E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১২ মে, ২০২৩ / ২৮ বৈশাখ, ১৪৩০

মতাদর্শের চর্চা

ভারতীয় দর্শন প্রসঙ্গে (দশ)

শ্রীদীপ ভট্টাচার্য


বৈশেষিক দর্শন

সংস্কৃত শব্দের অর্থ ‘বিশেষ’ বা ‘নির্দিষ্ট’। এই দর্শনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর মধ্যে নিহিত ‘প্রকৃতিবাদ’ (Naturalism)। বৈশেষিক দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠা হিসাবে কণাদকে অভিহিত করা হয়। বৈশেষিক দর্শন পরমাণু (Atom) তত্ত্বের আদি ভিত্তি। কণাদ এর প্রবক্তা ছিলেন। কণার অর্থ হলো ক্ষুদ্র। কণাদের বক্তব্য ছিল - এই বিশ্ব চারটি মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়েছে। চারটি মৌলিক পদার্থ হলো যথাক্রমে - মাটি, জল, বায়ু এবং আগুন। এই চারটি পদার্থের পরমাণুর বিশেষ সংমিশ্রণে বিভিন্ন ধরনের ও রূপের নানা উপাদান তৈরি হয়। পরমাণু চিরন্তন। একে ভাঙা যায় না।

● বৈশেষিক দর্শনের পরবর্তীকালে সুবিখ্যাত প্রবক্তারা হলেন প্রশস্তপদ, উদয়নাচার্য, শ্রীধর প্রমুখ। স্বাধীনভাবে বৈশেষিক দর্শনের বিকাশ ঘটেছিল। পরবর্তী সময়ে বৈশেষিক দর্শন ন্যায় দর্শনের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায়। একাদশ শতাব্দীতে এই মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়।

● বৈশেষিক দর্শন বিভিন্ন সত্তাকে যথাক্রমে - চিহ্নিত করে, বর্ণনামূলক তালিকা প্রস্তুত করে ও শ্রেণিবদ্ধ করে। মানুষের উপলব্ধির মধ্যে তাদের সম্পর্ক যেভাবে উপস্থিত হয়, তাকেও সূত্রবদ্ধ করে। বৈশেষিক দর্শনে পদার্থের অর্থাৎ বস্তুর ছয় বিভাগের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে আরও একটি বিভাগ যুক্ত হয়েছে। বিভাগগুলি হলো যথাক্রমে -

(১) দ্রব্য বা পদার্থ, যে নিম্নস্তর বিভাগ (Category) নিরপেক্ষভাবে স্বাধীনভাবে বিরাজ করে। একে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সমস্ত যৌগিক পদার্থের এটা বাস্তবিক কারণ (Material cause) হিসাবে ভূমিকা পালন করে। নয় ধরনের দ্রব্য যথাক্রমে মাটি, জল, অগ্নি, বায়ু, ইথার, সময়, স্থান (Space), আত্মা এবং মন (Mind)।
(২) গুণ (quality) এটাকে আবার ২৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
(৩) কর্ম (Action)। গুণ এবং কর্ম বস্তুর মধ্যেই অবস্থান করে। দ্রব্য নিরপেক্ষভাবে এর অস্তিত্ব নেই।
(৪) বংশ বা বংশ পরিচয় (Genus) যাকে ‘সামান্য’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। দুটি বা বেশি বস্তু যেগুলিকে একসাথে শ্রেণিবদ্ধ করা সম্ভব, তাদের মধ্যেকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মিলগুলিকে তুলে ধরে।
(৫) ‘বিশেষ’ অথবা নির্দিষ্ট পার্থক্য, যা সেই শ্রেণির সমস্ত স্বাতন্ত্র্যকে এককভাবে চিহ্নিত করে।
(৬) অন্তর্নিহিত যাকে ‘সমবায়’ বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে সমস্ত বিষয় যা অবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীকালে যে বিভাগ (Category) যুক্ত হয়েছে, তা হলো -
(৭) অভাব - অনস্তিত্ব বা অনুপস্থিতিকে বোঝায়। কারোর কাছে কোনো কিছুর অনুপস্থিতি যেটা তার অনুভূতির মধ্যে রয়েছে, সেটাকে উল্লেখ করা হয়েছে।

জগতে এমন কিছু নেই যা এই সাতটি পদার্থের কোনো না কোনোটির অন্তর্গত নয়। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের মতে বৈশেষিক সম্প্রদায়ের প্রাচীন পর্যায়ে স্বতন্ত্র পদার্থ হিসাবে ‘অভাব’-এর কথা স্বীকৃত হয়নি।

