৫৮ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১২ মার্চ, ২০২১ / ২৭ ফাল্গুন, ১৪২৭
সংযুক্ত কিষান মোর্চার ১০০ দিন পূর্তি
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’কে ভোট না দিতে বলছেন কৃষক নেতৃত্ব
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন প্রত্যাহার সহ বিভিন্ন দাবিতে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলন পেরিয়ে গেল ১০০ দিনের সীমারেখা। এই অভূতপূর্ব কৃষক আন্দোলন যা ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর শুরু হয়েছিল, তা ১০০ দিন পূর্ণ করল ৬ মার্চ। সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম)-র আহ্বানে কৃষক আন্দোলনের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে ২ মার্চ এক সাধারণ সভায় দেশব্যাপী আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। আন্দোলনের মূল দাবিগুলির পাশাপাশি তাঁরা মূল্যবৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের মতো বিষয়গুলি সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য নিয়ে এবার পৌঁছে যাবেন বিভিন্ন রাজ্যে। নির্বাচন ঘোষিত হয়েছে এমন রাজ্যগুলিতে তাঁরা মানুষকে বলবেন বিজেপি-কে ভোট না দেবার কথা। পশ্চিমবঙ্গেও ১২ মার্চ থেকে সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্ব বলবেন এই প্রসঙ্গে।
সংযুক্ত কিষান মোর্চার এই সাধারণ সভায় সারা ভারত কৃষক সভার (এআইকেএস) পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা সহ কোষাধ্যক্ষ কৃষ্ণ প্রসাদ, সংগঠনের পাঞ্জাব রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক মেজর সিং পুনেওয়াল এবং হরিয়ানার রাজ্য সহ-সভাপতি ইন্দরজিৎ সিং যোগ দেন। আগামী দিনের কর্মসূচিসমূহ চূড়ান্ত করা হয়েছে এই সভায়।
১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে দেশজুড়ে, যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ৬ মার্চ ৫ ঘন্টা ব্যাপী রাস্তা রোকো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দিল্লির সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ কেএমপি এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করা হয় সকাল ১১ টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত। এই কর্মসূচির পাশাপাশি টোলপ্লাজাগুলিকেও খুলে দেওয়া হয়। দেশের অন্যান্য অংশে আন্দোলনের এই বিশেষ দিনটির প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানাতে বাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ এ দিন কালো ব্যান্ড পড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
৮ মার্চ সংযুক্ত কৃষক মোর্চা দিনটিকে মহিলা কিষান দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৃষক আন্দোলনের বিভিন্ন কেন্দ্র এবং প্রতিবাদস্থলগুলিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মহিলারা অংশগ্রহণ করেন। ধরনা মঞ্চগুলিতে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহিলারা এদিন বক্তব্য রাখেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভাগুলি থেকেও সংযুক্ত কৃষক মোর্চার আন্দোলনে কৃষানিদের গৌরবোজ্জল ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়।
আগামী ১৫ মার্চ দিনটিকে বেসরকারিকরণ বিরোধী দিবস হিসেবে দেশের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন সমূহ চিহ্নিত করেছে। বেসরকারিকরণ বিরোধী দিবস পালনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে সংহতি জ্ঞাপন করবে সংযুক্ত কৃষক মোর্চা। ট্রেড ইউনিয়নসমূহ এই দিনটিকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কর্পোরেটকরণ-বিরোধী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের শরিক হবার প্রশ্নে সহমত হয়েছেন কৃষক নেতৃত্ব। তারা ওই দিন সারা ভারত জুড়ে শ্রমিক নেতৃত্বের পাশে দাঁড়িয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
যে সমস্ত রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে কৃষক বিরোধী এবং খেটে খাওয়া গরিব মানুষের বিরোধী নীতি নিয়ে চলা বিজেপি’র বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ওই রাজ্যগুলিতে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল যাবে। তাঁরা মানুষকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে ভোট দেবার কথা বলবেন এবং অংশ নেবেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে।
এসকেএম’র পক্ষ থেকে ভারত ব্যাপী ‘এমএসপি দাও অভিযান’ নামের একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মোদী সরকার কীভাবে কৃষকদের ন্যায্যমূল্যের নামে প্রকৃত সহায়ক মূল্য থেকে বঞ্চিত করছে তা বিভিন্ন মান্ডি এবং সবজি বাজারের তথ্যসহ তুলে ধরা হবে দেশের মানুষের কাছে। এই এমএসপি সংক্রান্ত প্রচার কর্মসূচি শুরু হবে দেশের দক্ষিণ প্রান্তের রাজ্যগুলি অর্থাৎ কর্ণাটক অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা থেকে। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভুক্তভোগী কৃষকদের এই যৌথ প্রচার কর্মসূচিতে যোগ দেবার জন্য আহ্বান করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবে মহাপঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হচ্ছে হাজার হাজার কৃষকের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এই মহাপঞ্চায়েতগুলিতে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতৃত্ব উপস্থিত হয়ে বলছেন তাঁদের আন্দোলনের কথা। এআইকেএস নেতৃত্ব আমন্ত্রিত হচ্ছেন বক্তব্য রাখার জন্য এইসব মহা পঞ্চায়েতগুলিতে। মোদী এবং অমিত শাহের নেতৃত্বে চলা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলিতে প্রচার এই মুহূর্তে তুঙ্গে। কৃষি আইন সমূহের বিরোধিতা সহ স্বচ্ছ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন প্রণয়নের দাবি এই মহাপঞ্চায়েতগুলির অন্যতম ইস্যু হিসেবে উঠে আসছে।
এর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পেট্রোল ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া দাম বৃদ্ধি সহ বেসরকারিকরণ বিরোধিতা এবং দেশের সম্পদ এর কর্পোরেটকরণের মতো দেশের জ্বলন্ত ইস্যু সমূহ গুরুত্বসহকারে আলোচিত হচ্ছে আন্দোলন স্থলগুলিতে।
এই সময় আরও যে সমস্ত বিষয়গুলি উঠে আসছে, তার মধ্যে রয়েছে পরিবেশকর্মী দিশা রবির গ্রেফতারি এবং জামিন পাওয়ার ঘটনা এবং দলিত কর্মী তরুণ ২৪ বছর বয়সী নদীপ কৌরের অগণতান্ত্রিক গ্রেফতারি এবং কারাগারে তার ওপরে অমানুষিক অত্যাচার এর কথা। উঠে আসছে মজদুর অধিকার সংগঠনের আরেক ২৪ বছর বয়স্ক দলিত যুবক শিবকুমারের গ্রেফতারি এবং অযৌক্তিকভাবে প্রশাসনের তাকে আটক রাখার প্রসঙ্গ। তবে এই লড়াকু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত যুবক-যুবতীরা মুক্তি পাওয়া মাত্র ছুটে আসছেন এসকেএম-এর আন্দোলনস্থলে। সাথিদের বলছেন আটক থাকাকালীন তাদের ওপর অত্যাচারের কথা অভিজ্ঞতার কথা। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কৃষক আন্দোলনের কর্মীরা আরও দৃঢ় শপথবদ্ধ হচ্ছেন।