৫৮ বর্ষ ৩০ সংখ্যা / ১২ মার্চ, ২০২১ / ২৭ ফাল্গুন, ১৪২৭
:: কেরালা
বিকল্পের ভাষ্য নির্মাণে নজর কেড়েছে এলডিএফ
বিকাশ জাঠায় রাজ্যজুড়ে তারই সমর্থনের ইঙ্গিত
বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে মানুষের সামনে বিকল্প রূপায়ণ নিশ্চিত করে এগিয়ে চলেছে কেরালার বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকার। পরপর দু’টি ভয়াবহ বন্যা, ওখি সাইক্লোন, করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীর বাধা পেরিয়ে কেরালার সরকার পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কল্যাণ, তথ্য ও প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজ্যের রাষ্ট্রায়ত্তক্ষেত্রগুলির পুনরুজ্জীবন, গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ, বর্জ্য নিষ্কাশন, জলভাগের পুনরুজ্জীবন, সবক্ষেত্রেই সাফল্যের ছাপ রেখেছে এই সরকার। আগামী ৬ এপ্রিল কেরালায় বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সদ্য সমাপ্ত স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা, পৌরসভাগুলির নির্বাচনে কেরালার মানুষ এই সরকারের ওপর তাদের আস্থা ঘোষণা করেছেন জয়ী করে। এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা গোটা দেশজুড়ে অভিনন্দিত হয়েছে। এলডিএফ সরকারের এই অবস্থানের জেরে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ এবং কৃষকদের আস্থাশীল এবং আত্মবিশ্বাসী করেছে। এর আগে কেরালার বাম সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার চলেছে ঘৃণা উগড়ে দেওয়া প্রচার। আগামী বিধানসভা নির্বাচন এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হবে। মানুষকে সাথে নিয়ে সেই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী এলডিএফ। দু’টি জাঠাই শুরু হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এই সাফল্যের কথা এবং উন্নয়নের বার্তা সব অংশের মানুষকে পৌঁছে দিতে এবং রাজ্যের মানুষকে উন্নয়নের শরিক করতে এলডিএফ’র পক্ষ থেকে রাজ্যজুড়ে উত্তর এবং দক্ষিণ থেকে দু’টি বিকাশ জাঠার আয়োজন করা হয়। এই জাঠা দু’টিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সব অংশের ভোটাররা দারুণভাবে সমর্থন করেছেন এই দু’টি জাঠাকে। রাজ্যের এলডিএফ সরকারের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করার পাশাপাশি সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সি যেভাবে ভিত্তিহীন কেস ও মামলার মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তিকে মলিন করার চেষ্টার তীব্র নিন্দা এবং উপহাস করছেন তা স্পষ্ট হয়েছে মানুষের সোচ্চার সমালোচনায়।
এই দু’টি জাঠা ১৪০টি বিধানসভা ক্ষেত্রকে ছুঁয়ে রাজ্যের এলডিএফ কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে উদ্দীপনা সঞ্চারিত করে। উত্তর এবং দক্ষিণমুখী দু’টি জাঠাই সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি সুবিশাল দু’টি মিছিল রাজ্যের দুই প্রান্ত থেকে এসে তিরুবনন্তপুরম এবং ত্রিচুরে সমাপ্ত হয়। এই সমাপ্তি অনুষ্ঠান ঘিরে দু’টি জনসভা অনুষ্ঠিত হয় ওই দুই শহরে। রাজ্যের মানুষের আস্থা যে সিপিআই(এম) পরিচালিত বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’র ওপর অটুট, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো এই পদযাত্রা দু’টির সাফল্যের মাধ্যমে।
হাজার হাজার মানুষ রাজ্যের ১৪০ টি কেন্দ্রে বিকাশ জাঠাকে অভিনন্দিত করার জন্য এবং নেতৃত্বের বক্তব্য শোনার জন্য রাস্তার ধারে এবং জনসভাগুলিতে জড়ো হয়েছিলেন। জাঠার সঙ্গে আগত নেতৃবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে এলডিএফ সরকারের বিগত ৫ বছরের বিভিন্ন কাজ এবং গত পাঁচ বছরে রাজ্যে বন্যা সাইক্লোন এবং মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। উত্তরমুখী ‘বিকাশোনা মুনেত্তা’ জাঠার নেতৃত্ব দেন সিপিআই নেতা বিনয় বিশ্বম এবং দক্ষিণমুখী জাঠার নেতৃত্ব দেন এলডিএফ আহ্বায়ক এবং সিপিআই(এম)-র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এ বিজয়রাঘবন। এলডিএফ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং কল্যাণমূলক স্কিমের উপকৃত মানুষদের ঢল নামে জনসভাগুলিতে। জাঠা নেতৃত্ব জনসভায় আসা মানুষদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান তাঁদের সমর্থন করার জন্য।
তিরুবনন্তপুরমের নয়নার পার্কে দক্ষিণমুখী জাঠার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, এলডিএফ সবসময় রাজ্যের মানুষের পাশে রয়েছে এবং মানুষও সবসময় এলডিএফ’র পাশে রয়েছেন। আমাদের সরকার যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে এবং আগামী দিনেও যে প্রতিশ্রুতি দেবে তা পূরণ করবে। এই রাজ্য এমন কোনো সরকার চায় না যারা জনগণ যখন সমস্যায় রয়েছে তখন অসংবেদনশীল মনোভাব দেখাবে। এখন কেরালার জনগণের কাছে সুযোগ এসেছে সঙ্কটের সময় কাজের ভিত্তিতে এলডিএফ সরকারের মূল্যায়ন করতে পারবেন। রাজ্যের মানুষ এই মূল্যায়ন একাধিকবার করেছেন। আমরা আশা করি তাদের দিক থেকে যে ইতিবাচক সাড়া আমরা পাচ্ছি তা ভবিষ্যতেও পাব। আমাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের ঘৃণ্য এবং ভিত্তিহীন প্রচার ইউডিএফ এবং বিজেপি করছে তা নিয়ে আমরা একটুও চিন্তিত নই এবং আমরা নিশ্চিত রাজ্যের মানুষও সেই ফাঁদে পা দেবেন না।
তিনি বলেন, সরকার মানুষের কাছে তার প্রতিশ্রুতি পূরণের দুর্দান্ত রেকর্ড নিয়ে আবেদন করতে যাচ্ছে। যে ৬০০টি প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইশ্তিহারে এলডিএফ’র পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল তার ৫৭০টি এই সরকার পূরণ করেছে। আমরা এই অপূরণীয় লক্ষ্যকে ছুঁতে পেরেছি রাজ্যের মানুষের উল্লেখযোগ্য সমর্থনের ভিত্তিতে। এমনকি প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিনগুলিতেও কেরালার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পাশে থেকেছেন। বিভিন্ন বৃহৎ বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প যা আপাতভাবে সম্পূর্ণ করা অসম্ভব স্বপ্ন বলে মনে করা হয়েছিল তার প্রত্যেকটিকে বাস্তবায়িত করা গেছে এলডিএফ শাসনে, যার প্রকৃত উত্তরাধিকারী হলেন এই রাজ্যের জনগণ।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এস রামচন্দ্রন পিল্লাই ত্রিচুরের থেককিনকাদ ময়দানে উত্তর প্রান্তিক জাঠার সমাপ্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পিল্লাই বলেন, কেরালার জনগণ রাজ্যে এক নতুন রেকর্ড স্থাপন করবেন সেখানে এলডিএফ সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করে, যেখানে দশকের পর দশক ধরে বিধানসভা নির্বাচনে অন্য দলের সরকারকে নির্বাচিত করা হয়।