● বৈশেষিক দর্শনে পরমাণু সম্পর্কে বলা হয়েছে - একে ভাঙা যায় না। পরমাণু হলো বিশ্বের ক্ষুদ্রতম, অবিভাজ্য, ধ্বংস করা যায় না, এমন অংশ। তবে বৈশেষিক দর্শনে এটাও বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় পরমাণুর গতি সঞ্চারিত হয়েছে।

● বৈশেষিক দর্শন মূলত বস্তুবাদী দর্শন। ওই সময়কালের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অভাবের কথা আমাদের বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অভাবে বৈশেষিক দর্শন গুরুতর সীমাবদ্ধতার শিকার হয়েছিল। বস্তুকে অনন্তকাল ধরে স্বাভাবিক বিকাশের ধারায় (গতির মধ্যেও) দেখা বৈশেষিক দর্শনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিকাশের ধারায় নিম্নস্তর থেকে উচ্চতর স্তর - এভাবে দেখা বৈশেষিক দর্শনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিকাশের দিকনির্দেশকে পরস্পরের বিরোধিতা বলে মনে করা হয়েছে। বস্তুর বিকাশের ধারায় নিম্নস্তর থেকে উচ্চতর স্তর, অজৈব থেকে জৈব, এককোষী জীব থেকে বহুকোষী জীবে উত্তরণ - এভাবে উপলব্ধি করা বৈশেষিক দর্শনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বস্তুর গড়ে ওঠার ভিত্তি হলো পরমাণুর সংযোগ - এটা বৈশেষিক দর্শনের পক্ষে দেখানো সম্ভব হয়নি। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, বৈশেষিক দর্শন ভাববাদী দর্শনের কাছে আত্মসমর্পণ করে সমস্ত কিছুকে ঈশ্বরের সৃষ্টি ব্রহ্মই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করা হয়েছে। বৈশেষিক দর্শন আত্মার অস্তিত্ব ও পুনর্জন্মবাদকে গ্রহণ করে।

● বৈশেষিক দর্শনের ‘পদার্থতত্ত্ব’ বা ‘বিশ্বতত্ত্বে’র জ্ঞান প্রাচীনকালে যে কোনো ছাত্রের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হতো। বিশ্বতত্ত্বের আলোচনাই বৈশেষিক দর্শনের প্রধান আলোচনা। ন্যায়-সম্প্রদায়ের মতো বৈশেষিক সম্প্রদায়ও মোক্ষকেই পরমপুরুষার্থ বলে মনে করে।

● ভারতীয় দর্শন সাহিত্যে প্রাচীনতম সূত্রের অন্যতম হিসাবে মহর্ষি কণাদের ‘বৈশেষিক সূত্র’কে স্বীকার করা হয়। আচার্য প্রশস্তবাদের ‘পদার্থ ধর্মসংগ্রহ’ (২০০ খ্রিস্টাব্দ) বৈশেষিক দর্শনের সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম গ্রন্থ।

● ‘ন্যায়শাস্ত্র’ প্রধানত প্রমাণশাস্ত্র। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ - এই চারটি প্রমাণ ন্যায় দর্শনের মুখ্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু বৈশেষিক দর্শনের মুখ্য আলোচ্য বিষয় প্রমেয় বা পদার্থ। বৈশেষিক দর্শন মুখ্যত প্রমেয় শাস্ত্র বা প্রমাণশাস্ত্র। নৈয়ায়িকদের স্বীকৃত চারটি প্রমাণের মধ্যে বৈশেষিকরা প্রত্যক্ষ ও অনুমান এই দুটি প্রমাণ স্বীকার করেছেন। ন্যায় দর্শনের যেমন প্রমাণের আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে, বৈশেষিক দর্শনে তেমনই ভৌততত্ত্ব বা বিশ্বতত্ত্বের আলোচনাই গুরুত্ব পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ন্যায় বৈশেষিকা একটি বহুত্ববাদী ব্যবস্থা। মূল দর্শন দুটির অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্যের সম্ভারকে খারিজ করে একটি সার্বজনীন নীতিতে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করে না। এই দর্শনে অভিজ্ঞতার উপলব্ধি ও ধারণাগুলিকে নানা ধরনের পদার্থ হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে।

ন্যায় বৈষেশিকার পদার্থবিদ্যা - চার ধরনের পরমাণু, যথাক্রমে মাটি, জল, আগুন এবং বায়ু। এদের ভর রয়েছে। সংখ্যা ও ওজনও রয়েছে। রয়েছে তরলতা (fluidity) অথবা কাঠিন্য (hardness)। সান্দ্রতা (viscosity) অথবা তার বিপরীত, গতি, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সম্ভাব্য রং, স্বাদ, গন্ধ অথবা স্পর্শ যা তাপের রাসায়নিক কার্যধারায় প্রস্তুত নয়। আকাশ বা মহাশূন্য চরম জড় পদার্থ এবং কাঠামোহীন সত্তা যা শব্দের অধঃস্তন, যা বায়ুমাধ্যমের মধ্যে তরঙ্গের ন্যায় ভ্রমণ করে (travel)। চার‍‌টি মৌল পদার্থের মধ্যে পারমাণবিক সংমিশ্রণ সম্ভব। সৃষ্টির স্তরে পরমাণু অসংমিশ্রণ (uncombined) অবস্থায় থাকতে পারে না। বায়ুমণ্ডলীয় (atmospheric) বায়ু অসংমিশ্রণ অবস্থার পরমাণুতে পরিপূর্ণ।

