E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ২৯ মাঘ, ১৪২৭

কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে অর্থ সংগ্রহে ব্যাপক সাড়া অন্ধ্রপ্রদেশে


অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়াতে কৃষক সংহতি ফান্ডে অর্থ সংগ্রহের কর্মসূচিতে রাজ্যের মানুষ বিপুলভাবে সাড়া দিলেন। কৃষক সংগ্রাম সংহতি কমিটির পক্ষ থেকে ২৫ জানুয়ারি দিল্লির সংগ্রামরত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়াতে এই গণ সংগ্রহ কর্মসূচি পালিত হয়।

বামপন্থীসহ বিভিন্ন গণসংগঠনের প্রায় ৬০০ সমাজকর্মী আড়াইশোটি ভাগে বিভক্ত হয়ে রাজ্যের ৪০ হাজার মানুষের কাছে কৃষকদের প্রতি সংহতিমূলক ফান্ডে সাহায্যের আবেদন নিয়ে গেলে প্রায় চার লক্ষ টাকা সংগৃহীত হয়। হুন্ডির মাধ্যমেও এই অর্থ সংগৃহীত হয়েছে।

রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের এবং বর্গের মানুষ এই কর্মসূচিতে অত্যন্ত মানবিকভাবে সাড়া দিয়েছেন। একজন তরুণী তাঁর বাড়িতে নিজস্ব সঞ্চয়ের টাকা তুলে দিয়েছেন কৃষক সংগ্রামের তহবিলে। মন্দিরের পুরোহিত থেকে পুলিশ কর্মী, রিকশাচালক সকলেই সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন যে যেটুকু পেরেছেন।

কার্যত গোটা বিজয়ওয়াড়া শহর কৃষক সংগ্রামের যে আহ্বান ‘আমরাও রয়েছি কৃষকদের পাশে’ তাতে সাড়া দিয়েছে। এই তহবিল সংগ্রহ অভিযানে সাধারণ মানুষ মোদীর প্রতি, তাঁর পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তাঁদের অসন্তোষের কথা ব্যক্ত করেছেন গণসংগ্রহের জন্য যাওয়া সমাজকর্মীদের কাছে। অর্থ সাহায্য করার সময় তাঁরা তুলে ধরেছেন তাঁদের যন্ত্রণার কথা, ক্ষোভের কথা। রাজ্যের টিডিপি এবং ওয়াইএসআরসিপি দল দানবীয় কালা কানুন - কৃষি বিলকে সমর্থন করছে। তারা নতি জানিয়েছে বিজেপি সরকারের প্রতি। কিন্তু অকুতোভয় সাধারণ মানুষ সরাসরি প্রকাশ্যে কৃষকদের পক্ষে দাঁড়াতে দ্বিধা করেননি।

রাজ্যে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ফয়দা তোলার জন্য বিজেপি এবং আরএসএস মেরুকরণের মধ্য দিয়ে রাম মন্দিরের জন্য চাঁদা তুলছে। দেখা যাচ্ছে এই উপলক্ষে বড়ো কর্পোরেটগুলি কোটি কোটি টাকা মোদীকে সমর্থন জানিয়ে চাঁদা হিসেবে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু রাজ্যজুড়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে দাড়িয়ে কৃষকদের প্রতি সংহতির বার্তা দৃঢ় ভাবেই উপস্থাপিত করেছেন।

বিস্ময়কর হলো, বড়ো কর্পোরেট মিডিয়া হাউসগুলি যেখানে কৃষক বিরোধী নীতিকে সমর্থন করছে, সেখানে তাদের হাউসে কর্মরত সাংবাদিক, চিত্রসাংবাদিক-তাঁরাও হুন্ডির মাধ্যমে টাকা তুলে দিচ্ছেন কৃষকদের সহায়তার জন্য। বহু মানুষ তাঁদের সাধ্যমতো অর্থ এই গণসংগ্রহ অভিযানে সমাজকর্মীদের হাতে তুলে দেবার সময় বেশি টাকা না দিতে পারার জন্য আক্ষেপ করেছেন। কারণ করোনাজনিত অতিমারীর পরিস্থিতিতে তাঁরা অনেকেই কাজ হারিয়েছেন, রুজি-রোজগার হারিয়েছেন - খেদ এবং ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন সে কথা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং সামাজিক মাধ্যমে এই গণঅর্থসংগ্রহের কর্মসূচির কথা জেনে বহু মানুষ ব্যাঙ্কের মাধ্যমেও টাকা দিয়েছেন। দিল্লিতে অনলাইনে তাঁরা টাকা পাঠিয়েছেন। দেখা গেছে পরিবারের মহিলারা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এই মহৎ সংগ্রহে অর্থ দান করার জন্য। এর পাশাপাশি অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকেও কৃষকদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এই গণ সংগ্রহের পরিপূরক ব্যবস্থা হিসেবে।

পার্টি কর্মী এবং গণসংগঠনের সদস্যরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন। সকালে প্রাতঃভ্রমণকারীদের থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ভোজনালয়, ফুড কোর্ট এলাকায় গণসংগ্রহের জন্য অনলসভাবে হাজির থেকেছেন কর্মীরা।

এই গণসংগ্রহে যেমন আইনজীবীরা অর্থ সংগ্রহ করেছেন, তেমনি পৌরসভার অন্যান্য কর্মীসহ যাঁরা সাফাই কর্মী হিসেবে কাজ করেন তাঁরাও অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এই সাফাইকর্মীরা বাড়ি বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহের সময় কৃষকদের সমর্থনে অর্থ চাইলে গৃহস্থ বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। এভাবেই তাঁরা কৃষক- শ্রমিক ঐক্যের অন্যতম নজির সৃষ্টি করেছেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা অর্থ সংগ্রহ করেছেন সাধ্যমতো যেমন, তেমন অটোরিকশা শ্রমিকরাও অর্থ সংগ্রহ করেছেন সওয়ারিদের কাছে কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতির কথা বলে। অর্থ সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন ছাত্ররাও। এসএফআই কর্মীরাও রাস্তায় নেমে অর্থ সংগ্রহের আবেদন জানিয়েছেন। শহরের বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকা থেকে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সারাদিন ধরেই অক্লান্তভাবে অর্থ সংগ্রহের কাজ করেছেন শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুবক-মহিলা সবাই।

শুধু অর্থ সংগ্রহের কাজ করাই নয়, শহর জুড়ে মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির কথা, কর্পোরেট তোষণের কথা সবকিছুই উঠে এসেছে কৃষকদের প্রতি সংহতি তহবিল সংগ্রহের সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায়। সমাজের ব্যাপকতর অংশের সমর্থন লাভেও সফল হয়েছে এই কর্মসূচি।