৫৮ বর্ষ ৫ম সংখ্যা / ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ২৫ ভাদ্র ১৪২৭
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ… ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ‘…মজা মা ছে’। ‘সব খুব ভালো’। শরৎকাল এসে গেছে। আপনি ভেবে মোহিত হন। ফুরফুরে মেজাজে আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ খুঁজুন। হাইওয়ে দিয়ে যেতে যেতে সিঙ্গুরে পড়ে থাকা খালি জমিটাতে কত সুন্দর কাশফুল ফুটেছে দেখুন। গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্টিংয়ে ‘স্বর্গের কাছাকাছি’ স্ট্যাটাস দিন। সকালবেলা উঠে প্রতিদিন মন দিয়ে ‘আত্মনির্ভরতার প্রথম পাঠ’ পাঠ করুন। নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করুন ‘আত্মনির্ভর’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ আর ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির কথা ভাবুন। খেলনা তৈরি নিয়ে ভাবুন। চীনা অ্যাপ ব্যান করে ভারত এক লাফে কতটা এগিয়ে গেল তা নিয়ে ভাবুন। সুশান্ত সিং রাজপুত হত্যাকাণ্ডে রিয়া চক্রবর্তী কতখানি যুক্ত তা নিয়ে ভাবুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ফোটোশ্যুটের কথা ভাবুন। সামনে ল্যাপটপ বই খুলে বসে ময়ূরকে দানা খাওয়ানোর কথা ভাবুন। আপনি ভাবুন। যেভাবে আপনাকে ভাবতে শেখানো হচ্ছে, ভাবনাকে চালিত করা হচ্ছে সেভাবেই ভাবুন... শুধু আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ।
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে ৮৯,৭০৬। বর্তমানে বিশ্বে সংক্রমণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩,৭০,১২৮ জন। অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৮,৯৭,৩৯৪ জন। করোনা সংক্রমিত হয়ে এখনও পর্যন্ত দেশে মৃত্যু হয়েছে মোট ৭৩,৮৯০ জনের। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১,১১৫ জন। দেশে কোভিড রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৭৭.৭৭ শতাংশ। আপনি আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। মাননীয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন ‘অ্যাক্ট অফ গড’। তাই হয়তো গত শনিবার, ‘গড’কে তুষ্ট করতে, ‘অ্যাক্ট অফ গড’ থেকে বাঁচতে তিরুপতি বালাজি মন্দিরে একদিনে প্রণামী জমা ১.০২ কোটি টাকা। অন্যান্য মন্দির, মসজিদ, গির্জার হিসেব জানা নেই। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’।
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। এই যে দেশে করোনাজনিত পরিস্থিতিতে, ভরা লকডাউনে বামেরা যখন সীমিত ক্ষমতায় শিলিগুড়ি থেকে সোনামুখী, মেটেলি থেকে মেটিয়াবুরুজ, যাদবপুর থেকে রায়গঞ্জ - পাড়ায় পাড়ায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, বিনামূল্যে রেশন তুলে দিচ্ছে, কমিউনিটি কিচেন চালাচ্ছে, শ্রমজীবী রান্নাঘর চালাচ্ছে, তখনই তো ফেসবুকে সবথেকে বেশি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দিয়েছে তৃণমূল। ঝালে ঝোলে অম্বলে বামেদের ৩৪ বছর টেনে আনা এই তৃণমূল গত ২ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর - ৩৪ দিনে ফেসবুকে সবথেকে বেশি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস’ পেজ থেকে। মোট ৭৭টা বিজ্ঞাপনে খরচ হয়েছে ১১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। আর একটু বেশি সময় যোগ করে হিসেব করলে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ৪৯ লক্ষ টাকায়। এটা শুধু তৃণমূলের সরকারি পেজের বিজ্ঞাপনী খরচ। এছাড়াও আছে বেশ কিছু সাপোর্টিং পেজ। ‘বাঙলার গর্ব মমতা’, ‘ইউথ ইন পলিটিক্স’, ‘আই প্যাক’ প্রভৃতি পেজ। যার হিসেব এখানে ধরা নেই। সব যোগ করলে মোট অঙ্ক কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সবই মায়ের স্বার্থে, মাটির স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে। আপনার এতে কিছু যায় আসে না। তাই, আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’।
আপনি একদম আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো সম্প্রতি ২০১৯-এর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। যে পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের মোট আত্মহত্যার ৯ শতাংশই এই রাজ্যে। এসব ‘ছোটো ঘটনা’তে যদিও কান দিতে নেই। তবে পরিসংখ্যান অনুসারে রাজ্যে প্রতিদিন ৩৪ জন আত্মহত্যা করছেন। এক বছরে ১২,৬৬৫ জন। যার মধ্যে মহিলা ৪,৮৯৬। দেশের মোট ১২ শতাংশ। দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম হওয়াটা বাম আমলে হতো। এখন সে সব ইতিহাসের পাতায় চলে গেলেও মহিলাদের আত্মহত্যায় আমরাই প্রথম হতে পেরেছি। এ কি কম গর্বের? ‘বাঙলার গর্ব ...’। বামেদের পক্ষ থেকে ১৮৮ জন আত্মঘাতী কৃষক, খেতমজুরের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হলেও সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে রাজ্যের আত্মঘাতীর তালিকায় কোনো কৃষক বা কৃষি শ্রমিক নেই। কাজেই আপনি একদম আতঙ্কিত হবেন না। সরকারি ট্যুইট ‘কৃষকের স্বর্গ পশ্চিমবঙ্গ’ দেখুন। আনন্দে থাকুন। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’।
