৫৮ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ২৯ মাঘ, ১৪২৭
মমতার তৈরি করে দেওয়া সুযোগকে কাজে লাগাতে রাজ্যে ভোট পাখি মোদী-শাহ
গৌতম রায়
যে কোনো উপায়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে বিজেপি এখন এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, ওদের জাতীয়স্তরের নেতারা তো বটেই, অমিত শাহ থেকে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত দিল্লি-পশ্চিমবঙ্গের নিত্যযাত্রীতে পরিণত হয়েছেন। বিগত একমাসের ভিতরে সরকারি অনুষ্ঠানের অছিলায় প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে দু’দু’বার এই রাজ্যে এলেন, সরকারি মঞ্চকেও কার্যত ভোট প্রচারে ব্যবহার করলেন, তা থেকে বোঝা যায় হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি কতখানি মরিয়া হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ দখলের ভিতর দিয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে নিজেদের বিস্তার ঘটাতে।তার পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের শাসন কায়েম করতে পারলে, আন্তর্জাতিকস্তরে সংখ্যাগুরু মৌলবাদকে শক্তিশালী করবার একটা বড়ো সুযোগ হিন্দুত্ববাদীদের কাছে আসবে। এই পরিস্থিতির পাল্টা হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ, দু’টি দেশেই সংখ্যালঘু মৌলবাদও শক্তিশালী হবে। সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু উভয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ পরস্পরের শ্রেণিস্বার্থ রক্ষায় আরও অনেক বেশি আত্মনিবেদিত হওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে কেবল ভারত বা প্রতিবেশি বাংলাদেশেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই ধর্মনিরপেক্ষতা আর গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। সেই বিপন্নতা গোটা বিশ্বেই সবধরনের সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তিকে বিশেষ রকমের অক্সিজেন জোগাবে।
ভোট পাখি হিসেবে কার্যত দিল্লি টু পশ্চিমবঙ্গের নিত্যযাত্রী হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে কৃষকদের জন্যে আত্মনিবেদিত দেখাবার চেষ্টা করলেন সম্প্রতি(০৭/০২/২১) হলদিয়াতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যক্রমকে আক্রমণের নাম করে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ আর ‘প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি যোজনা’র গুণকীর্তনে তাঁর ফেব্রুয়ারির পশ্চিমবঙ্গ সফরে সবথেকে বেশি ব্যস্ত থাকলেন। হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি যখন রথযাত্রার নাম করে এই রাজ্যে বিধানসভার ভোটের মুখে সাম্প্রদায়িক এবং সামাজিক মেরুকরণে সবথেকে বেশি সক্রিয়, তখন গুজরাট গণহত্যার নায়ক, সবরকমের মেরুকরণের সফল কারিগর প্রধানমন্ত্রীর মুখে কিন্তু এই রাজ্যের বুকেই তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের রথযাত্রা ঘিরে একটা শব্দও শোনা গেল না। সাম্প্রদায়িক কোনো উচ্চারণও সাময়িক তিনি বললেন না। মেরুকরণের লক্ষ্যেও একটা শব্দ নয়। কেবল কৃষকদের জন্যে দরদ! শিল্পের জন্যে সওয়াল। তাঁরা ক্ষমতায় এলে চাকরি ঘিরে বেকারদের টাটকা স্বপ্ন দেখাবার ইউটোপিয়া।
