৬০ বর্ষ ১ সংখ্যা / ১২ আগস্ট, ২০২২ / ২৬ শ্রাবণ, ১৪২৯
সংঘ পরিবারের কর্মসূচিই মোদি সরকারের দিকনির্দেশ
অঞ্জন বেরা
অদ্ভুত এক সংকটের ছায়ায় পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব। দেশ চালাচ্ছে এমন এক রাজনৈতিক শক্তি যাদের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্পর্ক মৌলিকভাবেই পরস্পরবিরোধী। স্বাধীনতা সংগ্রামে নানা রাজনৈতিক ধারা ও প্রবণতার মধ্যেও ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরোধিতার মৌলিক-অভিমুখের অভিন্ন পরিসরেই গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণতন্ত্র হিসেবে স্বাধীন ভারতের ধারণার আত্মপ্রকাশ। আরএসএস নির্দেশিত বিজেপি’র সংকট মৌলিক। ঔপনিবেশিকতাবাদ-বিরোধী রাজনীতির কোনো ধারা থেকেই তার জন্ম হয়নি। উলটে ঔপনিবেশিক জমানার পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাধীনতা সংগ্রামের সব ধারারই তারা বিরোধিতা করে গেছে সমগ্র সময় পর্ব জুড়ে।
‘হিন্দুত্ব’ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা পর্ব থেকেই কোনো ঔপনিবেশিক-উত্তর সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের কথা বলে না। কিন্তু, জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ঔপনিবেশিকতার উৎখাত চেয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, একটি গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক আধুনিক সমাজ গঠন। কাগজ-কলমেও তেমন কোনো দায়বোধ হিন্দুত্ববাদের ছিল না। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং হিন্দুত্ববাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে। ঐতিহাসিকভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তির সংগঠিত আত্মপ্রকাশ ১৯২০-র দশকে, ঠিক যখন ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ভারতীয় সমাজের সর্বস্তরের অংশগ্রহণের সূত্রে ব্যাপক ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রামের রূপ নিতে শুরু করে।
হিন্দুত্ববাদে ‘ধর্মীয়’ দ্বন্দ্বই যেহেতু মূল দ্বন্দ্ব তাই মুসলিম শাসকরাই ‘হিন্দুত্ব’-এর প্রধান প্রতিপক্ষ। সম্পদের লুণ্ঠনের ওপর গড়ে ওঠা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের কোনো বিরোধ ছিল না। উলটে আপস ছিল। বিজেপি’র নেতারা তাই বাবরি মসজিদ ভাঙাকে ‘ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন’ কিংবা ফরাসি বিপ্লবের সময়কার ‘বাস্তিল দুর্গ’ পতনের ঘটনার সমতুল্য বলে সোল্লাসে ঘোষণা করেছেন। এভাবেই তারা ঔপনিবেশিক শোষণব্যবস্থার মৌলিক কাঠামোকে আড়াল করে থাকে। তথাকথিত অযোধ্যা বিতর্ককে বিজেপি ব্যবহার করেছে সুপরিকল্পিতভাবে তাদের বিভাজনের রাজনীতিকে মূলস্রোত রাজনৈতিক বিতর্কের আঙিনায় আধিপত্য বাড়াতে।
পাকিস্তান ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হলেও, গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণতান্ত্রিক হিসেবে ভারত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে, বিশেষত বিভক্ত ভারতের হিন্দুত্ববাদী পক্ষকে হতাশ করে। নাথুরাম গডসের হাতে গান্ধীজির নির্মম হত্যা সেই হতাশারই ফলশ্রুতি।
বলাবাহুল্য গান্ধীজিকে হত্যা করেই হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষান্ত হয়নি, স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা অবিচল থেকেছে। নয়া-উদারবাদ পর্বে শাসক শ্রেণির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি’র ক্রমউত্থান কোনো পারম্পর্যবিহীন ঘটনা নয়।
হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িক শক্তি তার যাবতীয় পশ্চাদবর্তী রাজনৈতিক ও মতাদর্শের জন্মদাগ নিয়েই আজকের আধুনিক সময়ের চ্যালেঞ্জ নিতে চাইছে। যত বেশি তার নির্বাচনী সাফল্য তত বেশি সে আঁকড়ে ধরছে পশ্চাদবর্তী প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক কর্মসূচি। তত বেশি তারা দেশবাসীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতে চাইছে সাভারকর-গোলওয়ালকর-দীনদয়াল উপাধ্যায়ের কর্মসূচিতে।
প্রথমে জনসংঘ এবং পরে বিজেপি’র প্রতিষ্ঠাই হিন্দুত্ব-কর্মসূচি ভিত্তিক দল হিসেবে। দীনদয়াল উপাধ্যায় বর্ণিত তথাকথিত ‘একাত্ম মানবতাবাদ’ তাদের বিজেপি’র স্বঘোষিত মৌলিক দার্শনিক ভিত্তি। ১৯৬০-র দশকের মধ্যভাগে খসড়া করা ‘একাত্ম মানবতাবাদ’ মূলত দাঁড়িয়ে আছে সাভারকরের ‘হিন্দুত্বঃ হু ইজ এ হিন্দু’ এবং এম এস গোলওয়ালকরের ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইন্ড’ এবং‘বাঞ্চ অফ থটস’-এ সংজ্ঞায়িত ধারণার উপর।
হিন্দুত্ববাদের তাত্ত্বিক ভিত্তি ধর্মমিশ্রিত রাজনীতি এবং সমাজের ধর্ম ও বর্ণভিত্তিক বিভাজন। এম এস গোলওয়ালকর তাঁর ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইন্ড’ গ্রন্থে যেমন লিখছেন, হিন্দুস্তানে ধর্ম হচ্ছে এক ধরনের সর্বভূতে বিরাজমান অস্তিত্ব’। (রিলিজিয়ান ইজ অ্যান অল-অ্যাবজর্ভিং এন্টিটি’)। এর অর্থ দাঁড়ায়, ধর্মীয় সত্তাই অবিকল্প পরিচিতি; যেন ধর্ম-বিযুক্ত কোনো পরিচিতিসত্তা অকল্পনীয়!
হিন্দুত্ববাদ চায় রাজনৈতিক হিন্দু। যেমন ইসলামিক মৌলবাদও চায় রাজনৈতিক ইসলাম। সাম্প্রদায়িক শক্তির লক্ষ্য সাধারণভাবে ধর্মাচরণ নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল। নয়া-উদারবাদ পর্বে বিরাজনীতির আধিপত্যবাদী প্রসারের পর্বে সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতাবাদ আগ্রাসী রূপ নিয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতাবাদ অন্য ধর্ম সম্পর্কে অসহিষ্ণু শুধু নয়, নানা ধর্মের মানুষের মধ্যে সমন্বয়ের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য তারা সরোষে অস্বীকার করে। দ্বিজাতিতত্ত্ব যেমন বুঝিয়েছিল, হিন্দু আর মুসলিমের জন্য আলাদা রাষ্ট্র দরকার; যেন দুই ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের কোনো উপায় নেই। সংখ্যালঘুদের মধ্যে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা তাই তাদের স্বভাব ধর্ম। আরএসএস’র প্রধান তাত্ত্বিক এম এস গোলওয়ালকর তাঁর ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইন্ড’ (১৯৩৮) গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘‘হিন্দুস্তানে অ-হিন্দুদের হয় হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে হবে... অথবা তাদের হিন্দু জাতির সম্পূর্ণ অধীনস্ত হয়ে থাকতে হবে। কোনো সুযোগসুবিধা তারা পাবে না। বাড়তি কিছু পাওয়া তো দূরের কথা, এমনকী নাগরিকদের অধিকারও তারা পাবে না।’’
হিন্দুত্ববাদ ভারতের মুসলিম ছাড়াও অন্যান্য অহিন্দু সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির স্বতন্ত্র অস্তিত্বও স্বীকার করে না। অভিন্ন ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’-এর ধুয়ো তুলে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পারসি ধর্মগুলিকেও হিন্দু সম্প্রদায়েরই অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে।
