E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৬ সংখ্যা / ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ২৯ মাঘ, ১৪২৭

ওরা ভয় পেয়েছে রবসন

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


ভোট যত এগিয়ে আসে তত পাটিগণিতের চর্চা বাড়ে। ভোটের সামান্য আগে এবং পরে চর্চা হয় স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে। মনোনয়ন জমা করা, ভোট গণনা ইত্যাদির সময় অনেকেই আবার ঘোর আধ্যাত্মিক হয়ে পড়েন। তখন নিমেষে চুলোয় যায় পাটিগণিত, পরিসংখ্যানবিদ্যা। আবার কখনও কখনও উল্টোটাও হয়। বিপদে পড়লে বিজ্ঞান না বোঝা, গণেশের মধ্যে প্রথম প্লাস্টিক সার্জারির রুট খুঁজে পাওয়া মানুষও বিজ্ঞানের পরিভাষা আউড়ে ফেলেন।

আমি যদিও কখনও গণেশের মধ্যে প্লাস্টিক সার্জারির আদি রূপ খুঁজে পাবার চেষ্টা করিনি, তবু আজ সকাল থেকেই মনটা বড়ো বিজ্ঞান বিজ্ঞান করছে। হাতের সামনে যেহেতু প্রাথমিক বিজ্ঞানের সহজপাঠ গোছের কোনো বই নেই তাই ইন্টারনেটই ভরসা। সেখানেই খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম প্যারাসাইট। সত্যি বলছি। সেই কবে বাধ্যতামূলকভাবে এসব পড়েছিলাম মনে নেই। তাই গত ক’দিন ধরেই একটু ধন্দে ছিলাম। বেমালুম ভুলে মেরে দেওয়া জিনিসপত্রে একটু ঝালাই দেওয়াটা দরকার বলে মনে হলো। বিশেষ করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রী যখন প্যারাসাইট শব্দটা নিয়ে টানাটানি করলেন তখন থেকেই মনে হচ্ছিল বিষয়টা নিয়ে একবার ঝালিয়ে নেওয়া দরকার।

প্যারাসাইট বা পরজীবী শব্দের উৎপত্তি নাকি গ্রিক দুটি শব্দ প্যারা এবং সিটাস থেকে। প্যারা শব্দের অর্থ কাছে এবং সিটাস-এর অর্থ পুষ্টি। ১৫৩৯ সালে নাকি প্রথম ইংরেজিতে এই শব্দ ব্যবহৃত হয়। সংজ্ঞাগতভাবে “যে প্রাণী অন্য প্রাণীর দেহে বসবাস করে এবং বসবাসকারী প্রাণীর দেহ থেকে খাদ্য বা পুষ্টি গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে তাঁকে পরজীবী বলা হয়”। যদিও বিজ্ঞান বলছে ‘একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন প্রাণীর মধ্যে কখনোই পরজীবীর সম্পর্ক স্থাপিত হয় না, এটি সবসময় দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ঘটে থাকে’। এর নাকি আবার অনেক ভাগ আছে। ঐচ্ছিক পরজীবী, ক্ষণ পরজীবী, আবশ্যিক পরজীবী প্রভৃতি। তবে পরজীবী নিয়ে বিজ্ঞানের সব সংজ্ঞাই যে ঠিক তা ভেবে নেবার কোনো কারণ নেই। বিজ্ঞানের নজর এড়ানো পরজীবীরা হয়তো এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হননি। সে বিজ্ঞান আবার অন্য বিজ্ঞান। করোনার লকডাউন সেই বিভ্রান্তি আরও প্রকট করেছে।

