৫৮ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ২৯ মাঘ, ১৪২৭
দেশব্যাপী চাক্কাজ্যাম কর্মসূচি সর্বাত্মক
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্রের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার ডাকে ৬ ফেব্রুয়ারি ‘চাক্কাজ্যাম’ বা রাস্তা রোকো আন্দোলনে ব্যাপক সাড়া পড়ে দেশজুড়ে। এদিন দেশের প্রতিটি রাজ্যেই জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক সহ অন্য সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ কৃষক এদিন রাস্তায় নেমে এই কর্মসূচিকে সফল করে তোলেন। কেন্দ্রের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর সংসদে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন এই কৃষক আন্দোলন নাকি একটি মাত্র রাজ্যের। কিন্তু কৃষকেরা দেশের প্রতিটি রাজ্যে সড়ক অবরোধ করে, এমনকী কৃষি মন্ত্রীর সংসদীয় কেন্দ্র মোরেনাতেও পথ অবরোধ করে এর যোগ্য জবাব দিয়েছেন।
সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে কৃষক প্যারেডের পর কেন্দ্রীয় সরকার সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর সীমান্ত অঞ্চলে আন্দোলনকারী কৃষকদের ওপর তীব্র আক্রমণ নামিয়ে এনে এই আন্দোলনকে বানচাল করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। দিল্লি সীমান্তে প্রতিবাদরত কৃষকদের বিরুদ্ধে সামরিক ধাঁচে ব্যারিকেড তৈরি করা ছাড়াও তাঁদের খাবার, জল, শৌচালয়, বিদ্যুৎ সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি দিল্লি সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষ প্রতিবাদকারীদের যে খাবার সরবরাহ করছিলেন, তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাঁটাতারের বেড়া, সিমেন্টের ঢালাই, লোহার শিক দিয়ে রাজধানীর ভিতর থেকে রাস্তা বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রের সরকার। এর পাশাপাশি হাজার হাজার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে, অসংখ্য আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে আন্দোলনকে স্তব্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়া আতঙ্ক তৈরির লক্ষ্যে ৫০ হাজারের বেশি পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয় দিল্লিতে। তবুও দিল্লির প্রতিটি সীমান্তে অবস্থানে অনড় ছিলেন হাজার হাজার কৃষক।
কেন্দ্রের এত কিছু উদ্যোগ সত্ত্বেও ৬ ফেব্রুয়ারির চাক্কা জ্যাম কর্মসূচিতে দেশের সমস্ত রাজ্যে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে। সংযুক্ত কিষান মোর্চা এদিন বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত জাতীয় ও রাজ্য সড়কে এই কর্মসূচি সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলিও এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছিল।
এদিনের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার সমস্ত সড়কই বন্ধ ছিল। কোথাও ট্রাক্টর-ট্রলি নিয়ে, কোথাও রাস্তায় বসে পড়ে অবরোধ করেছেন কৃষকরা। প্রায় সব জায়গাতেই কৃষকরা আসেন সপরিবারে। হাজার হাজার মহিলার অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এছাড়া মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, মোরেনা সহ সব গ্রামীণ এলাকায় চাক্কা জ্যাম হয়েছে। ছত্তিশগড়ের সমস্ত জেলায় চাক্কা জ্যাম হয়েছে। মহারাষ্ট্রের জাতীয় সড়ক অবরোধ ছাড়াও নাসিক, কোলাপুর, কাবাদ শহরে অবরোধ হয়। কর্ণাটকে আন্দোলনকারীদের অবরোধ শুরুর আগেই গ্রেপ্তার করা সত্ত্বেও অবরোধ হয়েছে। অবরোধ হয়েছে অন্যান্য জায়গায়। চেন্নাই, তেলেঙ্গানাতেও বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা রাস্তায় নেমে পথ অবরোধ করেছেন। জম্মুতে রাস্তা অবরোধে অংশ নেন মহিলারাও। বিহারে পরীক্ষা থাকায় দুপুর দু’টো থেকে তিনটা পর্যন্ত অবরোধ হয়েছে। ওডিশায় গঞ্জাম, রৌরকেল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় অবরোধ হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে অবরোধ
কেন্দ্রের কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও এদিন জোরালো প্রতিবাদে শামিল হন কৃষকেরা। রাজ্যের জেলায় জেলায় মোট ২১৬টি স্থানে এদিন চাক্কা জ্যাম হয়েছে। এদিনের এই কর্মসূচিকে সফল করতে রাজ্যের বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলির পক্ষ থেকেও আহ্বান জানানো হয়েছিল। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় হাজার হাজার কৃষক চাক্কা জ্যাম কর্মসূচিতে অংশ নেন। কৃষক আন্দোলনকে ভাঙতে গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে আক্রমণ শানিয়েছিল কেন্দ্রের সরকার, এদিনের কর্মসূচির মাধ্যমে তারও প্রতিবাদ ঝরে পড়ে রাজ্যজুড়ে। কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এদিনের এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। কৃষকদের সঙ্গে এদিন পথে নেমে কর্মসূচিকে সফল করেন ছাত্র, যুব, মহিলা প্রভৃতি বিভিন্ন গণসংগঠন।
এদিনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অমল হালদার বলেছেন, রাজ্যে অন্ততপক্ষে ৭৬টি জাতীয় সড়ক এবং ১৪০টি রাজ্য সড়কের ওপর সর্বাত্মক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কোথাও তা ১২টা থেকে শুরু হয়েছে, আবার কোথাও শুরু হয়েছে ১টা বা ২টো থেকে। কৃষকদের নিজেদের অধিকার বুঝে নেবার এই লড়াই আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।