৫৮ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১২ মার্চ, ২০২১ / ২৭ ফাল্গুন, ১৪২৭
:: ত্রিপুরার চিঠি
অস্থির প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এডিসি নির্বাচন
সুমন ত্রিপুরা
বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এডিসি নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছেন বিজন ধর।
৪ এপ্রিল ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি) নির্বাচন। নির্দিষ্ট সময়ে ভোট না করে বামফ্রন্ট পরিচালিত এডিসি প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হতেই সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে। হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছে। ৬ মার্চ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে সব আসনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে বামফ্রন্ট লড়বে। ২৮ আসনের মধ্যে ২৫টি আসনে সিপিআই(এম) এবং সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি একটি করে আসনে লড়বে। বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় ১৭জন এবারই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধর জানিয়েছেন নির্বাচনে প্রচারের মূল বিষয় হবে এডিসি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন। আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের কথাও উঠে আসবে বামফ্রন্টের প্রচারে।
এডিসি নির্বাচনকে সামনে রেখে অশান্তির বাতাবরণ জিইয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী স্লোগান তোলা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে মানুষের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তার দাবি উঠেছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বামফ্রন্টের জয় অপ্রতিরোধ্য। একথা জানে বিজেপি, আইপিএফটি সহ বামফ্রন্ট-বিরোধীরা। এমন একটা সময়ে নির্বাচন হচ্ছে যখন রাজ্যে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। প্রতিদিন মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। প্রতিদিন গণতন্ত্র ধর্ষিতা হচ্ছে। বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই বামফ্রন্টকে এগোতে হবে।
অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভোটদান পর্বের নিশ্চয়তা দিতে পারে। যাকে খুশি ভোট দেওয়া সাংবিধানিক অধিকার। সামনে এডিসি ভোট। পুরভোটও দোরগোড়ায়। এডিসি রাজ্যের জাতি-উপজাতি সহ অন্য অংশের জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ফসল। উপজাতি জনগণের জাতিসত্তা বিকাশের মূল লক্ষ্য সামনে রেখে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের সময় এডিসি’র যাত্রা শুরু হয়। বেশিরভাগ সময় বামফ্রন্ট পরিচালনা করেছে এডিসি প্রশাসন। মাঝে কংগ্রেস-যুব সমিতি জোট ছিল। আইপিএফটি একবার সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য নিয়ে এডিসি’র প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করেছিল। তখন থুমুলুঙ হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাসবাদীদের হেডকোয়ার্টার। এডিসি এলাকার জনগণের কতটা উন্নয়ন হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই বনাধিকার আইনে উপজাতিদের জমির স্বত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে গোটা দেশকে পথ দেখিয়েছিল ত্রিপুরা। ককবরক ভাষা পেয়েছিল সরকারি স্বীকৃতি। উপজাতিদের মধ্যে ১৯টি দফার ভাষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে নিরন্তর কাজ হয়েছে। জুমিয়া পরিবারদের নিয়ে গুচ্ছ গ্রাম গড়ে উঠেছিল। উন্নয়নের প্রভাবে অনেক জনপদের আগে ‘দুর্গম’ শব্দ মুছে যায়। হাতের নাগালে স্কুল, প্রায় সব জনপদে বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ সম্প্রসারণ কর্মসূচিতে মিলেছিল সাফল্য।
মসৃণ পথে এডিসি গঠিত হয়েছিল, ঘটনা কিন্তু তা নয়। কংগ্রেস ছেড়ে একটি অংশ ‘আমরা বাঙালি’ দল গঠন করে আওয়াজ তোলে ‘রক্ত দেব-জমি দেব না’। উপজাতি যুব সমিতির একটি অংশ ‘টিএনভি’ দল গড়ে ‘স্বাধীন ত্রিপুরা’র স্লোগান তোলে। ১৯৮০ সালে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় বহু মানুষের রক্ত ঝরেছে। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বহু সিপিআই(এম), জিএমপি কর্মী রক্তাক্ত হয়েছেন, খুন হয়েছেন। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ত্রিপুরায় বামপন্থীদের আত্মবলিদান গোটা দেশেই দৃষ্টান্ত।