প্রচুর ছেঁদো কথা বলা হয়ে গেছে। এবার একটু কাজের কথায় আসি। যে কথাকে ঘিরে এতকিছু কচকচি তা বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত তিন কৃষি আইন, কৃষক আন্দোলন, সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাব রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান - ‘‘আমরা শ্রমজীবী শব্দটা শুনেছি। কিন্তু এখন একটা নতুন প্রবণতা এসেছে ‘আন্দোলনজীবী’। এই আন্দোলনজীবীদের থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হবে। এই আন্দোলনজীবীদের চিহ্নিত করতে হবে। কারণ এঁরাই দেশের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এই আন্দোলনজীবীরাই দেশের ‘পরজীবী’। এই ‘পরজীবী’দের তুলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে।’’ (আ.বা.প. ডিজিটাল, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)

আন্দোলনজীবী, পরজীবী হিসেবে যাদেরই চিহ্নিত করার চেষ্টা হোক না কেন, আসল গল্প সম্ভবত অন্য জায়গায়। সে কথা বলার জন্য বোধহয় - ওরা ভয় পেয়েছে, রবসন/জনতার কলচ্ছ্বাসে ভয় পেয়েছে/একতার তীব্রতায় ভয় পেয়েছে/হিম্মতের শক্তিকে ভয় পেয়েছে, রবসন/ওরা সংহারের মূর্তি দেখে ভয় পেয়েছে, রবসন - এটুকুই যথেষ্ট।

একই দিনের হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটালের প্রতিবেদন অনুসারে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন - “গত কয়েকদিন ধরে আমি দেখছি যে, দেশে একটি নতুন শ্রেণি সামনে এসেছে, আর সেটা হলো আন্দোলনজীবী। উকিলদের আন্দোলন হচ্ছে, সেখানে ওঁদের দেখা যাবে। পড়ুয়াদের আন্দোলন চলছে, সেখানেও নজরে আসবে। শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে, সেখানেও নজরে আসবে। কখনও পর্দার পিছনে, কখনও পর্দার সামনে। এদের পুরো একটা গোষ্ঠী আছে। এরা আন্দোলন ছাড়া বাঁচতে পারবে না। আর আন্দোলনের মাধ্যমে বেঁচে থাকার জন্য রাস্তা খুঁড়তে থাকেন।”

এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই যে, প্রধানমন্ত্রীই প্রথম সমালোচক, বিরোধী, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে ‘পরজীবী’ শব্দ ব্যবহার করলেন। গত ২৪ জুলাই, ২০১৯ দেশে ক্রমবর্ধমান গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের প্রায় ৪০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন। যার প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন - ‘‘এঁরাই সত্যিকারের দেশদ্রোহী। এঁরা তাঁবেদার, পরজীবী। এঁরাই দেশকে লুঠে খেয়েছেন।” (নিউজ ১৮ বাংলা ডিজিটাল, ২৪ জুলাই, ২০১৯)। একইভাবে ২০২০ সালের জানুয়ারি সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন - ‘‌‘বুদ্ধিজীবীরা পরজীবীদের মতো বেঁচে আছে। অন্যের ঘাড়ে বসে খাচ্ছে। তারা বলছে, কাগজ দেখাব না। কাগজ ছাড়া এয়ারপোর্টে ঢোকা যাবে? এরকম অনেক জায়গাতেই কাগজ দেখাতে হয়।‌ ননসেন্স কথা। এসব ডায়লগ মেরে কী হচ্ছে? এরা নেমকহারাম।” (আজকাল ডিজিটাল, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০) কাজেই প্রধানমন্ত্রী থেকে রাজ্য সভাপতি - বিজেপি’র ‘পরজীবী’ তত্ত্ব যে প্রধানমন্ত্রী নিছক মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন এমনটা নয়। বরং পুরোটাই সুকৌশলে তৈরি করা এক প্রচার কৌশল। যাকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্রে শান। আন্দোলন, বিরুদ্ধমতে ভয় পাওয়া এক রাজনৈতিক দলের ঢাল এখন ‘পরজীবী’। ‘রাম রাম’ উচ্চারণ করে নাকি ভূত তাড়ানো যায়। ‘পরজীবী’ ‘পরজীবী’ বলে আন্দোলন তাড়ানো যাবে কীনা জানিনা। তবে ফ্যাসিবাদ-ট্যাসিবাদ গোছের ভারি ভারি কথা এখানে টানা ঠিক নয়।

