E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৩ সংখ্যা / ১২ নভেম্বর, ২০২১ / ২৫ কার্ত্তিক, ১৪২৮

কমরেড মনসা হাঁসদার জীবনাবসান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিপিআই(এম)’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য ও বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক কমরেড মনসা হাঁসদা ৭ নভেম্বর রবিবার গভীর রাতে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন তিনি, অস্ত্রোপ্রচারও করা হয়েছিল তাঁর শরীরে। ইদানীং শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। এদিন বারোটায় নিজের বাসভবনেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।

কমরেড মনসা হাঁসদার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু এবং পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। বিমান বসু বলেছেন, আমি অনেকদিন থেকে কমরেড মনসা হাঁসদাকে চিনতাম। নিজেকে একজন সাচ্চা কমিউনিস্ট হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সারা জীবন। শ্রমজীবী, প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে চলতেন তিনি। জাত-ধর্মের নামে গরিব মানুষের মধ্যে বিভাজনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে শিড়দাঁড়া সোজা করে লড়াই করেছেন। সিধু-কানহুর স্মরণে বোলপুরে একটি সেন্টার তৈরির পিছনে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তাঁর চলে যাওয়া খুবই বেদনাদায়ক। আমি তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

কমরেড মনসা হাঁসদা ছিলেন সকলের প্রিয়। গ্রামের মানুষকে নিয়ে তিনি তৃণমূলের সন্ত্রাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও প্রতিবাদ সংগঠিত করেছেন। করেছেন সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলার প্রসার। জেলার রাজনৈতিক মহলে বলিষ্ঠ, নির্ভীক, সৎ নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন মনসা হাঁসদা। নিতান্তই হতদরিদ্র খেতমজুর পরিবারে তাঁর জন্ম। যুবক বয়সে খেতমজুরি করার মধ্যে দিয়েই তাঁর লাল ঝান্ডার সংস্পর্শে আসা। তারপর ধীরে ধীরে কৃষক আন্দোলনের নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কৃষকসভার জেলা সম্পাদক হিসাবে জেলার কৃষক আন্দোলন বিকশিত করার কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২সালে তিনি পার্টির সভ্যপদ অর্জন করেছিলেন। বোলপুর-শ্রীনিকেতন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৯৯৮-২০০৩ সাল পর্যন্ত। সংগঠনের নেতা হিসাবে যেমন দক্ষ ছিলেন, প্রশাসক হিসাবেও তেমন দক্ষতার ছাপ রেখে গিয়েছেন। ২০০৩-০৮ সাল পর্যন্ত বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি থাকাকালীন তাঁর প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার প্রশংসা করেছেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বই। মানুষের অধিকার প্রদানের প্রশ্নে তিনি কোনোদিন দলমতে ভেদাভেদ করেননি। সকলকেই সমান চোখে দেখতেন। এরপর ২০১৫ সালে তিনি সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটিরও সদস্য হন। আমৃত্যু তিনি সেই পদেই ছিলেন। কিছুদিন আগে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য তাঁর শরীরে অস্ত্রোপ্রচারের পরেও তিনি পার্টির কাজ করে গেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে বহু আক্রমণের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর চরম সন্ত্রাসের মধ্যেই তাঁকে কাজ করতে হয়েছে নিজের এলাকায়। তবুও মানুষকে এককাট্টা করে রেখেছিলেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। তাই ৮ নভেম্বর দুপুরে গ্রামে যখন তাঁর শেষকৃত্য হয়েছে তখন বহু মানুষ গুমরে গুমরে কেঁদেছেন। বীরভূম জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও শোকমিছিল হয়েছে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। তাঁর স্ত্রী, এক পুত্র, কন্যা, ভাই ও তাঁদের পরিবার রয়েছেন।

৮ নভেম্বর সকালে তাঁর মরদেহ প্রথমে নিয়ে আসা হয় বোলপুরে পার্টির কার্যালয়ে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহ আনা হয় সিউড়ির জেলা কার্যালয়ে। সেখানে কমরেড মনসা হাঁসদার মরদেহ রক্তপতাকায় মুড়ে দেন সিপিআই(এম) নেতা রামচন্দ্র ডোম, গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, ব্রজ মুখার্জি, গৌতম ঘোষ, শ্যামলী প্রধান, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, মনসা হাঁসদার ভাই গোকুল হাঁসদা প্রমুখ। শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন পার্টির নেতৃবৃন্দ এবং গণসংগঠনের প্রতিনিধিরা। পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক চ্যাটার্জি, সিপিআই’র দ্বারিক চক্রবর্তী, আরএসপি’র নিরঞ্জন মণ্ডল, কংগ্রেস নেতা চঞ্চল চ্যাটার্জি, তৃণমূল নেতা দীপক রায়, আব্দুল সফি, বিজেপি নেতা ধ্রুব সাহা সহ আরও অনেকে। এরপর প্রয়াত নেতার মরদেহ নিয়ে মিছিল হয় সিউড়িতে। মিছিল শেষ করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রাম ধান্যসড়ায়। সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।