অবশ্য, হিন্দুত্ববাদে ‘হিন্দু’ও কোনো সর্বজনীন পরিচয় নয়। হিন্দুত্ববাদ বর্ণবাদ ছাড়া অচল। বর্ণবাদ জয়গান করে ব্রাহ্মণ্যবাদের। হিন্দু ধর্মে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত বিরাট অংশের মানুষ (যেমন, শূদ্র) শুধু ব্রাত্যই নয়, অস্পৃশ্য। হিন্দুত্ববাদে মুসলিম অস্পৃশ্য, দলিতও অস্পৃশ্য।
হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তারা ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ সম্পর্কে নানা সময়ে যা বলেছেন সেগুলি থেকে স্পষ্ট, ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ একটি সামন্ততন্ত্র-জর্জরিত ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যদিও হিন্দুত্ববাদীরা অতিচালাকি করে বলে, ‘হিন্দুস আর এ নেশন’। হিন্দুরা একটি জাতি।
হিন্দু জাতি-রাষ্ট্র নাকি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র (থিওক্রেটিক স্টেট) নয়। রাষ্ট্রের জাতি পরিচয় ঘোষণা মানে নাকি রাষ্ট্র ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় না এবং হিন্দু রাষ্ট্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র একইসঙ্গে হওয়া সম্ভব! ‘ইন্টিগ্রাল হিউম্যানিজম’ গ্রন্থে দীনদয়াল উপাধ্যায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতা (ধর্মের প্রতি উদাসীনতার মনোভাব) এবং রাষ্ট্র (স্টেট) পরস্পরবিরোধী ধারণা। রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্মরাজ্যই হতে পারে, অন্য কিছু নয়।’’
হিন্দুত্ববাদ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ মানে না। ভাষা-গত বহুত্ববাদ মানে না। ‘হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান’ স্লোগান মনে করুন। সব নাগরিকের সার্বভৌমত্ব সেখানে অস্বীকৃত। লিঙ্গ সমতায় এহেন রাষ্ট্রর বিশ্বাস করতে পারে না। সংঘ-অনুগামীরা চিরকাল রাজন্যবর্গের ধামাধরা ছিল, সামন্ততান্ত্রিক দেশীয় রাজন্যবর্গের স্বার্থরক্ষায় তারা সর্বদাই সরব ছিল।
হিন্দুত্ববাদীরা তাদের প্রতিষ্ঠা পর্বের সাম্প্রদায়িক লক্ষ্যকে কার্যকর করার চেষ্টা করছে সব সময়। স্বাধীনতার উষালগ্নে যা তারা পারেনি, আজ তারা সেই অপূর্ণ কালা-স্বপ্ন পূরণে মরিয়া। ফলে এদেশের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ও সাধারণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে যেকোনো উপায়ে খর্ব করার চেষ্টা তারা চালিয়ে গেছে।
তারা প্রশাসনিক ক্ষমতা দখলের প্রতিটি পর্বকে ব্যবহার করেছে ‘হিন্দুত্ব’-এর আশু ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচিকে রাষ্ট্রীয় বৈধতা দেবার কাজে। ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ী সরকারও বসে থাকেনি। সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে গেছে নিরন্তর। বাজপেয়ী সরকার সংবিধান খতিয়ে দেখতে একটি কমিশন পর্যন্ত গঠন করে। বস্তুতপক্ষে, সংবিধান গ্রহণের সময় থেকেই হিন্দুত্ববাদীরা মৌলিক প্রশ্নে বিরোধ করেছে।
হিন্দুত্ববাদীরা ভারতীয় সংবিধানের মর্মবস্তুর সঙ্গে কোনোদিনই একমত ছিল না। প্রথমত, বহুত্ববাদী ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধারণার তারা বিরোধী। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তারা বিরোধী। তৃতীয়ত, ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের তারা বিরোধী। বিশেষত, গোলওয়ালকর এবং দীনদয়াল উপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষাতেই তা বলে গেছেন।