১১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার সকালে এই লেখা যখন লিখছি তখনও হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় দিল্লির বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত ৭৯ দিন ধরে বসে আছেন কৃষকরা। দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী ‘আন্দোলনজীবী’ ‘পরজীবী’রা। গত প্রায় আড়াই মাসে এঁদের যে একবারও ছুঁড়ে ফেলে দেবার চেষ্টা হয়নি এমনটা নয়। রাস্তায় পেরেক পুঁতে, ব্যারিকেড করে, লোহার তারের ফেন্সিং লাগিয়ে, রাস্তা কেটে, টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে, লাঠিচার্জ করে, লালকেল্লায় এক সন্দেহজনক হামলা করেও কৃষকদের আন্দোলন থেকে ওঠানো, হটানো যায়নি। উল্টে কৃষকরা জানিয়ে দিয়েছেন - আইন বাতিল না হলে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন না। শেষ দেখে ছাড়বেন। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া এক আন্দোলনকারীর মা জানিয়েছেন - ‘প্রয়োজনে নিজেদের দাবিতে আমরা মরতেও রাজি। কিন্তু আন্দোলন থেকে কিছুতেই সরে আসব না।’ গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিঙ্ঘু সীমান্তে আবার লঙ্গর চালু করতে পাঞ্জাব থেকে বহু মহিলা চাষি প্রতিবাদস্থলে এসে চাঁদা তুলতে শুরু করেছেন। ওইদিনই শতাধিক মহিলা জলন্ধর থেকে প্রতিবাদস্থলে হাজির হয়ে জানিয়েছেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আন্দোলনজীবী’ ভাষণ শোনার পর তাঁরা এই আন্দোলন বাঁচিয়ে রাখার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান। তাঁদের বক্তব্য অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার না করছেন, ততক্ষণ আমরা এখানে থাকতে চাই। আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই। এর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব জুড়ে চলছে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে একের পর এক মহাপঞ্চায়েত। যার প্রত্যেকটাতেই হাজারে হাজারে মানুষের উপস্থিতি এই আন্দোলনকে আরও শক্তি জোগাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন, হরিয়ানায় মনোহরলাল খাট্টারের প্রশাসন এই জনস্রোত আটকাতে ১৪৪ ধারা জারি করলেও তাতে তোয়াক্কা করছেন না সাধারণ মানুষ। গতকাল ১০ তারিখ উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরেও ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মানুষ জনসভায় যোগ দিয়েছেন। আজ পাঞ্জাবে মহাপঞ্চায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে।

একদিকে যখন দিল্লিতে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মরণপণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকরা, তখনই এই রাজ্যেও একের পর আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় সম কাজে সমবেতন, সর্বজনীন রেশনব্যবস্থাকে জোরদার করা, নারী নির্যাতন বন্ধ করা সহ একাধিক দাবিতে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সহ একাধিক মহিলা সংগঠনের ডাকে আইন অমান্যে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ আরও একবার শাসককে বেআব্রু করেছে। যে ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন - পরজীবী বলে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের অপমান করছেন আর এ রাজ্যে মহিলা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে। ধর্মীয় বিভাজনে রথযাত্রা করতে দেওয়া হচ্ছে আর ছাত্রযুবদের পদযাত্রা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা থেকে দিল্লি - আন্দোলন দমনে এখন লাঠি গ্যাস ব্যারিকেড ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সরকারই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর ফ্যাসিবাদী কায়দায় আক্রমণ চালাচ্ছে।

