৫৮ বর্ষ ৫ম সংখ্যা / ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ২৫ ভাদ্র ১৪২৭
বিজেপি’র হাতে গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকতে পারে না
সুপ্রতীপ রায়
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যে প্রশ্নগুলি উঁকি-ঝুঁকি মারছে তার মধ্যে অন্যতম - ভারতে কি গণতন্ত্র বিপন্ন? স্বাধীনতার সাত দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময় ভারতের গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে। অথচ আমরা বলে থাকি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। নরেন্দ্র মোদীর আমলে সেই গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ নেমে এসেছে। আক্রান্ত আমাদের সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ গণতন্ত্র।
আমাদের যে ভারতীয়ত্বের ধারণা - তা ভারতীয় জনগণের সংগ্রামের ফসল। এই ধারণার বদল করতে চাইছে আরএসএস। ১৯২০ সাল থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময় থেকে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল - স্বাধীন ভারত হবে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র। বামপন্থীরা এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করলেও তারা আরও এগিয়ে বলেছিল - রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে প্রত্যেক ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক স্বাধীনতায় পরিণত করতে হবে।
উপরিউক্ত দু’টি দৃষ্টিভঙ্গির উল্টো দিকে একটি তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যারা মনে করত, স্বাধীন ভারতের চরিত্র নির্ধারিত হওয়া উচিত জনগণের ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতে। এই দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল মুসলিম লিগের ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ দাবি করার মধ্য দিয়ে এবং আরএসএস’র ‘হিন্দু রাষ্ট্র’র স্লোগানের মধ্য দিয়ে।
এটা ঠিক, স্বাধীনতা লাভের সময় আরএসএস ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ, ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতে স্বাধীন ভারত গড়ে ওঠেনি। কিন্তু আরএসএস ব্যর্থ হলেও তারা আধুনিক ভারতকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছে। আরএসএস’র লক্ষ্য অসহিষ্ণু, ফ্যাসিস্ট ধাঁচের রাষ্ট্র। যা গণতন্ত্রের সামনে বড়ো বিপদ।
আমাদের সামনে চারটি বিপদ - স্বৈরতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, জীবন-জীবিকা ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে ক্রমাগত আত্মসমর্পণ। এগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের সংবিধানে গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলা আছে। প্রাক্তন বিচারপতি ওয়াইএস চন্দ্রচূড়ের ভাষায়, “আমাদের সংবিধান প্রণেতারা হিন্দু বা মুসলিম ভারতকে স্বীকার করেননি। স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রজাতান্ত্রিক ভারতের। আমাদের সংবিধানে বলা আছে আইনের শাসনের কথা, সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের কথা নয়”।
কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে কি চলছে? স্বাধীন মুক্ত চিন্তার উপর রাষ্ট্রের ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞা।
‘Of the people, by the people, for the people’
২০ নভেম্বর কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, “গত ৪২ বছর ধরে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে - তাতে দেশের মঙ্গল হয়নি”।
আরএসএস কোনোদিন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেনি। বিভিন্ন সময় শ্রীমতি গান্ধীকে তোয়াজ করেছিল আরএসএস। ১৯৭৫ সালের ১০ নভেম্বর বালা সাহেব দেওরস ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, “আপনার নির্বাচনকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের যে পাঁচজন বিচারক তাঁদের আমার অভিনন্দন”। ৩০ ডিসেম্বর ’৯৭ শিবসেনা বলেছিল, “গণতন্ত্র নিপাত যাক। গণতন্ত্রই দেশটাকে শেষ করেছে”।
গোলওয়ালকরের ভাষায়, “গণতন্ত্র ? ব্যক্তি স্বাধীনতার উচ্চ নিনাদী ধারণা আদতে হলো কিছু প্রতিভাধর ব্যক্তিদের অন্যদের শোষণ করার স্বাধীনতা...বহুলাংশে গণতন্ত্র হলো কার্যত অতিকথন”। ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই অঙ্গ ছেদ করতে চায় আরএসএস।
আমাদের জাতীয় পতাকা ও সংবিধানকে আরএসএস স্বীকার করেনি। ওরা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বদলে মনুসংহিতার ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করতে চায়। যা চরম স্বৈরাচারী, ব্রাহ্মণ্যবাদী। ১৯৫০ সালে ডঃ বাবা সাহেব আম্বেদকর ভারতের সংসদে গৃহীত হওয়ার জন্য যে সংবিধান পেশ করেছিলেন তার বিরোধিতা করেছিল আরএসএস।