এডিসি নির্বাচন সামনে রেখে ফের জাতি-উপজাতি ঐক্যে আঘাত হানার চেষ্টা হচ্ছে। ‘স্বাধীন ত্রিপুরা’, ‘তুইপ্রাল্যান্ড’, ‘গ্রেটার তুইপ্রাল্যাল্ড’ একই ষড়যন্ত্রের ভিন্ন স্লোগান। উদ্দেশ্য জাতি-উপজাতি জনগণের মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্য ভেঙে দেওয়া। পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত দুর্বল করে দেওয়া। বামফ্রন্ট-বিরোধী সমস্ত উপজাতিভিত্তিক দলকে এক করার চেষ্টা হচ্ছে। যেসব দলকে এক করার চেষ্টা হচ্ছে সেগুলি বামফ্রন্ট-বিরোধী। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে এক সময় কংগ্রেসের শিকারি মোরগের ভূমিকায় ছিল উপজাতি যুব সমিতি। সেই দল ভেঙে নানা নামে কয়েকটি দল হয়েছে। শুধুমাত্র ক্ষমতার ভাগ পেতেই এক একটা দল গড়ে উঠেছে। নীতির কোনো ফারাক নেই। ওরা চিরকাল বামফ্রন্ট সরকার ও বামফ্রন্ট পরিচালিত এডিসি প্রশাসনের উন্নয়ন কাজে বিরোধিতা করেছে। উপজাতি জনগণের সমস্যা সমাধানে ওদের কোনো কর্মসূচি নেই। ওদের পথ অতীতেও উপজাতি জনগণকে বিপদে ফেলেছে। বর্তমানেও একই ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীন ত্রিপুরার স্লোগানধারীরা উপজাতি জনগণের সবচেয়ে সর্বনাশ করেছে। ওরা উপজাতিদের মঙ্গল চাইলে কেন উন্নয়ন ও ঐক্যের সেনানী গান্ধী ত্রিপুরা, নিরাজয় ত্রিপুরা, সর্বজয় রিয়াংদের খুন করেছিল? সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে উপজাতি জনগণের। উপজাতি জনগণের জন্য নেওয়া পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করেছিল পৃথক রাজ্যের দাবিদাররা। বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের কাজে ক্ষুব্ধ জনগণের অসন্তোষ চাপা দিতে এবং দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই ‘গ্রেটার ত্রিপুরা’র স্লোগান সামনে আনা হয়েছে। উপজাতি হলেই উপজাতি জনগণের উন্নয়ন করবে, ঘটনা কিন্তু তা নয়। প্রশ্ন হলো দৃষ্টিভঙ্গির। বিজেপি’র শিকারি মোরগের ভূমিকায় যারা আজ কাজ করছে তারা উপজাতি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিচ্ছে। উপজাতি জনপদে কাজ, খাদ্যের সঙ্কট বাড়ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওপারের গভীর জঙ্গলে গন্ধকী সংগ্রহে ছুটছে উপজাতি নারী-পুরুষ। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে যেসব পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল সেগুলো অযত্নে অবহেলায় ধুঁকছে। রাবার চাষিরা রাবারের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জুমিয়ারা সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত। চাকরির সুযোগ বন্ধ। নতুন কোনো পরিকল্পনা নেই। এইরকম পরিস্থিতিতে আইপিএফটি নেতারা কেন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন? কোনোদিন ওরা উপজাতি জনগণের ককবরক ভাষা অষ্টম তপশিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি সমর্থন করেছেন? উপজাতি জনগণের স্বার্থ নয়, ক্ষমতাই আইপিএফটি’র মতো দলগুলোর একমাত্র লক্ষ্য।
ত্রিপুরায় গণআন্দোলনের ভিত শক্তিশালী হয়েছে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। গণআন্দোলনের মূল স্রোতধারা থেকে উপজাতি জনগণকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস নতুন নয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও ‘তুইপ্রাল্যান্ড’ স্লোগান তুলে একাংশ জনগণকে বিভ্রান্ত করে আইপিএফটি ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে। এই তিন বছর ‘তুইপ্রাল্যান্ডের’ দাবি নিয়ে ওরা সরব ছিল? এডিসি নির্বাচন সামনে রেখে বিভেদকামী স্লোগান তোলা হচ্ছে। এর পিছনে বদ উদ্দেশ্য পরিষ্কার। বিজেপি-আইপিএফটি শাসনে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরা হয়েছে। বিরোধী দলের বহু অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশের অনুমতি সবসময় মেলে না। মাঝপথে মিছিল আটকে দেবার ঘটনা বহুবার ঘটেছে। নারী নির্যাতন, খুন, আত্মহত্যা বাড়ছে। যান দুর্ঘটনা বাড়ছে। গ্রাম-পাহাড়-শহরের গরিব মানুষ গভীর সঙ্কটে। কর্মচারীরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। এরকম অবস্থায় মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখতে চায় সরকার। এক অস্থির, দমবন্ধকর প্রতিকূল পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজ্যে। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। এডিসি নির্বাচন সামনে। ষড়যন্ত্রের জাল বড়ো হবে। সব প্রকাশ্যে নাও আসতে পারে। কিন্তু একথা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট - ত্রিপুরা জাতি-উপজাতিসহ অন্য অংশের জনগণের সবার। কাউকে বাদ দিয়ে ত্রিপুরা নয়। ত্রিপুরাকে ভাগ করার প্রশ্নই ওঠে না এবং সম্ভব নয়। যারা পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছে তারাও এই সত্য জানে। তবুও ঘোলা জলে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা চলছে। দাবি উঠেছে এডিসি নির্বাচনে মানুষ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে তার গ্যারান্টি সৃষ্টি করতে হবে প্রশাসনকে। ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে পরিস্থিতির বদল ঘটাতে হবে। যে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তা অবশ্যই দূর করতে হবে। বিজেপি শাসনে গত তিন বছর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। অভিজ্ঞতার আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি প্রাসঙ্গিক।