মোদী থেকে মমতা, তাঁরা নিজেরা নীতিগত অবস্থানে যা নন, সেটাকেই ইতিবাচকভাবে দেখান ভোটের স্বার্থে। মোদী পশ্চিমবঙ্গ সফরে নিজের আয়ুষ্মান ভারত ঘিরে মমতার ব্যক্তিগত অসূয়ার যে কথা বলেছেন, তার মধ্যে অবশ্যই সত্যতা আছে। কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি, সেগুলি মানুষের ভালো খারাপ যাই করুক না কেন, কোনোরকম পরীক্ষানিরীক্ষার আগেই রাজনৈতিক মাইলেজ পেতে মমতা সেইসব প্রকল্পের ধারপাশ দিয়ে হাঁটেননি। মমতার এই না হাঁটার প্রবণতা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে কতখানি স্বাস্থ্যকর, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আর্থিক প্রকল্প না নিয়ে, সেই প্রকল্প আদৌ মানুষের উপকার করছে, কি করছে না, তা দেখার সুযোগটি ব্যবহার না করে, কেবলমাত্র কেন্দ্রের প্যাকেজ নেব না, অথচ কেন্দ্রের আর্থিক অসহযোগিতার কথা বলব- এটা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। মমতা আয়ুষ্মান ভারত আর পিএম কিষান সম্মান নিধি যোজনা প্রকল্পকে এই রাজ্যে ঢুকতে না দিয়ে, কেন্দ্রের অর্থনৈতিক বঞ্চনার ন্যায্য বিষয়গুলিকে কমজোরি করে দিয়েছেন। ফলে কোভিড ১৯-উত্তরকালে কৃষি ও কৃষকদের সমস্যা ঘিরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের চরম উদাসীনতা, আদানি, আম্বানিদের মতো হাতে গোনা বিজেপি ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের পক্ষে মোদী সরকারের যাবতীয় নীতিগত অবস্থান - এইসবকে মমতা এমনভাবে জোলো করে দিয়েছেন যে, কৃষি আইন ঘিরে নিজেদের যাবতীয় কুকীর্তিগুলিকে আড়াল করবার সুযোগ করে দিলেন।
মমতা বিজেপি’কে কিভাবে সুবিধা করে দিচ্ছেন, তা বুঝতে হলদিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের রাজনৈতিক তাৎপর্যের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। কালা কৃষি আইন ঘিরে কেবল জাতীয় স্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার এখন প্রবল সমালোচিত। মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গণহত্যার কারণে যেভাবে দেশে-বিদেশে সমালোচিত ছিলেন, দিল্লিতে কৃষি আইনের বিরোধিতায় কৃষক আন্দোলন দমানোর বর্বরতায়, ঠিক তেমনভাবেই আজ বিদেশে সমালোচিত। বিশ্বের নানা দেশের রাজনীতিক থেকে শুরু করে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, খেলোয়াড় প্রমুখেরা দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর বর্বরতা ঘিরে সোচ্চার। এই সমালোচনাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় ঘিরে বাইরের লোকেদের হস্তক্ষেপ বলে আরএসএস, বিজেপি এড়িয়ে যাওয়ার শত চেষ্টা করেও সফল হয়নি। তাই মমতার এই কেন্দ্রের কৃষি সংক্রান্ত সুযোগ প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি ঘিরে এখন নিজেদের পাল্টা অবস্থান নিতে যে বিজেপি সক্রিয়, তা মোদীর হলদিয়াতে দেওয়া বক্তৃতা থেকে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গ সফরে এখনো পর্যন্ত সরাসরি সাম্প্রদায়িক প্রসঙ্গের তীব্রভাবে অবতারণা করেননি। মেরুকরণের বিষয়গুলিকেও আবছা করে বলছেন। এমন বিষয় ঘিরে আড়াল আবডাল মোদী বা আরএসএস, বিজেপি’র নেতা কর্মীদের রাজনৈতিক চরিত্র বিরোধী। এখানেই প্রশ্ন, এই সময়োচিত যতিচিহ্নের রাজনৈতিক তাৎপর্য কি? এমনটা ভেবে নেওয়ার এতটুকু কারণ নেই যে, সঙ্ঘ-বিজেপি-মমতা, তাদের চিরকালীন বিভাজনের পথ থেকে সরে এসে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন নির্বাচনী সংগ্রামে অবতীর্ণ হবেন।
