টি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের মধ্যে এবং দু’টি দেশপ্রেমিক যুদ্ধের মধ্যে কাজ করে বিরাট আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। প্রথম, ১৯০৪-০৫ সালে রুশ-জাপান সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ - পূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তারের যুদ্ধ। জাপানের উন্নত সামরিক শক্তির কাছে জার সাম্রাজ্যের পরাজয়। উভয়পক্ষে মোট মৃত দেড়লক্ষেরও বেশি; চীনের একটি অংশকে ঘিরে এবং কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই যুদ্ধ। এ সময়েই রাশিয়ার প্রথম বিপ্লবঃ বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব। পিছু হটতে হয় জার শাসকদের, সংসদ ডুমাসহ জনগণের কিছু অধিকার অর্জিত হয়। এর পর আক্রমণ বাড়ে বিপ্লবী শক্তির ওপর। আবার বহু মতাদর্শ বিষয়ে পার্টির মধ্যেও বিরোধ তীব্র, যে বিরোধ নভেম্বর বিপ্লব পর্যন্ত চলে। পরে সমাজতন্ত্র নির্মাণের বিষয়েও বিতর্ক চলে পার্টিতে। পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে তার তত্ত্ব, নতুন রণনীতি ও রণকৌশল নিয়ে এ ধরনের দু’দশকের মতাদর্শগত বিরোধ-বিতর্ক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিপ্লবী শ্রেণির কাছে খুবই শিক্ষণীয়।
দ্বিতীয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ - সাম্রাজ্যবাদীদের দুনিয়া ভাগ-বাটোয়ারা পুনর্বণ্টন ও দখলের জন্য যুদ্ধ। জার সাম্রাজ্যের ১৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১.৬০ কোটি সৈন্যকে যুদ্ধে নামানো হয়, কৃষক পরিবার থেকে ধরে বেঁধেই যুদ্ধে পাঠানো হয় প্রতিপক্ষের কামানের খোরাক করতে। যুদ্ধে বিধ্বস্ত জার সাম্রাজ্য, মোট সৈন্য নিহত, ও আহত প্রায় ৫৫ লক্ষ, ৫ লক্ষ নিখোঁজ, ৩০ লক্ষ যুদ্ধবন্দি যাদের অর্ধেকই রোগে ও পঙ্গুত্বে মারা যায়। একমাত্র বলশেভিক পার্টিই রাশিয়ার এই যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করার অভিযানে নামে; রুটি, যুদ্ধবন্ধ এবং শান্তি গোটা দেশের জনগণের দাবি এতে মূর্ত হয়।
তৃতীয়, ১৯১৮-২০ সালের গৃহযুদ্ধে সোভিয়েত ক্ষমতা উচ্ছেদ করতে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বুর্জোয়া, জমিদার, গুন্ডা-দুষ্কৃতী প্রাক্তন পুলিশ ও সামরিক অফিসার এবং তাদের পাশে ১৪টি সাম্রাজ্যবাদী দেশের সশস্ত্র অভিযান। দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধে সর্বস্বান্ত দেশে এই যুদ্ধে নিহত হয় মোট ৯ লক্ষ, তার মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা, কর্মীই প্রায় ৫০ হাজার।
চতুর্থ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশপ্রেমিক যুদ্ধে ২ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু এবং উদীয়মান সমাজতান্ত্রিক দেশের ওপর বিরাট ধ্বংসযজ্ঞ। সোভিয়েত সমাজতন্ত্র এই অগ্নিপরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য অর্জনে রক্ষা করেছে মানবজাতি ও বিপ্লবী আন্দোলনকে।
গৃহযুদ্ধে বিজয়ের পর দ্বিতীয় কঠিন কাজ
শুধু রাশিয়ার জন্য নয়, ভবিষ্যতে গোটা দুনিয়ায় সমাজতান্ত্রিক নজির ও আদর্শ প্রজ্বলিত রাখার জন্যই লাল ফৌজ, শ্রমিক-কৃষক ও জনগণের এত অসীম বীরত্ব ও আত্মত্যাগ। প্রচণ্ড ঠান্ডা, ক্ষুধা, ক্ষয়ক্ষতি, অপরিসীম কষ্ট স্বীকারের মধ্যে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোভিয়েত ক্ষমতা তাঁরা রক্ষা করেছেন। লেনিনের ডাক ‘আমাদের জরুরি কর্তব্যের দ্বিতীয় অর্ধেক কাজ সবচাইতে কঠিন। কেবল প্রচণ্ড উৎসাহ, মৃত্যুর মোকাবিলা করে জয় করার জন্য শ্রমিক-কৃষকদের প্রস্তুতি এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, কারণ এটা গঠনমূলক ও সৃজনশীল কাজ।’’
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধ্বংসস্তূপ ও পচাগলা ব্যবস্থা ভেঙে সচেতন উদ্যোগে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র নির্মাণের কাজ কঠিন, বহু বহু বছর তাতে সময় লাগবে এরকম পশ্চাৎপদ একটি দেশে।