দ্বিতীয় দফায় মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র আরও চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। আরএসএস-বিজেপি তাদের আগ্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করতে গিয়ে জাতীয়তার ধারণাকে ব্যাপকভাবে বিকৃত করছে। ওদের স্লোগান ‘হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তান’। আরএসএস’র জাতীয়তাবাদের পুনর্নির্মাণের প্রকল্প দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর। ওদের জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব ঘৃণার তত্ত্ব। যা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।
আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়নি। আরএসএস বিকৃত জাতীয়তাবাদ গড়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিপদ ডেকে আনছে। ওদের স্লোগান - এক ধর্ম, এক জাতি, এক ভাষা। যা চরম অগণতান্ত্রিক। আরএসএস’র হিন্দুত্ব একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। আরএসএস মনে করে হিন্দু সত্তাই - ভারতীয় সত্তা, ভারতীয় পরিচয়, ভারতীয় সমাজের মূল স্রোত। ওরা এককেন্দ্রিক হিন্দুত্বের ধারণার দ্বারা পরিচালিত হয় যা চরম স্বৈরাচারী।
বিজেপি নয়া-উদারবাদের সমর্থক। স্বভাবতই কর্পোরেটদের পছন্দ মোদী। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মোদীর স্বৈরাচারী ঝোঁক লগ্নিপুঁজির বাজারকে নিরঙ্কুশ করার অভিযানকে শক্তিশালী করেছে। মোদীর অর্থনীতি বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে পরিচালিত। কর্পোরেটদের স্বার্থেই অর্থনীতিতে যে রক্ষাকবচগুলি ছিল তা ক্রমান্বয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রকে দুর্বল করা হচ্ছে। উদারবাদকে আরও অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
২০১৪ সালের পর নয়া-উদারবাদী নীতির আক্রমণ তীব্র হয়েছে। হিন্দুত্ববাদের বিপদ ও স্বৈরতন্ত্রের আগ্রাসন ক্রমবর্ধমান। কর্পোরেট সেবার জন্য শ্রমিক-কৃষকের যে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি ছিল তা মোদী কেড়ে নিচ্ছেন। বিজেপি শাসনে গণতন্ত্রের বিপদ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
বিজেপি আমলে মানবাধিকার আক্রান্ত। ‘দেশ কো গদ্দারো, গোলি মারো শালো কো’ - দিল্লি থেকে কলকাতা - বিজেপি নেতারা হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন। লাভ জিহাদ, ঘরওয়াপসি, গোরক্ষার নামে পিটিয়ে মারার অবাধ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে গৈরিক বাহিনীকে। বিজেপি’র কাছে সরকারের বিরোধিতা মানে দেশদ্রোহিতা।
যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশে মানবাধিকার ধ্বংস অভিযান চলছে। আদিত্যনাথের বিবৃতি “একজন হিন্দু মারা গেলে ১০০ মুসলিম মারা হবে”, “একজন হিন্দু মেয়েকে মুসলিম বিয়ে করলে ১০০ মুসলিম মেয়েকে হিন্দুদের কবজায় আনা হবে”। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে উত্তর প্রদেশে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী সবাই আক্রান্ত হয়েছেন।
উত্তর প্রদেশ সরকার এবছরের মার্চে, “ইউপি রিকভারি অফ ডেমেজেস টু পাবলিক অ্যান্ড প্রাইভেট প্রপার্টি অর্ডিন্যান্স ২০২০’’ চালু করেছে। এটি একটি ভয়ঙ্কর অর্ডিন্যান্স। সরকার এই অর্ডিন্যান্স বলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে উচ্চ জরিমানা আদায় করতে পারবে। জরিমানা না দিতে পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পত্তি নিলাম করা হবে। ট্রাইবুন্যালের রায় চূড়ান্ত-আদালতে যাওয়া যাবে না।
গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি গণহত্যা দেখিয়ে দিয়েছে - এদেশে গণতন্ত্র নেই। কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, পরেশ ভার্মারা উত্তেজক বক্তব্য রাখলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দিল্লি গণহত্যার সময় আদালত মানুষের জীবন-সম্পত্তি রক্ষা করতে পারেনি। খোদ সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল তারা অসহায়। শাহিনবাগে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর বারংবার আক্রমণ নেমে এসেছিল। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “এতটাই রেগে ইভিএম টিপুন যাতে কারেন্ট লাগে শাহিনবাগে”। বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন, “দিল্লিতে বিজেপি জিতলেই হটিয়ে দেওয়া হবে শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের”।
এনকাউন্টারের নামে খুন করার ঘটনা বাড়ছে। সংবিধানের নির্দেশকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। ২১ নং ধারায় বলা আছে - জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার উপযুক্ত আইন নির্ধারিত প্রক্রিয়া ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে তাঁর জীবনের বা ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। গত কয়েক বছরে এনকাউন্টার করে যে খুনগুলি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ আইনের শাসনের বিরোধী।
