৫৮ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১২ মার্চ, ২০২১ / ২৭ ফাল্গুন, ১৪২৭
:: আসাম
সমবেতা যুযুৎসব
কমলেশ গুপ্ত
রঙিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী ডাঃ ভগবান দেব মিশ্রর সমর্থনে প্রচার।
অসমে নির্বাচনী রণশিঙা বেজেছে। ২৭ মার্চ, ২ এপ্রিল এবং ৬ এপ্রিল এই তিন পর্যায়ে ভোট গ্রহণ হবে। প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনের একমাসও বাকি নেই। কোমর বেঁধেছে মূলত তিনটি জোট - বিজেপি-অগপ মিত্রজোট, কংগ্রেস-এআইইউডিএফ-বামপন্থী মহাজোট এবং অসম জাতীয় পরিষদ ও রাইজর দলের জোট। নির্বাচনে ভোটের অঙ্ক এবং সমীকরণ থাকবেই। কিন্তু তার চাপে জনসাধারণের জীবন-জীবিকার ইস্যুগুলো প্রাধান্য পাবে তো? এ প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে উঠতে শুরু করেছে। অসমের আকাশ-বাতাস কাঁপানো সিএএ বিরোধী আন্দেোলন, অস্তিত্বের সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি প্রভৃতি এবারের নির্বাচনে প্রাধান্য পাবে তো? গণতান্ত্রিক শাসনে নির্বাচনই একমাত্র অধিকার এবং সুযোগ, যার মাধ্যমে জনসাধারণ তাদের মতামত প্রতিফলিত করতে পারে। কিন্তু এই অধিকার প্রয়োগের সময় যাতে মানুষ সুস্থিরভাবে চিন্তা করতে না পারে তার জন্য শাসক দল নানাভাবে কূটকৌশল রচনা করছে। এরা আদর্শগত, অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক বিষয়গুলোর পরিবর্তে ধনবল, প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইটি সেলের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কৌশল প্রয়োগ করছে। বেশ কিছু বছর ধরে নির্বাচন হয়ে উঠেছে ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণের নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগের আখড়া। বলতে গেলে এক বিরাট অংশের মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দিতে অভ্যস্ত করে তুলতে তারা সক্ষম হয়েছে। শিক্ষিত যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের সমস্যা, ঠিকা ভিত্তিক নিযুক্তি, শিক্ষার সর্বজনীনতা, উচ্চশিক্ষার ব্যয়বহুলতা, কাজের সময় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি, নিত্যব্যবহার্য খাদ্যসামগ্রীর অগ্নিমূল্য, পেট্রোল-ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, অসমের দীর্ঘ দিনের বন্যা এবং নদীভাঙনের সমস্যা, তৈলক্ষেত্রগুলো এবং সরকারি উদ্যোগে ব্যক্তিগতকরণ, বিদেশি অনুপ্রবেশের সমস্যার সাথে যুক্ত এনআরসি, নদীবাঁধ, সীমা সমস্যা প্রভৃতি অসংখ্য সমস্যা অসমের জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই সব কিছুকে আড়াল করতে নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করতে শুরু করেছে নির্বাচন ঘোষণার বহু আগে থেকেই। এর ফলেই মানুষ দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা ভুলে যায়। অর্থাৎ, পাঁচ বছরের মাথায় নির্বাচনের সময় যে সুযোগ আসে তার সদ্ব্যবহার করার কথা মনে রাখে না।
২০১৬ সালের অসম বিধানসভার নির্বাচন ছিল একটি কলঙ্কিত নির্বাচন। বদরুদ্দিন আজমলের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অবাস্তব ভীতি সৃষ্টি করে বিজেপি সেবার অসমে ক্ষমতা দখল করেছিল। অন্যদিকে বদরুদ্দিনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, ভোট বিভাজন করে বিজেপি-কে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেওয়ার। কেন্দ্র এবং রাজ্য দু’টোতেই বিজেপি দলের শাসন (ডবল ইঞ্জিন) সাধারণ মানুষের কাছে সুখকর হয়নি। ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’র জন্য অসম অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। পাঁচজন যুবকের মৃত্যু হয়েছিল পুলিশের গুলিতে। তাছাড়াও ছয় জনগোষ্ঠীর তফশিল ভুক্তির প্রতিশ্রুতি কার্যকর না করা, দু’টি কাগজ কলসহ বন্ধ কলকারখানা খোলা প্রভৃতি রাজ্যের বহু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পরবর্তী নির্বাচনে বিজেপি-কে উচিত শিক্ষা দেবার অপেক্ষায় ছিল সাধারণ মানুষ। মানুষের ক্ষোভের কারণ আঁচ করতে পেরে সংসদে আইন পাশ করতে পারলেও প্রয়োজনীয় উপবিধি প্রস্তুত করা থেকে কৌশলগতভাবে বিরত থেকেছে বিজেপি সরকার। যে কোনো প্রকারে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে যেতে পারলেই ‘নাগরিকত্ব সশোধনী আইন’ জনসাধারণ গ্রহণ করেছে এমন দাবি করার অপেক্ষায় আছে।
নির্বাচনে জেতার জন্য বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশল অবলম্বন করেছে। মেরুকরণ একপক্ষীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। বহু চেষ্টা করেও গত পাঁচ বছরে সংখ্যালঘুদের প্ররোচিত করতে শাসকদল ব্যর্থ হয়েছে। তাই নির্বাচনের অনেকদিন আগে থেকেই মেরুকরণের পরিকল্পনা করেছে। এবারের প্রচেষ্টায় আজমলভীতির সাথে যুক্ত হয়েছে ‘এক তৃতীয়াংশ বিশেষ জনগোষ্ঠী’, ‘মোঘলের আগ্রাসন’, ‘দুই সভ্যতার সঙ্ঘাত’ ইত্যাদি কথা উল্লেখ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ। কিন্তু বিপরীত পক্ষের মানুষ এই প্ররোচনা অবজ্ঞা করে যে সংযম দেখিয়েছে তার ফলে তালিটা ঠিকমতো বাজলো না। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ধুবড়ির গৌরীপুর বিধানসভা সমষ্টির কর্মীসভায় ভাষণ দিয়ে বদরুদ্দিন আজমল বলে বসলেন - বিজেপি ক্ষমতায় এলে ইসলাম ধর্মী মহিলারা বোরখা পড়তে পারবে না, মুসলমানদের দাড়ি-টুপি বাদ দিতে হবে, মসজিদে আজান দিতে পারবে না, আরও মসজিদ ভাঙবে ইত্যাদি। একইভাবে দেরগাঁওয়ে অগপ সভাপতি অতুল বড়া বলেছেন, কংগ্রেস-এইউডিএফ জোট অসমে আগুন জ্বালাতে চাইছে। এরা গীতা, কোরান সব পুড়িয়ে ফেলবে ইত্যাদি। মোট কথা এবারের নির্বাচনী সভাগুলোতে মন্দির-মসজিদ, গীতা-কোরান প্রভৃতি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই চাপের মুখে জনসাধারণ কতটা সমস্যা-সচেতন হয়ে ভোট দিতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
সাধারণ মানুষের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো ইতিমধ্যে বিরোধী মহাজোট প্রচারে তুলে ধরেছে। শাসক জোট উন্নয়নের কথা এবং নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি শোনাতে শুরু করেছে। মোদী-অমিত শাহ জুটি বারবার অসমে এসে শোনাতে শুরু করেছেন কতজন হিতাধিকারীকে নানা প্রকল্পের নামে কত টাকা হাতে গুঁজে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাঁধে ৭৯ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে সেই টাকা খোলামকুচির মতো করে ভোটে জেতার জন্য প্রকল্পের নামে বিলি করে বিপুল অংশের মানুষকে মোহগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। ভোট দাতাদের মনে এর কতটা প্রভাব পড়বে তা জানা যাবে ২মে ভোটের ফল ঘোষণার পর। কিন্তু কিছু কথা অনুমান করা যাচ্ছে, যেমন সিএএ প্রসঙ্গ মানুষ ভোলেনি, ভোলেনি বিচারের প্রহসন করে ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষকে বিদেশি সাজিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরে রাখার কথা, ছয় জনগোষ্ঠীকে তফশিলভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পালন না করার কথা।