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের কথা তো আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন। ওই যে, যেটাকে এলআইসি বলে। আপনি যেখানে টাকা জমা দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন। মানি ব্যাক পান। প্রিমিয়াম জমা দিয়ে ট্যাক্স বেনিফিট পান। ম্যাচিওরিটির শেষে বোনাস সহযোগে বড়ো অঙ্কের টাকা। এই মুহূর্তে দেশে মোট ২৪টি বিমা সংস্থার মধ্যে সবথেকে বড়ো সংস্থা এলআইসি। যারা দেশের মোট বিমা ব্যবসার ৬৯শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। গত ২০২০ অর্থবর্ষে এলআইসি’র প্রথম বছরের প্রিমিয়াম বাবদ আদায় ১.৭৮ ট্রিলিয়ন টাকা। এবার সেই রাষ্ট্রায়ত্ত এলআইসি’র ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিলগ্নিকরণে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা থেকে ২.১০ লক্ষ কোটি টাকা তুলতে চাইছে সরকার। এই কারণে এলআইসি আইপিও বাজারে আসতে চলেছে। মাননীয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন একথা আগেই জানিয়েছিলেন। গত ১৯ জুন এলআইসি’র বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ওইদিনই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীন দ্য ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (ডিপম)-এর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আগ্রহীদের কাছ থেকে দর চাওয়া হয়। কষ্টের টাকার নিরাপত্তার কথা ভেবে টেনশন করছেন নাকি? আরে দূর! রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারি সংস্থার পকেটে গিয়ে ঢুকলে আপনার আমার কী যায় আসে বলুন তো? রেল যদি বেসরকারি হয়ে যায় তাতে আপনার কী? আপনার তো ট্রেনে চড়া নিয়ে কথা। কাজেই একদম আতঙ্কিত হবেন না। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’।
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। আপনি তো স্টেট ব্যাঙ্কে কাজ করেন না। কাজেই আপনার কোনো টেনশন নেই। আসলে ব্যয় সঙ্কোচের লক্ষ্যে এবার কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর পরিকল্পনা বা ভিআরএস আনছে স্টেট ব্যাাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা এসবিআই। এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৩১,১৯০ জন কর্মচারী স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করতে পারবেন, যার মধ্যে ১১,৫৬৫ জন অফিসার এবং ১৮,৬২৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। চলতি বছরের মার্চের শেষে দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক কর্মচারীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৪৯,০০০, গত বছরের মার্চ মাসে যা ছিল ২,৫৭,০০০। কর্মচারীর সংখ্যা নিয়ে এরকম হিসেব আপনি রেলের ক্ষেত্রেও করতে পারেন। এসবিআই-তে ইতিমধ্যেই ভিআরএস’র জন্য জুলাই মাসে ‘সেকেন্ড ইনিংস ট্যাপ ভিআরএস-২০২০’ নাম দিয়ে এক খসড়া স্কিম তৈরি হয়েছে এবং আপাতত তা বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায়। আপনি টেনশন করবেন না একদম। মনে রাখবেন, ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ‘...মজা মা ছে’। ‘সব খুব ভালো’।
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। দেশের সরকার দেউলিয়া হয়ে যায়নি। জিডিপি গ্রোথ সামান্য কমেছে। জিডিপি ভাতে মেখে খায় নাকি জলে গুলে তা যেহেতু আমার আপনার আমাদের সাধারণের ধারণার বাইরে তাই চিন্তা নেই। যদিও ২০২০-২১ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে মুখ থুবড়ে পড়েছে জিডিপি। ৩১ আগস্ট, সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্য অনুসারে ভারতের জিডিপি’র হার কমে হয়েছে (-)২৩.৯শতাংশ। যা ১৯৯৬ সালে যখন থেকে জিডিপি’র ত্রৈমাসিক পরিমাপ শুরু হয়েছে সেই সময় থেকে বিচার করলে সবথেকে খারাপ অবস্থায়। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে সম্ভবত ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম জিডিপি ঋণাত্মক দিকে। গোল্ডম্যান স্যাচে অতি সম্প্রতি জানিয়েছে ভারতের জিডিপি’র হার এই অর্থবর্ষের শেষে আরও কমতে পারে। আপনি কিন্তু আতঙ্কিত হবেন না একদম। ২০১৯-এর ২ ডিসেম্বর সংসদে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে তো বলেই দিয়েছেন, ‘‘জিডিপি রামায়ণ, মহাভারত বা বাইবেলের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সূচক হিসেবে জিডিপি’র কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না।’’ আপনি শুধু মনে রাখবেন - ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ‘...মজা মা ছে’। ‘সব খুব ভালো’।
