৫৯ বর্ষ ১৩ সংখ্যা / ১২ নভেম্বর, ২০২১ / ২৫ কার্ত্তিক, ১৪২৮
‘ভাগ্যিস ডিম পাড়ে হাঁসেরা’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘ভাগ্যিস ডিম পাড়ে হাঁসেরা’। ছড়াটা মূলত ছিল হাঁসেরা ডিম না পাড়লে কী কী হতে পারে তাই নিয়ে। উপেন্দ্রনাথ মল্লিকের বিখ্যাত এই ছড়ার শেষটা আরও মজাদার। বিকল্প পথের সন্ধান। ‘যদি ঘোড়ায় পাড়িত ডিম, খেতাম ঘোড়ার ডিম, সসপ্যানে ভাজিতাম মাথা করে হেঁট, ছ্যাঁকরা ঘোড়ার ডিমে ডবল ওমলেট’। বাংলা শব্দভাণ্ডারে ‘ঘোড়ার ডিম’ বা ‘অশ্বডিম্ব’ ঠিক কবে থেকে যুক্ত হয়েছে জানিনা। তবে মনে হয় চারের দশকের প্রায় শেষের দিকে যখন এই ছড়া লেখা হয়েছিল তখন ‘অশ্বডিম্ব’ হয়তো সাহিত্যে বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল। আমাদের বর্তমান ‘আচ্ছে দিনে’ও জীবন পরিসরে ঘোড়ার ডিম-এর মুখোমুখি ইদানীং মাঝেমধ্যেই হতে হয়। প্রায় সাত দশক আগে ছড়াকারেরও এরকম কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছিল কিনা জানিনা। তবে হাঁসেরা ডিম না পাড়লে ঘোড়ার ডিমে ডবল ওমলেট ভেজে খাওয়ার অভিনব এই পরিকল্পনা আজ যে অনেকটাই বাস্তব তা স্বীকার করতেই হবে।
ঘাবড়াবেন না। ঘোড়ার ডিমের উৎস সন্ধান বা হাঁসের ডিমের বিকল্প ঘোড়ার ডিম - এ ধরনের কোনো লেখা বা ইউটিউব ভিডিয়ো করতে বসিনি। যদিও এখন আমাদের প্রায় সকলেরই ঘাবড়ানিবোধ বেশ কিছুটা কম। আমরা এখন বেশ ‘ট্যানড’ প্রজাতি। গাড়ি ভাড়া বাড়ুক বা জিনিসের দাম, ডিএ পান বা না পান, শিল্প হোক বা না হোক, চাকরি হোক বা না হোক, স্কুল খুলুক বা না খুলুক - ওসব ‘দেউচা পাঁচামি’ আমাদের মোটেই ভালো লাগেনা। মোটা চামড়া ভেদ করে ব্যথা ভেতরে পৌঁছায় না। এখন প্রতিবাদ মানে তাই ঘেউ ঘেউ, মিছিল মানে রাস্তা জ্যাম, কালিপুজোয় ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ মানে পরিবেশ বান্ধব বাজি নয় - ‘সবুজ রঙের বাজি’, দু’হাজার টাকার নোটে মাইক্রোচিপ - সবেতেই বেশ নিস্তরঙ্গ। বাজারমুখী অর্থনীতির প্যাঁচ পয়জারে নিজেরাও অজান্তেই পণ্য। যেখানে প্রার্থী থেকে ভোটার - সবই সহজে বিকোয়। ‘চণ্ডীদাসের খুড়ো’র কলে ‘খাদ্য’ ঝুলিয়ে দিলেই ‘পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা যাবেন দেড় ঘণ্টায় চলে’। এত শর্টকাট ছাড়ে কোন...!