প্রতিদিন অপরাধের ঘটনা ঘটলেও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয় অপরাধ কমেছে। মন্ত্রীরা রাজ্যে সুশাসনের পাঠ দেন মহাকরণে বসে। পূর্ণ রাজ্য দিবসের অনুষ্ঠানেও মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ছিল অপরাধ কমেছে। কিন্তু বাস্তবে কী হাল ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে গেছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকে বর্তমানে সাধারণ অপরাধ যেমন বেড়েছে তেমনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ের তুলনায় মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে বহু গুণ। ২০১৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময় ৯৭২টি মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল। সেটা ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ১০৭০টি। শুধু বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকে বেশিই শুধু না উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যের মধ্যে অপরাধে দ্বিতীয়। যেখানে সিকিমে ২০১৯ সালে ১২৫টি, অরুণাচল প্রদেশে ৩১৭টি, মণিপুরে ২৬৬টি, মেঘালয়ে ৫৫৮টি, মিজোরামে ১৭০টি, নাগাল্যান্ডে ৪৩টি মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, হীরার সরকারের সময় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭০টি ঘটনায়।
বিজেপি-আইপিএফটি জোটের সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কিডনি পাচারের গল্প প্রচার করেন এক প্রভাবশালী মন্ত্রী। তার উসকানিতে শুরু হয় গণপিটুনি। এতে সিমনা এলাকায় উত্তরপ্রদেশের এক ফেরিওয়ালা, সাব্রুমের কলাছড়ায় এক তবলা শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখে। এক সময়ে তিন মহিলাকে ছেলেধরা আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় বিশালগড়ের লক্ষ্মীবিল এবং ওএনজিসি সদর দপ্তরের কাছে। এছাড়া বিশালগড়, খোয়াই, আমতলি এবং নতুন নগর এলাকায় চার মহিলাকে খুঁটিতে বেঁধে প্রচণ্ড মারপিট করা হয়। চুল কেটে দেওয়া হয়। সিধাই এলাকায় এক যুবতী ও নতুন নগর এলাকায় এক বধূকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। কোনো বিচার হয়নি।
একইভাবে বেড়েছে খুন সন্ত্রাস রাহাজানির ঘটনাও। ২০১৭ সালে বিধানসভা ভোটের বছরও খুন- সন্ত্রাসের সংখ্যা ছিল ১৫৮৯টি। সেটাই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেবের সরকারের সময় ২০১৮ সালে ২৪৫৬টি এবং ২০১৯ সালে ২১৪৬টি ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রেও জনগণের অনুপাত ধরলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সবার সামনে ত্রিপুরা। এই অঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশে ৬৭৮টি, মণিপুরে ৬৭৩টি, মেঘালয়ে ৬৭৮টি, মিজোরামে ১৬৩টি, নাগাল্যান্ডে ১৮১টি, সিকিমে ১৮৮টি খুন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেও ত্রিপুরায় অপরাধ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১৯ সালে ২১৪৬টি। আসাম বাদে এই অঞ্চলের বাকি ৬ রাজ্যের মোট খুন সন্ত্রাসের সংখ্যার কাছাকাছি অপরাধ ঘটেছে বিপ্লব দেবের সরকারের সময়ে।
এটাও কেবল সাহস করে যারা থানায় মামলা করতে পেরেছেন সেই হিসাবে। বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের সময় অধিকাংশ ঘটনার মামলা নেওয়া হয় না। প্রতিদিনই মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে ঝুলন্ত মৃতদেহ। কিংবা রাস্তার পাশে বা বনে জঙ্গলে পড়ে থাকছে দেহ। পুলিশ আত্মহত্যা অথবা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৯ জন সিপিআই(এম) কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। প্রায় সবক্ষেত্রেই পুলিশ আত্মহত্যা অথবা পারিবারিক বিরোধ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। উপর থেকে পুলিশের উপর নাকি এমনই নির্দেশ। একইভাবে একদিনের জন্য বন্ধ নেই শিশু থেকে বৃদ্ধদের উপর নির্যাতন। সংবাদপত্র খুললেই যখন চরম আইন-শৃঙ্খলার অবনতির চেহারা প্রকাশ্যে চলে আসে তখন একা করিৎকর্মা শিক্ষামন্ত্রী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অপরাধের সংখ্যা আড়াল করার জন্য।
এখনও ২০২০ সালের অপরাধের ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। রাজ্যে আইনের শাসনের অস্তিত্ব নেই। বিরোধী দলনেতা থেকে শুরু করে বিরোধী দলের বিধায়করা পর্যন্ত এলাকায় যেতে পারেন না। কিন্তু কোনো পরোয়া নেই সরকারের। হেলদোল নেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখা মুখ্যমন্ত্রীর। বামফ্রন্ট সরকারের সময় তৈরি করা প্রকল্পগুলোতে নিজের নাম খোদাই করতে ব্যস্ত রয়েছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের প্রধান।