এই সময়কালে দানবীয় আইনগুলি প্রয়োগ করে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। ইউএপিএ-কে সংশোধন করার মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী ঝোঁক প্রকাশ পেয়েছে। কাদের সন্ত্রাসবাদী বলা হবে, কাকে গ্রেপ্তার করা হবে - এসব বিষয়ে রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রাখা হবে। জাতীয় নিরাপত্তা আইন, জম্মু-কাশ্মীরে আরোপিত জননিরাপত্তা আইন, জাতীয় তদন্ত সংস্থা সংশোধনী আইন-এর মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে ভীমা-কোরাগাঁওয়ে দলিত অধিকার আন্দোলনে যুক্ত সমাজকর্মী, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে এনে জেলে ভরে দেওয়া হলো। প্রগতিশীল, প্রতিবাদীদের ‘শহুরে নকশাল’ আখ্যা দিয়ে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এক দমবন্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
অন্য ধর্মের উপর আক্রমণ বাড়ছে। ধর্মীয় আচরণ পালনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের সংবিধানের ২৫(১) এ ধারায় বলা আছে, “সরকারি আদেশ, নৈতিকতা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থার বলে সমস্ত মানুষের বিশ্বাসের ও ধর্মচর্চা করা, পালন করা বা প্রচার করার সমান অধিকার ও স্বাধীনতা রয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনে তীব্র আঘাত এসে পড়ছে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর। সাম্প্রদায়িক বিভাজনে ক্ষতিগ্রস্ত গণ আন্দোলন।’’
সংসদীয় বিধি ব্যবস্থার উপর আক্রমণ নেমে এসেছে। সংসদকে এড়িয়ে অর্ডিন্যান্স জারি হচ্ছে। দ্রুততার সঙ্গে বিল পাশ করানো হচ্ছে। সাংসদদের আলোচনার সুযোগ থাকছে না। ক্রমাগত দুর্বল করা হচ্ছে সংসদকে। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকছেন। জনপ্রতিনিধিদের কেনা-বেচার মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রের ভিতে আঘাত এসেছে।
আক্রান্ত আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো।‘যোজনা কমিশন’ বাতিল করে নীতি আয়োগ গঠনের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত শুরু হয়েছিল। রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের খেয়াল খুশির শিকার হতে হচ্ছে। কেন্দ্রের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। জিএসটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকারের হাত থেকে রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করেছে। নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির অধিকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নীতি যা আমাদের সংবিধানের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য, তাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্রতা নষ্ট হয়েছে। নিরপেক্ষতা থাকছে না। সংবিধানের ৩২৪(১) ধারায় সংসদ ও রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। শেষ লোকসভা নির্বাচন ও বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে আদর্শ আচরণবিধিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। কর্পোরেটের টাকায় বিজেপি ভোট করছে, যাতে গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত নড়ে যাচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারে বেশ কিছু সেনাকেও ব্যবহার করা হয়েছে।
গণতন্ত্র, মুক্ত চিন্তাকে কবরে পাঠাতে সর্বত্র দখলদারি চলছে। প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলিতে সঙ্ঘ নিয়ন্ত্রিত লোকদের বসানো হয়েছে। আইবি, আইসিএইচআর, আইআইটি, এফটিআইআই - সর্বত্র দখলদারি। আরবিআই, ইডি, সিবিআই সহ সব প্রতিষ্ঠানে নির্লজ্জ দখলদারি চলছে।
বিচার ব্যবস্থাতেও হস্তক্ষেপ বেড়েছে। বিচারপতি নিয়োগে যেভাবে হস্তক্ষেপ হচ্ছে তাতে গণতন্ত্র বিপদাপন্ন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ২০১৮-র ১২ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতের চার বরিষ্ঠ বিচারক প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। শাসকদলের নেতাদের মামলা বাছাই করা বেঞ্চে যাচ্ছে। আইনের শাসন ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া থাকছে না। দিল্লি দাঙ্গায় অভিযুক্ত নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করার জন্য দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুরলিধরনকে বদলি করা হয়।
দেশের নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। অনলাইন নজরদারির মধ্যে দিয়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংশোধনের নামে ‘তথ্যের অধিকার’কে নাকচ করা হয়েছে। তথ্য জানার অধিকারকে খর্ব করতে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থাকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থাকে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস।
আক্রান্ত সংবাদ মাধ্যম, আক্রান্ত সাংবাদিকরা। সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণ চলছে। যা দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। কর্পোরেট স্বার্থে শ্রমআইনগুলি বাতিল করা হচ্ছে। শ্রমিকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। কোভিড ১৯-কে ঢাল করে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলিকে সঙ্কুচিত বা বাতিল করা হচ্ছে।
দেশের গণতন্ত্র বিপদে। বিজেপি’র হাতে দেশের গণতন্ত্র কখনই সুরক্ষিত থাকতে পারে না। আদর্শগতভাবেই ওরা গণতন্ত্রবিরোধী।