৫৮ বর্ষ ৫ম সংখ্যা / ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ২৫ ভাদ্র ১৪২৭
উচ্ছেদের আগে রেললাইন সংলগ্ন ঝুপড়িবাসীদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবি পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাতের
দিল্লিঃ সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ সম্প্রতি রায় দিয়েছে দিল্লির রেল লাইন সংলগ্ন ৪৮ হাজার ঝুগ্গি (ঝুপড়ি) উচ্ছেদ করতে হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই পরিকল্পনা করে এই বস্তিগুলি সরিয়ে দিতে হবে। ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট রেলমন্ত্রককে বলেছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে আগামী তিন মাসের মধ্যে রেলওয়ে লাইন সংলগ্ন জবরদখল ঝুগ্গি বা বস্তি সরিয়ে দিতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত দেশের রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল’কে একটি চিঠি দিয়েছেন। বৃন্দা কারাত তাঁর চিঠিতে রেলমন্ত্রীকে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী রেলওয়ে লাইন সংলগ্ন ঝুগ্গি বা বস্তিতে বসবাসকারী প্রায় তিন লক্ষ দরিদ্র প্রান্তিক মানুষদের উচ্ছেদের পর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত করা এবং পুনর্বাসন এর ব্যবস্থা করার উদ্যোগ রূপায়ণ এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা।
এ প্রসঙ্গে তিনি রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই বস্তি উচ্ছেদ সংক্রান্ত দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের কথা। দিল্লি হাইকোর্ট গত বছর ঝুপড়িবাসীদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত রায়ে বলেছিল, এদের (ঝুপড়িবাসী)জন্য অবশ্যই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন রয়েছে। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এটা দেখা গেছে ওই ঝুপড়িবাসীরা সুপ্রিম কোর্টে মামলায় অংশগ্রহণ করেননি তাই এটা হতে পারে যে, সর্বোচ্চ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ দিল্লি হাইকোর্টের রায় সম্পর্কে সচেতন ছিল না। নাহলে এটা অনুধাবন করা কষ্টকর যে, শীর্ষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ কিভাবে এই অমানবিক রায় দিতে পারে, তাও দেশে অতিমারীর সময়।
বৃন্দা কারাত ওই চিঠিতে রেলমন্ত্রীকে বলেছেন, শীর্ষ আদালতের রায় কার্যকর করার আগে, কর্তৃপক্ষ হিসেবে তাঁকে যে কোনো প্রকারে হোক ওই ঝুপড়িবাসীদের নতুন জায়গায় স্থানান্তরকরণ এবং পুনর্বাসনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। কোর্টে দেওয়া হিসেব অনুযায়ী ৪৮ হাজার ঝুপড়ি উচ্ছেদ করতে হবে। অর্থাৎ মহিলা শিশু মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় আড়াই থেকে ৩ লক্ষ মানুষকে উচ্ছেদ করতে হবে। এই পদক্ষেপ অতিমারীর সময় স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং এক বিশাল সংখ্যক মানুষকে চূড়ান্ত ঝুঁকির সামনে ফেলবে। তিনি বলেছেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, দিল্লি এখন কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ের মধ্যে রয়েছে। এইসময় রেল মন্ত্রকের পক্ষে এই মানুষদের উচ্ছেদ করা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ হবে। দ্বিতীয়ত, লকডাউন চলার জন্য ঝুপড়িবাসী এই সমস্ত মানুষদের সামান্য রোজগার চূড়ান্তভাবে কমে গেছে, এবং তাঁরা ইতিমধ্যেই সমস্যায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এই ঝুপড়িবাসীদের গৃহহারা করে দেওয়াটা বিবেকহীন কাজ হবে’।
চিঠিতে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতীয় আবাসন সংক্রান্ত নীতির কথা, যেখানে বিভিন্ন সময়ে বস্তিবাসী মানুষের পুনর্বাসনের জন্য এবং নতুন জায়গায় স্থানান্তরের মাধ্যমে তাঁদের বাসস্থান সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি রেলমন্ত্রীকে বলেছেন যে, ঝুপড়িবাসী মানুষদের নতুন জায়গায় স্থানান্তরের জন্য এই বিকল্পটির কথা একেবারেই ভাবা হয়নি।
চিঠির শেষে তিনি সামগ্রিক বিষয়টিতে রেলমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করে তাঁদের নতুন জায়গায় স্থানান্তরকরণ এবং পুনর্বাসনের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বিবেচনা করতে বলেছেন ঝুগ্গি-ঝুপড়িবাসী মানুষের জন্য। তিনি বলেছেন, মানুষ তাঁর স্ব-ইচ্ছায় গৃহহীন বা ঝুপড়িবাসী হননি, পরপর ক্ষমতায় আসা কেন্দ্রীয় সরকারগুলির নীতির কারণেই বহু মানুষ এবং পরিবার প্রান্তিক অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। তিনি রেলমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাসস্থানের অধিকার একটি মৌলিক মানবিক অধিকার, কোনো দয়ার দান বা খয়রাতি নয়।