৫৮ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ২৯ মাঘ, ১৪২৭
কলকাতায় মহিলাদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশের বর্বরতা
পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রমের চেষ্টায় মহিলারা।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে আরও একবার রুখে দাঁড়ালেন বাংলার নারীরা। সম কাজে সম বেতন, সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থাকে জোরদার করা, জাত ধর্মের বিভেদ মেটানো, নারী নির্যাতন বন্ধ করা, নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সহ একগুচ্ছ দাবিতে ৯ ফেব্রুয়ারি ধরনা এবং আইন অমান্যের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বেলা ১২টায় কলকাতা কর্পোরেশনের পাশে জমায়েত করেছিলেন মহিলা সংগঠনগুলির নেতৃত্ব ও সদস্যরা। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতি, অগ্রগামী মহিলা সঙ্ঘ, নিখিলবঙ্গ মহিলা সঙ্ঘ, সংগ্রামী মহিলা এবং মহিলা কংগ্রেস এদিন এই আন্দোলনের ডাক দেয়। বিনা প্ররোচনায় আন্দোলনরত সেই মহিলাদের টেনে হিঁচড়ে, লাঠি উঁচিয়ে, চুলের মুঠি ধরে, লাথি মেরে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। ধাক্কা মেরে ফেলা হয় মাটিতে। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে ‘বীরত্ব’ দেখালো ‘সিভিক ভলান্টিয়ার’ লেখা গেঞ্জি পড়া বাহিনী। তারপরও ধরনা চলেছে কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে, রাস্তা জুড়ে। মাথা উঁচু করে দৃপ্তভাবে মহিলারা এদিন তৃণমূল সরকারের পুলিশ ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর মোকাবিলা করলেন রাজপথে দাঁড়িয়েই।
এদিনের ঘটনা সম্পর্কে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ জানান, পুলিশের অকথ্য অত্যাচার চলেছে, গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ২২৫ জন। প্রায় দেড়শো মহিলা কর্মী ও নেত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্য সম্পাদিকা সহ সোমা দাস, আত্রেয়ী গুহ, বিলকিস বেগম, মোনালিসা সিনহা, সমিতা হরচৌধুরি সহ অনেকে। লতিকা রহমান ও কাকলি মৈত্রকে নিয়ে যেতে হয়েছে হাসপাতালে।
এদিন বেলা দু’টো নাগাদ মঞ্চে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষের বক্তব্য চলতে চলতেই ঘোষণা হয় - মিছিল হবে। সেই অনুযায়ী এসএন ব্যানার্জি রোডের দিকে মহিলারা এগিয়ে গেলে তাঁদের বাধা দেয় আগে থেকে মোতায়েন থাকা বিশাল পুলিশ বাহিনী। এর আগেই অবশ্য মঞ্চের পেছন দিক অর্থাৎ নিউ মার্কেটের দিক অবরুদ্ধ করে দেয় পুলিশ, ঘিরে ফেলে চারদিক। বাহিনীতে মহিলা পুলিশ থাকলেও পুরুষ পুলিশ ছিল সংখ্যায় অনেক বেশি। প্রথমে একটি ব্যারিকেড দিয়ে পথ রোখার চেষ্টা হয়। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেছে আন্দোলনকারীদের বিশাল স্রোত। ভেঙে যায় সেই ব্যারিকেড। এবার লোহার বড়ো ব্যারিকেড দিয়ে পথ আটকায় পুলিশ। সেটি ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে গেলেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি। সেই সময়ে মারমুখী হয় পুলিশ। লাঠি চালিয়ে, চুলির মুঠি ধরে, লাথি মেরে এক এক জনকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে ভ্যানে তুলতে থাকে। গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় লালবাজারে।
পুলিশি লাঠিচার্জের মুখে অনেকে রাস্তায় পড়ে যান, অনেকের হাতে পায়ে লাঠির আঘাত লাগে। অভিযোগ, মহিলা পুলিশকে নিস্ক্রিয় রেখে পুরুষ পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে ও বিভিন্নভাবে মহিলাদের গায়ে হাত দেয়। এছাড়া তৃণমূলের মহিলা বাহিনীকেও পুলিশের আড়ালে কাজে লাগানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ। নির্যাতনের চোটে সংজ্ঞা হারানো এক মহিলা কর্মীকে দীর্ঘক্ষণ পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সে বিনা শুশ্রুষায় ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীকালে মহিলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পুলিশ তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অভব্য আচরণ করে পুলিশ।
প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার সময়েই ঘটে পুলিশের আক্রমণ। পুলিশের হামলায় আহত প্রায় দেড় শতাধিক মহিলার বক্তব্য, বিভিন্নভাবে মহিলাদের গায়ে হাত তুলতেও কসুর করেনি পুরুষ পুলিশের বাহিনী। আগামীদিনে এই আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়ে উঠবে বলে এদিন অবস্থান মঞ্চ থেকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন বামপন্থী ও কংগ্রেসের মহিলা সংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দ।