৫৯ বর্ষ ১৩ সংখ্যা / ১২ নভেম্বর, ২০২১ / ২৫ কার্ত্তিক, ১৪২৮
ঐতিহাসিক নভেম্বর বিপ্লবের ১০৫তম বার্ষিকী মর্যাদার সঙ্গে পালিত রাজ্যে
নভেম্বর বিপ্লব দিবসে লেনিন মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিমান বসু, সূর্য মিশ্র সহ বামপন্থী নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গোটা বিশ্বের মানুষের শোষণ মুক্তির লক্ষ্যে প্রেরণা সঞ্চারকারী ঐতিহাসিক নভেম্বর বিপ্লবের ১০৫তম বার্ষিকী ৭ নভেম্বর যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে রাজ্যজুড়ে। এদিন এই মহান বিপ্লবের অবিস্মরণীয় নেতা ও বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের রূপকার ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ (লেনিন)-এর মূর্তি ও প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, রক্তপতাকা উত্তোলন, পার্টির বিভিন্ন দপ্তরে লাল পতাকায় সাজানো সহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপিত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সিপিআই (এম) সহ বামফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের উদ্যোগে এভাবে দিনটি পালিত হয়েছে।
৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে দশটায় কলকাতার ধর্মতলায় লেনিন মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। করোনা মহামারীজনিত কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এখানে লেনিন মূর্তিতে মালা দেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, আরএসপি’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই’র স্বপন ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হাফিজ আলম সইরানি, আরসিপিআই নেতা সুভাষ রায় এবং মিহির বাইন, বলশেভিক পার্টির নেতা প্রবীর ঘোষ, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের আশিস চক্রবর্তী, ওয়ার্কাস পার্টির নেতা শিবনাথ সিন্হা, ১২ই জুলাই কমিটির প্রদীপ গুপ্ত প্রমুখ।
এছাড়াও মালা দেন সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার, দীপক দাশগুপ্ত, সুখেন্দু পানিগ্রাহি, মানব মুখার্জি, মীনাক্ষী মুখার্জি, মধুজা সেনরায় প্রমুখ।
এদিনের এই কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বিমান বসু বলেন, পুঁজিবাদী শোষণের আজও অবসান হয়নি। বরং মহামারীর আবহে সেই শোষণ আরও তীব্র হয়েছে। মহামারীর সময়ে পুঁজিপতিদের মুনাফা ও সম্পদ বেড়ে চলেছে। গরিবের প্রতি বৈষম্য বেড়ে চলেছে। গরিব মানুষ কাজ হারিয়ে আরও বিপদে পড়ছেন। আর শাসকরা প্রতিবাদ দমন করতে গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ করছে। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি কোভিড মহামারী মোকাবিলায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সাফল্য দেখিয়েছে। তাই নভেম্বর বিপ্লবের থেকে শিক্ষা নিয়েই মানুষের শোষণমুক্তির জন্য আমাদের লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, লেনিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রসারে, সমাজে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায়, বৈষম্যের অবসানের লক্ষ্যে এক নয়া রাষ্ট্রব্যবস্থার পত্তন ঘটিয়ে নজির সৃষ্টি করেছিল বিশ্বে। সেই নভেম্বর বিপ্লব থেকে শিক্ষা নিয়েই আজকের দিনের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন তীব্র করতে হবে।
এদিন বিভিন্ন জেলায় নভেম্বর বিপ্লবের ১০৫তম বার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চার শতাধিক স্থানে মিছিল, পথসভা, আলোচনাসভা ও পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করেন পার্টির বিভিন্ন স্তরের কমিটি, গণসংগঠন ও শ্রমজীবী মানুষ। মেদিনীপুর শহরে পার্টির জেলা দপ্তরে আলোচনা করেন তরুণ রায়। বিকেলে ডেবরায় আলোচনা করেন তরুণ রায় এবং সুভাষ দে। ডেবরা বাজারে মিছিলও হয়েছে। এছাড়াও মিছিল হয়েছে মেদিনীপুর শহর, মোহনপুর, সবং, জলচক সহ বিভিন্ন স্থানে। এদিন জেলার ৫১টি এরিয়া কমিটি সহ শাখা দপ্তর, গঞ্জ এলাকায় পতাকা উত্তোলন, শহিদবেদিতে মাল্যদান, পথসভা, মিছিল ইত্যাদি হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৩৪টি এরিয়া কমিটি সহ ৬৯৮টি শাখা এলাকায় পতাকা উত্তোলন সহ শহিদ বেদিতে মাল্যদান, এলাকা রক্তপতাকা দিয়ে সাজানো, পার্টি দপ্তরগুলিতে লালপতাকা ও লাল আলো জ্বালিয়ে দিনটি উদ্যাপিত হয়েছে। নিমতৌড়িতে পার্টির জেলা দপ্তর সুকুমার সেনগুপ্ত ভবনে পতাকা উত্তোলন করেন পার্র্টির জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, হিমাংশু দাস, রীতা দত্ত, যাদবেন্দ্র সাহু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ শহিদবেদিতে মাল্যদান করেন।
এদিন হুগলি জেলার সর্বত্র মর্যাদার সঙ্গে নভেম্বর বিপ্লব দিবস পালিত হয়েছে। শ্রীরামপুরে পার্টির জেলা দপ্তরে পতাকা উত্তোলন ও শহিদবেদিতে মাল্যদান করেন পার্টিকর্মী ও সমর্থকরা। উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগড়, চাঁপদানি, ডানকুনি চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া, ভদ্রেশ্বর, মানকুণ্ডু তেলেনিপাড়া, চন্দননগর, চুঁচুড়া, হুগলি, ব্যান্ডেল, মগরা, বাঁশবেড়িয়া, গুপ্তিপাড়া, বলাগড়, পাণ্ডুয়া, পোলবা, দাদপুর, ধনিয়াখালি, সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর, পুড়শুড়া, আরামবাগ, মশাট প্রভৃতি নানা জায়গায় দিনটি পালিত হয়েছে। এদিন ব্যান্ডেল চার্চ মোড়ে ‘নভেম্বর বিপ্লবের প্রাসঙ্গিকতা ও আজকের ভারত’ বিষয়ে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন এসএফআই-র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য।
বারাসতে পার্টির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দপ্তরে পতাকা উত্তোলন ও শহিদবেদিতে মাল্যদান করা হয়। নিউটাউন, বিধাননগর, রাজাবাজার, নিউ বারাকপুর, উত্তর দমদম, দমদম, দক্ষিণ দমদম অঞ্চলে পার্টির পক্ষ থেকে দিনটি পালিত হয়েছে। নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কাঁচড়াপাড়া, হালিসহর, নৈহাটি, ভাটপাড়া, শ্যামনগর, বীজপুর, পানপুর গ্রামীণ, কাউগাছি-বাহুতা, গাড়ুলিয়া, উত্তর বারাকপুর, উত্তর বারাকপুর সদর, বারাকপুর, বারাকপুর গ্রামীণে রক্তপতাকা উত্তোলন করা হয়।