মোদী দেখাতে চাইছেন স্বপ্ন। যেমন স্বপ্ন ২০১৪’র লোকসভা ভোটের আগে তাঁকে ‘বিকাশ পুরুষ’এর ফানুস হিসেবে দেখিয়ে মিডিয়া তুলে ধরেছিল। তারও আগে ২০১১’র পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটের আগে মেলে ধরেছিল মমতাকে। মোদী রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের রাজনৈতিক সচেতনতার বিষয়কে অস্বীকার করতে পারছেন না। তাই ভোট পাখি হয়ে পরিযায়ী জীবনের প্রথম পর্যায়ে সরাসরি বিভাজনের পথে হাঁটছেন না। সাম্প্রদায়িকতাকে তুলে ধরছেন কৌশলের ভিতর দিয়ে। আস্তিনে লুকিয়ে রেখেছেন সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন ট্রাম কার্ডটি। মেলে ধরছেন কৃষক দরদের কুম্ভীরাশ্রু। সামনে আনছেন বেকারদের চাকরির স্বপ্ন দেখানো ললিপপ, তুলে ধরছেন শিল্পের খোয়াব।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের রাজনৈতিক সচেতনা বুঝেই সাম্প্রদায়িক, জাতপাতের মেরুকরণের কাজটি ঘিরে মোদী,বিজেপি, সঙ্ঘের এই যে সতর্ক পদচারণা, তার রাজনৈতিক তাৎপর্যটি ভুলে গেলে চলবে না। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে মমতা পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হাসপাতাল ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তির প্রভাবে কেবলমাত্র ধর্মকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি তৈরির কোনো সংস্থান নেই। অথচ মমতার সেদিনের ঘোষণাকে তাঁর বশংবদ সংবাদমাধ্যম এমনভাবে তুলে ধরেছিল যাতে মনে হয়, সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্যে মমতা সত্যিই খুব আন্তরিক।
আরএসএস, বিজেপি-কে সাহায্য করবার এই কৌশলটি মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের দলের ঘনিষ্ঠ ইমাম-মোয়াজ্জিনদের মুসলমানদের ওয়াকফের টাকা থেকে ডোল দিয়ে, দশ হাজার অনুমোদিত মাদ্রাসাকে স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে, হিজাব পরে ফটোশ্যুট করে, পবিত্র ইদের নামাজে ভুল উচ্চারণে ধর্মীয় শব্দাবলী উচ্চারণ করে গিয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বিজ্ঞাপন পাওয়া শাসকঘনিষ্ঠ একটা বড়ো অংশের সংবাদমাধ্যম সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্যে মমতার এই ছদ্ম আত্মনিবেদনকে দেদার প্রচার করে গিয়েছে। আর সেই প্রচারকে অবলম্বন করেই আরএসএস, নিজে এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি সহ হাজারো বর্ণের শাখা সংগঠনের মাধ্যমে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং চালিয়েছে মমতার মুসলিম তোষণের অবাস্তব বিষয়গুলি নিয়ে। মমতা এভাবেই গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবিরকে কেবল পশ্চিমবঙ্গ বা পূর্বভারতেই নয়, সমগ্র দেশেই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পথে অনেকখানি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন। সেই সুদ এখন আরএসএস, বিজেপি খুব ভালোভাবে উপভোগ করছে। ফলে ভোট ঘোষণার আগে, ভোটপাখি হিসেবে উড়ে এসে মোদীর কাছে এখন দেশের নেতা হিসেবে নিজেকে সাজিয়ে তোলার সুযোগটা অনেক বেশি। কারণ, তাঁর বা তাঁদের একটা বড়ো অংশের কাজ তো গত দশ বছর ধরে, অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে মমতা করেই দিয়েছেন। সেই কারণেই, মোদী বাহিনী পশ্চিমবঙ্গ দখল করার খোয়াব দেখতে শুরু করেছে।
