E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৩ সংখ্যা / ১২ নভেম্বর, ২০২১ / ২৫ কার্ত্তিক, ১৪২৮

মহারাষ্ট্রসহ দেশের অন্যত্র শুরু হলো শহিদ অস্থিকলস যাত্রা


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ৩ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশে ঘটা লখিমপুর খেরি গণহত্যার শহিদদের অস্থিকলস নিয়ে মহারাষ্ট্র সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক-শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ উদ্যোগে শহিদ অস্থিকলস যাত্রা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে খেটে খাওয়া মানুষ এবং সমাজের বিভিন্ন প্রান্তিক এবং অন্যান্য অংশের মধ্যে। লখিমপুর খেরির পাঁচ শহিদ কৃষক - দলজিত সিং, গুরবিন্দার সিং, লভপ্রীত সিং, নক্ষত্র সিং এবং রমন কাশ্যপের স্মৃতিতে ২৭ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের পুনের জাতীয় স্মারকস্থল প্রবাদপ্রতিম সমাজ সংষ্কারক জ্যোতিরাও ফুলের বাড়ি থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছে। ১১ নভেম্বর কলস যাত্রা যবতমাল জেলার পাটনবাড়িতে পৌঁছে গেছে।

একইসঙ্গে তামিলনাডুর কালাকুরিচি জেলার উলুদিপেট, পেরাম্বালুর, সহ ২২টি জেলায়, উত্তর প্রদেশের গোরখপুর, কুশিনগর, প্রয়াগরাজ, হরিয়ানা এবং উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু জেলায় মহারাষ্ট্রের মতো শহিদ অস্থিকলস যাত্রা আয়োজিত হয়েছে। হিমাচল প্রদেশের শহিদ অস্থিকলস যাত্রার পর যমুনা ঘাটের পোয়ান্তা সাহিব-এ অস্থি ইতিমধ্যেই বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবের তিন এলাকায় প্রবল উদ্দীপনায় আয়োজিত হয়েছে শহিদ অস্থিকলস যাত্রা।

শহিদ অস্থিকলস যাত্রার শুরুতে পুনেতে জ্যোতিরাও ফুলের মূর্তিতে মালা দিচ্ছেন অশোক ধাওয়ালে।

২৮ নভেম্বর শহিদ অস্থিকলস যাত্রা মুম্বাইয়ে পৌঁছলে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কিষান মজদুরদের মহা পঞ্চায়েত আয়োজিত হবে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহিলারা উপস্থিত ছিলেন ব্যাপক সংখ্যায়। উদ্বোধনী পর্বে মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলের মূর্তিতে মাল্যদান করেন সারা ভারত কৃষক সভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে। সাবিত্রীবাই ফুলের মূর্তিতে মাল্যদান করেন মেধা পাটেকর। সারা ভারত কিষান সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির কো-অর্ডিনেশন কমিটি, জনআন্দোলন সমিতির যৌথ আহ্বানে ঐতিহাসিক এই শহিদ অস্থিকলস যাত্রা সংগঠিত। প্রবল উৎসাহ এবং উদ্দীপনায় ভর করে বহু মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে এই শহিদ কলস যাত্রা ছুয়ে যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের বহু জেলার কৃষক আন্দোলন এবং গণ আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।

সোলাপুর জেলায় পৌঁছল শহিদ অস্থিকলস যাত্রা।

এই যাত্রার উদ্বোধন উপলক্ষে পুনের হামাল ভবনে একটি সভা আয়োজিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মানব কাম্বলে। সভায় এআইকেএস সভাপতি অশোক ধাওয়ালে সহ এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এআইডিএডবলিউ সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে মোদি এবং যোগীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকারগুলি লখিমপুরের হত্যাকারীদের আড়াল করার চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ। এই গণহত্যার অন্যতম মূল অভিযুক্ত আশিস মিশ্রের বাবা স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় সিং-কে বরখাস্ত করা বা গ্রেফতার না করায় তীব্র সমালোচিত হয় বিজেপি সরকার। কৃষকদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম যা ২৬ নভেম্বর এক বছর পূর্ণ করবে তার মূল দাবি কৃষকদের তিনটি কালা কৃষি আইন বাতিল করার দাবিসমূহও উঠে আসে বক্তাদের বক্তব্য। এর পাশাপাশি শ্রম কোড বাতিল, বিদ্যুৎ বিল (সংশোধিত) প্রত্যাহার, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি স্বীকৃতি, শস্য বিমার যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়েও সরব ছিলেন বক্তারা। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রের অধিকাংশ কৃষকেরই অসময়ের ভারি বৃষ্টির জেরে নষ্ট হয়েছে ফসল। বক্তারা সকলেই মোদি জমানায় রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ঢালাও বেসরকারিকরণের মধ্যদিয়ে আম্বানি-আদানিদের মতো কর্পোরেটদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দেবার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি, এমএনরেগায় কাজের দিন সংখ্যা দ্বিগুণ করা এবং শহর এলাকায় চালু করার মতো দাবিগুলিও উঠে আসে।