চারের দশকের শেষভাগ দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। আমি অবশ্য অতটা পিছিয়ে পড়তে রাজি নই। তাতে যদি আমাকে বিশেষ কোনো কিছু পড়তে না হয় তাও সই। আর আচ্ছে দিনের ‘মো-শা-মো’র ত্র্যহস্পর্শের প্যাঁচে আটকে পুরাণ ইতিহাস গুলিয়ে আরও কয়েক হাজার বছর পেছনে যেতে তো নয়ই। আমি মাত্র কয়েক বছর পিছিয়ে একবার গোয়ায় যাবো।
অশ্বডিম্বনিটাইজেশন
১৩ নভেম্বর, ২০১৬। সাধারণ মানুষ চোখের জল মুছতে মুছতে পাগলের মতো ব্যাঙ্কের সামনে, এটিএম-এর সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। এর পাঁচ দিন আগে চার ঘণ্টার নোটিশে দেশে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল বা ডিমনিটাইজেশন হয়ে গেছে। উত্তর গোয়ার মোপা বিমানবন্দরের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে (২০১৯-২০-তে চালু হবার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত এই বিমানবন্দর চালু হয়নি) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “ম্যায়নে স্রিফ পচাশ দিন মাঙ্গে হ্যায়... ডিসেম্বর ৩০ তক মুঝে মওকা দিজিয়ে... অগর ডিসেম্বর ৩০ কে বাদ, কোই মেরি কমি রহে যায়ে, কোই মেরি গলতি নিকল যায়ে, কোই মেরি গলত ইরাদা নিকল যায়ে, আপ জিস চৌরাহে মে মুঝে খাড়া করেঙ্গে, ম্যায় খাড়া হোকে দেশ যো সাজা করেগা, ও সাজা ভুগতনে কে লিয়ে তৈয়ার হুঁ।” হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা না হলেও আমরা অল্পবিস্তর সবাই বুঝি। তাই এর অর্থ লিখে আর ব্যথা বাড়ালাম না। তবে একথা ঠিক যে ‘ডিসেম্বর ৩০’ ‘পচাশ দিন’ কেটে গেছে বহু দিন, বছর আগেই। শান্ত দেশবাসীগণ এখনও ‘তাঁকে’ দাঁড় করানোর মতো কোনো চৌমাথার মোড় খুঁজে পায়নি। জবাব চাওয়া তো পরের কথা।
ডায়লগ হিসেবে শোলের গব্বর সিং এবং শামার কথোপকথন - “‘কিতনা ইনাম রাখে হ্যায় সরকার হাম পর?’ ‘পুরে পচাস হাজার’..” বেশ ভালো। প্রায় ঠিক ততটাই ভালো মোপার জনসভায় সাধারণ মানুষের সামনে “ম্যায়নে স্রিফ পচাশ দিন মাঙ্গে হ্যায়” মনোলগ। প্রায় ‘লগে লগে’ চলে। অনেকটা ঘোড়ার ডিম টু ডিমনিটাইজেশনের পথে হাঁটার মত।
৮ নভেম্বর, ২০১৬-র রাতে যখন আচমকাই দেশের প্রধানমন্ত্রী ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন থমকে গেছিল গোটা দেশ। নোট বাতিলের কারণ বলতে গিয়ে সেদিন তিনি যা যা বলেছিলেন, আজ পাঁচ বছর পর দেশে সেগুলো আর নেই একথা বোধহয় স্বয়ং মোদিভক্তও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না। সেদিন তিনি বলেছিলেন জাল টাকা বন্ধ করা, কালো টাকা ধ্বংস করা, সন্ত্রাসবাদীদের ফান্ডিং বন্ধ করা প্রভৃতি গল্প। যদিও এরপর একাধিকবার তিনি বয়ান বদল করেছেন। কখনও তাঁকে জ্বালিয়ে দেবার কথাও বলেছেন। কখনও সাত দিন, কখনও তিরিশ দিন, কখনও বা পঞ্চাশ দিন সময় চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে। যার সবটাই সম্ভবত ফলাফলের আগাম অনুমান না থাকার কারণে।
গল্প ১ - কালো টাকা উদ্ধার
প্রধানমন্ত্রী ঘটা করে নোট বাতিল করলেও ওই বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছিলেন, আয়কর দপ্তরের হিসেব অনুসারে দেশের মানুষের কালো টাকার মাত্র ৫ শতাংশ নোট আকারে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কালো টাকা উদ্ধারের গল্প যে একটি অশ্বডিম্ব তার প্রমাণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য। নোট বাতিলের পর জুলাই, ২০১৭ আর বি আই-এর দেওয়া হিসেব অনুসারে ৩০ জুন, ২০১৭ পর্যন্ত ১৫.৩১ ট্রিলিয়ন কারেন্সি নোট ব্যাঙ্কে জমা পড়ে। নোট বাতিলের আগে দেশে ছিল ১৫.৪১ ট্রিলিয়ন কারেন্সি নোট। বাজারে থাকা কারেন্সি নোটের প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য ব্যাঙ্কে ফিরে আসে। অর্থাৎ যে পরিমাণ নোট বাজারে ছিল তার প্রায় সবটাই ব্যাঙ্কের ঘরে ফেরে।