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। মনে রাখবেন - ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ২৩ টি পাবলিক সেক্টর কোম্পানির বিলগ্নিকরণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। আপাতত সেইসব কোম্পানির বিক্রির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মাননীয় নির্মলা সীতারমন গত ২৭ জুলাই জানিয়েছেন, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার মোট ২.১০ ট্রিলিয়ন টাকা বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ১.২০ ট্রিলিয়ন টাকা আসবে পাবলিক সেক্টরের বিলগ্নিকরণ থেকে। বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার বিলগ্নিকরণ থেকে আসবে বাকি ৯০ হাজার কোটি টাকা। শেষ পাঁচ বছরে ২,৭৯,৬২২ কোটি টাকার বিলগ্নিকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এবারের তালিকায় আছে - এয়ার ইন্ডিয়া এবং তার পাঁচ সহযোগী সংস্থা, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, পবন হংস, হিন্দুস্থান নিউজপ্রিন্ট লিমিটেড, ভারত আর্থ মুভারস, ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম, সিমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া, অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট - দুর্গাপুর, হিন্দুস্থান ফ্লুরোকার্বন, স্কুটারস ইন্ডিয়া লিমিটেড প্রভৃতি। এসব তুচ্ছ বিষয় কিন্তু আমার, আপনার মাথা ঘামানোর জন্য নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ‘...মজা মা ছে’।
আতঙ্কিত হবেন না প্লিজ। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ‘...মজা মা ছে’। ‘সব খুব ভালো’। আপনি যাতে প্রশ্নবাণে আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন তাই তো সংসদের বাদল অধিবেশনে কোনো প্রশ্নোত্তর পর্বই থাকছে না বলে ঠিক করা হয়েছে। থাকছে না অবশ্য রাজ্য বিধানসভাতেও। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু সংসদের বাদল অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব না থাকার বিষয়টি সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সমস্ত সাংসদদের ফোন করে জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে কোনো মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তার উত্তর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের থাকতে হবে। এতে সংসদের মধ্যে ভিড় বাড়বে। তাই এবার প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকছে না। জিরো আওয়ার থাকলেও তার সময়সীমাও কমানো হচ্ছে। পরে অবশ্য বিরোধীদের চাপে বলা হয়েছে শুধুমাত্র লিখিত প্রশ্নের লিখিত উত্তর দেওয়া হবে। অদ্ভুত তো মশাই আপনি। সংসদে প্রশ্ন না করা গেলে আপনার আতঙ্কিত হবার কী আছে? ২০১৯-এর ১৪ মার্চ উন্নাও-এর বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ তো বলেই দিয়েছেন, ২০২৪-এ আর কোনো লোকসভা ভোট হবেনা। আমি সন্ন্যাসী। আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। ২০১৯-এর নির্বাচনই শেষ নির্বাচন। কাজেই নো টেনশন। ‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ‘...মজা মা ছে’।
‘সব আচ্ছা হ্যায়, সব চাঙ্গাসি’। ‘...মজা মা ছে’ হওয়া সত্ত্বেও আপনি কি আতঙ্কিত? আতঙ্কিত হওয়ার কথা নয় তো! আমাদের মধ্যে অনেকেই বেশ বিভোর হয়ে আছি কুড়ি লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ, ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতি আর হাউডি মোদীর গল্পে। যে ঘোরের মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি ‘আচ্ছে দিন’-এর। কল্পিত রাম রাজ্যের। উল্টোদিকে বামেরা সবকিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে। আবার রাস্তায় ফিরে আসছে। আপনি যেদিন খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন সেদিন নাহয় আতঙ্ক মুক্ত হতে বামপথ ধরবেন। মনে মনে একবার আওড়ে নেবেন দিনেশ দাশের ‘বামপন্থী’ কবিতাটা। “দক্ষিণ দিক যত ইঙ্গিত দিক/ দক্ষিণ হাওয়া দিক যত হাতছানি,/ ও পথে বন্ধু হবে জানি রাহাজানি/ উলটো সড়কে চ’লো ঠিক নির্ভীক।// দক্ষিণ পথে মেলে যদি দক্ষিণা/ ভেবে দেখো তবু সেই পথ ঠিক কিনা,/ বন্ধু তোমার পথ নয় দক্ষিণে-/ বামপথ নিও চিনে।”