যবতমাল জেলায় পথসভা অস্থিকলস পৌঁছনোর পর।

তিন সপ্তাহ ধরে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের ২৫ টি জেলায় প্রতিটি কৃষক সংগঠন তাদের বিভিন্ন শক্তিশালী এলাকায় শহিদ কলস যাত্রা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন, যাবেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিম মহারাষ্ট্রের সাতারা, কোলাপুর এই সমস্ত জেলাগুলিতে শহিদ কলস যাত্রা যখনই পৌঁছচ্ছে অভিনন্দিত হচ্ছে সর্বত্রই। এই ঐতিহাসিক যাত্রা উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আয়োজিত হচ্ছে বিভিন্ন মাপের জনসভা। কৃষিপ্রধান এলাকাগুলিতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন জনসভায় এবং সংবর্ধিত করছেন যাত্রার সঙ্গে যুক্ত যাত্রীদের।

ওসমানাবাদে শহিদ অস্থিকলসকে রক্তিম অভিবাদন।

মাঝে দীপাবলি উপলক্ষে তিনদিনের যাত্রাবিরতির পর ৭ নভেম্বর পুনরায় শুরু হয়েছে। বর্তমানে মারাঠাওয়াডার পারবানি, হিঙ্গলি, এবং বিদর্ভের নান্দেদ জেলা সহ ওয়ার্ধা এলাকার নাগপুর, অমরাবতী, আকোলা এবং বুলদানা জেলায় ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে শহিদ কলস যাত্রা। আবার একই সঙ্গে উত্তর মহারাষ্ট্রের নন্দুরবার, ধুলে, নাসিক এবং আহমেদনগর এবং কোঙ্কন এলাকার থানে এবং পালঘর জেলায় এই বেশ কিছু জায়গায় এই যাত্রা পৌঁছে সাড়া ফেলে দিচ্ছে।

নান্দেদ জেলায় অস্থিকলস পৌঁছানোর পর চলছে স্লোগান।

২৭ নভেম্বর এই শহিদ কলস যাত্রা মুম্বাইয়ে পৌঁছানোর কথা। এখানেই ছত্রপতি শিবাজী এবং চরিত ভূমিতে বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তিস্থলে শ্রদ্ধা জানানো হবে। শ্রদ্ধা জানানো হবে মহাত্মা গান্ধী মূর্তিতে এবং শহিদ বাবু গেনু’র শহিদ স্মারকে।‌ পুনের এই কৃষক পরিবারের সন্তান বাবু গেনু, যিনি পরে কাপড় কলে কাজ নেন, ১৯৩০ সালে তাঁকে ব্রিটিশরা ট্রাকের নিচে পিষে মেরেছিল বিদেশি বস্ত্রের আমদানি এবং ব্যবহারের বিরোধিতা করার জন্য।

২৮ নভেম্বর মহারাষ্ট্র জুড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কিষান মজদুরদের মহা পঞ্চায়েত আয়োজিত হবে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে। প্রসঙ্গত, ২৮ নভেম্বর দিনটি মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলের মৃত্যুবার্ষিকী। ওইদিন শহিদ কলস যাত্রা শেষ হবে মুম্বাইয়ের হুতামা চকে। এখানেই স্মরণ করা হবে মহারাষ্ট্রের সংযুক্ত মহারাষ্ট্র স্মারক আন্দোলনের ১০৬ জন শহিদকে, কৃষক আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের সঙ্গে।