’ইন্টিগ্রাল হিউম্যানিজম’ গ্রন্থে দীনদয়াল উপাধ্যায় ভারতীয় সংবিধানের ‘মৌলিক ত্রুটি’ (ফান্ডামেন্টাল এরর) প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, সংবিধানে ‘ভারতমাতা’র ধারণার কোনো স্বীকৃতি নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারণা উপাধ্যায়ের মতে, ‘হাস্যকর’। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বদলে দেশের নাকি দরকার এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা। ঠিক একইকথা গোলওয়ালকর বিস্তারিতভাবে বলেছেন ‘বাঞ্চ অফ থটস’ গ্রন্থের একাধিক লেখায়। সাভারকরও বলে গেছেন, মনুস্মৃতিই হিন্দু আইন এবং তা মৌলিক। ক্ষমতা থাকলে মনুস্মৃতির কাঠামোতেই তারা সংবিধান গঠন করত।
২০১৪ সালে বিজেপি এককভাবে ক্ষমতা দখলের পর যোজনা কমিশন বাতিল করে নীতি আয়োগ গঠনের পদক্ষেপ ছিল সংঘ পরিবারের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বিরোধী রাজনীতিরই কৌশলী বাস্তবায়ন। যোজনা আয়োগ ছিল সাংবিধানিক সংস্থা। নীতি আয়োগ পরিচালিত হয় প্রশাসনিক নির্দেশে। যোজনা কমিশনের সঙ্গে তুলনা করলে রাজ্যগুলির বিধিবদ্ধ ক্ষমতা এখানে প্রত্যাহৃত। বিজেপি’র ছোটো ছোটো রাজ্য গঠনের দাবি এবং ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের যৌক্তিকতাকে অস্বীকার করা আসলে হিন্দুত্ববাদের বাঁধাছকে বৈধ।
সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘সেক্যুলারিজম’ এবং ‘সোশ্যালিজম’ শব্দ দুটির অপসারণের ধারণাকে জনপ্রিয় করতে শাসকদের অতিসক্রিয় ভূমিকাও এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য।
সংসদের গরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে মোদি সরকার বিভাজনের রাজনীতিকে বাস্তবায়িত করছে আগ্রাসীভাবে। জম্মু-কাশ্মীর বিভাজন ও সংবিধানের ৩৭০নং ধারার মৌলিক বদল সংঘ পরিবারের পুরনো দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন।
তবে মোদি সরকারের হাতে নাগরিক আইনের সংশোধনী সম্ভবত হিন্দুত্ববাদ রূপায়ণের বিষয়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। চরম সংখ্যাগুরুবাদ সংশোধনীর পরতে পরতে লেপ্টে রয়েছে।
নাগরিকত্বকে সাম্প্রদায়িক পরিচয়-ভিত্তিক করে তোলা কাজটি হিন্দুত্ববাদীরা সাকার করেছে নানা পর্বের মধ্য দিয়ে। নাগরিকত্ব আইনের ২০১৯ সালের সংশোধনী সেই অর্থে অনেকগুলি পর্বের পরিণতি।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে বিজেপি ঘোষণা করেঃ ‘ভারত নির্যাতিত হিন্দুদের স্বাভাবিক বাসভূমি হয়ে থাকবে এবং নির্যাতিত হিন্দুদের এখানে আশ্রয় নেবার জন্য স্বাগত জানানো হবে।’
ভারত-বহির্ভূত ভূখণ্ডের ‘হিন্দু’-দের নিয়ে হিন্দুত্ববাদী আগ্রহের আসল লক্ষ্য স্বদেশে মেরুকরণের জিগির তৈরি করা। নতুন প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও মেরুকরণের রাজনীতির সন্দেহাতীতভাবে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার - এনপিআর এবং এনআরসি।
হিন্দুত্বপন্থীরা জন্মলগ্ন থেকে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রশ্নে চরম রক্ষণশীল হলেও, সাম্রাজ্যবাদ তোষণ এবং একচেটিয়া পুঁজির তোষণে একনিষ্ঠ থেকেছে। নেহরু সরকারের জোটনিরপেক্ষ নীতির তারা সবসময় বিরোধিতা করেছে। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের তারা তীব্র বিরোধী ছিল। সমর্থক ছিল আমেরিকা ও ইজরায়েলি জায়নবাদের। নয়া-উদারবাদ তাই হিন্দুত্ব রাজনীতির সবচেয়ে অনুকূল চারণভূমি। ‘শ্রেষ্ঠ ভারত’ তাদের জনমোহিনী স্লোগান, বাস্তবে তারা ওয়াশিংটনের চির অনুগত।
তবে মোদি সরকারের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা সেই হিন্দুত্ব-কর্মসূচিই। কারণ, কোনো আধুনিক বিকল্প কর্মসূচি নির্মাণে তারা চির-অক্ষম। বিকাশমান সমাজকে যে স্বীকার করে না, সে বিকাশের কর্মসূচি নির্মাণ করবে কীভাবে?