সম্প্রতি সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অসমে নতুন কয়েকটি রাজনৈতিক দল গঠন হয়েছে। অসম জাতীয় পরিষদ, রাইজর দল, আঞ্চলিক গণমঞ্চ প্রভৃতি আছে। নতুন অথবা পুরনো প্রতিটি দলই সরকার গঠন অথবা সরকারের অংশীদার হওয়ার আশায় নির্বাচনী কসরত শুরু করেছে। বহু সুযোগ সন্ধানী নেতা-বিধায়ক দল বদল করে ক্ষমতার স্বাদ-আস্বাদনের আশায় অথবা নিজের আসন সুরক্ষিত করে রাখার জন্য সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সাথে সাথে বিজেপি, কংগ্রেস, অগপ-তে প্রায় বিদ্রোহের স্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্ত অসমের নতুন বা পুরনো, আঞ্চলিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের দাবিদার নয়। তাই সবদলই ভিন্নভিন্ন জোট গঠন করেছে। বিজেপি মিত্র জোট গঠন করেছে অগপ এবং বোড়োল্যান্ডের নতুন দল ইউপিপিএ-কে সাথে নিয়ে, কংগ্রেস দল মহাজোট গঠন করেছে এইউডিএফ, সিপিআই(এম), সিপিআই এবং সিপিআই(এমএল) প্রভৃতি বাম দল এবং আঞ্চলিক গণমঞ্চকে যুক্ত করে। তাৎপর্যপূর্ণ কথা হচ্ছে, এই মহাজোটে ইতিমধ্যে হাগ্রামা মহিলারির বিপিএফ দল যুক্ত হয়েছে। বিপিএফ আগে বিজেপি-র জোটে ছিল। বোড়োল্যান্ড স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের নির্বাচনে বিজেপি মিত্রতা ভঙ্গ করার পরও বিপিএফ এককভাবে লড়ে ১৭টি আসন পেয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হয়েছে। প্রাক্তন আসু এবং যুব ছাত্র পরিষদের নেতারা নতুন আঞ্চলিক দল গঠন করেছে ‘অসম জাতীয় পরিষদ’। এই দল অখিল গগৈ’র রাইজর দলের সাথে আসন সমঝোতা করে মিত্রতা স্থাপন এবং জোট গঠন করেছে। বিজেপি প্রথমে এককভাবেই শতাধিক আসনে জয়ী হয়ে পুনরায় রাজ্যে ক্ষমতা দখল করবে বলে সগৌরবে ঘোষণা করেছিল। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন আর সে কথা বলছে না। একথা ঠিক যে, রাজ্যের জনসাধারণের সিংহভাগ লোক কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নয়। সে যতই শক্তিশালী রাজনৈতিক দল অথবা নেতা হোন না কেন, শুধুমাত্র দলীয় নেতা কর্মীদের ভোটে কেউ নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না। জিততে হলে ওই সর্বসাধারণের সমর্থন লাগবেই। তাই নির্বাচন এলেই প্রতিশ্রুতির বান আসে। গত নির্বাচনেও তাই হয়েছিল। শাসকদলের সেই সব প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর হয়েছে এবার মানুষ বুঝে নিতে চাইছে। সমস্যার ভারে মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া মানুষ ভোট দেবার সময় মনে রাখবে শাসকদলের কাজ। জীবনের স্বপ্ন পূরণের পথ খুঁজে না পাওয়া শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী বিজেপি’র টোপে সব ভুলে যাবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। উন্নয়নের ঢাক, ৯৬লক্ষ হিতাধিকারীর ভরসা আর আজমল ইত্যাদি মুসলিম যুযু দেখিয়ে শাসকগোষ্ঠী তাদের বিফলতা ঢাকতে পারবে বলে মনে হয় না। অবশ্য তার অনেকটাই নির্ভর করবে বিরোধীরা কতটা সংগঠিতভাবে এই বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে পারবে তার ওপর।
সামান্য উন্নয়ন, বিপুল সংখ্যক হিতাধিকারী সৃষ্টি এবং সাংগঠনিক সবলতা বিজেপি’র ইতিবাচক দিক হলেও ২০১৬ সালে যে প্রত্যাশার উদ্গিরণ ঘটিয়ে তারা সরকারে এসেছিল, তার চার আনাও পূরণ হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী তরঙ্গ থাকছেই। ‘সিএএ’ বিজেপি’র ভোট কিছুটা কমাবে। ২০১৯ সালের পরিবেশ আজ আর নেই। তাতে আবার গতবারের নির্বাচনে পৃথক পৃথকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কংগ্রেস-এআইইউডিএফ, বামপন্থীরা একজোট হয়েছে। গতবার কংগ্রেস পেয়েছিল ২৬টা আসন, এবং এআইইউডিএফ পেয়েছিল ১৩টা আসন। কিন্তু অন্ততপক্ষে ১৫টি এমন আসন ছিল যেখানে এই দুই দলের ভোট যোগ করলে তা বিজেপি বা অগপ’র বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের চাইতে বেশি হয়। সেই সমষ্টিগুলি হচ্ছে - পাথারকান্দি, সোনাই, উদারবন্দ, কাটিগড়া, গোলকগঞ্জ, বিলাসীপাড়া (পূর্ব), গোসাইগাঁও, বড়পেটা, বরক্ষেত্রী, মঙ্গলদৈ, বরছলা, রহা বটদ্রবা, লামডিং প্রভৃতি। আবার