E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৩ সংখ্যা / ১২ নভেম্বর, ২০২১ / ২৫ কার্ত্তিক, ১৪২৮

কমরেড ননী মালাকার-এর জীবনাবসান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নদীয়া জেলার প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড ননী মালাকারের জীবনাবসান হয়েছে ৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে। কিছু দিন আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি ভরতি হয়েছিলেন হাসপাতালে। ছাড়া পেয়ে বাড়িতেও ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ৩ নভেম্বর পুনরায় অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

কমরেড ননী মালাকারের জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লাতে। দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে তিনি বড়ো হয়ে ওঠেন। প্রথম জীবনে শ্যামনগর অন্নপূর্ণা মিলে শ্রমিক হিসাবে কাজে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন তিনি। ১৯৬২ সালে শ্রমিক আন্দোলনের প্রয়োজনে তাঁকে সেই সময়ে সদ্য স্থাপিত কল্যাণীর স্পিনিং মিলে যোগ দিতে বলা হয়। ওই সময়ে তিনি হরিণঘাটার ফতেপুরে থাকতে শুরু করেন। এলাকার তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা শিশির ভৌমিক, রবি সরকার, অনিল বিশ্বাস, কৃষ্ণ সুন্দর ভৌমিক প্রমুখের সঙ্গে হরিণঘাটায় কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে নিজেকে পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেন তিনি। ১৯৭০ সালে তিনি সিপিআই(এম)’র হরিণঘাটা আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে হরিণঘাটা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কমরেড ননী মালাকার সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন। তারপর ১৯৭২ সালের সন্ত্রাসের নির্বাচন বাদ দিলে পরপর পাঁচ বার তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি হরিণঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। সিপিআই(এম)’র নদীয়া জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন ১৯৬৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। জেলার কৃষক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তিনি। সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য সম্মেলন ও মৎস্যজীবী সমিতির সারা ভারত কনভেনশন হরিণঘাটায় সংগঠিত করবার ক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। হরিণঘাটা মহাবিদ্যালয় গঠন সহ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে তিনি অবদান রেখে গিয়েছেন, দীর্ঘ দিন এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি। এলাকায় বিভিন্ন বিদ্যালয় তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট ও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার বিশেষ গুণাবলি ছিল তাঁর। তাঁর মৃত্যুতে হরিণঘাটা বামপন্থী আন্দোলন হারালো এক দক্ষ সংগঠক, সম্প্রীতির কারিগর, গরিব মানুষের বন্ধু ও সাহসী অভিভাবককে।

৪ নভেম্বর কমরেড ননী মালাকারের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পার্টির পূর্বতন কল্যাণী জোনাল কমিটি তথা বর্তমান কল্যাণী এরিয়া কমিটি দপ্তরে। সেখানে পার্টির নেতৃবৃন্দ মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। মরদেহ তাঁর বাসস্থানে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের সঙ্গী স্ত্রী দীপ্তি মালাকার, কন্যা বীথি মালাকার, চাকদহ এবং হরিণঘাটা এলাকার বিধায়করা সহ মাল্যদান করেন হরিণঘাটা পৌরসভার প্রধান প্রশাসক এবং বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ। সেখান থেকে মিছিল করে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর দীর্ঘ দিনের পার্টি জীবনের কর্মস্থল হরিণঘাটা এরিয়া কমিটির দপ্তরে। সেখানে মরদেহে রক্ত পতাকা অর্পণ করেন সিপিআই(এম) নদীয়া জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে। একে একে তাঁর মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পার্টির জেলা নেতৃবৃন্দ, মাল্যদান করেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রীও। সেখান থেকে ৮৭টি অর্ধনমিত রক্তপতাকা বহনকারীদের সঙ্গে শোকমিছিলে কমরেড ননী মালাকারের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় হরিণঘাটা শ্মশানে। বহু মানুষ শোকমিছিলে পা মেলান। হরিণঘাটা কলেজে তাঁর মরদেহে মাল্যদান করা হয়। তারপরে হরিণঘাটা শ্মশানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।