● পরমাণুর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সহজাত প্রবণতা রয়েছে। দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে দুই ভাগ বিশিষ্ট (binary) অণু তৈরি করে (দ্বি-অণুক) দুই, তিন, চার, পাঁচ, দ্বি-অণুক মিলে স্থূল পরমাণু যাদের এরনুকা, চতুর্নুকা প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়। তবে ন্যায় বৈ‍ষেশিকা দর্শনের পরমাণুর মিলন সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় অদৃষ্ট-র কথা বলা হয়েছে। অদৃষ্ট হলো ঈশ্বরের ইচ্ছা। এই অদৃষ্ট বা ঈশ্বরের ইচ্ছাই এই ধরনের সমস্ত মিলন (union)-কে এমন দিশা দেয় যা মহাবিশ্বের নৈতিক পরিচালকের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

● বৈশেষিকা দর্শনে বলা হয়েছে প্রথমে সরল পরমাণুতে বিচ্ছিন্ন হয়। পারমাণবিক গুণাবলির পরিবর্তন হয়, তারপর চূড়ান্ত পুনরায় সংমিশ্রণ ঘটে। তবে এটা তাপের প্রভাবে ঘটে। একে পরমাণুকে উত্তপ্ত করার মতবাদ (পিলুপুজা) বলা হয়। ন্যায় দর্শন পরমাণুর বিচ্ছিন্ন হওয়াকে স্বীকৃতি দেয় না। তবে তাপের প্রভাবে পরমাণুর নতুন গুণ অর্জনকে স্বীকৃতি দেয়।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় -

● বেদান্ত দর্শন সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। দর্শনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধারা যা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে, তার ফলে দর্শনের ক্ষেত্রে সেই সময়কালে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল তা আমাদের উপলব্ধিতে থাকা প্রয়োজন। ‘সৌত্রান্দ্রিক’ ভাববাদী বৌদ্ধ মতবাদের বক্তব্য হলো, নিজেদের সমস্ত কার্যধারায় মানুষ তার লক্ষ্য ও চাহিদা (Desires) মেটানো সম্পর্কে উদ্বিগ্ন থাকে। সঠিক জ্ঞান ছাড়া এটা সম্ভব নয়, যে সঠিক জ্ঞানই সমস্ত বিষয়কে সঠিকভাবে মানুষের কাছে উপস্থিত করে। যেভাবে কোনো কিছুকে উপলব্ধি করা হয়েছিল সেভাবে সেটা পেলে জ্ঞানকে সঠিক বলা হয়। যে কোনো বস্তু সম্পর্ক জ্ঞান অর্জন করার অর্থ হলো, জ্ঞানের মাধ্যমে তাকে প্রতিফলিত করা। জ্ঞান কখনো সমালোচনার বিষয়বস্তু নয়। আমাদের কার্যধারার পূর্বে আমাদের বস্তু সম্পর্কে উপলব্ধি কতখানি সঠিক তা আমাদের জ্ঞান সম্পর্কে অনুসন্ধানের বিষয়। বহির্জগতের বাস্তবতাই উপলব্ধির যথার্থতা প্রমাণের জায়গা। বস্তুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা উপলব্ধি, (কল্পনার ভিত্তিতে নয়) যথার্থ প্রমাণিত হতে পারে। উপলব্ধির অভিজ্ঞতা যদি বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত না হয় তাহলে সেই উপলব্ধিকে বস্তুর সাথে জোর করে মেলাতে গেলে ভ্রান্তি ঘটবে। যা প্রত্যক্ষ করা যায় তার ফল হিসাবে চেতনা এবং সুখ ও ব্যথার সম্পর্কে মানসিক উপলব্ধি স্থিরিকৃত হয়। একটি সময়ে, উপলব্ধির মধ্য দিয়ে বস্তুর স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয় জ্ঞানের বিষয় হিসাবে, আর এক সময়ে এটাও প্রতিভাত হয় যে, বহির্জগতে এটি একটি উপলব্ধিযোগ্য বস্তু। অনির্ধারিত বস্তুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের সম্পর্কে যা প্রকৃতপক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব হয়েছে সেটাই তারা প্রকৃতপক্ষে যা তাই (স্বলোকমনা)। একমাত্র নতুন অর্জিত জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রমাণের প্রশ্ন প্রযোজ্য। এই ধরনের উপলব্ধি প্রকৃত জ্ঞানতত্ত্বর প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ বহির্জগৎ কীভাবে জ্ঞানার্জনে ভূমিকা পালন করে সেই প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছে। উপলব্ধির ক্ষেত্রে তা বস্তুর প্রতি কতখানি বিশ্বস্ত এবং আমাদের প্রয়োজনে বাস্তবে ভূমিকা কতখানি তার ভিত্তিতে সঠিকতা নিরূপিত হয়।