এ প্রসঙ্গে এক আরটিআই-এর উত্তর থেকে জানা গেছে, আরবিআই বোর্ড কালো টাকা আটকাতে নোট বাতিলের পদক্ষেপকে সমর্থন করেনি। নিজেদের ৫৬১তম অধিবেশনে বোর্ড জানিয়েছিল, অধিকাংশ কালো টাকাই কারেন্সি নোট-এ থাকেনা। যা আসলে লুকিয়ে থাকে সোনা, রিয়েল এস্টেট জাতীয় বিভিন্ন সম্পদের মধ্যে। তাই এই পদক্ষেপে কালো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবেনা। তাহলে কোথায় গেল বহু ঘোষিত কালো টাকার গল্প? বিশ্বাস করুন। একটা ‘চৌরাহা’ খুঁজছি।
গল্প ২ - জাল নোট ছাপা বন্ধ
নোট বাতিলের সময় দাবি করা হয়, বাজারে নতুন যে নোট আনা হবে তা জাল করা সম্ভব হবেনা। সেইসময় কোনো কোনো মিডিয়া চ্যানেল (জি টিভি) এবং তাঁদের সাংবাদিকরা (সাংবাদিক সুধীর চৌধুরী এবং তাঁর টিম) ২০০০ টাকার নোটে মাইক্রোচিপ আছে বলে ফলাও করে প্রচার করেছিলেন। তথ্য বিকৃতি অথবা ভুয়ো তথ্য প্রচারের জন্য সেই সাংবাদিক কিংবা মিডিয়া চ্যানেলের কোনো শাস্তি হয়েছে বলে শোনা যায়নি। ইউটিউবে খুঁজলে এখনও সেই ভিডিয়ো পাওয়া যাবে।
গোদি মিডিয়ার দৌলতে ‘মাইক্রোচিপ’ তো নাহয় এতদিনে বোঝা গেছে। কিন্তু পাঁচ বছর পর জাল নোটের কী অবস্থা? সেটাও তো একবার দেখা দরকার। ২০১৫ সালে নোট বাতিলের আগের বছর দেশে জাল নোট উদ্ধার হয়েছিল ৪,০৪,৭৯৪টি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, ২০১৬ সাল - অর্থাৎ নোট বাতিলের বছরে ৬.৩২ লক্ষ জাল নোট বাজেয়াপ্ত করা হয়। নোট বাতিলের সময় থেকে পরবর্তী চার বছর, অর্থাৎ ২০২০ সাল পর্যন্ত জাল কারেন্সি নোট উদ্ধার হয়েছে ১৮.৮৭ লক্ষ। এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুসারে, শুধুমাত্র ২০২০ সালে জাল নোট বা ফেক ইন্ডিয়ান কারেন্সি নোটস (FICN) উদ্ধার হয়েছে ৮,৩৪,৯৪৭টি। অর্থমূল্যে যার পরিমাণ ৯২ কোটি টাকা।
এই সময় সবথেকে বেশি জাল নোট উদ্ধার হয়েছে মহারাষ্ট্রে - ৬,৯৯,৪৯৫টি। এছাড়াও শুধুমাত্র ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে ২৪,২২৭টি, গুজরাটে ২০,৩৬০টি, অন্ধ্রপ্রদেশে ১৭,৭০৫টি এবং উত্তরপ্রদেশে ১৭,০৭৮টি জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে শুধুমাত্র ২০২০-তে। ২০১৯-এ জাল নোট উদ্ধার হয়েছিল ২,৮৭,৪০৪টি। যার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ১ বছরের মধ্যে জাল নোট উদ্ধার বেড়েছে ১৯০.৫ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে মহামারীর সময় জাল নোটের ব্যবহার বেড়েছে। ২০২০ সালে জাল নোট সংক্রান্ত ৩৮৫ টি মামলা দায়ের হয়েছে। মোট অভিযুক্ত ৬৩৩ জন। আরবিআই জানিয়েছে, ২০২০ সালে দেশে যত জাল নোট উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে ২০০০ টাকার নোট ২,৪৪,৮৩৪টি, নতুন ৫০০ টাকার নোট ২,০৯,৬৮৫টি এবং ৫০ টাকার নতুন নোট ৮৫৯৯টি। এই সময়েই বেশ কিছু পুরোনো হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। অর্থাৎ, নতুন কারেন্সি নোট সহজে জাল করা যাবেনা - কেন্দ্রের এই দাবিও ধোপে টিকলো কি?