বামপন্থীদের ভোট যোগ করলে আপার অসমের বেশ কয়েকটি সমষ্টিতে আগের বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের থেকে অনেকটাই বেশি হয়। চতিয়া, যাওরা, নাহরকটীয়া প্রভৃতি হচ্ছে তেমন ক’টি সমষ্টি। অর্থাৎ মহাজোট যে বিজেপি-অগপ জোটের যথেষ্ট ক্ষতি করবে তা নিশ্চিত। ভূতের ওপর দানোর মতো করে বিজেপি-র পূর্বের মিত্রদল বিপিএফ যুক্ত হয়েছে মহাজোটে। গতবারের বিধানসভায় তাদের আসন ছিল ১২টি। গতবারের তুলনায় তাদের শক্তি কিছুটা হ্রাস পেলেও বিটিএডি-র নির্বাচনে এবারো তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। বোড়োভূমিতে তারা এখনো যথেষ্ট শক্তিধর সে কথা প্রমাণিত হয়েছে। এদলের অন্তর্ভুক্তির ফলে মহাজোটের ম্যাজিক নাম্বার ৬৪ আসন ছোঁয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আপার অসমের নবগঠিত রাইজর দল এবং অসম জাতীয় পরিষদ মহাজোটে শামিল না থাকলেও বেশ কিছু কেন্দ্রে এমন প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে যাতে বিজেপি’র মিত্র জোটের যথেষ্ট ক্ষতি হবে। নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বাইরে থেকে সমর্থনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এতগুলো বাধা পেরিয়ে বিজেপি’র মিত্র জোটের সরকার গঠনের সম্ভাবনা অনেকটাই কম। আসলে অসমের ভোটার এবার অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি। এই নির্বাচন প্রমাণ করবে অসমের জনতা কতটা গণতন্ত্র সচেতন।
মহাজোটের অংশীদার সিপিআই(এম) লড়ছে দু’টি আসনে। সিপিআই এবং সিপিআই(এমএল) লড়ছে একটি করে আসনে। সাংগঠনিক স্থিতি তুলনায় শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তারা ভোট বিভাজন রুখতে এই কম সংখ্যক আসন মেনে নিয়েছে। সিপিআই(এম) সরভোগ এবং রঙিয়া আসন দু’টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং দু’টিতেই জয় নিশ্চিত করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। সরভোগের প্রার্থী সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর লড়াকু নেতা মনোরঞ্জন তালুকদার প্রার্থী হওয়াতে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস গতবারের জেতা আসন ছেড়ে অন্য আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রঙিয়া কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিআই(এম)’র ডাঃ ভগবান মিশ্র। বিজেপি’র নতুন মিত্রদল বোড়োল্যান্ডের ইউপিপিএল ক্ষুব্ধ হয়েছে আসনের ভাগ নিয়ে। বিভিন্ন স্থানে তারা বিজেপি মুর্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
বরাক উপত্যকায় আসন ভাগ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেও বিসংবাদ তীব্র হয়েছে। সুস্মিতা দেবের মতো প্রভাবশালী কংগ্রেস নেত্রী পদত্যাগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজয়ের পূর্ণ সম্ভাবনা থাকা আসন এআইইউডিএফ-কে ছেড়ে দিয়েছে। এধরনের বিসংবাদ বিজেপি-কে সাহায্য করবে সন্দেহ নেই। নব গঠিত ‘অসম জাতীয় পরিষদ’ এবং ‘রাইজর দল’র জোটও খুব একটা স্থিতিশীল অবস্থায় নেই। প্রথম দফার যে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে তাতে কম পক্ষে ছয়টি আসনে দু’দলই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ জোট মজবুত নয়। বিজেপি-অগপ জোটেও একই অবস্থা, কম করে পাঁচটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হচ্ছেই বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলে অসমের নির্বাচনের চালচিত্র স্পষ্ট হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। এই কুহেলিকা কাটিয়ে রাজ্যের মানুষ তাদের সুচিন্তিত মত এবং পথ বেছে নেবেন ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে তাতে সন্দেহ নেই।