অন্যদিকে আজ ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখেই বাম ছাত্র যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। বেকারদের চাকরি সহ একাধিক দাবিতে আছড়ে পড়বে ছাত্র যুবদের নবান্নগামী মিছিল। যে মিছিল ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক তরফে একাধিক টালবাহানার অভিযোগ উঠেছে। যদিও অভিযানের দাবিতে অনড় ছাত্রযুবরা জানিয়ে দিয়েছেন অভিযান হবেই। যে প্রসঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন - মহিলাদের ওপর নৃশংসভাবে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার যদি ছাত্রযুবদের নবান্ন অভিযান আটকাতে পুলিশ লাঠি চালায় গোটা রাজ্যকে স্তব্ধ করে দেওয়া হবে।

এতক্ষণ তো আন্দোলনজীবীদের কথা বললাম। এবার না হয় বিজ্ঞানের সংজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়া পরজীবীদের কথা একটু বলা যাক। সম্প্রতি অক্সফ্যাম একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। দ্য ইনইক্যুয়ালিটি ভাইরাস শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে - ‘‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ বিস্ময়করভাবে ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।... বিশ্বের সবথেকে ধনী দশ ধনকুবের এই সময়ের মধ্যে তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫৪০ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে। এই একইসময়ের মধ্যে বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে কীভাবে মহামারীর কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়ে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে।... অনুমান করা হচ্ছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মোট মানুষের সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন থেকে ৫০০ মিলিয়ন পর্যন্ত বাড়তে পারে।’’ ‘‘মহামারী আমাদের কাছে এই সত্যটি উন্মোচিত করেছে যে, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ যারা প্রতিদিন ২ থেকে ১০ ডলারের মধ্যে নিজেদের জীবনযাপন করেন, তাঁরা আর্থিক দৈন্য থেকে মাত্র এক কদম দূরে ছিল। অপরদিকে বাণিজ্যিক ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিলিয়নেয়াররা এই সময় ব্যক্তিগত জেট কিনেছিলেন’’ উল্লেখ্য ভারতেও বিগত এক বছরে সম্পদ বাড়িয়ে নেওয়া মানুষের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। যদিও বিজ্ঞান নাকি বলে ‘একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন প্রাণীর মধ্যে কখনোই পরজীবীর সম্পর্ক স্থাপিত হয় না’। আমার বোঝার ভুল হতে পারে। কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সঙ্গে বোধের কেমন যেন একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ‘পরজীবী’ তাহলে কে? কারা?

প্রধানমন্ত্রীর ‘আন্দোলনজীবী’ ‘পরজীবী’ মন্তব্য প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্যও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক ট্যুইটে তিনি বলেছেন - ‘‘আন্দোলনের জন্যই স্বাধীন ভারতকে পেয়েছি আমরা। ‘‘জয় হিন্দ’’ ছিল এই আন্দোলনের স্লোগান। আধুনিক ভারত আন্দোলনের দান। নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে আন্দোলনের অপমান, ভারত কখনো মেনে নেবে না।’’ তিনি আরও বলেছেন - ‘‘আন্দোলনজীবী? জনগণ তাঁদের জীবন বাঁচাতে, নিরাপত্তার দাবিতে, আর একটু সুযোগ-সুবিধার জন্য, আর একটু ভালো জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করেন। প্রতিবাদকারীরা পরজীবী নয়, এঁরা দেশপ্রেমিক, প্রতিবাদের শক্তিতে যাঁরা ক্ষমতা দখল করেন।’’

আন্দোলনজীবী, পরজীবী হিসেবে যাদেরই চিহ্নিত করার চেষ্টা হোক না কেন, আসল গল্প সম্ভবত অন্য জায়গায়। সে কথা বলার জন্য বোধহয় - ওরা ভয় পেয়েছে, রবসন/জনতার কলচ্ছ্বাসে ভয় পেয়েছে/একতার তীব্রতায় ভয় পেয়েছে/হিম্মতের শক্তিকে ভয় পেয়েছে, রবসন/ওরা সংহারের মূর্তি দেখে ভয় পেয়েছে, রবসন - এটুকুই যথেষ্ট।