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন মমতা। ঠিক সেই পথেই বিজেপি এখন হাঁটছে। ভোট ঘোষণার আগে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলির প্রভাব বিস্তার করতেই কৃষিজনিত বিষয়াবলীর অবতারণা করে গেলেন মোদী। বাংলা খবরের কাগজ এবং বৈদ্যুতিন চ্যানেলগুলি মোদী-মমতার ছদ্মবিবাদকে মাথায় রেখেই কখনো মোদীর জনবিরোধী নীতিগুলি ঘিরে খুব একটা গুরুত্ব সহকারে প্রচারের বিষয়বস্তুকে তুলে ধরে না। এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন, শাহিনবাগ, দিল্লি গণহত্যা, জামিয়া মিলিয়া ক্রাকডাউন - এইসব বিষয়গুলি জাতীয়স্তরের খবরের কাগজগুলিতে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলিতেও পেয়েছে। কিন্তু পায়নি, বাংলার বেশিরভাগ খবরের কাগজে গুরুত্ব। টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে গুরুত্ব। একই অবস্থা দিল্লির বর্তমান কৃষক আন্দোলনেরও। দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন রুখতে মোদীর সরকার যা যা করছে, পশ্চিমবঙ্গে ঠিক তাই-ই করে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, এখানকার বিভিন্ন পর্যায়ের মাদ্রাসা শিক্ষক, হবু শিক্ষকদের উপরে।
মোদী পশ্চিমবঙ্গে এসে কৃষকদের চোখে বানভাসি দশা করছেন। আর দিল্লিতে অমানবিক অত্যাচার চালাচ্ছেন আন্দোলনরত কৃষকদের উপরে। একইভাবে মমতা একদিকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে কাগুজে লড়াইয়ের অভিনয়ের মহলা দিচ্ছেন, অপরদিকে সংখ্যালঘুদের প্রতি দরদের অভিনয় করে আরএসএস, বিজেপি’কে মমতার তথাকথিত মুসলিম তোষণের অভিযোগ তোলবার সুযোগ করে দিয়ে, সেই পথে পশ্চিমবঙ্গে ভোট রাজনীতিতে নিজেদের ডিভিডেন্ড চাইছে।
কেন মেরুকরণের চেনা পথে প্রথমেই মোদী হাঁটলেন না? উত্তরটা খুবই সোজা। মোদীর বিশ্বস্ত বন্ধু মমতা যখন অন্য রাজ্য থেকে দলীয় উদ্দেশে এই রাজ্যে আসা বিজেপি নেতাদের বহিরাগত বলে ভাষাভিত্তিক বিভাজনকে উস্কে দিলেন, আর সেই উস্কানি ধর্মভিত্তিক বিভাজনের পথটিকেও পরিষ্কার করে দিল - তখন কেন প্রথমেই এই ইস্যুটাকে তুলে নিজেকে সাম্প্রদায়িক প্রচারক হিসেবে মেলে ধরবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী? মমতা মোদী-আরএসএস-বিজেপি’র কাজটাকে অনেক বেশি সোজা করে দিয়েছেন। আর এখন এই সোজা রাস্তাতেই হাঁটতে শুরু করেছে বিজেপি। মমতার তৈরি বিভাজনের রাস্তায় হেঁটে স্বল্প পরিশ্রমেই এখন ভোটের ফসল নিজেদের ঘরে তুলতে চাইছে বিজেপি।
ভোটের অভিমুখকে প্রথম পর্যায়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক না করে,পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের মানসিক গঠন অনুযায়ী সেই অভিমুখকে পরিচালিত করাই এখন বিজেপি’র লক্ষ্য।সেই লক্ষ্যেই তারা চাকরি, কর্মসংস্থান, শিল্প এগুলির কথা বলছেন। দিল্লিতে কৃষি আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর চরম অত্যাচার করে পশ্চিমবঙ্গে এসে কৃষক দরদী সাজছেন মোদী।তিনি আজ যে শিল্প ঘিরে এই রাজ্যের দুরবস্থার কথা বলছেন, তার জন্যে তো তাঁর দল বিজেপি কোনো অংশে কম দায়ী নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শিল্পতাড়ুয়া হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রমোট করতে সঙ্কীর্ণতাবাদী রাজনীতিকদের পাশাপাশি উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির ভূমিকা এবং অবদান কোনো অংশে কম নয়। মমতার স্যান্ডউইচ, চকোলেট অনশনে তাঁর পাশে থাকতে দিল্লি থেকে উড়ে এসেছিলেন বিজেপি’র তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং। মমতার সেই সময়ে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের অরাজক সব কাজে সঙ্কীর্ণতাবাদীদের সঙ্গেই আরএসএস প্রত্যক্ষভাবে থেকে এই রাজ্য থেকে শিল্প তাড়ানোর মাধ্যমে বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করতে কিভাবে আত্মনিয়োগ করেছিল, সেই স্মৃতি সহজে এ রাজ্যের মানুষ ভুলতে পারে না।
তাই মোদী ও মমতা দুই অপশক্তিকেই রাজ্যের মানুষ যে প্রত্যাখ্যান করবেন সেই সম্ভাবনা ক্রমশই জোরদার হচ্ছে।