ভেতরে বাইরে বহু বাধা অতিক্রম করে ১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের দশ বছরের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক নির্মাণ কাজের অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ঘটে, যা দেখে পৃথিবীর সেরা বিদগ্ধ বিশেষজ্ঞ, ঐতিহাসিক, অর্থনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, স্বাধীনতা আন্দোলনের রাজনীতিবিদরা মুগ্ধ হয়ে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। অবক্ষয়ী পুঁজিবাদের বিকল্পে উজ্জ্বল সমাজতন্ত্রের তুলনাহীন সাফল্য দুনিয়ায় চিরপ্রতিষ্ঠিত।
এই অসাধারণ ঐতিহাসিক সাফল্যের মধ্যেও পরবর্তী সময়ে গুরুতর ত্রুটি ও ব্যর্থতার ঘটনাও ঘটেছে। বিচ্যুত হয়েছে সমাজতন্ত্রের নীতি-আদর্শ থেকে, যার মারাত্মক পরিণাম ঘটেছে সমাজে, সমাজতন্ত্রের বিকৃতি ঘটেছে সংশোধনের অযোগ্য মাত্রায়। এর পরিণামে সমাজতন্ত্রের চরম ভাঙন হয়েছে। কিন্তু সমাজতন্ত্রর ঐতিহাসিক সাফল্য যুগে যুগে মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। নভেম্বর বিপ্লবের পর রুশ বা ইয়োরোপের সীমানা ছাড়িয়ে এই বাংলা, এই ভারতসহ গোটা দুনিয়ায় যে মুক্তির উচ্ছ্বাস-উৎসাহ সৃষ্টি পরিলক্ষিত হয়েছে, পৃথিবীর কোনো বিপ্লবে, কোনো বৃহৎ রাজনৈতিক ঘটনায়, বা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এই আন্তর্জাতিক ঐতিহাসিক তাৎপর্য এভাবে দেখা যায়নি।
সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের এই ভাঙন ও বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম, গণতান্ত্রিক কোরিয়া সমাজতন্ত্রের রক্ষা ও বিকাশে বহুরকমের সাম্রাজ্যবাদী অবরোধ ও বাধার মধ্যে নতুন পরিস্থিতিতে নানা কঠিন সংস্কারে হাত দিয়ে সাফল্য নিয়ে কঠিনতম পথে এগিয়ে গেছে গত তিন দশকে। ভুল-ত্রুটির বিরুদ্ধেও অবিরাম লড়তে হচ্ছে তাদের। নভেম্বর বিপ্লব এবং তার অফুরন্ত প্রেরণা এখনও জাগ্রত। এই সাফল্যের প্রভাবও আবার পড়ছে বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এবং দেশে দেশে সংঘটিত আন্দোলনে। ‘সমাজতন্ত্রের বিকল্প নেই’ অমোঘ স্লোগান বাস্তবায়নের সংগ্রামে।
চীনের সাফল্যে এখনই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ আতঙ্কিত হয়ে শত্রুতায় নেমেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শি জিনপিঙ সম্প্রতি বলেছেনঃ ‘‘চীনের সাফল্য প্রমাণ করেছে সমাজবাদ মৃত নয়, সমাজতন্ত্র সমৃদ্ধ হচ্ছে। একবার এটা ভাবুন তো, চীনে যদি সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হতো সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির মতো যদি আমাদের চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ধসে পড়ত, তাহলে বিশ্ব সমাজবাদ দীর্ঘ অন্ধকার যুগে পতিত হতো। এবং একবার যেমন কার্ল মার্কস বলেছিলেন, কমিউনিজমের ভূত দেখা, কমিউনিজম সে জায়গায় দীর্ঘকাল থাকতো না।’’
১৯৬৫ সালে প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাই পিপলস কংগ্রেস অধিবেশনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেছিলেন কৃষি, শিল্প, জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়ে চীনকে শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত করার জন্য। অক্টোবরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসে বলা হয়েছে, চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করে চীনকে সবদিক থেকে মোটামুটি বড় রকমের উন্নতিশীল সমাজে উন্নীত করার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে; এখন দ্বিতীয় লক্ষ্য সবদিক থেকে চীনকে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত করা। এর জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মোপলব্ধি ও অচঞ্চল নীতিগত অবস্থান নিয়ে বহুমুখী কঠিন কাজ সম্পন্ন করার গুরুদায়িত্ব পালনের কথা সেখানে বলা হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীতে সমাজতন্ত্র নভেম্বর বিপ্লবের আলোকিত সৃজনশীলতার পথ ধরেই নিশ্চিতভাবে অগ্রসর হবে - আজকের বিশ্বে বহুবিধ আন্দোলন-সংগ্রামের গতিমুখ তা স্পষ্ট করে।