৬০ বর্ষ ১ সংখ্যা / ১২ আগস্ট, ২০২২ / ২৬ শ্রাবণ, ১৪২৯
কাকাবাবু’র জন্মদিনে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক সংবিধান রক্ষার আহ্বান নেতৃবৃন্দের
মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে সর্বহারা আধা সর্বহারা সবাইকে নিয়ে সংগ্রামের পরিধি বড়ো করতে হবে। বামফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ করে বামপন্থী আন্দোলনে তার বাইরের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সবাইকে একজোট করে বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। ৫ আগস্ট কলকাতার মহাজাতি সদনে সন্ধ্যায় ‘কাকাবাবু’র জন্মদিনে একথা বলেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। ৫ আগস্ট নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ-‘কাকাবাবু’র ১৩৪তম জন্মদিন। এদিন সকালে পার্ক সার্কাসের গোবরা গোরস্থানে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার প্রমুখ।
এরপর সকাল দশটায় সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দপ্তর মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে কাকাবাবুর আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, নীলোৎপল বসু, রামচন্দ্র ডোম, পার্টি নেতা রবীন দেব, মিনতি ঘোষ, আভাস রায়চৌধুরী, অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার, কনীনিকা ঘোষ প্রমুখ সহ পার্টির রাজ্য দপ্তরের কর্মীবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দ। এরপর গণশক্তি ভবনে নেতৃবৃন্দ মুজফ্ফর আহ্মদ পাঠাগারে কাকাবাবুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পাঠাগারে খবর কাগজের বিভিন্ন ক্লিপিংস সংক্রান্ত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিমান বসু। রাজ্য দপ্তরের পাঠাগারেও ‘কাকাবাবু’র প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিন সকালে গণশক্তি প্রেসে কাকাবাবুর আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নেতৃবৃন্দ। এখানে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। যার বিষয়বস্তু ছিল ‘মানুষের চিন্তা চেতনার উন্নতিতে ছাপাখানা ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ভূমিকা’। মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ চিন্ময় ভট্টাচার্য। আলোচনা শেষে নাটক সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। তিনি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন পার্টি মুখপত্র হিসেব স্বাধীনতা এবং পরবর্তীকালে গণশক্তি’র ওপর শাসকশ্রেণির আক্রমণের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, আমাদের পত্রিকা আমাদের সংগঠন। ভয় দেখিয়ে পথচলা থামানো যাবে না।
বিধাননগরে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি (এনবিএ) দপ্তরের প্রাঙ্গণে এদিন ‘কাকাবাবু’র ১৩৪তম জন্মদিবস উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে কাকাবাবুর মূর্তিতে মাল্যদান করেন এবং অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, সংস্থার ডিরেক্টর অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী প্রমুখ।
এদিন কাকাবাবু’র জন্মদিবস উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠান হয় মহাজাতি সদনে। বিকেল ৫টায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবছরের মতো এবারেও মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এদিন পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় তিনজন লেখকের হাতে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনের ‘হোম ইন দ্য ওয়ালর্ডঃ এ মেমোয়া্র’ বইটি এবছর বিশেষ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছে। অমর্ত্য সেনের হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন প্রতীচী ট্রাস্টের ডিরেক্টর ডঃ মানবী মুজমদার।
কৌশিক চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘একুশ শতকে মার্কসীয় সমাজতত্ত্ব’, নেহাল আহ্মেদের নাথিং উইল কী ফরগটেনঃ জামিয়া টু শাহীনবাগ’ শম্পা সেনের ‘বং থিয়েটারঃ ম্যানিফেস্টো থেকে বাজার’ - এই বছরের মুজফ্ফর আহ্মদ পুরস্কার পেয়েছে একই সঙ্গে। অমর্ত্য সেন বাদে বাকি তিনজন লেখকই এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। উপস্থিত ছিলেন মহম্মদ সেলিম, সূর্য মিশ্র, নীলোৎপল বসু, রামচন্দ্র ডোম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী প্রমুখ।
মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি মৃদুল দে যারা বই পাঠিয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর আমরা বেশি বই পেয়েছি। প্রতিটি বই-ই মূল্যবান।
অমর্ত্য সেনের বইটির জন্য এদিন ডঃ মানবী মজুমদারের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মহম্মদ সেলিম। লেখক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের হাতে সম্মাননা প্রদান করেন সূর্য মিশ্র। শম্পা সেনকে সংবর্ধিত করেন রামচন্দ্র ডোম এবং নেহাল আহ্মেদকে পুরস্কার-সম্মাননা দিয়ে সংবর্ধিত করেন বিমান বসু। মঞ্চে অমর্ত্য সেনের পাঠানো বার্তা পাঠ করে শোনান প্রতীচী ট্রাস্টের ডিরেক্টর মানবী মজুমদার।
পুরস্কৃত বইগুলি সম্পর্কে দর্শক শ্রোতাদের অবহিত করেন নেতৃবৃন্দ। পুরস্কার প্রাপক নেহাল আহ্মেদ তাঁর বইয়ের বিষয়বস্তু স্বল্প কথায় তুলে ধরেন।
পুরস্কার পর্ব শেষে বক্তব্য রাখেন সূর্য মিশ্র, মহম্মদ সেলিম এবং রামচন্দ্র ডোম।
মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতি পুরস্কার গ্রহণ করে অর্মত্য সেনের বার্তা
মুজফ্ফর আহ্মদ-এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক বার্তায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘মুজফ্ফর আহ্মদ-এর স্মৃতির সঙ্গে আমার 'Home in the World' বইটি যুক্ত হওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। কারণ ভারতে বামপন্থার এই অন্যতম পথিকৃতের প্রতি আমার গভীর সম্মান ছাড়াও, ওঁর সঙ্গে আমার পারিবারিক যোগাযোগও ছিল।
উনি ছিলেন আমার পিসতুতো দাদা জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত, যাকে আমরা সিধুদা বলে জানতাম, তাঁর বিশেষ বন্ধু। সিধুদা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঢাকা ট্রেন রবারিতে ধরা পড়ে জেলে গেলে। সেখানে তাঁর সঙ্গে মুজফ্ফর আহ্মদ-এর আলাপ হয়। সিধুদা ও অন্যান্য বন্দি বিপ্লবীদের মুজফ্ফর আহ্মদ বুঝিয়েছিলেন যে ভারতের স্বাধীনতার জন্য শুধু জাতীয়তাবাদের মধ্যে আবদ্ধ থাকলে চলবে না, চাই জনসংগ্রাম। কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে বহু বিপ্লবীর মত পরিবর্তন হয়েছিল, তাঁরা জেল থেকে বেরোলেন কমিউনিস্ট হয়ে। আমার সিধুদাও তাঁদের একজন।
সিধুদা মানে জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত’র সঙ্গে মুজফ্ফর আহ্মদ-এর বন্ধুত্ব বজায় ছিল সিধুদার মৃত্যু অবধি। তাই পারিবারিক ও রাজনৈতিক সূত্রে মুজফ্ফর আহ্মদ-এর কথা ছেলে বয়েস থেকে শুনেছি। আজ এই পুরস্কার গ্রহণ করে মুজফ্ফর আহ্মদ-এর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।