● যোগাকারা বা ভাববাদী বৌদ্ধরা এই ক্ষেত্রে সৌত্রান্দ্রিক বৌদ্ধদের অনুসারী। তারা বলে, একমাত্র জ্ঞানের মাধ্যমে বহির্জগৎ আমাদের কাছে উপস্থিত হয়। জ্ঞান ব্যতিরেকে এটা সম্ভব হয় না।

● চিন্তার তিনটি ধারা যথাক্রমে ন্যায়, সাংখ্য ও মীমাংসা আত্মা ও বস্তুর দ্বৈততাকে স্বীকার করে এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। এই দর্শনগুলির মতে বাস্তবে এদের অর্থাৎ আত্মা ও বস্তুর দ্বৈততা ও তাদের মধ্যেকার সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। জ্ঞানের প্রকৃতি এবং যেভাবে এটির উদ্ভব ঘটল তার অনুসন্ধানও গুরুত্বপূর্ণ।

● বৌদ্ধ দর্শন মতে প্রমাণকে জ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বহির্জগৎ জ্ঞানের দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বহির্জগৎ সম্পর্কে আমাদের প্রত্যয়কে প্রয়োগ করে। ন্যায় দর্শন জ্ঞানের উৎসের কারণ এবং বস্তুনিষ্ঠ বিশ্ব-র সাথে সম্পর্ক চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়নি।

● সাংখ্য দর্শন বাস্তব ঘটনা ও জ্ঞানের মধ্যেকার পার্থক্য অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল। সাংখ্য দর্শনের বক্তব্য হলো, জ্ঞান বস্তুর থেকে একদম পৃথক হতে পারে না।

● মীমাংসা দর্শন ন্যায় দর্শনের সাথে সহমত পোষণ করে যে, বাস্তব জগৎ এবং ইন্দ্রিয় যোগাযোগ মারফতই জ্ঞান অর্জিত হয়। তবে জ্ঞানকে এক অনন্য ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর মাধ্যমে পরিচিত ও জ্ঞানীকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

● বিজ্ঞানবাদী বৌদ্ধ মতবাদ, সাংখ্য ও মীমাংসা দর্শনে ভাববাদী প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ হলো - জ্ঞানের বিশেষ চরিত্র হিসাবে সেটাই উপস্থিত করা, একমাত্র যার সাথে আমাদের সংস্পর্শ রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানবাদী বৌদ্ধ মতবাদে বহির্জগতের অস্তিত্বকে খারিজ করা হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে জ্ঞানের সাক্ষ্যর বিষয়টি একদম খারিজ করা হয়েছে। সাংখ্য দর্শনে বহির্জগৎকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে সাংখ্য দর্শন খাঁটি বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের অনন্ত বস্তুর মধ্যে গভীর ঘাত সৃষ্টি করেছিল। মীমাংসা দর্শন যে আত্মদর্শী (introspective) দাবিতে সন্তষ্ট ছিল তা হলো, জ্ঞান এমন একটি বিশেষ বিষয় যা তার নিজের সাথে জ্ঞানী ও পরিচিতকে পরিচিত করে।

● সেই সময় পর্যন্ত সমস্ত বিচারই ছিল আপেক্ষিক, হয় বাস্তব জগতের দ্রুততার সাথে উল্লেখ, বিশ্বস্ততার সাথে বস্তুর প্রতিনিধিত্ব, আমাদের প্রয়োজন মেটানোর উপযুক্ততা অথবা পরবর্তী অবিরোধিত অভিজ্ঞতার দ্বারা যাচাইকরণ। জ্ঞান এবং বস্তুর চূড়ান্ত সত্য সম্পর্কে চরম রায় সম্ভব হয় কীনা তার সম্পর্কে কোনো অনুসন্ধান করা হয়নি। যার আবির্ভাব ঘটল তাকেই বাস্তব বলে বিবেচনা করা হয়। সেক্ষেত্রে কোনো কিছু ছিল কীনা যাকে চরম সত্য বলে বিবেচনা করা হয়, যা সমস্ত আবির্ভাবের এবং অপরিবর্তনীয় বাস্তবতার ভিত্তি - তারও অনুসন্ধান করা হয়নি।

(ক্রমশ)