E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১২ মে, ২০২৩ / ২৮ বৈশাখ, ১৪৩০

যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে কুস্তিগীরদের বিক্ষোভ আন্দোলন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগে দিল্লিতে মহিলা কুস্তিগীরদের অবস্থান বিক্ষোভ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। দেশের প্রথম সারির কুস্তিগীরদের এই প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রাজনীতি, ক্রীড়া, চলচ্চিত্র জগৎ সহ সারা দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।

এদিকে গত ৭ মে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে হাজার হাজার কৃষক যন্তর মন্তরে হাজির হয়ে কুস্তিগীরদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছেন। সেখানে আয়োজিত ‘মহাপঞ্চায়েত’ থেকে আগামী ১১ থেকে ১৮ মে সারা দেশে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের কুশপুতুল পোড়ানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সংযুক্ত মোর্চা ঘোষণা করেছে,অভিযুক্তকে যথাযথ শাস্তি দিয়ে ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলনের পাশে তারা থাকবে।

গত ৯ মে ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর-এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন দিল্লির অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। এদিন এই মর্মে একটি নোটিশও পাঠানো হয়েছে পুলিশকে।

গত ২৩ এপ্রিল থেকে দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পদকপ্রাপ্ত মহিলা কুস্তিগীররা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপের দাবিতে ধরনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি তাঁদের দ্বিতীয় বারের বিক্ষোভ অবস্থান। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মহিলা কুস্তিগীর সহ বহু ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ অংশ নিয়েছেন। এই বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন রিও অলিম্পিকে পদক প্রাপ্ত মহিলা কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক, টোকিও অলিম্পিকে পদক প্রাপ্ত বজরং পুনিয়া,দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বীনেশ ফোগট সহ দেশের প্রথম সারির কুস্তিগীররা। তাঁরা ক্ষোভের সঙ্গেই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত আমাদের মন কি বাত শোনা। দেশের অগণিত মানুষ আমাদের সমর্থনে পথে নেমেছেন। এটাই আমাদের শক্তি। তাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছেন, সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।

দিল্লির কনট প্লেস থানায় একজন নাবালিকা সহ সাতজন মহিলা কুস্তিগীর ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ জানান। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা দিল্লি মহিলা কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ আসলে শাসক সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে চাপা দিতে চাইছে।

অনেক টালবাহানার পর কুস্তিগীরদের অবস্থান বিক্ষোভের ৫ দিন পর সুপ্রিম কোর্টের চাপে যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দায়ের করতে বাধ্য হয়। কিন্তু অভিযুক্ত এখনো জেলের বাইরে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উলটে অমিত শাহের পুলিশ আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের চূড়ান্ত হেনস্তা করে চলেছে। অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে একটি পকসোর অধীনে। অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ প্রথম থেকেই কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ করে যাচ্ছেন।

যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে দেশের পদকজয়ী কুস্তিগীরদের প্রতিবাদ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটি। অবিলম্বে ব্রিজভূষণকে ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকে অপসারণ এবং এফআইআর’র ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ২৯ এপ্রিল সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, কুস্তিগীরদের লড়াইয়ের পাশে আমরা সর্বতোভাবে রয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করে তাঁরা অতীতে দেশের জন্য যেমন পদক জয় করেছেন, ভবিষ্যতেও তেমনই করবেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে এখন যে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায়না। এরা প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতনামা অ্যাথলিট।

প্রসঙ্গত, বিজেপি সাংসদ ও কুস্তি ফেডারেশনের কর্তা এই ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে গত জানুয়ারি মাসেই ভারতীয় কুস্তিগীররা যৌন হেনস্তার অভিযোগে সরব হয়েছিলেন। তখনও তাঁরা এই যন্তর মন্তরেই ধরনায় বসেছিলেন। ব্রিজভূষণ বিজেপি সাংসদ হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই কেন্দ্রীয় সরকার প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে ধীরে চলার নীতি নেয়। সংবাদ মাধ্যম বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতেই কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং একটি তদন্ত কমিটি গড়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। প্রখ্যাত বক্সার মেরি কমের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ইতিমধ্যে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করলেও ক্রীড়া মন্ত্রকের দিক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। আন্দোলনরত কুস্তিগীররা অবিলম্বে সেই রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

জানুয়ারির ধরনা আন্দোলনের সময়ে তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইলেও এবারে তাঁরা সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁদের প্রতিবাদে শামিল হবার জন্য। এবারের ধরনায় বিভিন্ন দিনে আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানাতে গিয়েছিলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত, সুভাষিণী আলি, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা মরিয়ম ধাওয়ালে, জগমতি সাঙ্গোয়ান, কৃষক সভার সর্বভারতীয় নেতা হান্নান মোল্লা, পি. কৃষ্ণপ্রসাদ, সিআইটিইউ নেত্রী এ. আর. সিন্ধু, খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা বিক্রম সিং, ডিওয়াইএফআই নেতা এ. এ. রহিম, হিমগ্নরাজ ভট্টাচার্য, এসএফআই নেতা ময়ূখ বিশ্বাস, সংযুক্ত কিষান মোর্চা নেতা রাকেশ টিকায়েত, সিপিআই-এমএল(লিবারেশন) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং গণ সংগঠনের নেতা ও কর্মীরা।

ইতিমধ্যে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক প্রমুখ।

কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কপিল দেব, বীরেন্দ্র সেওয়াগ, হরভজন সিং, ইরফান পাঠানের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং স্বরা ভাস্কর, পূজা ভাট প্রমুখ চলচ্চিত্র শিল্পীরা।

এদিকে গত ২৭ এপ্রিল কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান, বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের গ্রেপ্তারির দাবিতে ছাত্র, যুব, মহিলা, কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুররা দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করেন। বিভিন্ন জায়গায় ব্রিজভূষণ সহ মোদি-অমিত শাহের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে স্থানীয় প্রশাসন মারফত স্মারকলিপিও পাঠানো হয়।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও এসএফআই সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ডাকে কুস্তিগীরদের আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। সেখানেও পুলিশ বিনা প্ররোচনায় নৃশংস হামলা চালায়। মহিলা কুস্তিগীরদের প্রতি অন্যায় আচরণ সম্পর্কে সরকার নিশ্চুপ থাকলেও কুস্তিগীরদের আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।