গল্প ৩ - সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে দেওয়া
এটা নিয়ে যত কম বলা যায় তত ভালো। কারণ ঘটনার লিস্ট করতে বসলে জায়গায় কুলোবে না। ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯-এর কথা আমাদের সকলেরই মনে আছে। ডিমনিটাইজেশন করে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা বা বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধারের গল্পটা মানুষকে খাওয়ানো খুব সহজ। কিন্তু এই ঘোষণাগুলোর মধ্যে থেকে ‘পপুলিস্ট’ অংশটুকু ছেঁটে ফেললে যা নির্যাস পড়ে থাকে তা একটি বড়োসড়ো অশ্বডিম্ব। এই কাজগুলো করে কালো টাকা, জাল নোট যে কিছুই উদ্ধার হয়নি তা তো পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। মাঝখান থেকে পপুলিস্ট রাজনীতির মাশুল দিতে বেঘোরে প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের। রুটি রুজি হারিয়েছে আরও কয়েক লক্ষ।
যাহা ঘোড়ার ডিম নহে
বামপন্থীদের সুরে সুর মিলিয়ে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন বিজেপি-বিরোধী দল নোট বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় বিজেপি’র শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘের প্রতিবাদ। প্রায় সবসময় দেশের ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন এড়িয়ে চলা এই শ্রমিক সংগঠন নোট বাতিল-পরবর্তী সময়ে জানায় - শুধুমাত্র নোট বাতিলের জেরে অসংগঠিত ক্ষেত্রে ২,৫০,০০০ ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। খারাপ প্রভাব পড়েছে রিয়েল এস্টেটে। বহু শ্রমিককে কাজ হারাতে হয়েছে। একইভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষিক্ষেত্র।
অমর্ত্য সেন থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের তাবড় অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছিলেন, নোট বাতিলের ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁরা আরও বলেছিলেন, নোট বাতিলে নগদের জোগানে ঘাটতি হলে কমবে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার। সে সময় তাদের কথার গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দেশের বাজার থেকে আচমকা প্রায় ৮৫ শতাংশ কারেন্সি নোট বাতিল করে দেওয়া এবং সময়মতো সেই নগদ টাকার জোগান না থাকার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্র। যেখানে দেশের মোট কর্মীবাহিনীর প্রায় ৯৪ শতাংশ যুক্ত। শুধুমাত্র সরকারি পরিসংখ্যান দিয়ে যে ক্ষতির মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ, অধিকাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রের হিসাবনিকাশই সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হয়না। নগদ টাকার জোগানে ঘাটতির কারণে এই ধরনের বহু ছোটো সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে কর্মহীন হয়েছেন বহু মানুষ। আরবিআই-র প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন জানিয়েছিলেন, তিনি কখনই নোটবাতিল সমর্থন করেননি।
এই বছরের মার্চ মাসে রাজীব গান্ধী ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ আয়োজন করেছিল ‘প্রতীক্ষা ২০৩০’ নামে একটি সম্মেলনের। সেই সভায় যোগ দিয়ে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং জানিয়েছিলেন - ‘দেশে বেকারত্বের হার ভয়াবহ। অসংগঠিত ক্ষেত্র ভেঙে পড়েছে। এর জন্য দায়ী ২০১৬ সালের অপরিকল্পিত বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত।’
গত বছর নোট বাতিলের ৪ বছর পূর্তির সময় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন - নোটবন্দির কারণে দেশে দুর্নীতি অনেক কমেছে এবং স্বচ্ছতা এসেছে। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, উপকারি সিদ্ধান্ত ছিল। যার উত্তরে সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছিলেন - চার বছর আগে ভারতীয় অর্থনীতি ধ্বংসের শুরু। মোদীর সেই সময়ের দাবিগুলো আমাদের আরও একবার দেখে নেওয়া উচিত।
নোট বাতিল করে নতুন নোট ছাপাতে যা খরচ, কিংবা শুধু সিঙ্গুরের প্রায় হয়ে যাওয়া কারখানাটা ভেঙে ফেলতে যা খরচ, তা দিয়ে অনায়াসে দেশের অসংখ্য খেতে না পাওয়া মানুষের রোজগারের সংস্থান করা যেত, যায়। অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা যায়। দেশের, রাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে ব্যাপকহারে যে বরাদ্দ ছাঁটাই চলছে তাও হয়তো করতে হয় না। কিন্তু পাইয়ে দেবার রাজনীতিতে কিছু অসহায় গরিব মানুষকে চিরস্থায়ী ডোল পলিটিক্সের দিকে ঠেলে দেওয়াটাই বোধহয় সবথেকে সহজ। দিনের শেষে তাই অশ্বডিম্বই সবথেকে দামি হয়। ডিমটা যে ঘোড়ার সেটা যত তাড়াতাড়ি বুঝে ওঠা যাবে ততই মঙ্গল। একমাত্র তখনই আঙুল তুলে জানানো যাবে - ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালার আহ্বান...